তিন দিন ধরে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) কাছে ঘুরেও করোনা টেস্ট করাতে পারেননি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম। মৃত্যুর পরও এই কর্মকর্তার নমুনা নিতে আসেনি করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই প্রতিষ্ঠানটি।
সর্বশেষ দাফনের ঠিক আগ মুহূর্তে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। পরে তার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। এ নিয়ে মৃতের পরিবারসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইইডিসিআরের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে সরকারের কাছে অভিযোগ জানাবে ডিএসসিসি।
করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম দুই বছর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের উপ-প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা হিসেবে অবসরে যান। তখন তিনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন। অবসরে যাওয়ার পর কাজের দক্ষতা বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ তাকে দুই বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়। গত ২৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান।
করোনাভাইরাসের মধ্যেও নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রণ ও সিটি করপোরেশনের খাদ্যসামগ্রী বিতরণে সরাসরি জড়িত ছিলেন এই কর্মকর্তা। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি অফিস করেছেন। গত ২১ এপ্রিল তার শরীরে জ্বর আসে। তখন থেকে তিনি, তার পরিবার ও ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ করোনা টেস্ট করানোর জন্য সরকারের আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ ডিএসসিসি ও পরিবারের।
বিষয়টি সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাকে দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, মিল্লাত সাহেবের মতো আমরা একজন কর্মকর্তাকে হারিয়েছি। মৃত্যুর আগে বারবার চেষ্টা করেও তার একটা টেস্ট পর্যন্ত আমরা করাতে পারিনি।
তার পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হয়েছে। আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. শরীফ আহমেদ সাহেব পর্যন্ত আইইডিসিআর প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। উনার সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু তিনি সাড়া দেননি। আমরা টেস্ট করাতে পারিনি।’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রে যদি এই অবস্থা হয় তাহলে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে কী হচ্ছে? আমি সচিব মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বিষয়টি তিনি লিখিত আকারে জানাতে বলেছেন। আমরা সরকারকে জানাবো।’
খন্দকার মিল্লাতুল ইসলামের ছেলে খন্দকার মাজহারুল ইসলাম শাওন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মৃত্যুর ঠিক দুই দিন আগে বাবার শরীরে জ্বর হয়। তিনি বাথরুমে গিয়ে একটু ব্যথা পেয়েছিলেন। আমরা প্রথমে মনে করেছিলাম সে কারণে হয়তো তার জ্বর হতে পারে। পরে দেখি অবস্থা কিছুটা খারাপের দিকে যাচ্ছে। এরপর আমরা আইইডিসিআরের হটলাইনে বারবার ফোন দিয়েছি, কিন্তু কোনও সাড়া পাইনি। সর্বশেষ আমি নিজেও আইইডিসিআরে গিয়েছি। তারপরও কোনও হেল্প পাইনি।
তারা বলেছে এখানে কোনও টেস্ট হয় না। অফিস বন্ধ। সেখান থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়েছি। তারা বলেছে, আমরা করোনা টেস্ট ছাড়া রোগী ভর্তি নেবো না। তাদের বলেছি অন্তত টেস্টটা করতে। তারা করেনি। সেখান থেকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়েছি বাবাকে। তখন ডাক্তার জানিয়েছেন বাবা আর নেই। সব জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে শেষ হয়েছি। নিজে ডাক্তার হয়েও কারও একটু হেল্প পাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মৃত্যুর পরেও আইইডিসিআর বাবার নমুনা সংগ্রহ করতে আসেনি। সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পরে সিটি করপোরেশনের মহানগর জেনারেল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসক এনে দাফনের আগ মুহূর্তে নমুনা নেওয়া হয়। এজন্যও বাবার দাফনের সময় এক দফা পরিবর্তন করতে হয়েছে।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তার চিকিৎসার চিত্র যদি এই হয় তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় চিকিৎসা বা পরামর্শ পাবে?’
বিষয়টি সম্পর্কে একাধিকবার যোগাযোগ করেও জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। খুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনও সাড়া দেননি।