উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

করোনায় পর্যটন খাতের করুণ অবস্থা

পর্যটন ডেস্ক: করোনাভাইরাসের প্রভাবে দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের ধস নেমেছে। বন্ধ হয়ে গেছে দেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলো। হোটেল-মোটেলগুলোতে বিদেশি পর্যটকশূন্য। চারটি দেশ ও চারটি এয়ারলাইন্স ছাড়া বাকি এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যাত্রী সংকটে প্রতিদিনই বাতিল হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট। ইতিমধ্যে কক্সবাজার, কুয়াকাটা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, তেঁতুলিয়া, সুন্দরবনসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটগুলোতে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আরও কয়েকটি জায়গায় সীমিত করা হয়েছে চলাচল।

বন্ধ হয়ে গেছে নামকরা সব ধরনের হোটেল-মোটেল। সবমিলিয়ে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে নেমে এসেছে বিশাল ধস। মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানাও ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) বলেছে, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে পর্যটন খাতের সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।

এ খাতে ৩ হাজার কোটি ডলার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। একই অবস্থা দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতেও। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, বিদেশে যাওয়া এবং বাংলাদেশে আসা বুকিংয়ের শতভাগ বাতিল হয়ে গেছে। এখন প্রতিদিনই অভ্যন্তরীণ বুকিং বাতিল হচ্ছে।

ট্যুর অপারেটররা একটি প্যাকেজের মধ্যে টিকিট, হোটেল-মোটেল, গাইড, যাতায়াত, দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের ব্যবস্থা করে দেন। বুকিং বাতিল হওয়ায় সবাই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সৌদি এয়ারলাইন্সসহ হাতেগোনা কয়েকটি বিমান সংস্থা টিকিট বাতিলের পরও রিফান্ড ফি নিচ্ছে না।

বাকি বিমান সংস্থাগুলো মাশুল নিচ্ছে। তাই ট্যুর অপারেটররা গ্রাহকদের বুকিং বাতিল না করে আপাতত স্থগিত করার অনুরোধ করেছেন। তবে গ্রাহকরা তাতে সায় দিচ্ছেন না, সরাসরি বুকিং বাতিল করছেন। তাতে অনেক ট্যুর অপারেটরকেই লোকসান গুনে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে।

সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে টোয়াব জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে পর্যটন ট্যুরের প্যাকেজ ও টিকিট বাতিল করেছেন ৮০ শতাংশ বাংলাদেশি ভ্রমণকারী। করোনার কারণে পেছানো হয়েছে টোয়াব আয়োজিত পর্যটন মেলা বিটিটিএফ-২০২০।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে পর্যটন মৌসুমের এ সময়ে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা আয় হতো। তবে এখন পর্যন্ত ক্ষতির পরিমাণ কত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি সংগঠনটি। টোয়াবের হিসাব অনুযায়ী- এ মৌসুমে দেশের পর্যটন খাত থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা আয়ের টার্গেট ছিল তাদের। এখন পুরোটাই ধস।

শাহজালাল বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১০ হাজার যাত্রী আসত, সেখানে এখন যাত্রীর সংখ্যা ৫শ’ থেকে ১ হাজার। বিমানবন্দরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে বিমানযাত্রী ছিলেন ২৭ লাখ ৬২ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ২২ লাখ ৫৫ হাজার, আর অভ্যন্তরীণ রুটে ৫ লাখ ৭ হাজার।

অপরদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে যাত্রী এসেছেন ২ লাখ ৪৯ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ১ লাখ ৯৫ হাজার, অভ্যন্তরীণ ৫৪ হাজার। ফেব্রুয়ারিতে যাত্রী সংখ্যা ২ লাখ ১৮ হাজার। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক ১ লাখ ৭৫ হাজার আর অভ্যন্তরীণ ৪৩ হাজার। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর মার্চে এ সংখ্যা ১ হাজারে এসে ঠেকেছে।

ভয়াবহ এ পরিস্থিতিকে দেশের এভিয়েশন শিল্পের জন্য ‘মহাবিপর্যয়’ বলে আখ্যায়িত করলেন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) সাধারণ সম্পাদক ও নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের এভিয়েশন শিল্পে করোনাভাইরাস শুধু বিপর্যয় নয়, ‘মহাবিপর্যয়’ ডেকে এনেছে। এ অবস্থায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।

ইউএস-বাংলার সিইও ক্যাপ্টেন সিকদার মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি এখন বড় ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শুধু উড়োজাহাজের কিস্তি পরিশোধ নয়, সিভিল এভিয়েশনের চার্জ, কর্মীদের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়সহ নানা ব্যয় টানতে গিয়ে আমরা ব্যাপক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছি।

করোনাভাইরাসের কারণে পর্যটকদের নিরুৎসাহিত করতে জেলা প্রশাসন থেকে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় বান্দরবান পার্বত্য জেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত পর্যটকদের আগমন নিরুৎসাহিত করা হল।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা জানান, হোটলে-মোটেলসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে জনসমাবেশ, বিনোদন অনুষ্ঠান পরিবেশনসহ সব ধরনের জনসমাগম আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে।

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। আরেক পার্বত্য জেলা বান্দরবানেও পর্যটকদের ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। যারা এসেছিলেন মাইকিং করে তাদের নিজ নিজ জেলায় ফিরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ সাংবাদিকদের বলেন, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত রাঙ্গামাটির সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ নির্দেশনা যদি কেউ অমান্য করে, তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাঙ্গামাটি জেলা আবাসিক হোটেলি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন জানিয়েছেন, যারা রাঙ্গামাটি এসেছেন তাদের ১৯ মার্চ রুম ছেড়ে দিতে বলা হয়। শুক্রবার থেকে নতুন করে কাউকে রুম ভাড়া দেয়া হচ্ছে না।

পর্যটকশূন্য সিলেট, দিনে কোটি টাকার লোকসান : সিলেট ব্যুরোর ইয়াহ্ইয়া মারুফ জানান, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে সিলেটের পর্যটন শিল্পে। পর্যটনের এ ভরা মৌসুমে হোটেল-মোটেলগুলোতে বিদেশি পর্যটক তো নেই-ই, শূন্য দেশীয় পর্যটকও।

করোনা আতঙ্কে এরই মধ্যে অনেক বিদেশি পর্যটক হোটেল বুক করেও সিলেটে আসার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। ফলে বিপর্যয়ে পড়তে যাচ্ছে এ শিল্প। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতি বছর এ মৌসুমে সিলেটের পর্যটন এলাকাগুলোতে ভিড় লাগে পর্যটকদের। হোটেল-মোটেলগুলোও থাকে বুকড।

বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সিলেটের হোটেল-মোটেলগুলোর ৮০ ভাগই থাকত পর্যটকে ভর্তি। করোনাভাইরাসের কারণে সিলেটের প্রায় ৩ শতাধিক ছোট-বড় হোটেল-মোটেল এখন প্রায় পর্যটকশূন্য। এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি দেয়া হয়েছে।

এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, বছরে ৫ থেকে ৬ লাখ বিদেশি পর্যটক আসেন বাংলাদেশে। যার বড় একটি অংশ আসেন চীন থেকে। করোনাভাইরাসের কারণে তাদের আসা এখন বন্ধ। বিশেষ করে প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠী ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন।

যারা স্বজনদের দেখতে নিয়মিত সিলেটে আসেন। গত ২ সপ্তাহ থেকে সিলেটে প্রবাসীদের আসা-যাওয়া অনেকটা কমে গেছে। গত ১৫ দিন আগেই অনেক হোটেল-মোটেল ‘বুকড’ হয়ে গিয়েছিল। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আকস্মিক ঘটনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পর্যটনে।

খুব দ্রুত পাল্টে যায় চিত্র। গত ৩-৪ দিনে বুকিং তো নেই-ই উল্টো শতভাগ বুকিং বাতিলও করে ফেলেছেন অনেকেই। সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সভাপতি ও হোটেল ফরচুন গার্ডেনের মালিক সুমাত নূরী চৌধুরী যুগান্তরকে জানান, হোটেল ব্যবসা একেবারেই খারাপ অবস্থা।

সব মিলিয়ে সিলেটের পর্যটন খাতে প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাব থাকবে দীর্ঘদিন। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার মূলত সিলেটে পর্যটকদের আগমন ঘটে। শুক্রবার সিলেটের হোটেলগুলোতে মাত্র ১০ ভাগ বোর্ডার ছিলেন। অন্য বছরের এ সময়ে সাধারণত ৮০ ভাগ বোর্ডার থাকতেন।

সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী শনি-রোববার দু’দিনে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সব বুকিং বাতিল করা হয়েছে। সুমাত নূরী চৌধুরী জানান, আমরা এখন গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ বিল ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ নিয়ে চিন্তিত। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি। অন্যথায় অনেক ব্যবসায়ী পথে বসবেন।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইর পরিচালক খন্দকার সিপার আহমদ যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব শুধু সিলেট নয়, সারা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে পড়েছে। তিনি জানান, দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে সিলেটের পর্যটন ভিন্ন।

সকল মৌসুমে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো সচল থাকে। কারণ নালা, খাল, হাওর, নদী, টিলা, পাহাড়, ঝরনা, পাথর, চা বাগানসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সিলেট। সারা বছরই সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা নানা উন্নয়ন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সিলেট ভ্রমণ করেন, এ সুযোগে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে ঢুঁ মারেন। একই সঙ্গে প্রবাসীসহ গত এক সপ্তাহ ধরে সব ধরনের পর্যটক সিলেটে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে এ হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান তিনি।

আটাব সিলেটের সাবেক সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব দেশের পুরো পর্যটন শিল্পে পড়েছে। প্রথমে ওমরা বন্ধ এরপর সব দেশের ফ্লাইট বন্ধ। যে দু-তিনটি দেশের ফ্লাইট এখনও চালু রয়েছে সেগুলো দু-এক দিনের মধ্যে বন্ধ হয়েছে যাবে।

বিশেষ করে ওমরার লাইসেন্সধারী ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে প্রত্যেকে প্রকার ভেদে ১০ থেকে ৪০ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এভাবে মাস দু-এক চলতে থাকলে ট্রাভেলস ব্যবসায়ীরা রাস্তায় বসে যাবেন। এটি দেশের পর্যটন শিল্প ও অর্থনীতির জন্য মারাত্মক অশনিসংকেত।

বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ বলেন, করোনার কারণে ভরা মৌসুমে পর্যটন খাতে বিপর্যয় এসেছে। এ কারণে দেশের পর্যটনের বৃহত্তম মেলা দশম শেয়ারট্রিপ বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ) পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। ৩ থেকে ৫ এপ্রিলের পরিবর্তে তা ২৯ থেকে ৩১ অক্টোবর হবে। এতবড় সংকটে পর্যটন খাতের অনেকেই চাকরি হারাবেন।

রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি সুশীল প্রসাদ চাকমা জানান, করোনাভাইরাসের ছোবলে সারা দেশের সঙ্গে আতঙ্কে রাঙ্গামাটির মানুষও। পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ ছাড়িয়ে মানুষ এখন অনেকটা রীতিমতো দিশেহারা। এমন পরিস্থিতি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে রাঙ্গামাটির পর্যটনের ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রভাবে এরই মধ্যে হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেছে, সরকারি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সসহ জেলার সবক’টি পর্যটন স্পট ও আবাসিক হোটেল-মোটেল। এসব পর্যটন স্পট ও হোটেল-মোটেল এখন জনশূন্য। বাতিল হয়ে গেছে সব বুকিং। সরকারি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে এ মাসের লোকসান ৩০ লাখ টাকা।

প্রভাব পড়েছে রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেলেও। বেকার হয়ে পড়েছেন, জেলার পর্যটনসহ হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও কর্মচারীরা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের অধিক লোকসমাগম এবং পর্যটন এলাকায় ভ্রমণে বিরত থাকার নির্দেশনার পাশাপাশি সতর্কতা অবলম্বনে নিজেরাই ঘোরাঘুরি বন্ধ করে দিয়েছেন দেশের মানুষ।

বাতিল করেছেন পূর্বনির্ধারিত সফরসূচিসহ অগ্রিম করে রাখা বুকিং। ফলে হাহাকার বিরাজ করছে রাঙ্গামাটির জনশূন্য পর্যটন স্পটসহ আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলোতে। বর্তমানে এসব স্থাপনা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে। বেচা-বিক্রি কমে গেছে রেস্টুরেন্ট ও খাবার হোটেলেও।

শুক্রবার রাঙ্গামাটি সরকারি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, গোটা পর্যটন এলাকাটি জনশূন্য। ফাঁকা দাঁড়িয়ে রয়েছে মনোরম ঝুলন্ত সেতুটি। কর্মচারীরা ছাড়া আশপাশে কোথাও লোকজনের ঘোরাঘুরি নেই। কর্মচারীরা জানান, এমনিতে লোকজন যাচ্ছে না। তা ছাড়া সরকারের নির্দেশনায় পর্যটক প্রবেশ সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হয়েছে।

আমরা এখন সম্পূর্ণ বেকার। আমরা দৈনিক হিসাবে চাকরি করি। আয় না থাকলে বেতন পাই না। যা অবস্থা দেখছি, করোনাভাইরাসে মরব না। মরতে হবে না খেয়ে। কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, মোটেলে ৫০ ভাগ অগ্রিম বুকিং সম্পূর্ণ বাতিল করে দেয়া হয়েছে।

অগ্রিম বুকিংয়ের টাকাও ফেরত পাঠানো হয়েছে। এখন কোনো কিছুই নেই। সব কার্যক্রম বন্ধ। কোনো পর্যটককে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। সম্পূর্ণ কমপ্লেক্স ফাঁকা। এ মাসে আমার মোটেলে লোকসান ৩০ লাখ টাকা।

সরকারি পর্যটন কমপ্লেক্সে ছাড়াও রাঙ্গামাটি শহরে রয়েছে, জেলা পুলিশের পলওয়েল পার্ক, সুখী নীলগঞ্জ, রাঙ্গামাটি রিজিয়নের আরণ্যক স্পটসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট, কাপ্তাই এবং বাঘাইছড়ির সাজেকের পর্যটন এলাকায় এখন জনশূন্যতা। ফাঁকা হয়ে গেছে ওইসব পর্যটন এলাকা। ফাঁকা আবাসিক হোটেল-মোটেলগুলো।

কক্সবাজার : কক্সবাজার প্রতিনিধি শফিউল্লাহ শফি জানান, পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার। পর্যটন শহরের প্রায় চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউসসহ কটেজগুলোতে যে বুকিং ছিল তাও পুরোদমে বাতিল হয়েছে। বলতে গেলে হাহাকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে পর্যটন শহরে। এ পরিস্থিতির কারণে একদিকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছের পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে বিশাল অংকের রাজস্ব হারিয়েছে সরকার।

পর্যটন এলাকার কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে কক্সবাজার পর্যটন আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত বর্তমানে পর্যটকশূন্য। হোটেল কর্মচারীরা অলস জীবনযাপন করছে। প্রতিদিন খরচের খাতা ভারি হলেও আয়ের খাতা একেবারেই জিরো।

পর্যটন এলাকার কড়াই রেস্টুরেন্টের মালিক শাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছর এ সময়ে পর্যটকের ভিড় থাকত কক্সবাজারে। কিন্তু করোনার কারণে পরিস্থিতি উদাহরণবিহীন। দেশে রাজনৈতিক নানা আন্দোলন-সংগ্রামসহ অনেক সংকটময় পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি জন্মের পর পর্যটন শহরে প্রথমবার দেখলাম।

শুক্রবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, হিমছড়ি, সি-গাল পয়েন্ট, মোটেল শৈবাল মোড়, বালিকা মাদ্রাসাসহ আশপাশ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সৈকত একেবারেই পর্যটকশূন্য। কোথাও একজন পর্যটক কিংবা স্থানীয় লোক দেখা যায়নি।

সমুদ্রের বিশাল ঢেউয়ের সঙ্গে হা হা করছে পুরো সৈকতের দীর্ঘ বালিয়াড়ি। পাশাপাশি সৈকতের একেকটি পয়েন্টে ৪০-৫০টি কিটকট (ছাতায়) পর্যটকদের বসার জন্য জায়গা দিতে পারত না ব্যবসায়ীরা। সেখানে এখন এ কিটকটগুলো খালি পড়ে আছে। আর কিছু স্থানে কিটকটও তুলে ফেলেছেন ব্যবসায়ীরা।

কিটকট ব্যবসায়ী মো. হোসেন বলেন, কক্সবাজার জনমানবশূন্যের পাশাপাশি সবকিছুই শূন্য হয়ে গেছে। সৈকতে ধুধু বালুচর ছাড়া কিছুই নেই। যে ক’টি কিটকট বেঁধে রেখেছে সেগুলো ওপরে তোলার কষ্টের কারণে রয়ে গেছে। না হয় সৈকতে বর্তমানে কিছুই নেই।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *