পরিভাষা ভুলিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র

ইসমাইল হোসেন দিনাজী: বাংলাভাষী মুসলিমরা আল্লাহ, রাসুল(স), সালাত, সিয়াম, সালাম, কালাম, ইবাদত, দু’আ, দরুদ, দাওয়াত, মেহমান, খিদমত, শাদি মুবারক, ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী শব্দমালা যাতে ধীরে ধীরে ভুলে যায় সেজন্য নানামুখি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এসব শব্দমালা লিপিবদ্ধ ছিল। এখনও কিছু কিছু রয়েছে। কিন্তু একটি মহল অত্যন্ত সুকৌশলে ও সুপরিকল্পিতভাবে পাঠ্যপুস্তকের উল্লেখিত শব্দমালা মুছে ফেলতে তৎপর। মহলটি আল্লাহর পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তা, প্রভু, ঈশ্বর; সিয়াম বা রোযার স্থলে উপাসনা, কুরআনের ভাষা দীনের স্থলে বিভ্রান্তিকর শব্দ ‘ধর্ম’ প্রভৃতি প্রতিস্থাপন করতে আগ্রহী। ‘উপাসনা’ শব্দ দ্বারাও সিয়াম বা রোযার যে তাৎপর্যবহ অর্থ তা বোঝায় না। ‘ধর্ম’ শব্দের দ্বারাও ‘দীন’ এর যে মাহাত্ম্য তা বোঝায় না। বলতে দ্বিধা নেই , গত কয়েক দশক ধরে আত্মঘাতী পরিভাষা প্রতিস্থাপন প্রকল্পের অনেকাংশই বাস্তবায়ন করা হয়ে গেছে।
দেশের সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে একশ্রেণির সম্পাদক, সাংবাদিক, উপস্থাপক, সংবাদপাঠক মুসলিমপরিভাষা বিদ্বেষী তৎপরতায় লিপ্ত বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ এদের সিংহভাগই বংশানুক্রমে মুসলিম। কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশের পাঠ্যপুস্তকে অন্য একটি জাতিগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও ঐতিহ্যগত শব্দসমূহ প্রতিস্থাপন করবার বিনাশী অপতৎপরতা কেন এবং কার স্বার্থে? একটি কথিত প্রগতিশীল সংবাদপত্রে কর্মরত এক রিপোর্টার অভিযোগ করেছিলেন, সেখানে নাকি আল্লাহ, রাসুল (স), ইন্তিকাল, লাশ, দাফন, জানাযা, হজ, যাকাত, ইবাদত, ইন্নালিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এমন শব্দমালা ব্যবহার নিষিদ্ধ। কারণ এগুলো সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদীদূষণে দুষ্টুশব্দ। এসব শব্দের স্থলে লেখতে হবে মৃত্যুবরণ, প্রয়াত, মরদেহ, সমাহিত, শেষকৃত্য, সৃষ্টিকর্তা, প্রভু ইত্যাদি। এটাই নাকি কাগজটির সম্পাদকীয় পলিসি। কোনও কোনও টিভি চ্যানেলেরও একই পলিসি। এছাড়া সেসব মিডিয়া হাউজে এ উপমহাদেশে মুসলিমদের ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী শব্দমালাকে বিদেশী ভাষা বলে এড়িয়ে চলবার সম্পাদকীয় নীতি বলে নির্দেশ রয়েছে। পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে তা বুঝতে নিশ্চয়ই কারুর অসুবিধে হবার কথা নয়।

যারা এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মুখের ভাষা বদলে দিয়ে ভিন্ন সংস্কৃতির ধারক-বাহকদের ভাষা চালু করতে তৎপর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়া জরুরি

সমাজের অন্যকোনও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় বা জাতিগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের সুসম্পর্ক, সৌহার্দ, ভালোবাসা এবং ঔদার্য অবশ্যই থাকবে। তবে তা নিজের বিশ্বাস বা ঈমানকেন্দ্রিক সৌকর্য ও দীনি স্বকীয়তা বিসর্জন দিয়ে নিশ্চয়ই নয়। উল্লেখ্য, ধর্মনিরপেক্ষতার নামাবলি গায়ে ধারণ করে সংখ্যাগরিষ্ঠের ঈমানবিনাশী অপতৎপরতায় লিপ্ত হয়ে দীনদার ও একনিষ্ঠ মুসলিমদের ঔদার্য আর আন্তরিকতার সুযোগে তাঁদের হৃদয়-জমিনে ভিন্ন সংস্কৃতি-বোধবিশ্বাসের বীজবপনে সচেষ্ট বিভীষণদের চিহ্নিত করে জনসম্মুখে মুখোস উন্মোচন করে দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এমন আত্মবিনাশক ও সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকা খুব জরুরি বলেই আমরা মনে করতে চাই।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *