সালেহ আকন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে যখন ভর্তি হয়েছিলাম, তখন অনেকটা আবেগেই সেটা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বজলু সাহেব নিষেধ করেছিলেন। আমি তার কথা শুনিনি। তবে সাংবাদিকতাকে যখন পেশা হিসেবে নিয়েছি, তখন বুঝে শুনেই এটা করেছি। আমার অন্যান্য বন্ধুরা যেভাবে জীবন চালাবে, আমার বা আমার পরিবারের সদস্যদের জীবন তেমন সুন্দরভাবে চলবে না! এটা জেনেও আমি সরকারী গোলামী বা ধনাঢ্য কোম্পানীর চাকরী কিংবা বিদেশী কোন সংস্থা বা এনজিওর চাকরীর জন্য একবারের জন্যও চেষ্টা করিনি। আর ব্যবসা তো সম্ভবই নয়। আমার গোষ্ঠীতে কেউ কোনোদিন ব্যবসা করেনি। এমনকি, ক্ষেতে যে কলা-কচু ফলেছে তাও কেউ বিক্রি করেছে বলে আমি অন্তত জানিনা।
এখন যখন শুনি, আমার বন্ধুরা আমার তিন-চারগুণ বেশী বেতন পায়; তখন আমার কোনই কষ্ট হয় না। আমি যখন দেখি আমার বন্ধুর বডিগার্ড আছে, সরকারী আলীশান বাড়ি আছে, মুখ থেকে উচ্চারণের আগেই তার সব হাজির হয়ে যায়; তখন আমি আহ্ আহ্ বলে মন খারাপ করিনা। আমি জানি ওগুলোর টার্গেট আমার ছিলো না। আমার টার্গেট ছিলো এমন একটা কাজ করবো যা দিয়ে মানুষের খুব কাছাকাছি থাকা যাবে। চাইলে আমি দেশ ও দশের মঙ্গল করতে পারবো। স্বাধীন থাকবো, আর তিন বেলা মোটামুটি খেতে পারলেই চলবে। আমি আমার সেই টার্গেটের কিছু হলেও অন্তত: পূরণ করেছি, পেয়েছি।
রাষ্ট্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের যখন বেতন বেড়েছে তখন আমি কষ্ট পাইনি। পুকুর খননের ট্রেনিং নেয়ার কথা বলে রাষ্ট্রের অর্থের যখন শ্রাদ্ধ করে তখন আমি কষ্ট পাইনা।
এখন যখন সরকারী-বেসরকারী সংস্থাগুলো তাদের কর্মীদের প্রণোদনা দিচ্ছে, আর আমার অফিসের বেতন বন্ধ; তখনো আমার কোন কষ্ট নেই। আমি জানি, আমি এটাই চেয়েছিলাম।
কিন্তু কষ্ট হয় তখন, যখন দেখি আমাকে কেউ করুণা করতে আসছে! হ্যাঁ আমার বিপদ, আমাকে আপনি সহযোগিতা করতে পারেন। তবে সেটা যেনো ভিক্ষা দেয়ার মানসিকতা নিয়ে না করেন! সরকারের কাছে প্রনোদনা আমি চাই না। কারণ সরকার কেনো আমাকে প্রনোদনা দেবে? আমি কি সরকারের বন্ধু। সরকার কোন অন্যায় করলে আমি কি সাংবাদিক হিসেবে তা চাপিয়ে রাখবো? তো সরকার কেনো আমার বিপদের সময় পাশে দাঁড়াবে? মাননীয় সরকার, আপনি জেনে রাখবেন, আমি যদি না খেয়ে মরেও যাই; আমি আপনার কোনো অনুদান চাই না। আর কোনো সাংবাদিক সংগঠন যদি সরকারেরর কাছে অনুদানের জন্য আবেদন নিবেদন করেন তবে অন্তত আমার নামটি বাদ দিয়ে করবেন। আমি সরকারের অনুদান নেবো না।
হ্যাঁ রাষ্ট্রের প্রতি আমার যে অধিকার আছে, আমি সেটার বাস্তবায়ন চাই। আমি এটাও জানি, সেটা সম্ভব হবে না। তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। তারপরেও বলছি, দয়া করে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। করুণা করার চেষ্টা করবেন না। তাতে আমার ও আমার পেশার মর্যাদার হানী হবে।