আকবরই বিশ্বকাপের সেরা দলের অধিনায়ক

পর্যটন ডেস্ক: ভারতকে ৩ উইকেটে হারানোর মধ্য দিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শেষ টেনেছে বাংলাদেশ। যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম শিরোপা জয়কেই এ টুর্নামেন্টের সেরা পরিণতি বলে মানছেন প্রায় সবাই। সে ক্ষেত্রে টুর্নামেন্ট সেরা দলের অধিনায়ক হিসেবে আকবর আলীর নির্বাচিত হওয়াটাও সঠিক সিদ্ধান্ত। আজ বিশ্বকাপের সেরা একাদশ ঘোষণা করেছে আইসিসি। সে দলে আকবর ছাড়াও নাম এসেছে মাহমুদুল হাসান ও শাহাদাত হোসেনের।
তিন সপ্তাহ ধরে চলা এই ক্রিকেট উন্মাদনায় অনেক রান উৎসব হয়েছে। পেসারদের আগ্রাসনের দেখা মিলেছে। স্পিনারদের ঘূর্ণি বাঁকে বিভ্রান্ত হতে দেখা গেছে অনেক ব্যাটসম্যানকে। এঁদের মধ্য থেকে সেরা একাদশ বের করা বেশ কঠিন। সে কাজটাই করেছেন আইসিসির বেছে নেওয়া পাঁচ বিশ্লেষক। ধারাভাষ্যে থাকা ইয়ান বিশপ, রোহান গাভাস্কার ও নাটালি জারমানোসের সঙ্গে ক্রিকইনফোর শ্রেষ্ঠ শাহ ও আইসিসির ম্যারি গডবিয়ারকে দেওয়া হয়েছিল এ কঠিন দায়িত্ব।

আইসিসির বিশ্বকাপের সেরা একাদশে বাংলাদেশ ছাড়া ফাইনালিস্ট ভারতেরও তিন খেলোয়াড় জায়গা পেয়েছেন। কোয়ার্টার ফাইনালে ছিটকে পড়লেও আফগানিস্তানের দুজন সুযোগ পেয়েছেন একাদশে। ওয়েস্ট ইন্ডিজেরও দুজন আছেন এ দলে। আর প্লেট ফাইনাল খেলা শ্রীলঙ্কা দল থেকে সুযোগ পেয়েছেন একজন। এ দলে দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবে আছেন কানাডার আকিল কুমার।

আজ সকালেও অন্য দিনের মতোই খিদে লেগেছে ’
অধিনায়ক আকবর আলী যখন কাল ব্যাটিংয়ে নামলেন, তখন বাংলাদেশ কাঁপছে ফাইনাল ম্যাচের চাপে। ৬২ রানে ৩ উইকেট নেই বাংলাদেশের। পারভেজ হোসেন পেশির টানে মাঠের বাইরে। জয়ের জন্য তখনো দরকার ১১৬ রান। ধারাভাষ্যকার ও সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটার জেপি ডুমিনি বলছিলেন, ‘এই মুহূর্তে ১১৬ রান ২০০ রানের সমান।’ ডুমিনির কথাটা ভুল ছিল না।
সেই কঠিন সময়টা বাংলাদেশ পার করেছে অধিনায়ক আকবরের ঠান্ডা মেজাজে। উইকেটের চার পাশে বড় শট খেলার সামর্থ্য রাখেন। কিন্তু সবচেয়ে বড় গুণ চাপের মুখে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করার সামর্থ্য। ব্যাটিংটা এ রকমই। কাল অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে ৪৩ রানের ইনিংসে চাপের পাহাড় পাড়ি দিয়ে এভাবেই বাংলাদেশকে শিরোপা এনে দিয়েছেন আকবর।

বাংলাদেশের জয়ের জন্য বাউন্ডারি পর বাউন্ডারি দরকার ছিল না। ছিল শুধুই এক-দুই রানে গড়া একটি জুটি। একের পর এক উইকেট শিকার করে সেটি হতে দেননি ভারতীয় বোলাররা। শাহাদাত হোসেন, মাহমুদুল হাসান, শামিম হোসেন, অভিষেক দাস একে একে ফিরে গেছেন। আরেক প্রান্ত থেকে দেখেছেন সতীর্থদের আসা যাওয়া।

কিন্তু সম্রাটের মতো টিকে ছিলেন আকবর। একের পর এক ডট বল খেলে গেছেন। রানের জন্য এক একটা বাজে বলের অপেক্ষায় ছিলেন। ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়ে গেছেন পুরো ইনিংস জুড়ে। দারুণ জুটি গড়েছেন শুশ্রূষা নিয়ে ফেরা পারভেজের সঙ্গে। নন স্ট্রাইকে দাঁড়িয়ে কোচের ভূমিকা পালন করে গেছেন সতীর্থদের জন্য। একবারও ফাইনালের চাপ পেয়ে বসতে দেননি। আজ সকালে আকবরকে আবিষ্কার করা গেল গতকালের মেজাজে। বিশ্বকাপ জেতার পরেও একেবারেই ঠান্ডা।

দক্ষিণ আফ্রিকায় তখন সকাল সাড়ে সাতটার মতো বাজে। ফোনে আকবর আলীকে পাওয়া গেল নাশতার টেবিলে। নাশতা খেতে খেতেই প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বললেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। জিজ্ঞাসা করা হলো নিশ্চয় আজকের (গতকাল) সকালটি অন্য যেকোনো দিনের চেয়ে আলাদা! জবাবে, ‘না না। অন্য যেকোনো দিনের মতোই। ঘুম ভাঙল, অন্য দিনের মতোই খিদে লেগেছে। নাশতা করতে চলে এলাম। নাশতার টেবিলে বসেই আপনার সঙ্গে কথা বলছি। এখনো হাতে শিমের বিচি ধরা।’

সাক্ষাৎকারে অনেক গল্পের কথায় শুনিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। উঠে এসেছে দলের অনেক অজানা গল্প। নিজেকে কবে জাতীয় দলে দেখতে চান, তা-ও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। শুনিয়েছেন এই দল নিয়ে বড়দের বিশ্বকাপ সম্ভাবনার কথা।

পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকার দেখতে চোখ রাখুন আগামীকালের প্রথম আলোর ছাপা সংস্করণে।

বিশ্বকাপ একাদশ:

যশস্বী জয়সোয়াল – ৪০০ রান (ভারত)
ইব্রাহিম জাদরান – ২৪০ রান (আফগানিস্তান)
রবিন্দু রসন্থ – ২৮৬ রান (শ্রীলঙ্কা)
মাহমুদুল হাসান – ১৮৪ রান (বাংলাদেশ)
শাহাদাত হোসেন – ১৩১ রান (বাংলাদেশ)
নিম ইয়ং – ১৪০ রান ও ৮ উইকেট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
আকবর আলী (উইকেটকিপার, অধিনায়ক) – ৬৯ রান, ৬ ডিসমিসাল (বাংলাদেশ)
শফিকুল্লাহ ঘাফারি – ১৬ উইকেট (আফগানিস্তান)
রবি বিষ্ণয় – ১৭ উইকেট (ভারত)
কার্তিক ত্যাগি – ১১ উইকেট (ভারত)
জেডেন সিলস – ১০ উইকেট (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *