ইউক্রেনের যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ভূপাতিত করার ঘটনার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের অ্যারোস্পেস কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ। তিনি জানান, দায়িত্বরত ক্ষেপণাস্ত্র অপারেটরের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য মাত্র ১০ সেকেন্ড সময় ছিল। তিনি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া অথবা না ছোড়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঘটনার পরপরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ভুলের বিষয়টি জানানো হয়।
গত বুধবার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়ে ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হন।উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গতকাল শনিবার নিজেদের ভুল স্বীকার করে ইরানের পক্ষ থেকে দুঃখপ্রকাশ করা হয়। ইরানের জনগণ এ ঘটনার প্রতিবাদে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ করেছে। বিবিসির আজ শনিবারের খবরে, ওই দিন কী ঘটেছিল, তার একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন রেভল্যুশনারি গার্ডের অ্যারোস্পেস কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলি হাজিজাদেহ। তিনি বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র অপারেটর নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ইরানি বাহিনীর কাছে তথ্য ছিল, মার্কিন বাহিনী তাঁদের ঘাঁটিতে হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ইরানের দিকে ‘ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র’ ছুড়েছে। ওই সময় ইউক্রেনের উড়োজাহাজটিকে ভুল করে ‘ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র’ ভেবে আঘাত হানেন ওই অপারেটর। জেনারেল হাজিজাদেহ বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপারেটরের হাতে ১০ সেকেন্ড সময় ছিল। তিনি সেটিকে আঘাত করা বা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। আর এই পরিস্থিতির মধ্যে তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, সিদ্ধান্ত যাচাই করার জন্য অপারেটর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বাধ্য। কিন্তু ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থায় কিছু বিপত্তি দেখা দেয়। তিনি জানান, ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল যাতে না হয় সে জন্য সামরিক বাহিনী এই ব্যবস্থার উন্নয়ন করবে। জেনারেল হাজিজাদেহ বলেন, উড়োজাহাজটিতে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পেয়ে তাঁর ইচ্ছে হয়েছিল ‘মরে যাই’। তিনি জানান, ঘটনার পর যা যা ঘটেছে, তা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন। এরপর এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত কেন ইরান বিষয়টি অস্বীকার করল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি গতকাল টুইট করেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এই বিপর্যয়কর ভুলের জন্য গভীরভাবে মর্মাহত।’ এ ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি আমার সমবেদনা ও প্রার্থনা রইল।’ উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের মতো বিপর্যয়কর ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের হঠকারিতার কারণে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি টুইট করে বলেছেন, ভুলক্রমে ইউক্রেনের উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করার কথা গত শুক্রবার অবহিত করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শীর্ষ কর্তৃপক্ষ। ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, বিষয়টি জনসমক্ষে জানানো হবে। গতকাল সকালে এক বিবৃতিতে ইরানের সেনাবাহিনী নিজেদের ভুল স্বীকার করে বলে, বিশেষ বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের একটি স্পর্শকাতর স্থাপনার খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল উড়োজাহাজটি। এই সময় কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই স্থানের কাছে থাকা রাডারে উড়োজাহাজটি ধরা পড়ে। সেনাবাহিনী আরও বলে, ভবিষ্যতে এই রকম ভুল যাতে না হয়, সে জন্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার উন্নতি করা হবে। দায়ী পক্ষগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনা হবে এবং তাদের সেনাবাহিনীর বিচার বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ইরানের সেনাবাহিনীর বিবৃতির পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইরানকে আনুষ্ঠানিক দুঃখপ্রকাশ, তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান। এ ছাড়া তেহরানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেন তিনি। উড়োজাহাজটির যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন ইরানি ও ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয়।
গতকাল শনিবার কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইরানের প্রেসিডেন্ট রুহানির সঙ্গে কথা বলেন। ট্রুডো বলেন, তিনি প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। তিনি রুহানিকে বলেছেন, এ ঘটনায় অবশ্যই পূর্ণ তদন্ত হতে হবে। নিহতদের পরিবারগুলো ব্যথিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। তারা জবাব চায়। এ ঘটনার ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত কানাডা থামবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, তাঁকে রুহানি আশ্বস্ত করেছেন যে এই দুর্যোগের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা হবে।