আবদুস সালাম: দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও একটি বছর। নতুন বছরের সঙ্গে এসেছে নতুন সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ। তবে নতুন বছর নিয়ে শহরের নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাঁরা কীভাবে দেখছেন নতুন বছরটিকে—এ বিষয়ে জানতে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হলো শহরের বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কয়েক জনের।
হাইকোর্ট এলাকার চা বিক্রেতা মো. সুমন বললেন, ‘নতুন বছরেও কামাই কইরা চাইট্টা ডাইল-ভাত খাইতে চাই। কোনো রাজনীতির ভিতরে নাই।’ সুমন জানান, ফুটপাতে ব্যবসা করেন বলে উচ্ছেদের আশঙ্কা থাকে।
একই এলাকায় পান-সিগারেট বিক্রি করেন দুলি আক্তার। গত বছর তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী ছিলেন। আশাবাদী দুলি প্রথম আলোকে বললেন, ‘নিজের অবিশ্বাস ছিল যে আর উইঠা দাঁড়াইতে পারুম না। আমার মনে হয় এইহানেই শেষ। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আর মানুষের দোয়ায় আমি আবার দাঁড়াইছি। আবার আমি কর্ম কইরা খাইতাছি। এইটা আমার গত বছরের পাওয়া। নতুন বছর যেহেতু আমার জীবনে আইছে, আমার বিশ্বাস আমি ভালো কিছুই পামু।’
সড়কের পাশের ভাতের দোকানে সহকর্মীদের নিয়ে দুপুরে ভাত খাচ্ছিলেন মেট্রোরেল প্রকল্পের শ্রমিক মো. মজনু। নতুন বছরে তাঁর চাওয়া ভিন্ন। ২৬ বছর বয়সের এই তরুণ নিজের জন্য কিছু চান না। বলেন, ‘গত বছর থেইকা এই বছর বাংলাদেশটা আরও উন্নত হোক।’ দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করে ১ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি পান তাঁরা। তিনি জানালেন, অনেক সময় মজুরি পেতে সমস্যা হলেও দিন ভালোই যাচ্ছে। আরেক শ্রমিক লাল মিয়া বললেন, ‘শেখ হাসিনার আমলে কাম-কাজ কইরা শান্তি পাইলাম। মজুরি ঠিকমতো পাই। সুখে-শান্তিতে আছি। আশা করি, এইভাবেই আল্লাহ যেন বছরটা নেওয়ায়।’
রিকশাচালক চান মিয়া ছোটবেলায় গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান। তখন থেকেই রিকশা চালান। এখন তাঁর বয়স পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই। তিনি জানালেন, গত বছর তাঁর ভালো যায়নি। তিনি বললেন, ‘আগামী দিন কীভাবে যায়, তা তো বইলতে পারবো না। এক আল্লাহ ছাড়া কেউ বইলতে পারবো না। খারাপও যাইতে পারে, ভালোও যাইতে পারে।’ তাঁর ধারণা, গরম পড়তে শুরু করলে মানুষ বেশি বেশি রিকশায় চড়া শুরু করবে। তাতে তাঁর আয় ভালো হবে।
শাহ আলম প্রায় ৩০ বছর ধরে ফুটপাতে ফুল বিক্রি করেন। আশির দশকে মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের চেয়ে এই বছর ফুলের ব্যবসা ভালো। তয় ফুলের দাম বেশি।’ তিনি আরও বললেন, ‘এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে, তাইলে ফুলের চাহিদা বাড়ে। এই সরকার যদি যায়গা, তাইলে ফুলের চাহিদাও কইমা যায়। কারণ, এই সরকারের জায়গায় জায়গায় অনুষ্ঠান বেশি।’
রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ করা নিয়ে উদ্বিগ্ন রিকশাচালক মো. লাভলু। তিনি বলেন, ‘গত বছরের মতো এই নতুন বছরে যদি রাস্তা বন্ধ কইরা না দেয়, তাইলে দিনকাল ভালো যাইবো।’ রাজশাহীর লাভলু প্রায় ১৮ বছর ধরে ঢাকা শহরে রিকশা চালাচ্ছেন। খরচ বাদ দিয়ে তাঁর দৈনিক আয় ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।