কমলার পুষ্টিগুণ কে না জানে। শীতের সময়টায় সহজলভ্যও বটে। তাই শীতে কমলা কমবেশি সব বাড়িতেই খাওয়া হয়। বাড়িতে কমলা এনে খেয়ে তো ফেলবেনই, তবে খেয়ে সবটা ‘ফেলবেন’ না যেন। বিচিটা ফেলে দিলেও কাজে লাগান খোসাটুকু। কমলার খোসায় রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, নানা খনিজ পদার্থ এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় তেল (এসেনশিয়াল ওয়েল)। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ব্রণ, বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমাতে দারুণ কার্যকর কমলার খোসা। তবে কমলার খোসা ব্যবহার করতে হবে সঠিক নিয়মে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে (যেমন, ত্বকে ফুসকুড়ি), এমনটাই জানালেন হার্বস আয়ুর্বেদিক ক্লিনিকের আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ আফরিন মৌসুমি।
জেনে নিন তাঁর পরামর্শ সংরক্ষণের নিয়ম
গ্রেটারের সাহায্যে কমলার খোসার ওপরের দিক থেকে কুরিয়ে নিন (আলুভাজি করার জন্য আলু যেভাবে করা হয়, তবে খোসার ভেতরের সাদা অংশ বাদে)। অথবা ভেতরের সাদা অংশ ফেলে কুচি করে নিন। প্রথম পদ্ধতিটিই ভালো। এরপর কাগজ বিছিয়ে এর ওপর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় (যে ঘরে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চলছে না, রান্নাঘরেও হতে পারে) দুই থেকে তিন দিন রাখুন। কিছুক্ষণ পরপর নেড়েচেড়ে দিন। শেষ দিন ১০ মিনিটের জন্য রোদে দিন। কাচের বয়ামে রেখে দিতে পারেন সারা বছরের জন্য। নিয়ম না জেনে সংরক্ষণ করতে গেলে কার্যকারিতাও কমে আসে, এতে ত্বকে খারাপ প্রভাব পড়ার ঝুঁকিও বাড়ে।
ত্বকের সমস্যা অনুযায়ী প্যাক
মেছতা থাকলে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা তিন টেবিল চামচ আলুর রসে ভিজিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। এরপর পেস্ট করে নিয়ে একটি ডিমের সাদা অংশ ও এক চা–চামচ কমলার রস মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। বিশেষত, হালকা মেছতা থাকলে প্রতিদিন এ প্যাক ব্যবহারে মেছতা আর গাঢ় হয় না।
ব্রণের জন্য এক টেবিল চামচ কমলার খোসা, সমপরিমাণ পুদিনাপাতার রস ও শঙ্খ গুঁড়ার সঙ্গে মিশিয়ে পুরো মুখে ব্যবহার করুন একটানা ৭ দিন।
বলিরেখা দূর করতে এক টেবিল চামচ কমলার খোসা পেস্ট ও এক টেবিল চামচ কমলার রস দিয়ে পেস্ট করুন। দুটি কাঠবাদাম যোগ করুন। পুরো মুখে দিন প্রতিদিন।
রোজ বাইরে থেকে ফিরে আরেকটি প্যাক কাজে লাগাতে পারেন। এক টেবিল চামচ কমলার খোসা সমপরিমাণ রস (কমলার) দিয়ে পেস্ট করুন। সঙ্গে ভালোভাবে পেস্ট করা এক টেবিল চামচ পাকা কলা যোগ করুন। মিশ্রণে ভারসাম্য আনতে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন যোগ করতে হবে। বাইরের দূষণে নিষ্প্রাণ, অনুজ্জ্বল, নিস্তেজ হয়ে পড়া ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে। চাইলে এটি প্রতিদিনই ব্যবহার করা যায়।
ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এক চা–চামচ কমলার খোসা পেস্ট (তাজা, সংরক্ষিত নয়) ও সমপরিমাণ মধু দিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। শুধু ব্ল্যাকহেডসের স্থানে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে এলে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত গতিতে তুলে ফেলুন। সাত থেকে আট দিন একটানা ব্যবহার করুন।
অ্যারোমা টোনার যখন কমলার খোসা
স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে আধা লিটার মিনারেল ওয়াটার (ট্যাপের পানি নয়) ও ছয়টি কমলার কুচি করা খোসা (তাজা, সাদা অংশ বাদে, আগের নিয়মে) দিয়ে মৃদু আঁচে ঢেকে রাখুন। কমলা রঙের ছোঁয়া দেখা দিতে থাকবে, পানি কমতে থাকবে। মিশ্রণ ঘন হয়ে মোটামুটি ১৫০ মিলি পরিমাণে নেমে এলে নামাতে হবে। স্বচ্ছ ঢাকনা দিতে পারেন, অস্বচ্ছ ঢাকনা হলে এক থেকে দুইবার উঠিয়ে পানির পরিমাণ বুঝে নিন। ঠান্ডা হওয়ার পর যেকোনো বোতলে রেখে ব্যাগেও বহন করতে পারেন। সারা দিনে ক্লান্ত হয়ে পড়লে মুখ ধুয়ে এটি স্প্রে করে নিয়ে (স্প্রে করার বদলে এটি তুলার বলে ভিজিয়ে মুখ মুছে নিতে পারেন) ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। বরফের কিউব হিসেবে সারা বছর রেখে দিতে পারেন, যদি আনুপাতিক হারে পরিমাণ বাড়িয়ে থাকেন।