আব্দুল হালিম নিহন: সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে নিয়োগকর্তার পারিবারিক তথ্য খতিয়ে দেখবে দেশটিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।
সম্প্রতি রিয়াদে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের যৌথ কারিগরি কমিটির নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দূতাবাসের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দূতাবাসের শ্রম কাউন্সেলর মেহেদী হাসান জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা আর সৌদি আরবের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন সৌদি শ্রম ও সামাজিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডেপুটি মিনিস্টার জাবের আল মাহমুদ। বাংলাদেশের ১০ সদস্যর প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ এবং বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার রাজনৈতিক আনিসুল হকসহ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ছিলেন।
বৈঠকে আলোচ্যসূচি বিষয়গুলো নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয়। গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা, পুরুষদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। গৃহকর্মী হিসেবে কর্মরত বাংলাদেশি নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়। কর্মীর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা এবং যোগাযোগের ফোন নম্বর থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করার বিষয়টি আলোচিত হয়। আরও আলোচনা হয়, কেউ চুক্তি নবায়ন করতে চাইলে অবশ্যই বাংলাদেশ দূতাবাসের অনুমোদন নিতে হবে।
মেহেদী হাসান বলেন, বৈঠকে গৃহকর্মীদের সুরক্ষার পাশাপাশি পুরুষ কর্মীদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাবসহ দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিতের ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো—সৌদি আরবের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বাংলাদেশের দূতাবাসের কাছে জবাবদিহি থাকা, গৃহকর্মীদের আনতে হলে দূতাবাসে আবেদন করতে হবে এবং দূতাবাস নিয়োগকর্তার পারিবারিক তথ্য যাচাই-বাছাই করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে (বিএমইটি) জানানোর পর সে এজেন্সি কর্মী আনার অনুমতি পাবে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, কোনো গৃহকর্মী নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে পুলিশের কাছে আশ্রয় নিলে নিয়োগকর্তার কাছে ফেরত না পাঠিয়ে বিষয়টি শ্রম ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়া হবে অথবা দূতাবাসের সেফ হোমে আশ্রয় দিয়ে সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিকে ১৫ দিনের মধ্যে ওই গৃহকর্মীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে ব্যবস্থা করতে হবে। নামমাত্র প্রশিক্ষণ না দিয়ে বিদ্যমান প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর ও সময়োপযোগী করে তুলতে হবে। ত্রুটিপূর্ণ প্রশিক্ষণ দিয়ে নারী গৃহকর্মীদের বিদেশ পাঠালে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে।
বৈঠকে সৌদি শ্রম আদালতের মামলা দায়েরের বিষয়টি সহজ করা নিয়ে আলোচনা হয়। শ্রমিকেরা যেন নিয়োগকর্তাদের সম্পাদিত চুক্তির কপি পেতে পারেন, ব্যাপারটি নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। এই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানানো হয়। সৌদি আরবের কর্মরত বাংলাদেশি কর্মীদের স্বাস্থ্য বিমা আরও কার্যকর করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয় বৈঠকে।
*আব্দুল হালিম নিহন, সৌদি আরব