গোলাপিরাঙা ইডেনে ইতিহাসের সঙ্গী এখন বাংলাদেশ

ইডেন গার্ডেনসে কাল দিবারাত্রির টেস্টে ভারতের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। দুই দলের জন্যই এটি প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট—যে কারণে ঐতিহাসিক এক ম্যাচই আয়োজিত হতে যাচ্ছে ইডেনে। ঐতিহ্য ও ইতিহাস বিচারে কলকাতার এ মাঠকে বলা হয় ভারতের ‘হোম অব ক্রিকেট’

ইতিহাসের আরেকটি নতুন পাতা খোলার পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছে ইডেন গার্ডেনস। কাল এ মাঠে নিজেদের ইতিহাসে প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট খেলতে নামবে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ভারতেরও এটি প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট। ‘নন্দনকানন’খ্যাত এ মাঠ শুধু ক্রিকেটে ইতিহাসের প্রসূতিই নয়, ঐতিহ্যগত দিক থেকেও এ মাঠ কলকাতার জন্য ঐতিহাসিক। গোড়া থেকে শুরু করা যাক।

১৮০৪ সালেও ইডেন গার্ডেনসে ক্রিকেট খেলেছে ক্যালকাটা ক্রিকেট ক্লাব। ইডেন তখন স্টেডিয়াম হয়ে ওঠেনি। ৬০ বছর পর তা স্টেডিয়াম হয়ে উঠেছে এমিলি ইডেনের কল্যাণে। তখন ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের গভর্নর জেনারেল লর্ড অকল্যান্ডের বোন ছিলেন এই এমিলি ইডেন (আরেক বোন ফ্যানি ইডেন)। অকল্যান্ডের বোনদের নামেই এ স্টেডিয়ামের নামকরণ। বাইবেলের ‘গার্ডেন অব এডেন’ও নামকরণে ভূমিকা রেখেছে।

ইডেনের মালিকানা নিয়ে বিস্তর মতান্তর থাকলেও লোককথা অনুযায়ী, কলকাতার জমিদার বাবু রাজচন্দ্র দাস হুগলী নদীর পাড়ে তাঁর বাগান উপহার দিয়েছিলেন লর্ড অকল্যান্ড এবং তাঁর বোনকে। বাবু রাজচন্দ্র দাসের তৃতীয় কন্যাকে দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে সুস্থ করে তুলেছিলেন তাঁরা। বাগানের মালিকানা হাতবদল হওয়ার পর এর নাম ‘মার বাগান’ থেকে রাখা হয় ইডেন গার্ডেনস। অকল্যান্ডের বোনের নামে রাখা এ বাগানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই ইডেনের নামকরণ।

ইডেনে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ গড়িয়েছে ১৯৩৪ সালের ৫ জানুয়ারি। সে টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ড্র করেছিল সি কে নাইড়ুর ভারত। তখন থেকে হিসাব করলে এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো টেস্ট খেলার মাঠ এই ইডেন। এরপর উঠে আসবে যথাক্রমে চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম, দিল্লির অরুণ জেট লি (পূর্ব নাম ফিরোজ শাহ কোটলা), মুম্বাইয়ের ব্রাবোর্ন, কানপুরের গ্রিন পার্ক, লক্ষ্ণৌয়ের ইউনিভার্সিটি গ্রাউন্ড ও ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নাম।

ইংল্যান্ডের বাইরে প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনালও হয়েছে কিন্তু এই ইডেনেই। ১৯৭৫, ১৯৭৯ ও ১৯৮৩ বিশ্বকাপ ফাইনাল আয়োজিত হয়েছিল লর্ডসে। ১৯৮৭ বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল ভারত ও পাকিস্তান। ফাইনাল গড়িয়েছিল ইডেনের সবুজ গালিচায়। সে ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া।

কাল আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ হিসেবে মুখোমুখি হবে ভারত-বাংলাদেশ। এ টুর্নামেন্ট শুরুর দুই দশক আগে মাঠে গড়িয়েছিল এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। বর্তমানের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পূর্বসূরি হিসেবে ধরা হয় এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপকে। ঐতিহাসিক সে টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচটিও হয়েছিল ইডেনে। ভারতের মুখোমুখি হয়েছিল পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট মর্যাদা ফিরে পাওয়ার পর ১৯৯১ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছিল ইডেনে।

ভারতের দিবারাত্রির ম্যাচে গোলাপি বলের প্রথম ব্যবহারও হয়েছে ইডেনে। ২০১৬ সালে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল (সিএবি) আয়োজিত সুপার লিগের ফাইনাল হয়েছিল এ মাঠে। চার দিনের সে ম্যাচটি খেলা হয়েছিল গোলাপি বলে। এবার সেই ইডেনেই গোলাপি বলে প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট খেলবে দুই প্রতিবেশী দেশ।

এই ইডেন গার্ডেনসে খেলে গেছেন জ্যাক হবসের মতো কিংবদন্তি। জনশ্রুতি আছে, রঞ্জি সিংজিও দুটি ম্যাচ খেলেছিলেন, এর মধ্যে এক ম্যাচে তাঁর খেলা ১৩২ রানের ইনিংস মাঠে বসে দেখেছিলেন লর্ড কার্জন। এ মাঠে আয়োজিত নেহরু কাপে খেলে গেছেন উরুগুয়ের এনজো ফ্রান্সেস কোলি, আর্জেন্টিনার বুরুচাগা ও হাঙ্গেরির লাসলো কিসের মতো ফুটবলাররা। নিউইয়র্ক কসমসের হয়ে পেলেও খেলেছেন ইডেনে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *