ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে বিশ্বজুড়ে বনভূমি উজাড় হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী এক কাজ করে দেখিয়েছে আফ্রিকার দেশ গ্যাবন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় নিজেদের বনভূমি সংরক্ষণ করে পুরো বিশ্বের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ স্থাপন করেছে দেশটি। আর এই কাজের জন্য ‘পুরস্কার’ হিসাবে ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পাবে গ্যাবন, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১ হাজার ২৬৭ কোটি টাকা।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১০ বছর ধরে গ্যাবনকে ধাপে ধাপে এই অর্থ দেবে ইউরোপের দেশ নরওয়ে। মূলত প্রাকৃতিক বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও গাছ কাটার হার কমিয়ে আনায় সাফল্য দেখানোয় এক চুক্তির আওতায় প্রথম আফ্রিকার দেশ হিসেবে গ্যাবনকে এই অর্থ দেবে নরওয়ে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট’–এ এই চুক্তির ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়া হয়। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণের হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটির অংশ হিসেবেই এই চুক্তি করা হয়েছে।
গ্যাবনের জলবায়ু ও পরিবেশমন্ত্রী ওলা এলভেস্টুয়েন বলেছেন, ‘এই চুক্তি বনাঞ্চল রক্ষায় গ্যাবনের প্রচেষ্টাকে আরও অনুপ্রাণিত করবে। গ্যাবনের মোট ভূখণ্ডের ৮৮ শতাংশই বনভূমি। আমি আশা করছি, এই চুক্তির ফলে বনভূমির হার ৯৮ শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।’
গ্যাবন
অবস্থান: আফ্রিকা মহাদেশ
রাজধানী: লিবরেভিলে
আয়তন: ১ লাখ ৩ হাজার ৩৪৭ বর্গকিলোমিটার
জনসংখ্যা: ১৫ লাখ
কিন্তু কোন চুক্তির আওতায় গ্যাবনকে এই অর্থ দিচ্ছে নরওয়ে? বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সেন্ট্রাল আফ্রিকান ফরেস্ট ইনিশিয়েটিভ (সিএএফআই) নামক চুক্তির আওতায় এই অর্থ পাচ্ছে গ্যাবন। গতকাল রোববার দুই দেশের চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। মূলত ২০০৫ থেকে ২০১৪—এই ১০ বছরে মোট কার্বন নিঃসরণের চেয়ে ২০১৬ সালে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার পুরস্কার হিসাবে এই অর্থ পাচ্ছে গ্যাবন। দেশটিকে আগামী ১০ বছর প্রতিবছরে ১৫ মিলিয়ন করে মোট ১৫০ মিলিয়ন ডলার দেবে নরওয়ে।
শুধু গ্যাবন নয়, বনাঞ্চল সংরক্ষণে সাফল্য দেখাতে পারলে মধ্য আফ্রিকার আরও পাঁচটি দেশ এই চুক্তির আওতায় অর্থ পাবে। বাকি দেশগুলো হলো ক্যামেরুন, কঙ্গো, গিনি, কঙ্গো ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর সিএএফআই এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘এই চুক্তি অনেক দিক থেকেই ঐতিহাসিক। এই প্রথমবারের মতো কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনায় আফ্রিকার কোনো দেশকে ১০ বছর মেয়াদে অর্থ দেওয়া হচ্ছে।’
গ্যাবনের মোট ভূখণ্ডের শতকরা ৮৮ ভাগই বনভূমি। দীর্ঘদিন ধরেই আফ্রিকায় বনভূমি সংরক্ষণে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করে আসছে গ্যাবন। পুরো আফ্রিকার প্রায় ৬০ শতাংশ বন্য হাতির বসবাস গ্যাবনের বনাঞ্চলে। ২০০০ সালের পর থেকে দেশজুড়ে ১৩টি সবুজ পার্কও নির্মাণ করেছে দেশটি। একটি পার্ক ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়ও জায়গা করে নিয়েছে।