বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেইট থেকে রিকশা নিলাম। ক্যাফেটেরিয়ার সামনে রিকশা থেকে নামতেই পেছন থেকে একজন বলে উঠল, “ভাই চা খাবেন?”
তাকিয়ে দেখি কালো টিশার্ট পড়া একটা শিশু এক হাতে সাদা রঙের একটা ফ্লাস্ক আর লাল রঙের বালতি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করলাম রঙ চা নাকি দুধ চা? হাসি দিয়ে বলল, “ভাই দুধ চা বেচি না, রঙ চা। খাবেন?” বললাম, দাও। চা খেতে খেতে কথা হলো তার সাথে।
নাম মাকাদুল। বয়স ১৩। একমাস বয়সে হারিয়েছে মাকে। বাবা থেকেও না থাকার মতো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই ইসলামনগরে থাকে নানা নানীর কাছে। নানা নানীর অভাবের সংসারে অল্প বয়সেই তাকে নামতে হয়েছে কাজে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফ্লাস্ক আর বালতি হাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করে সে। অভাবে টাকা দিয়ে স্কুলে পড়ার সুযোগ হয় নাই তার। কাজের ফাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের কাছে পড়ে মাকাদুল। ভাই বোনের কথা জিজ্ঞেস করতেই মাকাদুল বলে, “এক বোন, বিয়া দিয়া হালছি, গার্মেন্টসে কাজ করে। আর ভাই রাজমিস্ত্রির কাজ করে।”
“সারাদিন চা বেইচা দুইশো টাকা পাই। নানী সেখান থেকে আমাকে ৬০ টাকা দেয়,” বলছিল মাকাদুল।
সাইকেল চালাতে আর ঘুরতে ভালো লাগে তার। সুযোগ পেলেই ক্যাম্পাসের বড় ভাইদের সাইকেল চালায় সে। মাকাদুল বলে, “নিজের সাইকেল নাই তাই বড় ভাইদের সাইকেল চালাই।”
“চা বিক্রির পাশাপাশি সুযোগ পেলেই বন্ধুদের সাথে খেলি।”
কিন্তু মাকেও বেশ মনে পড়ে মাকাদুলের। মার কথা আসতেই চোখ দুটি পানিতে টলমল করে উঠল ওর। বাবা খোঁজ খবর নেয় কিনা জানতে চাইলে সে বলে, “বাবা আরেকটা বিয়ে করার পর আমার খোঁজ নেয় না।”