উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

শতাধিক উপন্যাসের লেখক কাসেম বিন আবুবাকারের সাক্ষাৎকার

ফুটন্ত গোলাপ, বিলম্বিত বাসর, বিদায় বেলাসহ শতাধিক উপন্যাস লিখেছেন কাসেম বিন আবুবাকার। ‘মোল্লার বই চলে না’ এই অজুহাতে প্রথম বই প্রকাশ হতেই কেটে যায় আট বছর। পরবর্তীতে যখন তার প্রথম বই প্রকাশ পায় তখন থেকেই মেলে অভূতপূর্ব সাড়া। তিনি এমন এক শ্রেণির জন্য লেখা শুরু করেন, অন্য লেখকরা যার কোনো সন্ধানই পাননি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে আছে তার অগণিত পাঠক। কিন্তু কখনই মূলধারার মিডিয়ায় শিরোনাম হননি। উল্টো সমালোচিত হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে। এসব নিয়েই বাংলাদেশ প্রতিদিনের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। অকপটে জবাব দিয়েছেন সব সমালোচনার। সেই আড্ডার বিস্তারিত তুলে ধরেছেন— রণক ইকরাম ও তানভীর আহমেদ

কাসেম বিন আবুবাকার লেখালেখি শুরু করেন ৭০ দশকে। কোনো প্রকাশকই তার প্রথম বই প্রকাশে রাজি হয়নি। পরবর্তীতে যখন তার প্রথম বই প্রকাশ পায় তখন থেকেই তা দেশের আনাচে-কানাছে বিক্রি হওয়া শুরু হয়। তিনি এমন এক শ্রেণির জন্য লেখা শুরু করেন, অন্য লেখকরা যার কোনো সন্ধানই পাননি। ফলে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ক্রমে। মুগদায় তার সন্তানের লাইব্রেরিতে বসে কথা হচ্ছিল কাসেম বিন আবুবাকারের সঙ্গে। সাদা-দাড়ি আর টুপিতে বয়োবৃদ্ধ মানুষটিকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনিই স্কুল-কলেজগামী তরুণদের জন্য একে একে শতাধিক প্রেমের উপন্যাস লিখেছেন। তবে অন্য সব প্রেমের উপন্যাসের চেয়ে তার উপন্যাসের সবচেয়ে বড় পার্থক্য সেখানে নায়ক বা নায়িকা যে কোনো একজন ধর্মভীরু হবেন। সে ইসলামের আলোকে তার সঙ্গীকে সুপথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবে। নামাজ পড়ার কথা বলে ইসলামের আলোকে পথ চলার কথা বলে। সাফল্যও আসে। নায়ক-নায়িকার মিলনও হয়। তবে অনেক পাঠকই বলছেন ইসলাম তো এসব সমর্থন করে না। তার লেখার সাহিত্যমান নিয়েও অনেকের অনেক রকম প্রশ্ন। কদিন থেকে বিশ্বমিডিয়ায় উঠে এসেছে তার পাঠকপ্রিয়তার গল্প। বাংলাদেশের মূলধারার মিডিয়ায় কখনই স্বীকৃতি মেলেনি তার। এরপরও তার প্রকাশিত শতাধিক উপন্যাসের অধিকাংশই বেস্ট সেলার। মূলধারায় স্বীকৃতি না মেলায় তার আক্ষেপ যেমন নেই, তেমনি নিজের সীমাবদ্ধতার কথাও অকপটে স্বীকার করেছেন। বলেছেন অনেক না বলা কথাই। কাসেম বিন আবুবাকারের সঙ্গে কথোপকথনের চুম্বকাংশ দেখে নেওয়া যাক।

দেশে আপনার বই প্রচুর বিক্রি হলেও কেউ সেভাবে আপনাকে চেনেন না। মূলধারার মিডিয়ায় ওভাবে ফোকাস নন আপনি। এর মধ্যেই গত কদিন থেকে বিশ্ব মিডিয়ায় আপনাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আপনি কীভাবে দেখছেন?

— আমি আসলে কখনো এসব নিয়ে ভাবিনি। কীভাবে যেন ওরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। ওদের সঙ্গে কথা বলে ভালোই লাগছে। এখন অনেকেই কল করছে। খোঁজখবর নিচ্ছে। এতদিন একতরফা কেবল পাঠকের কাছ থেকেই চিঠি পেয়েছি। তাদের অনুভূতির কথা জেনেছি। এখন এর বাইরেই অনেকে কথা বলছে। ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। আবার অনেকে বাজে কথাও বলছে। আমি তো ফেসবুক না কি এসব বুঝি না, আমার নাতনি আমাকে বলেছে অনেকে নাকি অনেক কথা বলেছে। আমার কোনো কিছুতেই কিছু বলার নেই। আমি শুধু জানি, আমি যেমন চেয়েছিলাম তাই পেয়েছি।

কী চেয়েছেন, আর কী পেয়েছেন?

— আমি আমার লেখার মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জীবনাচরণ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চেয়েছি। পাপের পথ থেকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য ইসলামের যে বিধান, সেই বিধানকে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্যই আমার লেখালেখির সূচনা। আর কী পেলাম সেটা তো দেখছেনই। শতাধিক বই বাজারে এসেছে। বই পড়ে অনেক পাঠকই নিজেদের পাল্টে যাওয়ার কথা বলেছেন।

আপনি তো বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত ছিলেন একসময়। তো নিজেই লেখক হয়ে যাওয়া অর্থাৎ লেখালেখির চিন্তাটা এলো কীভাবে?

—প্রথমে আগ্রহের কথাটাই বলি। পড়ার ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। বাবা-মার কারণে। পারিবারিকভাবেই নজিবর রহমান সাহিত্যরত্নের আনোয়ারা, সালেহা উপন্যাস পড়ি। বই দুটি আমার খুব ভালো লাগে। এতে প্রেমের গভীরতা আছে। তখনো ভাবিনি আমি লেখক হব। দশ বছর শিক্ষকতার পর আমি মল্লিক ব্রাদার্সে চাকরি নিই। তখন আমার পড়ার সুযোগ যেমন বাড়ে, তেমনি শহরের তরুণ-তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। তখন শহুরে ছেলে-মেয়েদের আধুনিকতার নামে উদ্ভিন্ন জীবনাচরণ আমাকে ভাবিয়ে তোলে। তখনই খেয়াল হলো গল্প-উপন্যাসে মুসলিম চেতনা, আদর্শ, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতি একেবারেই অনুপস্থিত। এখানে বলে রাখতে চাই মল্লিক ব্রাদার্স সায়েন্স ও কমার্সের বই বেশি করত। অধিকাংশই দামি এবং বিদেশি বই। সেখানে উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরাই বেশি আসত। তাদের পোশাক-আশাক চাল-চলন কখনোই শালীন ছিল না। তাদের আচার-আচরণ আমার কাছে খুব বাজে লাগত। এসব থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? খেয়াল করে দেখলাম সাধারণ বইয়ের পাশাপাশি গল্প-উপন্যাসের প্রতি এদের একটা ঝোঁক আছে। আমি এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইলাম।

আমার মনে হলো, যদি ভিন্ন কিছু লিখতে পারি, তাহলে আমি ইসলামী সংস্কৃতি, শিক্ষা ও জীবনাচরণ যুবক-যুবতীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারব। আর তখনই ইসলামী ভাবধারা রেখে উপন্যাস লেখায় কলম ধরলাম।

আপনি ইসলামী বিশ্বাস, চিন্তা ও আদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কলম ধরলেন, অথচ লিখলেন প্রেমের উপন্যাস। কিন্তু এ ধরনের প্রেম ও  ইসলামের মধ্যে অনেক দূরত্ব নয় কি?

— এ কথা আমাকে অনেকেই বলেছে। অনেক মৌলভীও এসে জিজ্ঞাসা করেছেন। আমি সচেতনভাবেই প্রেমের উপন্যাসে ইসলামের কথা বলি। কেউ কেউ আমাকে বলেছেনও আমি অর্থ উপার্জনের জন্য এমন করছি। কিন্তু আমি নিজে জানি আমি এটা কেন করছি। আমি প্রেমকে বাহন হিসেবে ব্যবহার করেছি। কারণ, আমরা যত বাধাই দিই না কেন, যুবকদের প্রেমবিমুখ করতে পারব না। তাই আমি প্রেমকেই বাহক হিসেবে বেছে নিয়েছি এবং বইয়ের মাধ্যমে তাদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছে দিলাম।

আপনি কি পেরেছেন ইসলামের কথাগুলো মানুষকে শোনাতে?

—  হ্যাঁ, আমি পেরেছি। ইসলামের বাণী ও কথা আমি মানুষকে শোনাতে পেরেছি। চিঠি, সাক্ষাৎ ও ফোনে বহু মানুষ আমাকে জানিয়েছেন, তারা আমার উপন্যাস পড়ে ইসলাম মানছেন। যেমন— পশ্চিমবঙ্গের চার ভাই আমাকে জানিয়েছে আমার উপন্যাস পড়ে তারা মাদক ছেড়েছেন।

উপন্যাসে লেখার আট বছর পর সেটি প্রকাশ হয়। এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো কেন?

— কারণ, প্রেমের উপন্যাসে ইসলাম নির্ভরতা। সবাই বলল, মোল্লার উপন্যাস চলবে না। অবশেষে সাহিত্যমেলার অরুণ বাবু ফুটন্ত গোলাপ বইটি প্রকাশ করেন এবং তিনি বলেন, আপনি লিখে যান আমি আপনার বই প্রকাশ করব। আমার লেখক হওয়ার পেছনে তার অনেক বড় অবদান আছে।

আপনার জন্ম আর শৈশব প্রসঙ্গে যদি বলতেন।

আমার জন্ম কিন্তু এ দেশে নয়। পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেছি আমি। আর সেখানেই আমার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেটেছে। আমি হাওড়া বোর্ড থেকে ম্যাট্রিক পাস করি। ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হলেও শেষ করতে পারিনি। বাবার বড় সন্তান হওয়ার কারণে পারিবারিক চাপ ছিল। ফলে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল আমাকে। তবে এতে আমার কোনো দুঃখ নেই। অনেকের তুলনায় আমার শৈশব বেশ আনন্দেই কেটেছে। আমিও দুরন্ত ছিলাম। বাবা-মা শিক্ষিত হওয়ায় পরিবার থেকেই অনেক কিছু শিখেছি। তাদের কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাই পরবর্তী জীবনে কাজে লেগেছে।

বাংলাদেশে কীভাবে এলেন?

বাংলাদেশে আসার ব্যাপারটা বললে কে কীভাবে নেবে আমি ঠিক জানি না। তবে বলতে দ্বিধা নেই। বাংলাদেশ বা তৎকালীন পাকিস্তানে আসার জন্য আমি স্বপ্নে আদিষ্ট হই। ফুরফুরা পীর সাহেবকে আমি স্বপ্নের কথা বললে তিনি বাংলাদেশে আসতে বলেন। তা ছাড়া আমাকে দুবার কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে গলা কাটতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে যাই এবং বাংলাদেশে চলে আসি।

আপনি বেশির ভাগই প্রেমের উপন্যাস লিখেছেন। সেখানে আপনার ব্যক্তিজীবনের প্রেম-ভালোবাসার ছায়া ছিল?

— তা তো ছিলই। আমার চারপাশের মানুষের গল্পও লিখেছি উপন্যাসে। মানুষ তো নিজেকে দিয়েই চারপাশ বিচার করে। তবে উপন্যাসে ইসলামের যে আদর্শ আছে, প্রেমের ছোঁয়া সেটাই বার বার এসেছে। প্রেমের উপন্যাস ছাড়াও শিশুদের জন্যও আমি বেশ কয়েকটি বই লিখেছি।

হুট করেই আপনি আলোচনায় চলে এসেছেন। মূলধারার মিডিয়াগুলোতে সেভাবে কখনই আলোচনায় আসেননি। এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ আছে?

— আমার পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি খ্যাতি বা টাকা-পয়সার জন্য লিখিনি। আল্লাহ আমাকে যা দিয়েছেন তা অনেক মানুষকেই দেননি।

অনেকেই আপনার উপন্যাসের সাহিত্যমান নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সাহিত্যের স্বীকৃতি বা পুরস্কার পাননি— এসব নিয়েও আক্ষেপ নেই?

—না, এসব নিয়েও আমার মনে কোনো আক্ষেপ নেই। আমি নিজেকে সফল বলেই ভাবি। আমি আমার সামর্থ্য অনুযায়ী লিখেছি। আর যে যেরকম সে সেভাবেই আরেকজনকে মূল্যায়ন করে। নিন্দুকেরা সেটাই করে। আমাকে অনেক সময় বন্ধুরা পরামর্শ দিয়েছেন মিডিয়ামুখী হতে। তারা বলতেন, মিডিয়ায় না গেলে পুরস্কার পাবেন না, কেউ দাম দেবে না। ইত্যাদি অনেক কথা। কিন্তু আমি তো এগুলোর জন্য লিখিনি।

আপনার কিছু পাঠকের কথা শোনা যায়, তারা রক্ত দিয়ে চিঠি লিখে, বিয়ে করতে চায়। এসব কী সত্যি?

— হ্যাঁ। এমন তো অনেকবারই হয়েছে। একবার রাজশাহী থেকে চারটি মেয়ে একসঙ্গে তাদের ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত পাঠায়। তারা লেখে, আমাদের যাকে আপনার পছন্দ তাকে আপনি বিয়ে করুন। তবে, পরে যখন জানতে পারে আমি বয়োবৃদ্ধ পরে আর যোগাযোগ করে না কেউ।

কেউ কেউ বলেন, আপনি নাকি জামায়াতি লেখক?

— না, আমি কোনো রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী না। একবার উপমহাদেশের বিখ্যাত কমিউনিস্ট নেতা কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ আমার একটি বই পড়ে সরাসরি প্রকাশকের কাছে হাজির হন। প্রকাশকের কাছে আমার সম্পর্কে জানতে চান। প্রকাশক বলেন, একজন হুজুর মতন লেখক। মনে হয়, জামায়াত করে। তখন কমরেড মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, জামায়াতে ইসলাম ও এই লেখকের ইসলাম ভিন্ন। এই লেখক জামায়াত করতে পারেন না।

হিমালয়ের পক্ষ থেকে  ধন্যবাদ—

— আপনাদেরও ধন্যবাদ।

যাকে নিয়ে লেখা ‘ফুটন্ত গোলাপ’

আমার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপন্যাস ফুটন্ত গোলাপ। প্রকাশকের কাছে শুনেছি এটি লাখেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। এই উপন্যাসটি যখন লিখি তখন মল্লিক ব্রাদার্সে চাকরি করতাম। একটি মেয়ে আসত, বিবিএর শিক্ষার্থী ছিল সে।  মেয়েটির পরনে মোটা কাপড়ের বোরকা থাকত। পাকিস্তান আমলে সেই বোরকাকে বলা হতো ফকিরনি বোরকা। আর্থিক অবস্থা যাদের খারাপ তারাই এ ধরনের বোরকা পরত। এই বোরকা পরার কারণে অনেকেই তাকে ডাকত ‘ফকিরনি’ বলে। এক দিন বোরকার আড়ালে চোখে পড়ল, ভিতরে সে দামি পোশাক পরেছে। রীতিমতো ‘রয়েল ড্রেস’। আমরা অবাক হয়ে গেলাম। কারণ এ ধরনের দামি পোশাক আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানরাই পরে। আমি মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলাম, ভিতরে রয়েল ড্রেস আর উপরে ফকিরনি বোরকা কেন? সে বলল, আপনি ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন? ইসলামের বিধান জানেন? ইসলাম বলেছে, বের হওয়ার সময় অনাকর্ষক পোশাক পরে বের হতে। মেয়েটির এ কথা আমাকে চমকে দিয়েছিল। পরে তাকে ঘিরেই আমি উপন্যাস লিখতে শুরু করি। আমার প্রথম উপন্যাস ফুটন্ত গোলাপের নায়িকার নামও আমি মেয়েটির নামে রাখি। উপন্যাসটি যখন লেখা শেষ হয়, তখনই আমি বলেছিলাম, আমার এই উপন্যাস এক দিন না এক দিন সবাই গ্রহণ করবে।

‘আমরাও চাই বাবা লেখালেখি চালিয়ে যাক’

কাসেম বিন আবুবাকারের ছেলে মনিরুল ইসলাম খান। তিনি মুগদায় একটি লাইব্রেরি দেখাশোনা করেন। বাবাকে নিয়ে তিনি বলেন—

মুগদায় আমাদের এই লাইব্রেরিটি রয়েছে প্রায় ১০-১২ বছর হলো। বাবাও এখানে এসে মাঝে মাঝে বসেন। তার বইয়ের পাঠকরা এখানে এসে বই কিনে তার সঙ্গে ছবি তোলে। মহল্লার সবাই না চিনলেও অনেকেই তাকে চিনেন। হুট করে কেউ যখন জানতে পারে তিনি ফুটন্ত গোলাপের লেখক তখন খুশি হয়।

বাবার লেখালেখি শুরু হয় মল্লিক ব্রাদার্সে কাজ করার সময়। শুরুর দিকে ইসলামী ভাবাদর্শের উপন্যাস বলে অনেকেই ছাপতে চায়নি। পরে অবশ্য সাহিত্যমালা এটি প্রকাশ করে। তার পর থেকেই মূলত তার জনপ্রিয়তা। চট্টগ্রাম, ফেনী, মাইজদী, হাটহাজারী মূলত ওই অঞ্চলে তার বই বেশি বিক্রি হয়। ওসব এলাকায় পান দোকানেও বাবার বই বিক্রি হয়। বাবার লেখার ভক্তরা বাবাকে চিঠি লিখেন। ইদানীং বিদেশি পত্রিকায় বাবাকে নিয়ে খবর ছাপা হওয়ার পর অনেকেই দেখা করতে আসছেন।

বাবার সঙ্গে আমরা চার ভাই অনেকটা বন্ধুর মতো। তিনি সকালে ফজরের নামাজের পর ও রাতে লেখালেখি করেন। অবসরে তিনি বই পড়েন। তার পড়ার ঘরে বড় দুটি বইয়ের সেলফ আছে। আমরা পরিবারের সবাই বাবাকে নিয়ে গর্বিত। আমরা সবাই চাই—তিনি লেখালেখি চালিয়ে যান।

 

কোরআন-হাদিসের আলোকে রোমান্টিসিজমের কথা লিখেছি

গত কদিন ধরে কাসেম বিন আবুবাকারকে নিয়ে বিশ্বমিডিয়ায় তোলপাড় চলছে। যুক্তরাজ্যের শীর্ষ সংবাদ মাধ্যম ডেইলি মেইল, মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ইয়াহু নিউজ, মধ্যপ্রাচ্যের আরব নিউজ, মালয়েশিয়ার দ্য স্টার ও মালয় মেইল, পাকিস্তানের দ্য ডন, ফ্রান্সের ফ্রান্স টোয়েন্টিফোর ও রেডিও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনাল, হাঙ্গেরির হাঙ্গেরি টুডে, বিবিসি বাংলাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম ফলাও করে কাসেমকে নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছে। সেখানে তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক বলা হয়েছে। আর তার উপন্যাসকে বলা হচ্ছে ইসলামী উপন্যাস।

দেশীয় সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ইসলামী উপন্যাস নামকরণের লেবাসে তার লেখা উপন্যাসে উঠে আসা অনেক বিষয়ই ইসলাম সমর্থন করে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো ইসলামী উপন্যাস লিখিনি। আমি ইসলামী ভাবকে কাজে লাগিয়ে উপন্যাস লিখেছি। কোরআন-হাদিসের আলোকে রোমান্টিসিজমের কথা লিখেছি। প্রেম তো থাকবেই। ভাইয়ের সঙ্গে, মায়ের সঙ্গে, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে, বিয়ের আগে প্রেমিকের সঙ্গেও থাকবে। কিন্তু সেই প্রেম ভেঙে গেলে প্রেমিকাকে এসিড ছুড়তে হলে সেটা তো প্রেম না, সেটা মোহ। আমার বইয়ের মধ্য দিয়ে আমি এগুলোই শেখাতে চেয়েছিলাম পাঠকদের।’

এখনো মেয়েরা নিজের রক্ত দিয়ে আমাকে প্রেমপত্র লিখে…

নিজের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে তার ভাষ্য, ‘এখনো মেয়েরা নিজের রক্ত দিয়ে আমাকে প্রেমপত্র লেখে। কেউ কেউ আমাকে বিয়ে করতেও পাগল।’ এই বৃদ্ধ বয়সেও ভক্তরা মধুর জ্বালা দেয় বলে জানান তিনি। ঢাকায় বইয়ের দোকানে বোরকা পরা নারীরা চলে আসে তার অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য। আর অসংখ্য চিঠি-তো আছেই। নিয়মিত এত চিঠি আসে যে পোস্ট অফিসের পিয়ন নাকি তাদের পরিবারের সদস্যর মতো হয়ে গেছে। বিয়ের প্রস্তাব বা প্রেমপত্র ছাড়াও অনেক দুর্নীতিবাজ আমলার চিঠিও পেয়েছেন বলে জানান তিনি। তারা কীভাবে তার বই পড়ে সৎ পথে ফিরে এসেছেন সেগুলো লেখা থাকে সেসব পত্রে।

ফুটন্ত গোলাপ আমাকে লেখক বানিয়েছে…

তার প্রথম উপন্যাসটির অফিশিয়াল সংস্করণ হয়েছে ত্রিশটির বেশি। বলা হয়ে থাকে এটি লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। লেখকের ভাষায় ‘উপন্যাসটি লিখেছিলাম ১৯৭০ সালে। আর এটি প্রকাশ পায় ১৯৭৮ সালে। অর্থাৎ লেখার পর দীর্ঘ আট বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু প্রকাশের পর আর অপেক্ষা করতে হয়নি। ফুটন্ত গোলাপই আমাকে লেখক বানিয়েছে।’

আমার যোগ্যতা এতটুকুই। এর চেয়ে বেশি পারব না…

পাঠকের কাছে সমাদৃত হয়েছে বই। কিন্তু এর সাহিত্যমান প্রশ্নবিদ্ধ। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ও অন্য সবাই বলছে সস্তা জিনিস। সাহিত্যমানে সস্তা হলেই নাকি তা বেশি জনপ্রিয় হয়। একই ধরনের সস্তা লেখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করার পর একটুও বিব্রত হলেন না কাসেম বিন আবুবাকার। বললেন, ‘আমাকে কখনো কখনো কোনো কোনো বন্ধু ও সুহৃদ বলেছেন, আপনার লেখার মান বৃদ্ধি করুন। আমি তাদের বলেছি, আমার পকেটে দশ টাকা আছে। আমি এর বেশি খরচ কীভাবে করি? আমার যোগ্যতা এতটুকুই। এর চেয়ে বেশি পারব না। আর সস্তা-দামি আমার কাছে বিষয় নয়। পাঠক গ্রহণ করেছে। সবাই পড়েছে, সেটাই আমার কাছে সবচেয়ে বড় সাফল্য।’

জীবনে প্রেম এসেছিল। কিন্তু তাকে শেষ পর্যন্ত পাইনি…

তার সব উপন্যাসের বিষয়ই প্রেম। কিন্তু এই মানুষটির জীবনে কি প্রেম এসেছিল? ছোটবেলা থেকেই সত্য কথা বলা শিখেছেন তিনি। এবারও মিথ্যা বললেন না। অকপটে স্বীকার করলেন তার জীবনে প্রেম এসেছিল। বললেন, ‘একজনকে অনেক বেশি ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু কপাল খারাপ। আমি তাকে পাইনি। আমার উপন্যাস ক্রন্দসী প্রিয়াতে আমি আমার নিজের প্রেমের গল্প বলেছি।’

প্রেম-ভালোবাসাকে আটকে রাখা যাবে না, কিন্তু শালীনতা রাখা যায়…

তার উপন্যাসে বিয়ের আগে নর-নারীর প্রেম দেখানো হয়। আবার উপন্যাসের নায়ক কিংবা নায়িকা যে কোনো একজন অবশ্যই নামাজি এবং ইসলামী হয়। বিয়ের আগের এই প্রেম কি ইসলাম সমর্থন করে? এ ব্যাপারে লেখকের বক্তব্য— ‘না না, ইসলাম এটা কোনোভাবেই সমর্থন করে না। প্রেম-ভালোবাসা আটকে রাখার বিষয় না। প্রেম-ভালোবাসা বন্ধ করা সম্ভব না। এটা কোনো না কোনোভাবে হয়ে যায়। তবে চাইলে এটাকেও সীমাবদ্ধ রাখা যায়। তাই আমি চাই, তারা এটা করুক। তবে তার মধ্যেও যেন শালীনতা থাকে। ছেলে-মেয়ে মিশবেই, কিন্তু কোন পর্যায়ের মেলামেশা ব্যভিচারে পরিণত হয়, সেটা জানতে হবে। আমি আমার উপন্যাসে প্রেম বিষয়টাকে একটা মাধ্যম হিসেবে নিয়েছি। নইলে আমার বই কেউ পড়ত না। প্রেম-ভালোবাসা থাকার কারণে অনেকে বই পড়েছেন। আবার বই পড়েই অনেকে নামাজ পড়তে শুরু করেছেন, ঘুষ-দুর্নীতিসহ খারাপ কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।’

এখন আর লিখতে পারি না, ভুলে যাই— খেই হারিয়ে ফেলি…

এখন তার আর নতুন কোনো বই বের হচ্ছে না। কেন? সহজেই উত্তর দিলেন। কণ্ঠে তীব্র অপ্রাপ্তি। বললেন, ‘বছর দুয়েক হলো আমি আর লিখি না। মাঝখানে বেশ অসুস্থ ছিলাম। এখন খানিকটা সুস্থ বোধ করলেও লিখতে পারি না। আমার বয়স হয়েছে। এখন কিছু লিখতে গেলেই ভুলে যাই। খেই হারিয়ে ফেলি। কিন্তু আমার পাঠকরা চায় আমি আরও লিখি। আমার ছেলেরাও বার বার বলে আমি যেন লেখালেখিটা চালিয়ে যাই। চেষ্টাও করেছি। কিন্তু ঠিক পেরে উঠছি না। আত্মজীবনী লেখার চেষ্টা করছি। দেখা যাক, কতদূর কী লিখতে পারি।’




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *