আমদানি মূল্য সময়মতো পরিশোধ না করায় বাংলাদেশের পাঁচ বেসরকারি ব্যাংককে ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করেছে চীন। এর ফলে চীনের ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের এই পাঁচ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ করছে। বেসরকারি খাতের ব্যাংক পাঁচটি হলো ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ন্যাশনাল, পদ্মা (সাবেক ফারমার্স) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চীনে একটা প্রতারক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা দেশটির বিভিন্ন ব্যাংকের সহায়তায় রপ্তানি ঋণপত্র নিলেও ঠিকমতো পণ্য পাঠাচ্ছে না। এ কারণে অনেক সময় খালি কনটেইনারও আসার ঘটনাও ঘটেছে। আবার বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির কোনো নথিও নেই। এরপরও তারা পণ্যমূল্য দাবি করছে। এসব ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত করছে, আদালতে মামলাও চলছে। এরপরও চীন একরকম জোর করে এ দেশের ব্যাংকগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে চীনের দুষ্টচক্রের ফাঁদে পড়েছে দেশের এই পাঁচ ব্যাংক। এক দশক আগে ভারতের কয়েকটি ব্যাংকও একই সমস্যা পড়েছিল বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন সম্প্রতি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে চিঠি দিয়ে বিষয়টি সুরাহার তাগিদ দিয়েছে। তারা এ-সংক্রান্ত চিঠিও পাঠিয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকে। সংগঠনটির সভাপতি কে আই হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন সরকার বাংলাদেশের পাঁচটি ব্যাংককে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এ কারণে এসব ব্যাংকের মাধ্যমে আমরা চীন থেকে পণ্য আমদানি করতে পারছি না। বিষয়টি সুরাহার জন্য আমরা চীন দূতাবাসের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চায়। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
কে আই হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর বিষয়টি নিষ্পত্তির ব্যাপারে আগ্রহ কম। এ কারণে নতুন নতুন সমস্যা যুক্ত হচ্ছে। আরও অনেক ব্যাংক কালো তালিকায় যুক্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সম্প্রতি বাংলাদেশের চীনা দূতাবাসের ওয়েবসাইটে একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ফারমার্স ব্যাংকের নাম পরিবর্তন করে পদ্মা ব্যাংক করার অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এ ব্যাংক চীন থেকে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে চীনের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিতে পড়েছেন। এ কারণে পদ্মা ব্যাংকের সব ঋণপত্র গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে দেশটির ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দেওয়া হয় ওই নোটিশে।
জানতে চাইলে পদ্মা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এহসান খসরু প্রথম আলোকে বলেন, ‘চীন থেকে পণ্য আমদানিতে যে ঋণপত্র খোলা হয়েছিল, তার পণ্যই আসেনি। এসব নিয়ে মামলা চলছে। এর মধ্যে তারা আমাদের কালো তালিকায় ফেলে দিয়েছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য চেষ্টা চলছে।’
গত মাসে ন্যাশনাল ব্যাংকের মহাখালী শাখায় চীন থেকে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলেন এক ব্যবসায়ী। তবে দেশটির ব্যাংক সেই ঋণপত্র গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করে। এ বিষয়ে জানতে ন্যাশনাল ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এদিকে ২০০৮ সাল থেকে চীনে কালো তালিকাভুক্ত রয়েছে ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। এ বিষয়ে জানতে গতকাল ইসলামী ও সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, ‘চীনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিল বকেয়া নেই। তাই কালো তালিকাভুক্ত করার প্রশ্নই আসে না। অন্য দেশের মতো চীনের ব্যাংকগুলোর সঙ্গেও আমাদের স্বাভাবিক ব্যবসা চলছে।’
বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা চীন থেকে পোশাক তৈরির বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, সরঞ্জাম নিয়ে আসে। এর বাইরে শিল্পের কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি, মধ্যবর্তী পণ্য, সিরামিক, শিশু খেলনাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আসে চীন থেকে। দেশের মোট আমদানির এক-চতুর্থাংশই আসে চীন থেকে।