চলতি বছরের ১ জানুয়ারী থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে মোট ৮২৬ জন শিশু বিভিন্ন প্রকার সহিংসতার শিকার হয়েছে, যার মধ্যে মামলা হয়েছে ৫৫১টি। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক)’র গবেষণা তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিাইপি লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে কোয়ালিশনের পক্ষে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা। জাতীয় কন্যা শিশু এডভোকেসি ফোরামের সচিব নাসিমা আক্তার জলি, সিভিল সোসাইটি অ্যান্ড পলিসি অ্যাডভোকেসির ম্যানেজার রাশেদা আক্তার, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের সৈয়দা হুসনে কাদেরী, পলিসি এবং এডভোকেসির ম্যানেজার ফরিদা ইয়াসমিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দিয়ে শিশু নির্যাতন রোধে তুলে ধরা সুপারিশে বলা হয়- সকল ক্ষেত্রে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধ করতে একটি স্বতন্ত্র আইন প্রনয়ণ করা এবং তা সঠিকভাবে কার্যকর হচ্ছে কিনা তার পরীবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার সব ঘটনাকে সব্বোর্চ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম সম্পন্ন করারও দাবি জানানো হয়।
এদিকে গবেষণা তথ্যে আরো বলা হয়- ৪৭১টি ধর্ষণের ঘটনায় (এর মধ্যে ১৫ জন ছেলে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে) মামলা হয়েছে ৩৯০টি; ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে ১০৪টি, শিশু ধর্ষণের মামলা হয়েছে ৮৪টি; হত্যার শিকার হয়েছে ২২৪জন শিশু, আর শিশু হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে মাত্র ৮৭টি। অর্থ্যৎ শিশু হত্যার ক্ষেত্রে মামলা দায়েরের হার মাত্র ৩৮.৮৪%; আত্মহত্যা করেছে ২৯ জন শিশু এবং রহস্যজনক মৃত্যু ঘটেছে ৩৭জন শিশুর। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষক কর্তৃক মোট ৭৬ জন শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে মামলা হয়েছে ১০টি ঘটনায় এবং শিক্ষক কর্তৃক মোট ২৭ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে মামলা হয়েছে ১৫টি ঘটনায়। তাছাড়া বিভিন্নভাবে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৮০ জন শিশু, যার মধ্যে মামলা হয়েছে ২৫টি ঘটনায়।
আসকের তথ্যানুযায়ী, শিশুর প্রতি সহিংসতার ধরণ বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ৭-১৮ বয়সী শিশুরাই বেশী সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আসক এর গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ধর্ষণের শিকার ৯০ শতাংশই শিশু এবং কিশোরী। এ ব্যাপারে আসকের পক্ষ থেকে বলা হয়- শিশুদের প্রতি সহিংসতার এই ক্রমবর্ধমান হার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এছাড়াও শিশুরা বিভিন্ন তুচ্ছ কারণে প্রতিনিয়ত শারীরিক, মানসিক শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছে। আরও লক্ষণীয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি রহিত করা সংক্রান্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও সরকারের এ সংক্রান্ত পরিপত্র সত্ত্বেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান অব্যাহত রয়েছে। শুধু তাই নয় পরিবার, সমাজ ও সর্বত্র শিশুকে শারীরিক শাস্তি প্রদান এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। শিশুর প্রতি সহিংসতার এসকল ক্ষেত্রে বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি বিদ্যমান, যা শিশুর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বলে কোয়ালিশন মনে করে।