মুসলেহ উদ্দীন ভুঁইয়াঃ রোহিঙ্গা সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে দক্ষিণ কোরিয়াকে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত ১১ লাখ রোহিঙ্গা এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। মানবিক কারণে এ সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক মহলের এবং দ্বিপক্ষীয় চাপ অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। সম্প্রতি সফররত কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে ব্যবসা বাণিজ্য-ক‚টনীতি-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ঢাকা-সিউল দুটি সমঝোতা স্মারকসহ তিনটি চুক্তি সই হয়। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান, টানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১০ বছরে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংসা করেন তিনি। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য যা যা করা সম্ভব সবই করবে কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি গতকাল রবিবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে টাইগার গেটে তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা। প্রথমে একান্ত বৈঠকে বসেন দুই প্রধানমন্ত্রী, তারপর হয় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। বৈঠকে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও বিনিয়োগের সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরেন। এরপর বাংলাদেশে জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা করতে চায় দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু বিদ্যুতেও তারা আগ্রহী। তিনি বলেন, বৈঠকে শেখ হাসিনা দুই দেশের সহযোগিতা আরো বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে কোরিয়ার বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোরিয়া এটা বিবেচনা করবে বলে জানিয়েছেন। এছাড়া কোরিয়া তার বৈদেশিক উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) থেকে বাংলাদেশের জন্য এক বিলিয়ন বরাদ্দ রেখেছে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশের এক হাজার ছাত্র কোরিয়াতে পড়াশোনা করেন। যাদের মধ্যে অনেকে বৃত্তি পায়। এটা আরো বাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী।
প্রসঙ্গত, দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত শনিবার ৬৮ সদস্যের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলসহ ঢাকায় এসেছেন কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক-ইয়োন। গতকাল সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান তিনি। এরপর ঢাকা ইপিজেডে ইয়ংওয়ানহাইটেক স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড পরিদর্শন করেন তিনি। পরে ঢাকার মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড নার্সিং এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন তিনি। লি তার সফরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে তিন চুক্তি স্বাক্ষর
এদিকে বিনিয়োগ, কূটনীতি ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি তায়েহো ও বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার প্রথম এমওইউতে নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী লি নাক ইয়োনের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে চুক্তিগুলো স্বাক্ষর হয় বলে ইউএনবি’র একটি খবরে বলা হয়েছে।
চুক্তি তিনটির মধ্যে প্রথমটি হলো- কোরিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ন্যাশনাল ডিপ্লোমেটিক একাডেমি ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। দ্বিতীয়টি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কোরীয় ট্রেড ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি এবং বালাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলোপমেন্ট অথরিটির মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। তৃতীয়টি বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে ২০১৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি সংক্রান্ত বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর।
দক্ষিণ কোরিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লি তায়েহো ও বাংলাদেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির প্রিন্সিপাল সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার প্রথম এমওইউতে নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন। কোরিয়ার বাণিজ্য বিনিয়োগ প্রমোশন এজেন্সির মুখ্যনির্বাহী কর্মকর্তা পিয়ং ওহ ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট অথরিটির নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল হক দ্বিতীয় এমওইউতে নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন। আর দক্ষিণ কোরিয়ার উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লী তায়েহো ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. আবু হেনা মোস্তফা কামাল নিজ নিজ পক্ষে তৃতীয় এমওইউতে স্বাক্ষর করেন।