উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

চীনের দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় স্থান

আয়তনে বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম দেশ চীন। জনসংখ্যার দিক দিয়ে যার অবস্থান প্রথম। দেশটি সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের দিক দিয়ে খুবই সমৃদ্ধ। চীনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পাহাড়, নদী, সমুদ্রসহ আধুনিক নগরায়নের জন্যই সারা বিশ্বের ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আর তাই চীন বিশ্বের পর্যটন গন্তব্যস্থলগুলির মধ্যে অন্যতম। চলুন এ পর্বে দেখে নেই চীনের সবচেয়ে দর্শনীয় ও আকর্ষণীয় ৫টি স্থান সম্পর্কে।

চায়নাতে তাইওয়ানসহ মোট ২৩ টি প্রদেশ রয়েছে। আরো রয়েছে চারটি মিউনিসিপ্যালিটি, পাঁচটি স্বায়ত্ত¡শাসিত ও দুটি বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল (হংকং ও ম্যাকাওসহ)। এর মধ্যে কুনমিং হচ্ছে ইউনান প্রদেশ আর গুয়াংজু হচ্ছে গুয়াংডং প্রদেশের রাজধানী শহর। আর চীনের রাজধানী বেইজিং শহর থেকে ৩২০০ কিলোমিটার দূরে কুনমিং। আবার কুনমিং থেকে গুয়াংজু ১৩৭৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আমরা অর্থাৎ আমি আর আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে পড়–য়া মেয়ে গত ২২ ডিসেম্বর ২০১৬ খ্রি. তারিখে কুনমিং অবতরণ করি। এই সফরটি ছিল মূলত চায়নার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে তার পাওয়া একটি আমন্ত্রণপত্রের ভিত্তিতে। আমি তার সফরসঙ্গী হয়েছিলাম মাত্র। আমাদের ফ্লাইট ছিল ২২ ডিসেম্বর ২০১৬। আমাদের ফ্লাইট ছিল চায়না ইস্টার্ন-এর বেলা ২:৪৫ টায় গট ২০৩৬ ফ্লাইটযোগে। চায়নার সময় আমাদের থেকে দুই ঘন্টা কম, অর্থাৎ আমরা যখন রওনা করছি ২:৪৫ টায়, তখন সেখানে ৪:৪৫ টা। আমরা কুনমিং পৌঁছলাম স্থানীয় সময় ৬:৫৫ টায়। যাত্রাসময় ২ ঘন্টা ১০ মিনিট।
আমরা কুনমিং বিমানবন্দরে পৌঁছলাম স্থানীয় সময় সন্ধ্যা  ৬:৫৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে চায়নার এই বিমানবন্দরটি সবচেয়ে নিকটবর্তী। এটি কুনমিং শহরের কেন্দ্র থেকে ২৪.৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা ২০১২ সালে চালু হয়েছে পুরনো Kunming Wujiaba International Airport এর পরিবর্তে। এটির মূল টার্মিনাল ৫৪৮,৩০০০ বর্গমিটার। ২০১৫ সালে হিসাব মতে এই বিমানবন্দরটি ৩৭ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে। আমাদের ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আয়তন ১,৯৮১ একর আর ২০১৪ সালে ৬.১ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহন করেছে। বিমানবন্দরটি দেখতে বেশ দৃষ্টিনন্দন। কুনমিং শহরটি ইউনান প্রদেশের রাজধানী এবং সবচেয়ে বড় শহর। এছাড়া শহরটি প্রদেশের প্রধানতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র। শহরটি বেশকিছু ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থানের জন্যও বিখ্যাত। শহরটি তার আবহাওয়ার জন্য বসন্ত নগরী (Spring City) হিসাবেও পরিচিত। শহরটির বয়স মোটামুটি ২৪০০ বছর বলে বলা হয় এবং ৮,১১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের কুনমিং-এর জনসংখ্যা ২০১৪ সালের হিসাব মতে ৬৬ লক্ষ। এখানে কাউন্টি পর্যায়ের বিভাগ (County-level Divisions) রয়েছে ১৪ টি।
আমরা বের হলাম কুনমিং-এর দর্শনীয় স্থান Jiuxiang Scenic Region দেখতে, যা Yiliang County তে অবস্থিত। এখানে রয়েছে অতি প্রাচীন একটি পাহাড়ের ভিতরে বিস্তীর্ণ গিরীগুহা, যা Museum of Karst Caves নামে পরিচিত। Karst হচ্ছে চুনাপাথরের পাহাড়ের গায়ে এক ধরনের প্রাকৃতিক স্থাপত্যশৈলী যা দেখলে মনে হবে কোন শিল্পীর হাতে তৈরি অপরূপ শিল্পকর্ম। মূলত ঊনবিংশ শতাব্দিতে জার্মানীতে এই শব্দটি উৎপত্তি যা স্লোভিয়া ও ইটালীর সীমান্তবর্তী জার্মানীর উত্তরাঞ্চলীয় Adriatic Karst এলাকার নামানুসারে করা। এভাবে Karst Caves নামের এলাকাগুলো হচ্ছে এরূপ স্থাপত্যশৈলী সম্বলিত পাহাড়ের আভ্যন্তরীণ গিরীগুহা। বিশ্বে এধরণের নামকরা গুহাগুলি স্লোভেনিয়া, ফ্রান্স, ফিলিপাইনে অবস্থিত। আমাদের দেখা কুনমিং-এর এই Karst Caves টিও বিশ্বে অত্যন্ত পরিচিত ও বিখ্যাত। এখানে ১০০ টিরও বেশী Karst Caves রয়েছে। আরো আছে পাহাড়, নদী, গভীর উপত্যকা এবং জমজ জলপ্রপাত। ২০০ বর্গমিটার এলাকা পাহাড়ের ভিতর দিয়ে বিশাল গিরীগুহা, যা বিভিন্ন বৈচিত্র্যে প্রাকৃতিক নিঃসর্গে ভরা। গুহাগুলি এমনই বৈচিত্র্যে ভরা যে, একেকটি স্থানে একেকটি নাম দেয়া হয়েছে। যেমন : সবচেয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ পাতাল গিরিখাদ, যা Terrifzing Gorge নামে পরিচিত। এটির দৈর্ঘ্য ৭০০ মিটার এবং গভীরতা প্রায় ১০০ মিটার। আর আছে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছায়াঘেরা সবুজ উপত্যকা (Green Shadz Valley), রয়েছে Bat Cave নামে খ্যাত গুহা, যেখানে হাজারো বাদুড়ের বসবাস ছিল বলে মনে হয়। এই গুহার দিকে তাকালে মনে হবে পাথর হয়ে যাওয়া বাদুড়গুলো এখনো ঝুলে আছে। এখানে দেখা যাবে ড্রাগন সদৃশ ভ‚গর্ভস্থ প্রবহমান নদী যা হেলান দেয়া গুহা যা খুরহম Lying Dragon Cave নামে পরিচিত, যেখানে জমজ জলপ্রপাত (Twin Waterfalls) একত্রে বয়ে নিচে পড়ছে, যা দেখেও মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। এখানে জলপ্রপাতের মাধ্যমে ৩০ মিটার উঁচু থেকে পানি পড়ছে, যার গভীরতা ১০ মিটারেরও বেশি। পানি পড়ার গতি প্রতি সেকেন্ডে ৩২০ কিউবিক মিটার। বর্ষাকালে এই জমজ জলপ্রপাত মিলেমিশে একাকার হয়ে একটিতে রূপান্তরিত হয় এবং হলুদ বর্ণের এক ড্রাগনের আকার ধারণ করে এবং প্রচণ্ড গর্জনের সাথে সেখান দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। রয়েছে দেবীর প্রাসাদ (Goddess Palace)। বিশ্বের বৃহত্তম আন্ডারগ্রাউন্ড হল, যার আয়তন ১৫,০০০ বর্গমিটার।
এটি কিছুটা পুরুষ সিংহের আকৃতির বলে এটিকে সিংহ হল (Male Lion Hall) বলা হয়ে থাকে। পুরো হলটিতে একটিও পিলার নেই। যা একেবারে অবিশ্বাস্য, না দেখলে বর্ণনা করা খুব কঠিন। রয়েছে চীনারা বিশ্বাস করে থাকেন যে, এই পর্বত-গুহায় অমর আত্মাদের বসবাস। তাই এই গুহা অমর গুহা (Immortals Cave) নামেও পরিচিত।
চীনদেশে বেইজিং-এর ৫,৫০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বিখ্যাত মহাপ্রাচীর ছাড়া আরো অনেক দর্শনীয় এলাকা রয়েছে, যা তাদের নিজেদের তৈরি। অনেকেই বলে থাকেন, বেইজিং ও সাংহাই শহর দেখলে পৃথিবীর আর কোনো শহর না দেখলেও চলে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে তৈরি নিঃসর্গও মহান স্রষ্টা যে সেখানে ঢেলে দিয়েছেন তা এসব দর্শনীয় স্থানসমূহ দেখলে বুঝা যায়। তবে এসব প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানসমূহের রক্ষণাবেক্ষণও যে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় তাও এসব দেখলে অনুধাবন করা যায়।

চেংদু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং: চীনের জায়ান্ট পান্ডা শুধুমাত্র চীনা পর্যটকদের কাছেই জনপ্রিয় না, এই প্রাণীটি পৃথিবী জুড়ে শিশু থেকে শুরু করে সবার কাছে জনপ্রিয়। আপনি যদি পাণ্ডা সম্পর্কে না জানেন তবে আপনার জন্য বলছি, চীনের জায়ান্ট পান্ডা ভালুকের মত দেখতে সাদাকালো রঙের এক প্রকার প্রাণী। চীনের অনেক চিড়িয়াখানাতেই আপনি এদের দেখতে পাবেন। তবে সবচেয়ে বেশি জায়ান্ট পাণ্ডার দেখা মেলে সিচুয়ান প্রদেশের চেংদু শহরে, যা জায়ান্ট পাণ্ডার হোমটাউন হিসেবে পরিচিত। এই শহরের উত্তরে অবস্থিত চেংদু রিসার্চ বেজ অব জায়ান্ট পান্ডা ব্রিডিং সেন্টারে প্রাকৃতিক পরিবেশে খুব কাছ থেকে এই কিউট প্রানিটিকে দেখার সুযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে মাত্র ৬টি বৃহৎ পাণ্ডা নিয়ে এই রিসার্চ সেন্টার এর যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে এই সেন্টারে ৮০টির মত জায়ান্ট পাণ্ডা রয়েছে। এখানে এখন পর্যন্ত ১২৪টি জায়ান্ট পাণ্ডার জন্ম হয়েছে। এখানে আপনি ভলান্টিয়ার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে পান্ডাদের কাছাকাছি যেতে পারেন এবং এদের জীবনধারণ ও বংশবিস্তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

লি নদী: চীনের গ্রামাঞ্চলের দিকে অবস্থিত লি নদী (Li River) বিখ্যাত এর ক্রিস্টাল ক্লিয়ার পানি, শহরের মধ্য দিয়ে আঁকাবাঁকা পথে বয়ে যাওয়া এবং নদী পাশের চমৎকার পাহাড়ের জন্য। গুইলিনে অবস্থিত এই লি নদী শিল্পীদের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। বলা হয়ে থাকে, লি নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে চীনের চিত্রশিল্পীগণ এবং কবিগণ তাদের শিল্পকর্মের প্রেরণা পেয়ে থাকেন। ৮৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লি নদীটির গুইলীং এবং ইয়াংসু এর মধ্যবর্তী স্থানটি সবচেয়ে বেশি সুন্দর। নদীটির দুপাশে চমকপ্রদ আড়াআড়ি পাহাড়, নলখাগড়ার বন, গ্রামগুলির সুসজ্জিত চাষাবাদ এবং ঘন বাঁশ বাগান পর্যটকদের নজর কেঁড়ে থাকে। মেঘলা এবং রৌদ্রজ্জ্বল দিনে লি নদীর অপরূপ সৌন্দর্য পর্যটকদের মন কেঁড়ে নেয়। পর্যটকদের সুবিধার্থে নদীটি ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছোট ছোট বাঁশের নৌকা এবং সুসজ্জিত জাহাজ রয়েছে। পর্যটকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী নৌকা বা জাহাজে চড়ে নদী ভ্রমণ করে থাকেন।
দ্য ট্যারাকোটা আর্মি: ১৯৭৪ সালে সাংহাই প্রদেশের সিয়ান শহরের প্রান্তদেশে সেখানকার কৃষকেরা খনন কাজের মাধ্যমে যে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি উন্মোচিত করে তা নিঃসন্দেহে চীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কার দ্য ট্যারাকোটা আর্মি। প্রায় ২০০ বছর ভূগর্ভস্থ ছিল এই টেরাকোটা আর্মি। এটি চীনের প্রথম সম্রাট কিন শি হুয়াং এর সমাধি মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত। আসলে এই টেরাকোটা আর্মি জীবন্ত কোন সেনাবাহিনী নয়। সম্রাট কিন শি হুয়াং এর মৃত্যুর পর স্থানীয় লিনথং জেলার কৃষকেরা সম্রাটের সম্মানার্থে এসব পোড়ামাটির সৈন্যবাহিনী তৈরি করে। এখানে মানুষের মত দেখতে ৮০০০ টি সৈন্য মূর্তি আছে যেগুলো লম্বায়ও প্রায় মানুষের মত। এই মূর্তিগুলোর একটির সাথে অন্যটির চেহারার মিল নেই। তাই নির্মাণের দক্ষতা দেখে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। সৈন্যর পাশাপাশি আরো রয়েছে ৫২০ টি ঘোড়া, ১০০ টির মত রথ এবং বেশকিছু বেসামরিক লোকজন। পোড়ামাটির এই সৈন্যবাহিনীতে সামরিক পদমর্যাদার স্বরূপ সাজানো হয়েছে। এক কথায় বলা যায়, প্রাচীন সামরিক বাহিনী যেভাবে সুসজ্জিত থাকতো, কৃষকদের তৈরি মূর্তিগুলোতে সেই রূপ দেয়া হয়েছে।

বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী: চীনের আরেকটি জনপ্রিয় পর্যটন স্থান হল বেইজিং এর নিষিদ্ধ নগরী। একসময় এই নগরীতে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল, তাই এর নাম হয় নিষিদ্ধ নগরী। এখানে চীনের প্রাচীন স্থাপত্যবিদদের দ্বারা নির্মিত এই প্রাসাদটিতে চার হাজারেরও বেশি সুসজ্জিত কামড়া রয়েছে। এসব কামড়াগুলিতে লাল এবং হলুদ রংয়ের কারুকার্য রয়েছে। এই প্রাসাদের ছাদ সোনা দিয়ে তৈরি। এটি ‘ইম্পেরিয়াল প্যালেস’ নামেও পরিচিত। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ জটিল প্রাসাদ। কথিত আছে এখানে ৯৮০টি ভবন ও ৯৯৯৯ টি কক্ষ আছে! মিং এবং কিং সম্রাটদের থেকে শুরু করে ১৯১২ সালে চীনের শেষ সম্রাট পুই পর্যন্ত এই প্রাসাদই ছিল সম্রাটদের বাসস্থান। বর্তমানে এই প্রাসাদটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

চীনের মহাপ্রাচীর: চীনে ভ্রমণের কথা উঠলেই আমাদের চোখের সামনে সবার আগে ভেসে উঠে চীনের মহাপ্রাচীর (The Great Wall of China) –‘দ্যা গ্রেট ওয়াল অফ চায়না’। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীর এবং চীনের প্রতীক। প্রাচীরটি চীনের পূর্ব উপকূল থেকে পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫,০০০ কিলোমিটার। গড়ে এর উচ্চতা প্রায় ৬ থেকে ৮ মিটার এবং কিছু কিছু জায়গায় প্রায় ১৬ মিটার পর্যন্ত। চীনের এই প্রাচীরটি বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি। প্রাচীন যাযাবর জাতি, বিশেষত, যাযাবর মঙ্গোলিয়ানদের থেকে বাঁচানোর জন্য চীনা সম্রাটরা এই প্রাচীর নির্মাণ করেন। চীনে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই দেখতে ভুলবেন না এই প্রাচীন আত্মরক্ষামূলক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনটি।

Potala Palace বা পোটালা প্রাসাদ তিব্বতের রাজধানী লাসায় অবস্থিত। Potalaka পর্বতের নামে এই প্রাসাদের নাম রাখা হয়েছে। ১৯৫৯ সালে তিব্বতের স্বাধিকার আন্দোলনে চীনের দমননীতি শুরু হলে ১৪তম দালাইলামা ভারতের ধর্মশালায় পালিয়ে যান। এর পূর্বে এটি দালাইলামার প্রধান বাসস্থান ছিল। ১৬৩৭ সালে তিব্বতের রাজা Songtsen Gampo চীনের ট্যাং শাসকদের রাজকন্যা Wen Chang-এর জন্য উপহার হিসেবে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন। ১৬৪৫ সালে এসে ৫ম দালাইলামা Lozang Gyatso তাঁর ধর্ম-বিষয়ক উপদেষ্টা Konchog Chophel এর উপদেশক্রমে আধুনিক Potala Palace-এর নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন। বর্তমানে জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত এই প্রাসাদটি পূর্ব-পশ্চিমে ৪০০ মিটার এবং উত্তর-দক্ষিনে ৩৫০ মিটার লম্বা। পাথর নির্মিত এই প্রাসাদের দেয়াল ৩ মিটার পুরু এবং এর ভিত্তি ৫ মিটার পুরু। ভুমিকম্প প্রতিরোধে এই প্রাসাদের ভিত্তিতে ব্যবহার করা হয়েছে তামা। ১৩ তলা বিশিষ্ট এই প্রাসাদে রয়েছে ১০০০ কক্ষ ,১০০০০ প্রার্থনা কক্ষ ও ২ লক্ষ মূর্তি।

আরো আছে: রেইনবো মাউন্টেইন, লাসায় অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ, সাংহাই এর দ্যা বান্ড, ভিক্টোরিয়া হারবার, হুয়াংশান এর হলুদ পাহাড় (মাউন্ট হুয়াং), হংজ়ৌ এর ওয়েস্ট লেক, লেশান জায়ান্ট বুদ্ধ, হানি টেরেস, লংমেন গুহা, ইয়ুংগ্যাং গুহা ইত্যাদি।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *