এবার ঈদের ছুটিটা বেশ লম্বা। পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও আশা করছেন, দীর্ঘ ছুটি থাকায় পর্যটকেরা পাহাড়, সবুজ-প্রকৃতি ও বৈচিত্র্য দেখতে আসবেন। পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক হোটেল-মোটেল ও কুটিরগুলো পর্যটক সেবায় ও আপ্যায়নে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বলে গতকাল রোববার পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। প্রশাসন ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পর্যটকদের সর্বোচ্চ সুবিধা ও নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নীলাচল ও মেঘলা পর্যটনে গিয়ে দেখা যায়, সবকিছু রঙিন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। নীলাচলের প্রবেশমুখে এখানকার এক কর্মী আদিব বড়ুয়া বলেন, কয়েক মাস ধরে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। এবার ঈদে তাঁরা আশা করছেন পর্যটকেরা এলে লোকসান পুষিয়ে নিতে পারবেন। সে জন্য সবকিছু আকর্ষণীয় করে রেখেছেন।
বান্দরবানের পর্যটনের আকর্ষণীয় স্পটগুলোর মধ্যে জেলা শহরের স্বর্ণমন্দির, রামজাদি, চিম্বুক পাহাড়ের নীলগিরি, চিম্বুকচূড়া, শৈলপ্রপাতও পরিচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। বান্দরবান হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হোটেল-মোটেল ও অবকাশ যাপন কেন্দ্রে সর্বোচ্চ আপ্যায়ন সুবিধা দিতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। হোটেল-মোটেলগুলোতে আগাম ভাড়া (বুকিং) হয়ে যাচ্ছে। কাল-পরশুর মধ্যে পর্যটকেরা আসা শুরু করবেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত ডিপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, নীলাচল, নীলগিরি, চিম্বুক, মেঘলা, বগা লেক, কেওক্রাডং ও তাজিংডং পাহাড়ের সবুজ প্রকৃতির বৈচিত্র্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকেরা আসেন। সব পর্যটন স্থানে নিরাপত্তার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কীভাবে যাবেন বান্দরবান: চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বাসে সরাসরি বান্দরবানে আসা যায়। অথবা কক্সবাজার হয়ে আসতে চাইলে কক্সবাজার-বান্দরবান বাস সার্ভিস রয়েছে। কক্সবাজার-চট্টগ্রামের গাড়িতেও সাতকানিয়ার কেরানীহাট হয়ে বান্দরবানে সহজে আসা যায়। রাঙামাটি হয়ে এলে বাঙামাটি-বান্দরবান সরাসরি বাস চলাচল করে।
বান্দরবান এলে কোথায় ঘুরে বেড়াবেন: বান্দরবান মানে ক্লান্তিহীন ঘুরে বেড়ানো। এখানে বৈচিত্র্য দেখার ও ছুটে চলার জায়গার অভাব নেই। জেলা শহর ও শহরতলির স্বর্ণমন্দির, মেঘলা পর্যটন, নীলাচল, রামজাদি, শৈলপ্রপাতসহ বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে সারা দিন ঘুরে বেড়ানো যায়। সাঁতার জানা থাকলে সাঙ্গু নদে নৌকা ভ্রমণেও সমস্যা নেই। একটু দূরে এক প্যাকেজে শৈলপ্রপাত চিম্বুক, সীতা পাহাড়, নীলগিরি, জীবননগরে যাওয়া যায়। সেখানে নির্জন-নীরব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনধারা জেনে নেওয়া যায়।
বান্দরবানের দুর্গম উপজেলা থানচির দক্ষিণে তিন্দু, রেমাক্রি, নাফাকুম, বড় মদক ও সাঙ্গু প্রাকৃতিক সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ঘুরে বেড়ানোর রোমাঞ্চই আলাদা। রুমা উপজেলায় বগা লেক, কেওক্রাডং, তাজিংডং সহজে যাওয়া যায়। একটু বেশি অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় হলে বান্দরবানের থানচি থেকে রংরাং পাহাড় ও ডিম পাহাড় ও আলীকদমের আলী সুড়ঙ্গ ও লামার মিরিঞ্জা পাহাড় হয়ে কক্সবাজার যাওয়াও সম্ভব। নিজের গাড়ি না থাকলে জেলা শহরের অফিসার্স ক্লাবসংলগ্ন এলাকায় রেন্ট-এ-কারের ভাড়া নেওয়া যায়।
বান্দরবানে কোথায় থাকবেন: জেলা শহরে ও শহরতলিতে অনেক ভালো মানের আবাসিক হোটেল ও অবকাশ যাপন কেন্দ্র রয়েছে। শহরতলির মেঘলায় পর্যটন মোটেলে কক্ষ ভাড়া ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। হলিডে ইনে ভাড়া ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা, জেলা শহরের হোটেল প্লাজায় ১ হাজার ২০০ থেকে ৩ হাজার টাকা, হোটেল পূরবী, হোটেল ফোরস্টারে ভাড়া ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা, হোটেল হিলবার্ড, হোটেল গ্রীন হিলে ভাড়া ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা। আছে হোটেল থ্রি স্টার, শহরতলি হিলসাইড রিসোর্ট, চিম্বুক পাহাড়ে নীলগিরি রিসোর্ট। হোটেল হিল ভিউতেও থাকতে পারেন। এ ছাড়া হোটেল পূর্বাণী ও হোটেল পাহাড়িকা, হোটেল দার্জিলিং, হোটেল রয়েল রয়েছে।