অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এবারো সেরা ব্যাংকের তালিকা করা হয়েছে। ২০১৮ সালের নিরীক্ষিত ফলাফলের ভিত্তিতে এবারের তালিকা তৈরিতেও মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে সম্পদের বিপরীতে আয়, শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার বিপরীতে আয়, শ্রেণীকৃত ঋণ অনুপাত, শেয়ারপ্রতি আয়, শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য, মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফাকে।
সাতটি নির্দেশকের ভিত্তিতে তৈরি সার্বিক পয়েন্ট টেবিলে একেকটি ব্যাংকের জন্য মোট স্কোর ধরা হয়েছে ৭০, যেখান থেকে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই তালিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে। পরিশোধিত মূলধনে তারতম্যের প্রভাব এড়িয়ে ব্যাংকগুলোর ব্যবসায়িক সক্ষমতা অনুধাবনে শেয়ারপ্রতি আয় ও শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য বাদে বাকি পাঁচটি নির্দেশকে প্রাপ্ত স্কোর ও এর ভিত্তিতে করা র্যাংকিংও প্রকাশ করা হলো।
২০১৮ সাল ছিল ব্যাংকিং খাতের জন্য অন্যতম আলোচিত বছর। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়া ও তারল্য সংকটের কারণে কঠিন সময় পার করেছে খাতটি। এর মধ্যেও বরাবরের মতোই ভালো করেছে কিছু ব্যাংক। তবে বড় অংশের অবস্থাই ভালো নয়।
একটি ব্যাংকের প্রকৃত অবস্থা বুঝতে বৈশ্বিক কিছু মানদণ্ড রয়েছে। সম্পদের বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন অ্যাসেট বা আরওএ), শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানার বিপরীতে আয় (রিটার্ন অন ইকুইটি বা আরওই), শ্রেণীকৃত ঋণ (এনপিএল) অনুপাত, শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস), শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস), মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (ক্যাপিটাল অ্যাডেকোয়েসি রেশিও বা সিএআর) ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা (ওপিবি) এগুলোর অন্যতম। একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩০টি ব্যাংক কোম্পানির প্রকাশিত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রতি বছরের মতো এবারো সেরা ব্যাংকের র্যাংকিং করেছে বণিক বার্তা।
২০১৮ সালের আর্থিক প্রতিবেদনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাত নির্দেশকের র্যাংকিংয়ে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে অপরিবর্তিত রয়েছে যথাক্রমে ডাচ্-বাংলা, ব্র্যাক ও ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। তবে ইপিএস ও এনএভিপিএস-বহির্ভূত তালিকায় শীর্ষ তিনে নিজেদের মধ্যে জায়গা বদল করেছে ব্যাংক তিনটি। সেখানে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবার উপরে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংক। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ও তৃতীয় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
২০১৮ সালের সেরা ব্যাংকের সার্বিক তালিকায় শীর্ষ দশে জায়গা করে নেয়া অন্য ব্যাংকগুলো হলো- ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া, যমুনা ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড। অন্যদিকে ইপিএস ও এনএভিপিএস বাদে করা র্যাংকিংয়ে শীর্ষ দশে বাকি ব্যাংকগুলো যথাক্রমে- প্রিমিয়ার, ব্যাংক এশিয়া, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, যমুনা, ইসলামী ও সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
দুই বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে স্কোর বেড়েছে ১৪টি ব্যাংকের। একই সময়ে সমানসংখ্যক ১৪টি ব্যাংকের স্কোর কমেছে। অপরিবর্তিত ছিল দুটি ব্যাংকের স্কোর। ২০১৮ সালে স্কোর বেড়েছে এমন ১৪টি ব্যাংক হলো ডাচ-বাংলা, ইস্টার্ন, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, যমুনা, সাউথইস্ট, ঢাকা, প্রাইম, এনসিসি, উত্তরা, পূবালী, সোস্যাল ইসলামী, শাহজালাল ইসলামী ও রূপালী ব্যাংক।
স্কোর কমে যাওয়া ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক, মার্কেন্টাইল, ট্রাস্ট, সিটি, আল-আরাফাহ, ইউসিবি, ওয়ান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এক্সিম, ন্যাশনাল, ফার্স্ট সিকিউরিটি, স্ট্যান্ডার্ড, আইএফআইসি ও এবি ব্যাংক। স্কোর অপরিবর্তিত আছে ব্যাংক এশিয়া ও তলানিতে থাকা আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের।
সাত নির্দেশকের মধ্যে তিনটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সার্বিক তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। তুলনামূলক কম পরিশোধিত মূলধনের ব্যাংকটি ২০১৭ সালে ইপিএস ও এনএভিপিএসে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল। এবার আরওইতে তারা ১১ থেকে এক নম্বরে উঠে এসেছে। আরওএ টেবিলে ১৫ থেকে দুই নম্বরে উঠে এসেছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
৭০ স্কেলে ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোরেও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। স্কোরিংয়ে আগের বছর সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৬৮ নম্বর পেয়েছিল ব্যাংকটি, এবার যা ৪৩ দশমিক ২৯-এ উন্নীত হয়েছে। এদিকে ইপিএস ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে ৫০ স্কেলে করা স্কোরিংয়েও ব্যাংকটির প্রাপ্ত স্কোর ১৮ দশমিক ৭৬ থেকে ২৩ দশমিক ২৯-এ উন্নীত হয়েছে, যার সুবাদে ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ১৩ থেকে তিন নম্বরে উঠে এসেছে ব্যাংকটি।
স্কোর আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমলেও তালিকায় দ্বিতীয় স্থান ধরে রেখেছে বাজার মূলধনে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংক কোম্পানি ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির সার্বিক স্কোর ৩৩ দশমিক ৪১ থেকে ৩১ দশমিক ৯৪-তে নেমে এসেছে। পাঁচ নির্দেশকে স্কোর ২৬ দশমিক শূন্য ২ থেকে ২৫ দশমিক ১৩-তে নেমে আসায় ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে এক থেকে দুই নম্বরে নেমে গেছে এ বছরের আরওএ চ্যাম্পিয়ন ব্র্যাক ব্যাংক। গত বছর তারা আরওএর পাশাপাশি আরওই টেবিলেও এক নম্বরে ছিল।
ব্র্যাক ব্যাংকই দেশের সেরা ব্যাংক বলে দাবি করেন ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন। তিনি বলেন, দেশের কোনো ব্যাংক আমাদের ধারেকাছেও নেই। বাজার মূলধনে আমরাই সেরা। আমাদের অর্ধেক বাজার মূলধনও দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের নেই। বিদেশীরা ব্র্যাক ব্যাংকে বিনিয়োগের জন্য মুখিয়ে থাকে। আমাদের শেয়ারের প্রায় ৪৩ শতাংশ বিদেশীদের। দেশের অন্য কোনো ব্যাংকের শেয়ারের প্রতি বিদেশীদের এতটা আস্থা নেই। ক্রেডিট রেটিংয়ের দিক থেকেও ব্র্যাক ব্যাংকই সেরা।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ ও শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার টেবিলে শীর্ষস্থান ধরে রেখে সার্বিক টেবিলে তিন নম্বরে স্থির রয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির সার্বিক স্কোর ৩০ দশমিক ৪৭ থেকে ৩১ দশমিক ৮৯-তে উন্নীত হয়েছে। ৫০ স্কেলে স্কোর ২৫ দশমিক ৩২ থেকে ২৫ দশমিক ৯২ পয়েন্টে উন্নীত হওয়ায় ইপিএস ও এনএভিপিএস বাদ দিয়ে করা র্যাংকিংয়ে দুই থেকে এক নম্বরে উঠে এসেছে ইস্টার্ন ব্যাংক।
এবারের তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক দেখিয়েছে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড। বিনিয়োগকারীদের নানা শঙ্কার মধ্যেও স্কোর ২৩ দশমিক ৩৩ থেকে ২৫ দশমিক ৯৩-তে উন্নীত হওয়ায় সার্বিক র্যাংকিংয়ে ১২ থেকে চার নম্বরে উঠে এসেছে পরিচালন কলেবরে দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংকটি। ৫০ স্কেলে তাদের স্কোর ১৮ দশমিক ১৫ থেকে ১৯ দশমিক ৮৭-তে উন্নীত হয়েছে। ইপিএস ও এনএভিপিএস বাদে করা র্যাংকিংয়ে তাদের অবস্থান ১৬ থেকে ৯-এ উন্নীত হয়েছে।
আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় ইসলামী ব্যাংকের অবস্থা ভালো বলে মনে করেন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু রেজা মো. ইয়াহইয়া। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসলামী ব্যাংক সমৃদ্ধির পথে হেঁটেছে। যেকোনো বিচারে ব্যাংকের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ অনেক বেশি দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন। ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পরিচালকদের তিনজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন ব্যাংকের সাবেক এমডিসহ অভিজ্ঞ ও যোগ্যদের দ্বারা ইসলামী ব্যাংক পরিচালিত হচ্ছে।
আবু রেজা মো. ইয়াহইয়া বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরা গ্রাহকাসেবা ও সন্তুষ্টি অর্জনে নিবেদিতপ্রাণ। এ কারণে এ ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এছাড়া ব্যাংকের অভ্যন্তরে সুশাসন কার্যকর হয়েছে। নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। আমানতের সদ্ব্যবহারের ফলে ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। আগামীতে ইসলামী ব্যাংক আরো ভালো করবে।
এবারের উত্থান চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে অন্যতম প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। আগের বছর দুই ধাপ এগিয়ে ১৫-তে উন্নীত হয়েছিল ব্যাংকটি। এবার সার্বিক র্যাংকিংয়ে পাঁচ নম্বরে এবং ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ১৪ থেকে চার নম্বরে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ৭০-এ তাদের স্কোর ২২ দশমিক ৩১ থেকে ২৫ দশমিক ৮৩ এবং ৫০ স্কেলে ১৮ দশমিক ৫৩ থেকে ২২ দশমিক শূন্য ১-এ উন্নীত হয়েছে।
র্যাংকিংয়ে বড় উল্লম্ফনের বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম রিয়াজুল করিম বলেন, একই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে শাখা পর্যন্ত প্রত্যেক কর্মী কাজ করছেন। সে মন্ত্র হলো ব্যাংকের সমৃদ্ধি ও উন্নতি। সবাই নিজ নিজ অবস্থানে উন্নতি করায় ব্যাংক সমৃদ্ধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের শুরু থেকে আমরা ব্যালান্সশিটের প্রতিটি প্যারামিটার ধরে কাজ করেছি। আমরা এর সুফলও পেয়েছি। প্রিমিয়ার ব্যাংকের কস্ট অব ফান্ড কমে এসেছে। বড় ঋণ থেকে বেরিয়ে এসএমই ও রিটেইল ব্যাংকিংয়ে জোর দেয়া হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রিমিয়ার ব্যাংক ছড়িয়ে পড়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে ব্যাংক সমৃদ্ধ হয়েছে। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে আমরা এটিএম বুথ স্থাপন করেছি। ওইসব স্কুল-কলেজের ছাত্রদের ব্যাংক হিসাব চালু করায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের আমানত বেড়েছে।
বিদায়ী বছরজুড়ে পুরো ব্যাংকিং খাত তারল্য সংকটে ভুগলেও আমাদের সেটি হয়নি। এখনো প্রিমিয়ার ব্যাংকের এডি রেশিও ৮০ শতাংশে সীমাবদ্ধ। বিদায়ী বছরে আমাদের খেলাপি ঋণ কমেছে। আমদানি-রফতানিসহ ব্যাংকের ব্যবসার পরিধি বেড়েছে। আশা করছি, চলতি বছর প্রিমিয়ার ব্যাংক আরো ভালো করবে।
স্কোর কিছুটা কমার পাশাপাশি উভয় স্কেলের র্যাংকিংয়ে চার থেকে ছয় নম্বরে নেমে এসেছে আগের বছর চমক দেখানো মার্কেন্টাইল ব্যাংক। সাত নির্দেশকের মধ্যে রিটার্ন অন ইকুইটি টেবিলে তাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সবচেয়ে ভালো, তিন নম্বরে। আগের বছর আরওইতে চার নম্বরে থাকলেও আরওই এবং ইপিএসে তৃতীয় স্থানে ছিল ব্যাংকটি। সার্বিক স্কেলে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্কোর ২৭ দশমিক ১১ থেকে ২৫ দশমিক ৬১-তে এবং ৫০ স্কেলে ২২ দশমিক ২৫ থেকে ২০ দশমিক ৯৪-তে নেমে গেছে।
এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের স্লোগান হলো ‘বাংলার ব্যাংক’। এ স্লোগানকে ধারণ করেই আমরা ধারাবাহিক উন্নতি করছি। আমাদের খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গ্রাহকদের সর্বোত্কৃষ্ট সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। চলতি বছর মার্কেন্টাইল ব্যাংক আরো ভালো করবে।
স্কোর সামান্য কমলেও সার্বিক তালিকায় আট থেকে সাত নম্বরে উঠে এসেছে ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। তবে ইপিএস-এনএভিপিএস বাদে করা র্যাংকিংয়ে পাঁচ থেকে সাত নম্বরে নেমে গেছে ব্যাংকটি। ৭০ স্কেলে তাদের স্কোর ২৫ দশমিক ৮৫ থেকে ২৫ দশমিক ৩৮ এবং ৫০ স্কেলে তা ২১ দশমিক ৫১ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৭৭-এ।
র্যাংকিং টেবিলে টানা এগোচ্ছে ব্যাংক এশিয়া। ২০১৬ সালে সাত নির্দেশকে ২১ দশমিক ৫৩ স্কোর নিয়ে ব্যাংকটি ছিল ১৯ নম্বর স্থানে। ২০১৭ সালে ২৪ দশমিক ৫৯ স্কোর নিয়ে তারা উঠে আসে ১০ নম্বরে। আবার স্কোর একই থাকলেও তালিকায় অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংক এশিয়া। এদিকে ৫০ স্কেলে স্কোর সামান্য বেড়ে ২১ দশমিক ১৬-তে উন্নীত হওয়ায় সেখানকার র্যাংকিংয়ে ছয় থেকে পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ২০১৭ সালে মূলধন পর্যাপ্ততায় এক নম্বরে থাকা ব্যাংকটি এবার সে টেবিলে পাঁচ নম্বরে নেমে গেছে। তবে শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফায় ইন্ডাস্ট্রিতে তৃতীয় স্থান ধরে রেখেছে তারা।
সার্বিক স্কেলের র্যাংকিংয়ে একটু একটু করে এগোচ্ছে যমুনা ব্যাংক লিমিটেড। ১৪ থেকে আগের বছর ১১ নম্বরে উঠে আসা ব্যাংকটি এবার নয় নম্বরে অবস্থান করছে। ৭০ স্কেলে তাদের স্কোরও ২৩ দশমিক ৫৩ থেকে ২৪ দশমিক ৫৩-তে উন্নীত হয়েছে। ৫০ স্কেলে স্কোর কিছুটা বাড়ার পাশাপাশি সে র্যাংকিংয়ে ১২ থেকে আট নম্বরে উঠে এসেছে ব্যাংকটি।
সার্বিক টেবিলে সবচেয়ে বড় উত্থান দেখা গেছে সাউথইস্ট ব্যাংকের র্যাংকিংয়ে। ১২ ধাপ এগিয়ে ১০ নম্বর স্থানটি পুনর্দখল করেছে ২০ দশমিক শূন্য ৩ থেকে ২৩ দশমিক ৮৬ স্কোর করা ব্যাংকটি। অবশ্য ২০১৬ সালে তাদের স্কোর ছিল ২৪ দশমিক ৪। ৫০ স্কেলের স্কোরে উন্নতির সুবাদে এবার সেখানে ১১ ধাপ এগিয়ে ১০ নম্বর স্থান দখল করেছে সাউথইস্ট ব্যাংক।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, ২০১৮ সালে সাউথইস্ট ব্যাংক প্রায় সব নির্দেশকেই ভালো করেছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ব্যাংকটি ধারাবাহিক উন্নতি করেছে। এ ধারাবাহিকতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। সামনের দিনগুলোয় অ্যাসেট কোয়ালিটি ভালোভাবে মেইনটেইন করতে চাই।
এদিকে শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফা ছাড়া সব টেবিলে পিছিয়ে সাত থেকে ১১ নম্বরে নেমে গেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড। কমেছে তাদের স্কোরও। ৫০ স্কেলে স্কোরের ভিত্তিতে তাদের অবস্থান সাত থেকে ১২-তে নেমে গেছে।
স্কোর বাড়ায় সার্বিক র্যাংকিংয়ে ১৬ থেকে ১২ নম্বরে এবং ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ১৭ থেকে ১১ নম্বরে উঠে এসেছে ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড। তাদের সবচেয়ে ভালো অবস্থান শাখাপ্রতি পরিচালন মুনাফার প্রতিযোগিতামূলক টেবিলে, চতুর্থ।
সার্বিক স্কোরে বড় অবনতির পাশাপাশি ছয় থেকে ১৩ নম্বরে নেমে গেছে সিটি ব্যাংক লিমিটেড। ইপিএস-এনএভিপিএস বাদে করা র্যাংকিংয়ে নয় থেকে ১৬ নম্বরে নেমে গেছে ২০১৬ সালের তালিকায় বণিক বার্তার র্যাংকিংয়ে চার নম্বরে উঠে আসা ব্যাংকটি।
এবার উত্থান চ্যাম্পিয়নদের তালিকায় রাখা যেতে পারে মূলধন পর্যাপ্ততার টেবিলে এক নম্বরে উঠে আসা প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডকে। সার্বিক স্কোর ১৮ থেকে ২২-এর ঘরে উন্নীত হওয়ায় ২৬ থেকে ১৪ নম্বর স্থানে উঠে এসেছে ব্যাংকটি। ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ২৫ থেকে ১৪ নম্বরে উঠে এসেছে তারা।
উভয় স্কেলে অবনতি ঘটেছে আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় শরিয়াহ কমপ্লায়েন্ট ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবার উপরে থাকা ব্যাংকটির স্কোর আড়াইশ ভিত্তি পয়েন্টের বেশি কমেছে। সার্বিক তালিকায় তারা ৯ থেকে ১৫ এবং ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে আট থেকে ১৫ নম্বরে নেমে গেছে।
আগেরবার পিছিয়ে যাওয়ার পর এ বছর স্কোর ও র্যাংকিং দুটোতেই এগিয়েছে এনসিসি ব্যাংক। সার্বিক র্যাংকিংয়ে ১৯ থেকে এগিয়ে ১৬ নম্বর স্থানটি পুনর্দখল করেছে তারা। ইপিএস-এনএভিপিএস-বহির্ভূত তালিকায় ২০১৭ সালের র্যাংকিংয়ে হারানো ১২ নম্বর স্থানটি পুনরুদ্ধার করতে না পারলেও এবার সেখানে ১৩ নম্বরে রয়েছে ব্যাংকটি।
সার্বিক তালিকায় ২০ থেকে ১৭ এবং ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ২৬ থেকে ২৫ নম্বরে উঠে এসেছে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড।
আগের বছর ২৮ থেকে ২৯ নম্বরে নেমে যাওয়া পূবালী ব্যাংক এবার সার্বিক তালিকায় ১৮তম স্থান দখল করেছে। নির্দেশকগুলোয় উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়ায় তাদের সার্বিক স্কোর ১১ থেকে ২১-এর ঘরে উন্নীত হয়েছে। ৫০ স্কেলের র্যাংকিংয়ে ব্যাংকটির অবস্থান ২৮ থেকে ২৪-এ উন্নীত হয়েছে।
এদিকে স্কোর কমায় ১৭ থেকে ১৯ নম্বরে নেমে গেছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। ইপিএস-এনএভিপিএস বাদ দিয়ে হিসাব করলে তাদের অবস্থান ২০ থেকে ২২ নম্বরে নেমে গেছে।
সবচেয়ে বড় পতন সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাঁচ-ছয় নম্বরে থাকা ওয়ান ব্যাংক লিমিটেডের। সার্বিক স্কোর ২৬ থেকে ২০-এর ঘরে নেমে যাওয়ায় ১৫ ধাপ পিছিয়ে ২০ নম্বরে পতিত হয়েছে ব্যাংকটি। ইপিএস-এনএভিপিএস-বহির্ভূত তালিকায় আগের বছর তিন নম্বরে থাকলেও এবার ১৮-তে নেমে গেছে তারা।
সার্বিক র্যাংকিংয়ে এরপর ২৩ থেকে ২১-এ উন্নীত হয়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, ১৩ থেকে ২২-এ নেমে গেছে এক্সিম ব্যাংক, ১৪ থেকে ২৩-এ নেমে গেছে পরিশোধিত মূলধন চ্যাম্পিয়ন ন্যাশনাল ব্যাংক। স্কোর কিছুটা বাড়লেও ২৪তম স্থানে অনড় শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। ২১ থেকে ২৫-এ নেমে গেছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এক ধাপ পিছিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। ১৮ থেকে ২৭ নম্বরে নেমে গেছে আইএফআইসি ব্যাংক।
২০১৬ সালের র্যাংকিংয়ে এক ধাপ এগোনোর পর এখন ২৮ নম্বর স্থানেই আটকে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। দুই ধাপ পিছিয়ে ২৯ নম্বরে অবস্থান করছে দেশের প্রথম বেসরকারি ব্যাংক এবি ব্যাংক লিমিটেড। ভাগ্য ফেরেনি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাত্রা করা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের। শূন্য দশমিক ১২ শতাংশ স্কোর নিয়ে ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে শরিয়াহ কমপ্লায়েন্ট ব্যাংকটি।
সাতটি নির্দেশকে করা র্যাংকিংয়ে মোট নম্বর ছিল ৭০। কিন্তু দেশের সিংহভাগ ব্যাংকই নম্বর পেয়েছে ৩০-এর নিচে। অর্থাৎ দেশের প্রায় শতভাগ ব্যাংকই অর্ধেক নম্বর পায়নি। আবার অর্ধেকের বেশি ব্যাংক নম্বর পেয়েছে এক-তৃতীয়াংশেরও কম। কেন দেশের ব্যাংকগুলোর এ পরিস্থিতি—এ বিষয়ে ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূল সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। ব্যালান্সশিট পরিচ্ছন্ন রাখতে গিয়ে ব্যাংকগুলোর মুনাফা কমে যায়। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে পুরো ব্যাংকের স্বাস্থ্যের ওপর। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে দেশের সব ব্যাংকই পাস নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হবে। দেশের প্রায় সব ব্যাংকই এখন নিজেদের ব্যালান্সশিট পরিচ্ছন্ন করছে। দুই-তিন বছরের মধ্যে এর সুফল দৃশ্যমান হবে।