বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, প্রাচ্যের অক্সফোর্ড হিসেবে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে একসময় আমরা গর্ব করতাম, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সারা বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার দর্পণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার নাম এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাতেও নেই। বৈশ্বিক র্যাঙ্কিংয়ে হাজারের মধ্যেও নেই। কেন? সেটা আজ জাতির কাছে বড় প্রশ্ন।
রোববার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ওবায়দুল হাসান, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাক্ষ সেলিম ভূইয়া ও স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী শপু।
ড. মঈন খান বলেন, সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন পরিচালিত র্যাঙ্কিং ব্যবস্থা এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে যেখানে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত আমাদের সবার গর্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থান করে নিতে পারেনি। তিনি বলেন, এই র্যাঙ্কিংয়ের জরিপ করার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান, গবেষণা, জ্ঞান আদান-প্রদান এবং আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি এই চারটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চীনের সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উঠে এসেছে।
দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানে আছে যথাক্রমে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিংগাপুর ও হংকং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজির নাম। সার্বিকভাবে চীনের ৭২টি, ভারতের ৪৯টি, তাইওয়ানের ৩২টি, পাকিস্তানের ৯টি, এবং হংকংয়ের ৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম আছে। এমনকি নেপাল ও শ্রীলঙ্কার বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে এই র্যাঙ্কিংয়ের তালিকায়; কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই এই তালিকায়।
বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, কোর্স কারিকুলাম বা সিলেবাসসমূহ অনেক ডিপার্টমেন্টেই উন্নত বিশ্বের নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তাল মিলিয়ে হালনাগাদ করা হয় না। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো থেকে ছাপা হওয়া নামী প্রকাশকের পাঠ্যবইয়ের বদলে অখ্যাত ভারতীয় বা অনুন্নত বিভিন্ন দেশের প্রকাশকের পাঠ্যবইগুলো বেছে নেয়া হয় ক্লাসরুমে পাঠদানের জন্য।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই শিক্ষক বলেন, আমরা সবাই জানি যে, মানসম্মত শিক্ষক নিয়োগ মানসম্মত পাঠদানের জন্য অতীব জরুরী একটি বিষয়। দূর্ভাগ্যজনকভাবে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব আজ চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে মূল্যায়ন না করে নিছক দলীয় রাজনৈতিক কর্মী অর্থাৎ ছাত্রলীগের কর্মীকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে ভোটার তৈরীর চেষ্টা করা হয় যাতে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাব বজায় রাখা সম্ভব হয়। এছাড়া দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটসহ সমৃদ্ধ লাইব্রেরী বা গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান পদ্ধতির সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি হরেক রকম রেফারেন্স বই এবং জার্নালের সম্ভার থাকতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী বা গ্রন্থাগারগুলোতে।
তিনি বলেন, উন্নত বিশ্বের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীগুলো ইলেক্ট্রনিক লাইব্রেরীতে পরিণত হয়েছে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীটি আজ পুরনো বইয়ের একটি প্রদর্শনী কেন্দ্রে যেন পরিণত হয়েছে যেখানে জ্ঞানান্বেষণে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা কদাচিৎ পা ফেলে থাকে। অথচ অনেকেই ভুলে গেছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীতে এমন সব দুষ্প্রাপ্য বই ও পাণ্ডুলিপি’র সংগ্রহ রয়েছে যা পৃথিবীর অনেক খ্যাতনামা লাইব্রেরীতেও নেই। অথচ আজ সেগুলোর আদৌ কোন ব্যবহার আছে কিনা সন্দেহ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মান যে এত নীচে নেমে গেছে তাতে অবাক হবার কি আছে?
ড. মঈন খান বলেন,আমরা অনেক সময়ই বলি-একটি পুরনো কথা আছে, ‘শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড’। এ কথাটি আজও কিন্তু সত্য। বলা বাহুল্য অনেকেই মনে করেন ইউরোপ-আমেরিকা-চীন বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি হবার পেছনে বুঝি তাদের সম্পদ ও সমরাস্ত্র। কথাটি সঠিক নয়। দেখুন, বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাদের নাম আমি একটু আগেই বলেছি, তাদের অবস্থান কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপ ও চীন দেশে। কাজেই একটি জাতির উন্নতির সোপান যে একমাত্র শিক্ষাই সেকথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সেই বিবেচনায়, বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, একটি জাতিকে ধ্বংস করে দেয়ার জন্য সে জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়াই যথেষ্ট। তিনি বলেন, আজ যদি কেউ বলে, অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও নকল দিয়ে সরকার এই কাজটিই এদেশে করছে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, তাহলে অবাক হবার কিছু থাকবে কি ?