উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

হোটেল ঢাকা রিজেন্সি অ্যান্ড রিসোর্ট: নামেই পাঁচতারা হোটেল

আবাসিক হোটেলের ধারা ধরেই উদ্ভব বিলাসবহুল তারকা হোটেলের। একটি হোটেলকে ‘তারকা’ মর্যাদা পেতে হলে থাকতে হয় সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা ও উন্নত গ্রাহকসেবার মান। তারকা মান শুধু হোটেলের মর্যাদাই বৃদ্ধি করে না, এর সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। অথচ রাজধানীতে যেসব পাঁচতারাখচিত হোটেল রয়েছে, তার বেশির ভাগই ভুয়া! বিদেশি অতিথিরা মোটা অঙ্কের ভাড়া গুনেও যথার্থ সেবা পাচ্ছে না। এসব অভিযোগ শোনার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি না সেটাও স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে সবিস্তারে লিখেছেন আপেল মাহমুদ

‘লা মেরিডিয়ান’ হোটেলের সামনের সার্ভিস রোড ও দক্ষিণ পাশের সড়কটি হোটেল নিরাপত্তারক্ষীদের দখলে থাকায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।

বিষয়টি অবাক হওয়ার মতো হলেও সত্য রাজধানীতে যেসব পাঁচতারাখচিত হোটেল রয়েছে, তার বেশির ভাগই ভুয়া। যেসব সুযোগ-সুবিধা থাকার কথা, তার বেশির ভাগই নেই। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারছে না এসব হোটেল। বিদেশি অতিথিরা মোটা অঙ্কের ভাড়া গুনেও যথার্থ সেবা পাচ্ছে না। ফলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব অভিযোগ শোনার জন্য কোনো কর্তৃপক্ষ আছে কি না সেটাও স্পষ্ট নয়। লাইসেন্স অথরিটি থাকলেও পাঁচতারা হোটেলের মান নির্ণয়ের জন্য কেউ কাজ করছে কি না তা জানা যায়নি। নগরীর এমন কিছু পাঁচতারা হোটেল রয়েছে, যাদের নিজস্ব কোনো পার্কিং পর্যন্ত নেই। রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে এলাকায় যানজট সৃষ্টিসহ আবাসিক এলাকার পরিবেশ বিঘ্নিত করা হচ্ছে। এমনকি এলাকার সার্ভিস রোড দখল করে সেখানে হোটেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের নিয়ন্ত্রণরেখা টেনে নিয়েছে। ফলে সেই রাস্তা কেউ ব্যবহার করতে পারছে না। তবে পাঁচতারা হোটেলগুলোতে আন্তর্জাতিক মান রক্ষা না হলেও মদের বার কিংবা ডিসকো পরিচালনার ক্ষেত্রে কেউ পিছিয়ে নেই।

মার্কেটের ওপর পাঁচতারা হোটেল: খিলক্ষেত রাজউক ট্রেড সেন্টারটি করা হয়েছিল বিপণিবিতান ও অফিস-আদালত করার জন্য। কিন্তু সেখানে বিপণিবিতান করা হলেও অফিস-আদালতের পরিবর্তে করা হয়েছে ‘ঢাকা রিজেন্সি’ নামে একটি পাঁচতারা হোটেল। নিচে বেজমেন্টে রয়েছে একটি কাঁচাবাজার, মোটর পার্টসের দোকান ও নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত কাপড়চোপড় ও মুদি-মনিহারি মার্কেট। চার তলা থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত স্পেস নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচতারা হোটেল ঢাকা রিজেন্সি অ্যান্ড রিসোর্ট। হোটেল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ইংল্যান্ডের সঙ্গে যৌথভাবে পাঁচতারা হোটেলটি গড়ে তোলা হয়েছে। সরেজমিন দেখা যায়, নামমাত্র গড়ে তোলা হয়েছে এ পাঁচতারা হোটেলটি। তাদের গাড়ি রাখার নিজস্ব কোনো জায়গা পর্যন্ত নেই। ট্রেড সেন্টারের দক্ষিণ পাশ দিয়ে এর সামান্য প্রবেশপথ রয়েছে। এর সামনে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী দাঁড়িয়ে থাকে। আর রাস্তাজুড়ে থাকে গাড়ি। সেন্টারের সামনে, দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে যানজট লেগে থাকার কারণে এলাকাবাসীকে সারাক্ষণ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। নিকুঞ্জের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘অনেক সময় বিদেশি কিংবা রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অতিথির কারণে পুরো এলাকা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। চলাচলের রাস্তা দখল করে সেখানে গাড়ি পার্কিং করার ফলে এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। হোটেলের বার থেকে নেমে আসা মাতালদের প্রকাশ্যে অশ্লীল আচরণ সত্যিই দৃষ্টিকটু।’ রাজউক সূত্রে জানা যায়, কর্মচারী কল্যাণ সমিতির মালিকানাধীন ট্রেড সেন্টারটিতে মূলত সুপারমার্কেট ও ফ্ল্যাটবাড়ি করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে ক্রেতা কিংবা ভাড়াটিয়া না পাওয়ায় ভবনের ওপরের অংশ পাঁচতারা হোটেল হিসেবে ভাড়া দেওয়া হয়। এর নিরাপত্তার জন্য যে পরিবেশ থাকার কথা তা সেখানে নেই। বরং এর আশপাশে সিএনজি ফিলিং স্টেশন, ফুটপাতে টংঘর, হকারদের পসরা, ভবঘুরেদের আড্ডা এমনকি গাঁজাখোরদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে।

রাস্তা দখলের অভিযোগ: সম্প্রতি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে ‘লা মেরিডিয়ান’ নামে একটি পাঁচতারা হোটেল উদ্বোধন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী এ হোটেলের সুনাম থাকলেও ঢাকায় সেটা রক্ষা করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বল্প পরিসরে সীমিত জমির ওপর হোটেলটি করতে গিয়ে তা পরিচালনায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে তাদের জনগণের চলাচলের রাস্তা দখল করে সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থাপনা করতে হচ্ছে। খিলক্ষেতে গিয়ে দেখা গেল, ‘লা মেরিডিয়ান’ হোটেলের সামনের সার্ভিস রোড ও দক্ষিণ পাশের সড়কটি হোটেলের নিরাপত্তারক্ষীদের দখলে থাকায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। স্থানীয়দের কোনো গাড়ি সেই রাস্তায় যেতে দেওয়া হয় না। জনগণের রাস্তা কোন আইনে দখল করা হয়েছে এ প্রশ্ন করলে হোটেলের দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মকর্তারা কোনো জবাব দিতে রাজি হননি। একজন নিরাপত্তারক্ষী নাম প্রকাশ না করে বলেন, মূলত নিরাপত্তার স্বার্থেই রাস্তা দখল করতে হয়েছে।

অন্যদিকে ঢাকা ওয়েস্টিনের মতো এত নামকরা একটি পাঁচতারা হোটেলের বিরুদ্ধে সরকারের পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ হোটেলটিও গুলশানের একটি আবাসিক প্লটের ওপর গড়ে তোলা হয়েছে। কিছুদিন আগে গুলশান এভিনিউকে বাণিজ্যিক হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হলে হোটেলটি এর আওতায় পড়ে। তবে সম্প্রতি হোটেলের দক্ষিণ পাশে থাকা পরিত্যক্ত তালিকাভুক্ত একটি প্লট দখল করে সেখানে গাড়ির পার্কিং করা হয়েছে। স্থানীয় এসিল্যান্ড অফিস সূত্রে জানা যায়, ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারি গেজেটভুক্ত পরিত্যক্ত সম্পত্তি দখলের অভিযোগ রয়েছে।

ঢাকার আরেকটি পাঁচতারা নামধারী হোটেল ‘সেরিনা’র অবস্থা আরো জটিল। কোথায় এর প্রবেশপথ, কোথায় পার্কিং- কোনোটাই জানা যায় না। বনানীর অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনার সঙ্গে ‘সেরিনা’র ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। একটি পাঁচতারা হোটেলের যে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকা দরকার, সেখানে এর কোনোটিই নেই। এ ধরনের একটি হোটেলে পার্কিংয়ের জন্য কমপক্ষে ১০০ গাড়ি রাখার জায়গা সংরক্ষিত থাকতে হয়। অথচ সেরিনার পার্কিং বলে কোনো জায়গাই নেই।

রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য পাঁচতারা নিবন্ধন: দেশের পাঁচতারা হোটেলগুলো নিয়ে সরকারের কী রকম উদাসীনতা চলছে, তা হোটেলগুলোর নিবন্ধনের দিকে চোখ দিলেই বোঝা যায়। সরকারি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে ডিসি অফিস থেকে দেশের যে কেউ একটি পাঁচতারা হোটেলের মালিক হতে পারে। ঢাকা জেলা প্রশাসকের হোটেল লাইসেন্স সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা সূত্রে জানা যায়, পাঁচতারা হোটেলের নিবন্ধন ফি বেশি হওয়ায় এ ধরনের নিবন্ধন করতে উৎসাহিত করা হয়।  লাইসেন্স শাখার একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘নিয়ম হলো, কোনো হোটেলের লাইসেন্স দেওয়ার আগে সেই হোটেলটির মান কী সেটা যাচাই করা। একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন তদন্ত করে ডিসির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করার পর নিবন্ধন দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা পালন না করে অফিসে বসেই দুই-তিন, চার কিংবা পাঁচতারা হোটেলের লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর সেটা নবায়ন করা হচ্ছে কোনো রকম তদন্ত ছাড়াই। ফলে ‘তারা’ নির্ধারণ হচ্ছে হোটেল মালিকদের খেয়ালখুশিমতো।’

ঢাকায় অবস্থিত পাঁচতারা হোটেলের নিবন্ধন নেওয়া হয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসনের ব্যবসা-বাণিজ্য শাখা থেকে। ওই শাখার প্রধান করণিক জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা হোটেল-রেস্তোরাঁ বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী এক থেকে পাঁচতারাবিশিষ্ট হোটেলগুলোর নিবন্ধন দিয়ে থাকি। এর মধ্যে পাঁচতারা হোটেলের জন্য নিবন্ধন ফি দিতে হয় এক লাখ টাকা। তবে আমরা পাঁচতারা হোটেলের শুধু নিবন্ধন দিয়ে থাকি। এ ধরনের হোটেল পরিচালনার জন্য পর্যটন মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়। মূলত ওই মন্ত্রণালয়ই পাঁচতারা, চারতারা ও তিনতারা হোটেল মনিটরিং করে থাকে।’

পর্যটন বিশেষজ্ঞ মমিনুল হক জানান, সঠিক মান বিচার করলে ঢাকায় দুই-একটি ছাড়া পাঁচতারা হোটেল নেই। নামে থাকলেও সেগুলো তিনতারার ঊর্ধ্বে নয়। ঢাকার সবচেয়ে পুরনো পাঁচতারা হোটেল রূপসী বাংলার (পুরনো নাম শেরাটন) খোলনলচে পাল্টাতে হচ্ছে। মূলত বিদেশি চেইন কম্পানিগুলোর দাবির কারণেই সেটা করতে হচ্ছে। পুরনো ভবন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সীমিত বলে দীর্ঘদিন ধরে হোটেলটির দায়িত্ব নিতে বিদেশি কোনো হোটেল চেইন অপারগতা জানিয়ে আসছিল। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, পাঁচতারা হোটেলের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হেলথ ক্লাব, সুইমিং পুল, বার-ক্যাসিনো, ডিসকো, ১০০ থেকে ২০০ গাড়ির পার্কিং জোন ও সুদৃশ্য বাগানসহ আরো বেশ কিছু সুযোগ-সুবিধা। কিন্তু ঢাকার পাঁচতারা হোটেলগুলোতে এসব সুযোগ-সুবিধা কতটুকু আছে তা স্পষ্ট নয়। হোটেল কর্তৃপক্ষ দাবি করে থাকে, তাদের ভবনের ছাদে তারা সুইমিং পুল ও হেলথ ক্লাব নির্মাণ করেছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। স্থাপনার মধ্যে সুইমিং পুল নির্মাণ কিংবা হেলথ ক্লাব পরিচালনা করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঢাকার অন্যতম পাঁচতারা প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের মান নিয়েও বিদেশিদের রয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশের দ্বিতীয় এ ফাইভ স্টার হোটেলটি সংস্কার করা না হলে ভবিষ্যতে শেরাটনের মতো নতুন কোনো বিদেশি চেইন পাওয়া যাবে না। এ ধরনের হোটেল পরিচালনা করতে হলে পাঁচ বছর পর পর বড় ধরনের সংস্কার কাজ করতে হয়। সোনারগাঁও হোটেল শুরু হওয়ার পর ছোটখাটো সংস্কারকাজ হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয় বলে বিদেশি বোর্ডারসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে বলে জানা যায়।

দেশের প্রথম পাঁচতারা হোটেল: দেশের প্রথম পাঁচতারা হোটেল ঢাকা শেরাটন। ১৯৬৭ সালে তত্কালীন পাকিস্তান সরকারের রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস ও পাকিস্তানভিত্তিক একটি ব্যবসায়ী গ্রুপ পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম পাঁচতারা হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করে। হোটেলটির মান বৃদ্ধির জন্য ১৯৮৭ সাল থেকে তার পরিচালনার ভার দেওয়া হয় আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন আমেরিকাভিত্তিক ব্যবসায়ী গ্রুপ স্টারউডকে (মাদার কম্পানি)। উল্লেখ্য, ১৯৮৭ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ২০ বছর মেয়াদি চুক্তিতে স্টারউড হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল নামে ব্যবসা শুরু করে। কয়েকবার সময় বাড়িয়ে সর্বশেষ ৩১ মার্চ ২০০৯ সালে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা। সব রকম প্রস্তুতি নেওয়ার পরও কারিগরি কারণে তারা যেতে পারেনি। এর কারণ হিসেবে শেরাটন কর্তৃপক্ষ বলেছে, হোটেল পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক মানের কোনো চেইন কম্পানির সঙ্গে চুক্তি করতে না পারায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে তাদের ২০১১ সালে সেখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। এরপর শেরাটন কর্তৃপক্ষ বিদেশি কোনো চেইন কম্পানি না পাওয়ায় নিজেরাই রূপসী বাংলা নামে হোটেলটি কিছুদিন পরিচালনা করে। শেরাটনের মহাব্যবস্থাপক ট্রেভর ম্যাকডোনাল্ড সূত্রে জানা যায়, প্রায় অর্ধশত বছরের পুরনো বলে হোটেলটির সব কিছু অকেজো হয়ে গেছে। তা ছাড়া যেকোনো পাঁচতারা হোটেল নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্কার করতে হয়। এ ক্ষেত্রে শেরাটনের তেমন কোনো সংস্কার হয়নি। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে শেরাটন পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডকে (বিসিএল) বারবার বলা সত্ত্বেও কোনো কাজ হয়নি। ঢাকা শেরাটন হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. সফিউদ্দিন জানান, কয়েক বছর আগে হোটেলের ওয়েস্ট উইং মেরামত করা হলেও তা আন্তর্জাতিক মানের হয়নি। যার কারণে নতুন করে শেরাটনের কাজ করা হচ্ছে। ২০১২ সালে পুরনো চেইন ইন্টারকন্টিনেন্টাল গ্রুপ পুনরায় হোটেলটির দায়িত্ব নিতে রাজি হয়। তবে শর্ত জুড়ে দেয়, হোটেলটিকে পুরো আধুনিক সাজে সজ্জিত করে দিতে হবে। এ জন্য ২০১৪ সালে হোটেলটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু কয়েকবার সময় বৃদ্ধির পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি। ফলে ঢাকার প্রথম পাঁচতারা হোটেলটির ভবিষ্যৎ অন্ধকারেই রয়ে গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ শেষ করার সর্বশেষ সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের মার্চ মাস। এ সময়ও পেরিয়ে গেছে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *