আকাশ খাঁন, পাবনা জেলা প্রতিনিধিঃ যাত্রী চাহিদা থাকায় ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটে ফ্লাইট পরিচালনায় আগ্রহী কয়েকটি বেসরকারি এয়ারলাইন্স। কিন্তু ঈশ্বরদী বিমানবন্দর গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকায় সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
গত ১ মে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাই করতে গিয়েছিলেন ইউএস বাংলার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই কর্মকর্তা জানান, উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় ঈশ্বরদী অনেক এগিয়ে গেছে। এখানে বিমান পথে চলাচলের জন্য যাত্রীদের বিপুল আগ্রহ রয়েছে। বিমান ওঠা-নামার জন্য বিমানবন্দরের বাস্তব অবস্থা ৮০ ভাগ প্রস্তুত। ২০ ভাগ সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়ে রানওয়েসহ অন্যান্য সংস্কার কাজ করলে ইউএস বাংলার বিমান ঈশ্বরদীতে চলাচল করবে।
প্রসঙ্গত, ঈশ্বরদীতে চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। ইপিজেডের অবস্থানও কাছেই। তাছাড়া রয়েছে ইক্ষু, ডাল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। সে কারণে বিদেশিদের যাতায়াত অনেক বেড়ে গেছে। একটি অসমর্থিত হিসাবে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প, ইপিজেডসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিন সহস্রাধিক বিদেশি কর্মরত রয়েছেন। পাশাপাশি রয়েছেন স্থানীয় যাত্রীরা। কিন্তু বিমানবন্দরটি গত পাঁচ বছর ধরে বন্ধ হয়ে থাকায় রাজধানী ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত যাওয়া এখন এক কষ্টকর অভিজ্ঞতা।
যানজটের কারণে সড়ক পথে ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী পৌঁছতে সাত থেকে ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সে কারণে রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশ থেকে আসা বিদেশি প্রকৌশলী, টেকনিশিয়ান ও ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা জরুরি প্রয়োজনে ব্যয়বহুল হলেও হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। কিন্তু বিমানবন্দর থাকা সত্ত্বেও সেটির ব্যবহার না হওয়ায় সবাই খুব বিরক্ত। ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী যাওয়ার একটি বিকল্প রুট হলো ট্রেন। কিন্তু ট্রেনে টিকিট পাওয়া খুবই কঠিন।
সাবেক ভূমিমন্ত্রী, ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান শরীফ এমপি গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেন। উত্তরে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী এমপি জানান, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের অধিগ্রহণকৃত মোট ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর জমির মধ্যে ২৯৯ দশমিক ৭৪ একর জমি মিলিটারি ফার্ম ব্যবহার করছে। ব্যবহূত জমি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের পর সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন করে বিমানবন্দরটি চালু করার বিষয়টি সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। তবে জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করে চলতি অর্থ বছরে ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করা সম্ভব নয় বলেও তিনি জানান।
এদিকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান গত ১ এপ্রিল বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়কে পাঠানো চিঠিতে বিনিয়োগ বিকাশে দেশের পাঁচটি জেলায় বিমানবন্দরের সুবিধা চেয়েছেন। চিঠিতে দুটি নতুন বিমানবন্দর নির্মাণসহ ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁ ও সিলেটের শমসেরনগর বিমানবন্দরকে নতুন করে চালু করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশীদ বলেছেন, বর্তমানে যে জমি রয়েছে সেখানেই বিমান ওঠা-নামা করার ব্যবস্থা করা সম্ভব। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭০০ ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। ইউনাইটেড এয়ার এই রুটে ড্যাস-৮ বিমান ব্যবহার করত। এ ধরনের বিমান ওঠা-নামা করানোর মতো সক্ষমতা এই বিমানবন্দরের আছে। তবে এখন যে উড়োজাহাজ অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচল করে তার জন্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে কিছুটা স্বল্পতা রয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো আগ্রহ প্রকাশ করে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন জানালে এক মাসের মধ্যেই সংস্কার ও উন্নয়ন সাধন করে বিমান ওঠা-নামার ব্যবস্থা করা যাবে। অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি না থাকলেও ফ্লাইট পরিচালনার জন্য অন্যসব ব্যবস্থাপনা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের রয়েছে। আমরা ফ্লাইট পরিচালনার জন্য প্রস্তুত।
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালে লোকসানসহ নানা কারণে বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার করে ১৯৯৪ সালে বিমানবন্দরটি আবার চালু করা হয়। প্রায় তিন বছর বিমান চলাচল অব্যাহত থাকার পর ১৯৯৬ সালে দ্বিতীয় দফায় বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১৩ সালের অক্টোবর আবারও চালু হয় ঈশ্বরদী বিমানবন্দর। কিন্তু ২০১৪ সালের ২৯ মে সাত মাসের মাথায় তৃতীয় দফায় বিমানবন্দরটি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়।