শাহ্ আব্দুল হান্নান: সমাজে নারীর অবস্থান ও অধিকার নিয়ে আমরা নানা কথা শুনে থাকি। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বর্তমানে যে কথাগুলো বলা হচ্ছে, তার মধ্যে বেশ কিছুই গ্রহণযোগ্য। আবার কিছু কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করার অবকাশ আছে। নারী-পুরুষ সবারই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। কারণ, সমাজ ক্রমেই সামনে এগোচ্ছে। শুধু নারী বা পুরুষেরই নয়, সব মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হতে হবে।
গত ৫০ বছরে সমাজ অনেকটা এগিয়েছে। এ সময়ে পুরুষের সাথে নারীরাও সমানতালে না হলেও এগিয়ে গেছেন। বেগম রোকেয়ার সময় যে সমাজ ছিল, সে সমাজকে আমরা অনেক পেছনে ফেলে এসেছি। তিনি দেখেছিলেন, সে সময়ে মেয়েরা লেখাপড়া করার কোনো সুযোগই পেতেন না। তখন রোকেয়া নারীশিক্ষার ব্যাপারে সাহসী উদ্যোগ না নিলে আজ এ উপমহাদেশের নারীরা কেউই পড়ালেখা শিখতে পারতেন না। সমগ্র পৃথিবীতে, বিশেষ করে আমাদের দেশে মানুষের ওপর, বিশেষ করে নারীর ওপর যে অত্যাচার-নির্যাতন চলছে, তার একটা ফাউন্ডেশন আছে, ভিত্তি আছে। অত্যাচার আকাশ থেকে আসছে না। নারীর ওপর পুরুষের এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরও যে অত্যাচার নির্যাতন, তার আদর্শিক ভিত্তি হলো, সাধারণভাবে মানুষ বিশ্বাস করে যে, বিশেষ করে পুরুষেরা বিশ্বাস করে, নারী পুরুষের চেয়ে নীচু, তাদের মান খারাপ এবং তারা পুরুষের চেয়ে ছোট। এই বিশ্বাস অবশ্য নারীর মধ্যেও কিছুটা বিদ্যমান। মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কতগুলো বিভ্রান্তি থেকে এ বিশ্বাসের জন্ম। আর এই বিশ্বাসের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে নারীদের প্রতি অবহেলা, বঞ্চনা ও নির্যাতন।
আমাদের দেশ থেকে যদি নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হয়, তবে ইসলামকে বাদ দিয়ে তা করা হবে না। সম্ভব এটা খুব স্পষ্টভাবে বলতে চাই, ইসলামকে বাদ দিয়ে আমাদের মতো ৯০ শতাংশ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশে চলা সম্ভব নয়। যারা ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন তারা কিন্তু টিকতে পারেননি, পারছেন না। যারা বিদ্রোহ করেছিলেন, তাদের পরিণতি ভালো হয়নি, খারাপ হয়েছে। বিনীতভাবে বলতে চাই, ইসলামের কাঠামোর মধ্যে আমরা যদি এগোতে পারি, তবে তা সবচেয়ে ভালো হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে এ রকম একটি ফ্রেমওয়ার্ক আছে, যা নারীদের সামনে এগিয়ে দিতে পারে। ইসলামের কোনো সাময়িক ব্যাখ্যা দেয়ার পক্ষে আমি নই। সত্যিকার অর্থেই ইসলাম নারীকে ক্ষমতা দিয়েছে এবং সম্মানিত করেছে। নারীকে ইসলাম অধিকার দিয়েছে। সেগুলো ব্যাখ্যা করার আগে ‘আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশন’-এর নতুন ভিত্তি যেটা হতে পারে, সে প্রসঙ্গে কিছু কথা বলছি। কী সেই ভিত্তি, যে ভিত্তির ওপর নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য বিদ্যমান? আল্লাহ তায়ালা মানুষের চেহারা এক রকম করে তৈরি করেননি। সব দিক থেকে যেকোনো দুইজন মানুষ অভিন্ন- বা সমান নয়। ওজন, উচ্চতা, বর্ণ, শিক্ষা ইত্যাদি সব কিছুতে একজন মানুষ থেকে আরেকজন আলাদা। কিন্তু মৌলিকভাবে প্রত্যেক মানুষই সমান; আল্লাহর কাছে সমান। এর পাঁচটি প্রমাণ নিম্নে তুলে ধরছি-
প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন, মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’, যাকে আমরা ‘আত্মা’ বলি। মূল মানুষ কিন্তু শরীর নয়। দেহ তো কবরে পচে যাবে। আমরা যারা ইসলামে বিশ্বাস করি তারা জানি, মূল মানুষ হলো ‘রূহ’। আল্লাহ সব মানুষকে, তার রূহকে একত্রে সৃষ্টি করেন, একই রকম করে সৃষ্টি করেন এবং একটিই প্রশ্ন করেন। আল্লাহর প্রশ্নের উত্তরও নারী-পুরুষ সবাই একই দিয়েছিলেন। আল কুরআনের সূরা আরাফের একটি আয়াত হলো- স্মরণ করো, তোমাদের প্রতিপালক আদম সন্তানের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরকে বের করেন এবং তাদের নিজেদের সম্বন্ধে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন এবং বলেন, ‘আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই?’ তারা বলে, ‘হ্যাঁ, অবশ্যই তুমি আমাদের প্রতিপালক। আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি।’ ‘এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন কিয়ামতের দিন না বলো, আমরা তো এ বিষয়ে জানতাম না’ (সূরা আরাফ : আয়াত ১৭২)।
তার মানে, আল্লাহর সাথে একটি পয়েন্টে সব নারী ও পুরুষের একটি চুক্তি হলো- ‘আপনি আমাদের প্রভু, আমরা আপনাকে মেনে চলব।’ এ ক্ষেত্রে পুরুষের চুক্তি আলাদাভাবে হয়নি। নারীর চুক্তি আলাদা হয়নি। সুতরাং আমরা দেখলাম, আমাদের আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের প্রথম কথা হচ্ছে, মূল মানুষ হচ্ছে ‘রূহ’ এবং তা সবার সমান। এই সাম্যের পরে যদি কোনো অসাম্য থাকে, তাহলে তা অত্যন্ত নগণ্য। এর মানে হচ্ছে, মানুষের আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব এক এবং সে মানুষ হিসেবে একই। এটি হলো নারী-পুরুষের সাম্যের প্রথম ভিত্তি।
দ্বিতীয়ত, আমরা পুরুষেরা গর্ব করি, আমাদের শারীরিক গঠন বোধহয়, নারীর তুলনায় উত্তম। আল্লাহ বোধহয় আমাদের তুলনামূলকভাবে শ্রেষ্ঠ করে বানিয়েছেন এবং মেয়েরা আনকোয়ালিফায়েড বা অযোগ্য। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা একটি কথা কুরআনে পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, সব মানুষের মধ্যে পার্থক্য আছে; কিন্তু প্রত্যেক মানুষ ‘ফার্স্ট ক্লাস’। যারা নামাজ পড়েন তারা এই আয়াত জানেন, সূরা ‘ত্বিন’-এ আল্লাহ বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সর্বোত্তম কাঠামোয়’ (সূরা ত্বিন : আয়াত ৪)। তিনি এখানে ‘পুরুষকে’ বলেননি। তার মানে আমাদের গঠনের ক্ষেত্রে পার্থক্য আছে, আমরা এক নই, আমরা ভিন্ন কাঠামোর। কিন্তু সবাই ‘ফার্স্ট ক্লাস’ বা সর্বোত্তম।
সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য, নতুন নারী আন্দোলনের জন্য অথবা নতুন মানব আন্দোলনের জন্য এটা দ্বিতীয় ভিত্তি। ‘মৌলিক’ এ কারণে বলছি, নারী-পুরুষের মধ্যে ছোটখাটো পার্থক্য বিদ্যমান। পুরুষেরা এ কথা বলা ঠিক হবে না যে, মেয়েদের কাঠামো বা স্ট্রাকচার খারাপ। আল্লাহ তাতে অসন্তুষ্ট হবেন। যারা মুমিন, যারা বিশ্বাসী, তারা এ কথা বলবেন না। সুতরাং নারী-পুরুষের মৌলিক সাম্যের এটা হলো দ্বিতীয় প্রমাণ।
তৃতীয়ত, আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, সব মানুষ একই পরিবারের; আদম ও হাওয়ার পরিবারের। সূরা নিসার প্রথম আয়াতে আল্লাহ বলছেন : ‘হে মানব জাতি, সেই রবকে তুমি মানো, যিনি তোমাদের একটি মূল সত্তা (নফস) থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই সত্তা থেকে তার সঙ্গীকে সৃষ্টি করেছেন এবং এ দু’জন থেকে তিনি অসংখ্য নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা নিসা : আয়াত ১)।
তার মানে, আমরা এক পরিবারের। আমরা বনি আদম বা আদমের সন্তান। আল্লাহ পাক কুরআন শরিফে অন্তত ২০-৩০ বার বলেছেন, ‘ইয়া বনি আদামা’ (হে আদমের সন্তানেরা)। বাবা-মা এবং সন্তানেরা মিলে যেমন পরিবার গঠিত হয়, তেমনি ইসলামের দৃষ্টিতে গোটা মানব জাতি একটি পরিবার। সব পরিবারের ওপরে হলো মানব জাতির পরিবার। তার মানে, আমাদের মৌলিক যে সম্মান ও মর্যাদা, তা সমান। ছোটখাটো কারণে আমাদের মধ্যে পার্থক্য হয়ে যায়। তবে জাগতিক মর্যাদা আসল মর্যাদা নয়।
আইনের ভাষায় যেমন বলা হয়, আইনের চোখে সব মানুষ সমান, তেমনি আল্লাহর কাছেও সবাই সমান। আল্লাহর কাছে সম্মানের একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া। আল্লাহ বলেননি, তার কাছে পুরুষ সম্মানিত বা নারী সম্মানিত। আল্লাহ বলেছেন : ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু জানেন, সব খবর রাখেন’ (সূরা হুজুরাত : আয়াত ১৩)।
আল্লাহর কাছেই যদি মর্যাদার এই ভিত্তি হয়, তাহলে মানুষের পার্থক্যে কি কিছু যায়-আসে? আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাকওয়া (আল্লাহকে কে মানে আর কে মানে না) ছাড়া কোনো পার্থক্য করেন না। অতএব, আমরা একই পরিবারের সন্তান, আমাদের মৌলিক মর্যাদা সমান।
কুরআনের সূরা নিসার একটি আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেছেন : ‘এবং ভয় পাও সেই আল্লাহকে, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে অধিকার দাবি করে থাকো এবং ভয় পাও গর্ভকে বা মাকে (সূরা নিসা : আয়াত ১)।
আল্লাহ বলেছেন, গর্বকে ভয় পাও। কুরআন শরিফের এই আয়াতটির তাফসিরে মিসরের বিখ্যাত আলেম সাইয়েদ কুতুব লিখেছেন, ‘এই ভাষা পৃথিবীর কোনো সাহিত্যে কুরআনের আগে লেখা হয়নি। আল্লাহ গর্ভকে ভয় করতে বলে মাকে সম্মান করার কথা বলেছেন, নারী জাতিকে সম্মান করার কথা বলেছেন’ (সূরা নিসার তাফসির, সাইয়েদ কুতুব)। সুতরাং আমাদের মৌলিক সামাজিক মর্যাদা এ ক্ষেত্রেও সমান বলে প্রতীয়মান হলো। এটা আমাদের নতুন আইডিওলজিক্যাল ফাউন্ডেশনের তৃতীয় প্রমাণ।
চতুর্থত, আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির সময় বলে দিলেন, ‘তোমরা সবাই খলিফা।’ তিনি বলেন, ‘ইন্নি জায়েলুন ফিল আরদি খলিফা।’ আল্লাহ বলেননি, পৃথিবীতে তিনি নারী পাঠাচ্ছেন বা পুরুষ পাঠাচ্ছেন। এমনকি তিনি বলেননি, তিনি মানুষ পাঠাচ্ছেন। আল্লাহ বললেন, তিনি খলিফা পাঠাচ্ছেন। পাঠালেন মানুষ, বললেন খলিফা। মানুষকে তিনি খলিফা নামে অভিহিত করলেন। ‘খলিফা’ মানে প্রতিনিধি। আমরা পুরো মানব জাতি, আল্লাহর প্রতিনিধি। পুরুষ-নারী নির্বিশেষে আমরা প্রত্যেকে তার প্রতিনিধি, আল্লাহর প্রতিনিধি। তবে এ কথা ঠিক, যদি আমরা গুনাহ করি, অন্যায় করি, খুন করি, অত্যাচার করি, জুলুম করি, ঈমান হারিয়ে ফেলি- তাহলে আমাদের খলিফার মর্যাদা থাকে না। কিন্তু মূলত আমরা আল্লাহ পাকের খলিফা (সূরা বাকারা : আয়াত ৩০; সূরা ফাতির : আয়াত ৩৯)।
এই খলিফার মর্যাদার মধ্যেই রয়েছে সব ক্ষমতায়ন, যে ক্ষমতায়নের কথা আমরা বলে থাকি। ক্ষমতা ছাড়া কেউ কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারে না। খেলাফতের দায়িত্ব পালন করতে গেলে প্রত্যেক নারী ও পুরুষের কিছু ক্ষমতা থাকতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নের ভিত্তি এই খেলাফতের মধ্যে রয়েছে। শুধু নারী নয়, খেলাফত শব্দের মধ্যে নারী, পুরুষ, গরিব, দুর্বল সবার ক্ষমতায়নের ভিত্তি রয়েছে। সুতরাং নারী-পুরুষ মৌলিক সাম্যের এটি হলো চতুর্থ প্রমাণ।
ইসলাম চায় প্রত্যেককে ক্ষমতা দিতে। এ মুহূর্তে যদি নারীরা বঞ্চিত থেকে যান, তবে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। পুরুষেরা কোনো দিন বঞ্চিত হলে তাদের ক্ষমতায়িত করতে হবে। তবে যে বঞ্চিত, তার কথা আমাদের আগে ভাবতে হবে। নারীদের ক্ষমতায়নের জন্য বর্তমানে আমাদের আগে কাজ করতে হবে।
পঞ্চমত, আজকে মেয়েদের আসল কাজ কী, তা নিয়ে কথা উঠছে। তারা কি ঘরে বসে থাকবেন- এমন প্রশ্ন উঠছে। কোনো মেয়ে যদি তার স্বাধীন সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঘরে থাকতে চান, তবে তার সেটা করার অধিকার আছে। পুরুষের ক্ষেত্রেও বিষয়টি প্রযোজ্য। কিন্তু আল্লাহ কোথাও বলেননি, নারীদের ঘরে বসে থাকতে হবে এবং বাইরের কাজ নারীরা করতে পারবেন ন। বরং আল্লাহ মূল দায়িত্ব নারী-পুরুষের একই দিয়েছেন। সূরা তাওবার ৭১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, নারী-পুরুষের দায়িত্ব ছয়টি : ১. তারা ভালো কাজের আদেশ দেবে। ২. মন্দকাজের ব্যাপারে নিষেধ করবে। ৩. উভয়ে নামাজ কায়েম করবে। ৪. জাকাত দেবে। ৫. আল্লাহকে মানবে। ৬. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মানবে।
এসব কথার মাধ্যমে আল্লাহ নারীদের সব ভালো কাজে অংশগ্রহণকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন। এটাই ইসলামের নীতি। এ বিষয়ে আল্লাহ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যারা এ ছয়টি দায়িত্ব পালন করবেন তাদের ওপর আল্লাহ তায়ালা রহমত বর্ষণ করবেন। কুরআনের বেশ কয়েকটি তাফসির পড়ে এবং পবিত্র কুরআন ও সুন্নতে রাসূলে পুরোপুরি বিশ্বাসী একজন মানুষ হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, এ ছয়টি দায়িত্বের মধ্যে নারী-পুরুষ সবাই সমান। রাজনীতি, সমাজসেবা ইত্যাদি সব কাজই এ ছয়টির আওতায় পড়ে।
আয়াতটিতে আরো বলা হয়েছে- মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারী একে অপরের অভিভাবক (ওয়ালি), একে অপরের বন্ধু, একে অপরের সাহায্যকারী (সূরা তাওবা, আয়াত : ৭১)।
এই আয়াত কুরআন শরিফের সর্বশেষ সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত। উল্লিখিত বিষয়ে আগে যেসব আয়াত আছে, সেগুলোকে এই আয়াতের আলোকে ব্যাখ্যা করতে হবে। এই আয়াতে বলা আছে, নারী-পুরুষ একে অপরের অভিভাবক বা গার্ডিয়ান। অনেকে বলেন, নারী গার্ডিয়ান হতে পারেন না; কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, নারী গার্ডিয়ান হতে পারেন। কুরআনে এ ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য নেই।
বর্তমানে আমরা ইসলামের মূল জিনিস পরিত্যাগ করে ছোটখাটো জিনিস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মানুষের তৈরি করা বিভিন্ন কিতাবের ওপর নির্ভর করছি। আল্লাহর মূল কিতাবকে আমরা সে তুলনায় গুরুত্ব দিচ্ছি বলে মনে হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে একটি কথা বলা দরকার : ইসলামকে কেউ যদি অন্যের মাধ্যমে শেখেন তবে তারা কখনো মুক্তি পাবেন না। তাই প্রত্যেককে কুরআনের পাঁচ-ছয়টি তাফসির নিজে পড়তে হবে। অনেকে অনুবাদের মধ্যে তাদের নিজেদের কথা ঢুকিয়ে দেন। ফলে পাঁচ-ছয়টি তাফসির পড়লে আমরা বুঝতে পারব- কোথায় মানুষের নিজের কথা ঢুকেছে আর আল্লাহর কথাটা মূলত কী? কয়েক রকম ব্যাখ্যা পড়লে আমরা ঠিক করতে পারব, কোন ব্যাখ্যা সঠিক। মেয়েদের মধ্যে বড় তাফসিরকারী তৈরি হননি। মেয়ে তাফসিরকারী থাকলে হয়তো জেন্ডার পক্ষপাতিত্ব হতো না। তবে কুরআন শরিফের কিছু তাফসির আছে, যেগুলো এই পক্ষপাতিত্বমুক্ত, যেমন মুহাম্মদ আসাদের ‘দ্য মেসেজ অব দ্য কুরআন’।
লেখকঃ সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার।