সাইফুল ইসলাম সুমন: যে সকল ঔষধ বা দ্রব্যাদি সেবনে মানুষের স্বাভাবিক শারীরিক ও মানসিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে, মানুষ অস্বাভাবিক আচরণ করে এবং উত্তর উত্তরোত্তর সেসব ঔষধ বা দ্রব্যাদি সেবনের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় তাই মাদকদ্রব্য হিসেবে আখ্যায়িত। আর মাদকাসক্তি হচ্ছে চৈতন্য হরণকারী মাদকের অভ্যাসগত ব্যবহার যা একসময় মানসিক ও নৈতিক এবং সামাজিক অকল্যাণের দিকে পরিচালিত করে। নিন্মে মাদবাসক্তির বৈশিষ্ট্য ও কুফল সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
মাদকাসক্তির বৈশিষ্ট্যাবলীঃ-
১. যারা মাদকাসক্ত হয়েছে তাদের মধ্যে মাদক গ্রহণের দুর্দমনীয় ইচ্ছা প্রবল মাত্রায় বর্তমান থাকে।
২. নিয়মিত নেশা গ্রহনের সাথে সাথে নেশা আরো প্রবলভাবে বৃদ্ধি পায়।
৩. মাদক গ্রহণের ফলে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, আসক্ত ব্যক্তির কাছে তার প্রতিক্রিয়া অনুভূতি লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা বিরাজমান।
৪. নেশা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাদক গ্রহণের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।
৫. আসক্ত ব্যক্তির দৈহিক, মানসিক, চিন্তাসহ অন্যান্য কর্ম ক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
৬. মাদকাসক্তির সমস্যা শুধু ব্যক্তির একার নয়। এটা ব্যক্তি, দল পরিবার, সমষ্টি ও গোটা সমাজের জন্য সমস্যা।
৮. মাদকাসক্তি সমস্যার সাথে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম জড়িত থাকে। যেমন- চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ, খুন, পতিতাবৃত্তি, পুরুষদের পতিতালয়ে গমন ও অস্বাভাবিক যৌনক্রিয়া বিবাহ বিচ্ছেদসহ পারিবারিক ভাঙ্গন ইত্যাদি।
৯. আসক্ত ব্যক্তির কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র এবং দৈহিক কর্মকান্ডের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব বিস্তার করে।
১০. প্রেমে ব্যর্থতা, হতাশা, পারিবারিক বিশৃঙ্খলা প্রভৃতি সামাজিক ও পারিবারিক অসঙ্গতির কারণে আসক্তদের সংখ্যা ও পরিমাণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
মাদক সেবনের কুফলঃ-
১. মাদক সেবনের দ্বারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) এর বিধান লঙ্ঘিত হয়।
২. মাদকসেবীর উপর মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাঃ) অসন্তুষ্ট হন এবং তার উপর লা’নত বর্ষণ করেন।
৩. হাদীস শরীফে মাদকের “উম্মুল খাবায়েছ” বা সব নষ্টের মূল বলা হয়েছে।
৪. রাসূল (সাঃ) বলেছেন মাদক সেবন এবং ঈমান উভয়টি একত্রিত হতে পারে না।
৫. মাদক উম্মুল ফাওয়াহিশ বা সকল অশ্লীলতা আকর।
৬. হাদীস শরীফে মাদক সেবনকারীকে মূর্তি পূজারীর সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৭. মাদক সেবন একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ। কারণ মাদক সেবনকারী নেশাবস্থায় মা, বোন, খালার সাথেও কুকর্ম করতে পারে।
৮. মাদককে সকল প্রকার পাপের ভিত্তি হিসেবে স্থির করা হয়েছে।
৯. মাদকসেবীর ৪০ দিন পর্যন্ত নামাজ কবুল হয় না, আবার সেবন করলে আবারও ৪০ দিন পর্যন্ত নামাজ কবুল হয় না, পুনরায় সেবন করলে পুনরায় ৪০ দিন পর্যন্ত নামাজ কবুল হয় না।
১০. দুনিয়াতে যে মাদক সেবন করে তওবা ব্যতিরেকেই মৃত্যুবরণ করে পরকালে সে সুপেয় শরাব থেকে বঞ্চিত থাকবে।
১১. মাদকসেবী ব্রেনের ভারসাম্যতা হারিয়ে ফেলে, আর ভারসামহীনতার কারণে সে মানুষের সাথে ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ে, স্ত্রী, সন্তানাদি, শিশুদের সাথে বালক ও পাগল সূলভ আচরণ করে।
১২. গালি-গালাজ করে।
১৩. মানুষকে অন্যায় ভাবে প্রহার করে।
১৪. পাপাচার ও কুফরীমূলক কথাবার্তা বলে।
১৫. অন্যায় ভাবে স্ত্রীকে তালাক প্রদান সহ অসংখ্য খারাপ কর্মে লিপ্ত হয়।
১৬. আত্মীয় স্বজনের সাথে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে, ফলে পরিবার-পরিজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি হয়।
১৭. মাদকসেবনকারী নামাজের প্রতি যত্নবান হয় না এমনকি অন্যান্য ইবাদাতের প্রতিও খেয়াল রাখে না।
১৯. মাদক ও জুয়া পারস্পরিক শত্রুতা ও বিদ্বেষের কারণ হয়।
২০. এসব শয়তানী কর্মকান্ড। এগুলোর মাধ্যমে শয়তান পরস্পরের মাঝে শত্রুতা সৃষ্টি করে এবং মানুষকে আল্লাহর জিকির, নামাজ ও অন্যান্য ইবাদত থেকে বিরত রাখে।
আরো বহুবিধ সমস্যা তো আছেই। আজ এই পর্যন্তই। আল্লাহ হাফেজ।
Previous Postনির্বাচন কমিশনের সফলতার কথা বলে নেতিবাচক মনোভাব দূর হবে না
Next Postপ্রথমবার ঢাকায় এসেই আগুনের মধ্যে হেলাল শিকদার
Related articles
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
HimalaySep 20, 2023