হিমালয় ডেস্কঃ রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ কোম্পানি বাংলাদেশ বিমানের পাইলট নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দক্ষতার চেয়ে স্বজনপ্রীতি বেশি গুরুত্ব পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উড়োজাহাজ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে পরিবারের সদস্যদের নিয়োগের পথ তৈরি করায় রাষ্ট্রীয় বিমানসংস্থায় অদক্ষ পাইলট ঢুকে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, নিয়ম মেনেই তারা নিয়োগ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিচ্ছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিশেষ একজন প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে একাধিকবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতার দিক থেকে দুর্বল প্রার্থীদেরও লিখিত পরীক্ষায় পাস করানো হয়েছে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে সিপিএলধারীদের (কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স) সাথে বিশেষ এয়ারক্রাফট পরিচালনায় অভিজ্ঞ প্রার্থীর যোগ্যতা এক করে ফেলায় নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, কোনো বিশেষ প্রার্থীকে গ্রেস নম্বর দিয়ে পাস করানো হয়নি। পাঁচ-ছয়জন নয়, সবমিলে ৭৬ জন প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় পাস করেছেন। তাদের মধ্য থেকে ৩২ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্যে তার আপন ভাইয়ের ছেলে ও অন্য পাইলটের স্ত্রী-সন্তান থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, তারা যোগ্য হওয়ার পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষায়ও পাস করেছেন।
বিমানের পাইলট নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি অথবা এইচএসসি অথবা অঙ্ক ও পদার্থসহ সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ ৩ প্রয়োজন বলে উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ‘ও লেভেল’ হলে গ্রেড বি এবং ‘এ লেভেল’ হলে যেকোনো দু’টি বিষয়ে জিপিএ ৩ প্রার্থীরা অংশ নিতে পারবেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর প্রথমবার প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘জিইডি ডিগ্রিধারীরা এতে অংশ নিতে পারবেন না। সিএএবি থেকে সিপিএল নেয়া অথবা সিএএবি কর্তৃপক্ষ থেকে এনডোর্স করা ব্যক্তিরা আবেদন করতে পারবেন।’ এ বিজ্ঞপ্তিতে সিপিএলধারী এবং বি৭৩৭ ও ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞদের এক কাতারে দাঁড় করিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পরে ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি অথবা গণিত কিংবা পদার্থবিজ্ঞানে গ্রেড বি অথবা জিপিএ ৩ প্রাপ্তরা যোগ্য হবেন।’ প্রাপ্ত অভিযোগ অনুসারে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিমানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা-পাইলটের ছেলে, মেয়ে ও স্ত্রী সুবিধা পেয়েছেন। বিমানের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার পাইলট ভাইয়ের সন্তানও বেশি সুবিধা পেয়েছেন। সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে জিইডি ডিগ্রিধারীদের ব্যাপারে কোনো কিছুই বলা হয়নি। ফলে তারাও আবেদনের সুযোগ পেয়েছেন এবং লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। অনেকে পাসও করেছেন। এখন তাদের বাদ দেয়ার পক্ষে বিমান কর্তৃপক্ষ। জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বিমানের এবারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কিছু ভুল ছিল। এ কারণে সংশোধন করা হয়েছে। জেনারেল এডুকেশন ডিগ্রিধারীদের (জিইডি) বিমানে পাইলট হিসেবে নেয়া যাবে না এমন কোনো শর্ত অর্গানোগ্রামে নেই।’
অভিযোগকারীরা বলছেন, ২০১৬ সালে ১২ জন জিইডিধারীকে লিখিত পরীক্ষায় সুযোগ দেয়া হয়নি। এ প্রসঙ্গে এমডি বলেন, এটা দেখে বলতে হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বোয়িং ৭৩৭ ও ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ চালানোর অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের ক্ষেত্রে আবেদনের যোগ্যতা সর্বোচ্চ ৩০ বছরের (মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের ক্ষেত্রে ৩২ বছর) পরিবর্তে ৪০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, এখন বি৭৩৭ ও ড্যাশ-৮ এর পাইলট সঙ্কট আছে। নিয়োগের পর একজন প্রার্থীকে ঠিকঠাক করতে কমপক্ষে দুই বছর লাগে। তাই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে অভিজ্ঞ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার ও বয়সসীমা ৪০ বছর করা হয়েছে। এটা কোনো বৈষম্য তৈরি করবে না, অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী এটা করা যাবে।
সূত্র মতে, এর আগে ড্যাশ-৮ এর জন্য ২৪ জন ক্যাডেট পাইলট নিয়োগ করেও সঠিক সময়ে তাদের প্রশিক্ষণ শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অথচ এ প্রশিক্ষণ শেষ করতে সর্বোচ্চ সাত মাস লাগার কথা ছিল। সঠিক সময়ে পাইলট তৈরি না করে বিমান জরুরি ভিত্তিতে বেশি বেতনে বেসরকারি একটি উড়োজাহাজ কোম্পানি থেকে পাইলট ভাড়া করে আনা পাঁচজন পাইলটকে ফার্স্ট অফিসার হিসেবে মাসে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দেয়া হতো। সেখানে বিমানের একজন নিজস্ব ফার্স্ট অফিসারের বেতন ২ লাখ টাকার বেশি নয়। এতে একটা বেতনবৈষম্য সৃষ্টি হয়েছিল বলে খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন। বেসরকারি এয়ারলাইন্স থেকে বেশি বেতনে পাইলট ভাড়া করা প্রসঙ্গে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ফ্লাইট অপারেশন ঠিক রাখতে বিমানকে বাধ্য হয়ে পাইলট ভাড়া করতে হয়েছে। আর পাইলট সঙ্কটের কারণে ড্রিমলাইনার দিয়ে লন্ডন রুটে ফ্লাইট চালানো যাচ্ছে না। ১৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে ছয়টির পরিবর্তে চারটি ফ্লাইট চালাতে হবে।