এমএম রহমাতুল্লাহঃ উপমহাদেশের অন্যতম দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত দীঘা। ঝাউ বনের কোল ছুঁয়ে নীল আকাশের নিচে হাঁটতে হাঁটতে ঢেউ ভাঙা সমুদ্রের হাতছানিতে মন ভালো করতে চাইলে সপ্তাহের শেষে হাতে বাড়তি দু-একদিনের ছুটি নিয়ে সোজা চলে যেতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম সমুদ্র সৈকত দীঘাতে। কলকাতা শহর থেকে মাত্র ১৮২ কিলোমিটার দূরে ধু ধু বালিয়াড়ি আর উত্তাল সমুদ্রের গর্জন আপনার কর্মব্যস্ত জীবনে নিঃসন্দেহে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে তা বলাই বাহুল্য। সমুদ্র সৈকত দীঘার মনোমুগ্ধকর রূপ বলতে সুবিশাল দীঘা সমুদ্র সৈকত। অতীতে দীঘার নাম ছিল বীরকুল। দীঘাকে ‘প্রাচ্যের ব্রাইটন’ও বলা হত। এই বীরকুলের সৌন্দর্য ছিল অপরূপ। ১৭৮০ সালে ভাইসরয় ওয়ারেন হেস্টিন্স এই বীরকুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে স্ত্রীকে বীরকুলের রূপের বর্ণনা করে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর ১৯২৩ সালে ইংরেজ পর্যটক জন ফ্রাঙ্ক স্মিথ এই বীরকুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হলেন। একদিন জন ফ্রাঙ্ক স্মিথ সাহেব মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধান চন্দ্র রায়ের দপ্তরে হাজির হলেন। মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করলেন দীঘাকে সাজিয়ে তুলতে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ড. বিধান চন্দ্র রায় দীঘাকে সাজাতে চেষ্টা করলেন। পরিকল্পনা তৈরী করা হল, সৃষ্টি হল আজকের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র অপরূপা দীঘা। শুধু কোলকাতা নয়, পৃথিবীর নানা প্রান্তের পর্যটন বিলাসী মানুষের গন্তব্য এখন দীঘা। দীঘার কাছেই রয়েছে অনেক জনপ্রিয় স্থান। প্রায় ১৫ কিমি দূরে অবস্থিত আকর্ষনীয় সমূদ্র সৈকত শংকরপুরে যেতে পারেন। আছে জুনপুটে রাজ্য সরকারের মৎস্য দপ্তরের মৎস্যচাষ ও গবেষণাকেন্দ্র।
বর্তমানে নয়নাভিরাম নিউ দীঘার অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়াতে দীঘা সমুদ্র সৈকতটিকে ওল্ড দীঘা বলা হয়। অন্যদিকে দীঘার নতুন সমুদ্র সৈকতটি নিউ দীঘা নামে পরিচিতি পাচ্ছে। তবে ওল্ড দীঘাতেই পর্যটকদের ভিড় সব থেকে বেশি হয়। এখানে রাস্তা থেকে বাঁ দিকে কিছুটা নেমে গেলেই দেখা মিলবে সুবিশাল সমুদ্রের। বিশাল বিশাল ঢেউ নাচতে নাচতে দিগন্তের ওপার থেকে এসে আছড়ে পড়বে ক্রমাগত আপনার পায়ের নিচে। তবে ওল্ড দীঘায় সমুদ্র স্নানের ক্ষেত্রে একটু সাবধান থাকা প্রয়োজন। এখানে সমুদ্রের পানিতে মাঝে মাঝেই চোরা টান থাকে। যে কারণে সতর্কতামূলক সব প্রচারও রয়েছে এখানে। এটি নিউ দীঘা থেকে তিন কিমি পশ্চিমে। এ সমুদ্র সৈকতটি ভারতের সবচেয়ে আদি ও নিখুঁত সমুদ্র সৈকতরূপে পরিচিত। ওল্ড দীঘাতে বাজারঘাট, হোটেল রয়েছে সব থেকে বেশি পরিমাণে। কোলাহলহীন এই সৈকত খুব ভালো লাগবেই। এই সৈকতের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এখানকার কাজু বাগানের সারি সবচেয়ে আকর্ষনীয়। এখানে অল্প পয়সায় কিনে নিতে পারেন হরেক রকমের শামুক ও ঝিনুকের নানা সামগ্রী। ডাবের পানি, পমফ্রেট কাটলেট, চিংড়ির কারি, স্পীডবোট এবং বাইক রাইডিং ওল্ড দীঘার সেরা আকর্ষণ।ওল্ড দীঘা পুরানো সমূদ্র সৈকত, পুরানো ভ্রমন ক্ষেত্র। এটি বহু পুরানো শহর হওয়ায় কিছুটা ঘিঞ্জি প্রকৃতির। ‘বিশ্ববাংলা পার্কে’র সামনে থেকে সমূদ্র সত্যিই অনন্য। ঘোড়ায় চড়া বা পমফ্রেটের কাটলেট বা জ্যোৎস্না রাতে চাঁদের আলোর প্রতিবিম্বে সমূদ্র দর্শণ হৃদয়কে আলোড়িত করবেই।
ওল্ড দীঘা থেকে মাত্র ৩ কিলোমিটার দূ্রেই নিউ দীঘা।ওল্ড দীঘার পশ্চিম দিকে সমূদ্রের পাড় ধরে বাঁধানো রাস্তা দিয়ে হেঁটে নিউ দীঘা যাওয়া যায়। শহরের একটি নতুন মনোরম অংশ নিউ দীঘার সমুদ্র সৈকত ওল্ড দীঘার থেকে অনেকটাই বড় ও নয়নাভিরাম। এই অংশটি ওল্ড দীঘার চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি পরিকল্পিত হলেও এখানে ভিড়ও ওল্ড দীঘার তুলনায় অনেকটাই কম। ‘দীঘা শংকরপুর উন্নয়ন পরিষদ’ কর্তৃক পর্যটকদের সুবিধার্থে প্রচুর পরিকল্পনা মাফিক কাজ হচ্ছে। ওল্ড দীঘার চেয়ে কিছুটা নিরিবিলি এখানে। সমূদ্রের বাঁধানো পাড়ে বসে সমূদ্রকে দু’চোখ দিয়ে শুষে নেওয়া আর সমূদ্রের গর্জনকে হৃদয়ের সুরে বেঁধে নেওয়ার মধ্য দিয়ে পাওয়া যায় এক স্বর্গীয় অনুভূতি। ঢেউ ভেঙে সমূদ্রের স্নান দেবে অনন্য অভিজ্ঞতা। সমুদ্রের তীরে বসে দু’একটা ডাব খেতেই হবে। বিকেল ও সন্ধ্যে বেলায় কোটালের সময় সমুদ্রের পাড়ে বসলে দেখা যায় সমুদ্রের আর এক রূপ। সমুদ্র তখন উত্তাল। বিরাট বিরাট ঢেউ আছড়ে পড়ছে তটের উপর। বালুকার চরে ঝিনুক কুড়ানো, সামূদ্রিক প্রাণির আনাগোনা দেখা, জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য দেখা মনের গভীরের আনন্দটাকে পরিপূর্ণ করবে। নিউ দীঘার সমুদ্র সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে দিগন্ত বিস্তৃত সফেদ সমুদ্রের গর্জন আপনাকে আনমনা করে তুলতেই পারে। নিউ দীঘা সৈকতের অদূরে দাঁড়িয়ে রয়েছে ঝাউয়ের সারি। নিউ দীঘার বুকে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত দেখতে সত্যিই অপূর্ব। অবশ্য ওল্ড দীঘাতেও সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত একই রকমের সুন্দর লাগে। দীঘার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। সকলের মনে এক স্বর্গীয় অনুভূতির সৃষ্টি করবেই।
অমরাবতী লেকঃ নিউ দীঘায় লেকের সাথে একটি পার্ক ও একটি সর্প-উদ্যান আছে। সমূদ্র তীর থেকে খুব কাছেই উত্তর দিকে এক কিলোমিটারের মধ্যেই অবস্থিত। পার্কের সবুজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঋতুকালীন ফুল মুগ্ধ করবেই। এখানে নৌকা ভ্রমণের ব্যবস্থাও আছে। ব্যস্ত জীবন এড়িয়ে পার্কের জলাশয়ে একটু বোটিং মনকে সজীব করবেই। শিশুদের জন্য বেশ উপযুক্ত পার্ক। নানান রাইডিং, খাঁচা ভর্তি পাখি, বাহারী ফুল যেন শিশুদের জন্য স্বর্গোদ্যান।
রোপ-ওয়েঃ অমরাবতী পার্কের মধ্যেই রয়েছে রোপ-ওয়ে। এটি নির্মাণ করেছে ‘দামোদর রোপ-ওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রা লিমিটেড’। এ এক রোমাঞ্চকর রাইডিং। চড়ার অভিজ্ঞতা দারুন। দীঘায় গেলে অবশ্যই রোপ-ওয়ে একবার চড়ে দেখতেই হবে। টিকিট কেটে রোপ-ওয়েতে চাপা যাবে।
দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্রঃ অমরাবতী পার্কের কাছাকাছি পশ্চিম দিকে দীঘা বিজ্ঞান কেন্দ্র অবস্থিত। সমূদ্র ভ্রমনের মাঝে একঘেয়েমি কাটাতে এখানে যেতেই হবে। বিজ্ঞানপ্রেমী হলে মোটেই মিস করা যাবে না। এখানে রয়েছে মজার বিজ্ঞান গ্যালারী, প্রতিফলন গ্যালারী, প্রাণী বিজ্ঞান গ্যালারী, বিজ্ঞান পার্ক, ছাদের জল সঞ্চয় প্রকল্প, টেরেনোসরাস রেক্স স্ট্যাচু, ভার্চুয়াল গেম, থ্রি-ডি শো ইত্যাদি, যা অত্যন্ত আকর্ষনীয়। এই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হলে টিকিট লাগবে। বিশেষ কিছু শো এর ক্ষেত্রে আলাদা টিকিটও লাগবে।
উদয়পুরঃ নিউ দীঘার পাশে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলা ও বাংলার সীমানা বরাবর উদয়পুর সমুদ্রতট অবস্থিত। নিউ দীঘা থেকে তিন কিমি পশ্চিমে। উদয়পুর সমুদ্র সৈকতটি ভারতের সবচেয়ে আদি ও নিখুঁত সমুদ্র সৈকত রূপে পরিচিত। কোলাহলহীন এই সৈকত খুব ভালো লাগবেই। এই সৈকতের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর। এখানকার কাজু বাগানের সারি সবচেয়ে আকর্ষনীয়। ডাবের জল, পমফ্রেট কাটলেট, চিংড়ির কারি, স্পীডবোট এবং বাইক রাইডিং উদয়পুর সৈকতে ভ্রমনকে অনন্য করে তুলবেই।
নিমাই চাঁদ নিতাই চাঁদ মন্দিরঃ উদয়পুরের পরে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলায় রয়েছে নিমাই চাঁদ নিতাই চাঁদ মন্দির। দর্শণীয় মন্দির। রয়েছে কিঁয়াগড়িয়া আশ্রম। এখানে ফটো তোলা নিষেধ। কিছুক্ষণ মনোরম পরিবেশে বসলে মনের প্রশান্তি আসবেই।
চন্দনেশ্বর মন্দিরঃ দীঘা থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। চন্দনেশ্বর শিব মন্দিরের লোককাহিনী তার ইতিহাসকে জনপ্রিয় করেছে। মন্দিরটি কলিঙ্গ স্থাপত্যে নির্মিত। প্রচুর পূন্যার্থী পূন্য লাভের বিশ্বাস ও আশা নিয়ে মন্দির চত্ত্বরে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে। মনস্কামনা পূর্ণ করতে পূন্যার্থীরা সামনের পুকুর থেকে মন্দির পর্যন্ত ‘দণ্ডি’ কাটেন। উড়িষ্যা ক্যালেন্ডারের প্রথম দিনে মন্দিরে বিশাল বার্ষিক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সময় প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ পূন্যার্থীর আগমন হয়। এক রাত্রিতে প্রায় ৩ থেকে ৪ লক্ষ পূন্যার্থী তাদের নৈবেদ্য অর্পণ করেন।
তালসারিঃ দীঘা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে উড়িষ্যার বালেশ্বর জেলার তালসারি সৈকত অবস্থিত। ভারতের উত্তর-পূর্ব উপকূলে সর্বশেষ সমুদ্র সৈকত তলাসারি। এই সৈকত প্রাচীন ও দর্শনীয়। সৈকতের সৌন্দর্য আমাদের ইন্দ্রিয়গুলিকে রিফ্রেশ করবেই। এই সমুদ্র সৈকত বহু খেজুর গাছ, নারকেল গাছ, কাঁটা গাছের সারিতে মোড়া। এই সৈকতে রয়েছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় হাজার হাজার লাল কাঁকড়া। রান্না করা মুরগির মাংস, কাঁকড়ার কাটলেট ও সামূদ্রিক মাছের স্বাদ নিতে নিতে সৈকত ভ্রমন অন্য মাত্রায় পৌঁছাবেই। এখানে সুবর্ণরেখা নদী বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। ভাটার সময় সুবর্ণরেখার বুকে হাঁটতে হাঁটতে সমূদ্র তীরে পৌছে যেতে বেশ ভালো লাগবে।
মেরিন অ্যাকোরিয়ামঃ অ্যাকোয়ারিয়ামটি ওল্ড দীঘার নিকট রয়েছে। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় নির্মিত অ্যাকোরিয়াম। সমুদ্রতলার গোটা জগত নিয়ে তৈরি এটি। ১৯৮৯ সালে ভারতের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় এই মেরিন অ্যাকরিয়াম অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার তৈরি করা হয়। যেটা আজ ভারতের সমুদ্র গবেষণার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। অ্যাকোয়ারিয়ামে তিন ধরণের প্রাণী রয়েছে: সংরক্ষিত প্রজাতি, স্থানীয় আকর্ষনীয় প্রজাতি এবং পরিস্কার জলের প্রজাতি। এখানে রয়েছে সি অ্যানিমোনি, লোবস্টার, সার্ক, রে, বাটার ফ্লাই ফিস, সি স্নেক, সি হর্স এবং অন্যান্য অসাধারণ জলজ প্রাণী। সৈকত ভ্রমনে গিয়ে মেরিন অ্যাকোরিয়াম ভ্রমণ অবশ্যই উপরি পাওনা।
কাজল দিঘী বা ওন্ডার ল্যাণ্ডঃ নিউ দিঘা থেকে ২ কিমি দূরে কাজল দিঘী পার্ক বা ওন্ডার ল্যান্ড রয়েছে। এখানে ট্রয় ট্রেন রয়েছে। কাজল দিঘী র পাড় দিয়ে ছুটে চলেছে কু-ঝিক-ঝিক ট্রয় ট্রেন। এক টুকরো দার্জিলিং। ট্রয় ট্রেনে চেপে কাজল দিঘির রূপ দেখতে দেখতে ভ্রমনের মজাটাই আলাদা। দিঘির পাড়ে খানিক জিরিয়ে নিয়ে খাঁচার পাখি বা খরগোসের সাথে একটু খুনসুটি করাই যায়। শিশুদের রাইডিং গুলি খুবই মজার। ট্রয় ট্রেনে চাপতে টিকিট কেটে ‘কাজল দিঘি’ স্টেশনে অপেক্ষা করতে হবে।
ক্ষণিকা মার্কেট ও নেহরু মার্কেটঃ দীঘায় রয়েছে জনপ্রিয় ক্ষণিকা মার্কেট ও নেহেরু মার্কেট। বর্তমানে সমূদ্রের ধার বরাবর সমস্ত দোকান ভেঙে দিয়ে স্থায়ী মার্কেট তৈরী হচ্ছে। হাতের কাজ থেকে গৃহস্থালির যাবতীয় জিনিস এখানে পাওয়া যায়। ঝিনুকের তৈরি গয়না, ঘর সাজাবার জিনিষ, নানা ধরনে শঙ্খ, শামুক, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে অপূর্ব সুন্দর সব জিনিষ পাওয়া যায়। এছাড়াও আছে মেদেনিপুরের বিখ্যাত মাদুর এবং বাঁশের তৈরি নানা ধরনের শিল্প কর্ম। সন্ধ্যে বেলায় দীঘার সমুদ্র তটের ধারে বসে হরেক রকমের দোকান। সমুদ্র পাড়েই ফেরি হয় মুক্তা কিংবা নানা রঙের সমুদ্রের পাথর। সঙ্গে সেই সব পাথর আর মুক্তার গয়না। আত্মীয় ও বন্ধুদের জন্য কিছু উপহার এখানে কেনা যেতে পারে।
মন্দারমণিঃ দীঘা থেকে প্রায় ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত এ জায়গাটি স্থানীয় ‘মন্দার’ ফুলের নাম থেকে হয়েছে মন্দারমনি। লাল কাকড়া অধ্যুষিত জায়গাটি এখন অন্যতম জনপ্রিয়। এখন বহু পর্যটক দীঘা ছেড়ে মন্দারমনি মুখী হয়েছেন।
তাজপুরঃ দীঘা থেকে প্রায় ১৮ কিমি দূরে মন্দারমনি এবং দীঘার নিকটে অপর একটি পর্যটন কেন্দ্র তাজপুর তৈরী হয়েছে। এখানে একটি সমুদ্রবন্দর তৈরীর কাজ চলছে। যারা একটু নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন তাদের কাছে এ জায়গাটি খুবই প্রিয়।
এ ছাড়া দীঘার কোল ছুঁয়ে রয়েছে বিনোদনের ছোট বড় নানান জায়গা। দীঘায় গিয়ে মন চাইলে গাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন আশপাশের এই ধরনের বিভিন্ন সমুদ্র সৈকত কিংবা অন্যান্য স্থানগুলোতেও। আর মন চাইলে দীঘার কোলে বসে সমুদ্রের ঢেউ গুনতে গুনতেই পার করে দিতে পারেন কয়েকদিন। মোটের ওপর সমুদ্রের ছোঁয়ায় মন ভিজিয়ে অবসর যাপন করতে চাইলে সুন্দরী দীঘা আপনাকে বছরের সব সময়ই দুই হাত বাড়িয়ে আমন্ত্রণ জানাবে। এখানেও কিনে নিতে পারেন হরেক রকমের মাছের শুটকি প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্য।
কীভাবে যাবেনঃ কলকাতার ধর্মতলা থেকে ও হাওড়া স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন প্রচুর বাস ছাড়ে দীঘার উদ্দেশে। প্রতি ঘণ্টায় দীঘা যাওয়ার জন্য পাওয়া যায় বাস। কলকাতা থেকে দীঘা যেতে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা লাগে। এ ছাড়া কলকাতা সংলগ্ন শহরতলী বারাসত, হাবড়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকেও রোজ সকালে দীঘার বাস ছাড়ে। বেসরকারি চার্টার্ড বাস ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের বাস ছাড়ে প্রতিদিন। ভাড়া ১৫০ থেকে ২৫০ রুপির মধ্যে।
ট্রেনে যেতে চাইলে হাওড়া থেকে মাত্র সাড়ে তিন ঘন্টার পথ। সবুজ ধান ক্ষেত, ছোট ছোট গ্রাম, গ্রামীন পথ, ছোট নদী, চিংড়ির জলাভূমি আর সোঁদা মাটির গন্ধ উজিয়ে স্বপ্নের সফরটা উপভোগ করতে পারেন ট্রেনে।
কোথায় থাকবেনঃ প্রচুর হোটেল ও লজ রয়েছে ওল্ড দীঘা ও নিউ দীঘাতে। তবুও ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই অবস্থা। হোটেল গুলি বেশ আধুনিক। শুধু পছন্দমত কোন একটা বাছতে হবে। ওল্ড দীঘাতে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে প্রচুর হোটেল রয়েছে। তারপরেও ভাড়ার দিকটা খেয়াল রাখা দরকার। তবে ঝঞ্ঝাট এড়াতে আগে থেকে লজ ভাড়া কিংবা বুকিং করে রাখাই ভালো। নিউ দীঘাতেও রয়েছে বিভিন্ন মাপের হোটেল। যা আপনার পকেট নিশ্চিন্তে পারমিট করবে। দীঘাতে ৪০০ রুপি থেকে শুরু করে ১৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল ভাড়া পাওয়া যায়।
খাওয়া দাওয়াঃ শামুক ও ঝিনুকের নানা সামগ্রী এবং সামুদ্রিক মাছের হরেক রকম পদের জন্য বিখ্যাত দীঘা। শংকর, পমফ্রেটসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছে ভাজা, ঝোলসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের পদ প্রায় সব হোটেলেই পাওয়া যায়। কক্সবাজারের মত খাবারের দাম খুব চড়া নয় এখানে। মোটামুটি ১০০ থেকে ১৫০ রুপি ব্যয় করলে একবেলা মাছ-ভাত দিয়ে পেট ভরেই খাওয়া যায়।