করীম চৌধুরীঃ পৃথিবীর তিন মহাদেশের অনেকগুলো দেশ দেখা হয়ে গেলো। এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকা মহাদেশ। কোনো দেশের এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন থেকেই আমি ডিপোর্ট হইনি। তবে থাইল্যান্ডের সঙ্গে পশ্চিম মালয়শিয়ার সড়ক পথে যে ইমিগ্রেশন সেখান থেকে ২০১১ সালে ডিপোর্ট হয়েছিলাম। এটা ঠিক ডিপোর্ট নয়। আমাকে বিমানে মালয়শিয়া ঢুকতে হবে, সড়ক পথে নয়। মালয়শিয়ার তিন মাসের মাল্টিপল ভিসা ছিলো। তিন মাসের ভিসা হলেও মালয়শিয়ান এয়ারপোর্ট ইমিগ্রেশন প্রথম এন্টৃতে ৩০ দিন থাকার অনুমতি দেয়। আমেরিকার পাঁচ বছরের মাল্টিপল ভিসা থাকলেও যেমন প্রথম এন্টৃতে ছয় মাস থাকার অনুমতি দেয়। তেমনি নিয়ম অনুযায়ি এক মাস মানে ঠিক ত্রিশ দিনের মাথায় ভিসা এক্সটেনশন করতে হবে। এটা দু’ভাবে করা যায়।
একঃ মালয়শিয়ার প্রশাসনিক রাজধানী পুত্রজায়ায় তাদের ইমিগ্রেশন হেড কোয়ার্টারে গিয়ে ভিসার মেয়াদ বাড়াতে হবে ।
দুইঃ মালয়শিয়া থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে অন্য কোন দেশে চলে যেতে হবে । আবার মালয়শিয়া এলে পুনরায় ত্রিশ দিন থাকার অনুমতি দেবে।
মালয়শিয়ার প্রতিবেশি দেশ সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনাই। আমি ঢাকা থেকেই থাইল্যান্ডের ভিসা নিয়ে গিয়েছিলাম । আগে ছয়বার থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। তো ২৯ দিনের মাথায় কুয়ালামপুর থেকে বাসে থাইল্যান্ডের হাটজাই সিটিতে যাই । মালয়শিয়ার হাইওয়েগুলো যে কোনো উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনীয়। উন্নতমানের এসি বাস। কুয়ালালামপুরের পুডুরায়া (Puduraya) বাস স্টেশন থেকে রাত ১১ টায় যাত্রা করে দুই ইমিগ্রেশন( মালয়শিয়া ও থাইল্যান্ড)পার হয়ে পরদিন সকাল সাতটায় থাইল্যান্ডের হাটজাই পৌঁছই । হাটজাই সিটিকে ইংরেজিতে Hatyai লিখে।
কয়েকদিন থাইল্যান্ড ঘুরাফেরা করে আবারো একই বাস সার্ভিসে মালয়শিয়া রওয়ানা দিই। যথারীতি বাস এসে থামলো থাই ইমিগ্রেশনে। পাসপোর্ট জমা দিলাম এবং এক্সিট ( Exit) সীল নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। বাস ছাড়লো এবং মালয়শিয়া ঢুকলো । পাঁচ মিনিট পরই মালয়শিয়ান ইমিগ্রেশন । আবারো বাস থেকে নেমে পাসপোর্ট মালয় ইমিগ্রেশনে জমা দিই। পুলিশের পোশাক আর মাথায় স্কার্ফ পড়া লাস্যময়ী মুসলিম মালয় মেয়েটি আমার পাসপোর্ট দেখেই চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালো। তার বুকের নেম শিল্ডে নাম দেখেছি AMELA আমিলা। বেশ কিছুক্ষণ পাসপোর্ট উলটে পালটে দেখে মেয়ে পুলিশ অফিসারটি আমার আপাদমস্তক আবার দেখলো। আমি লাল গেঞ্জি, সবুজ রঙের শর্টস (হাপ প্যান্ট) আর সাদা ক্যাডস পড়া ছিলাম । আমার পাসপোর্ট বেশ ভারীই বলা যায়। জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্টৃয়া, জাপান, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ইংল্যান্ড ও আমেরিকাসহ আরো অনেক দেশের ভিসা আমার পাসপোর্টে ।
মেয়ে অফিসারটি বললো, তুমি আমার সঙ্গে এসো । সে আমাকে নিয়ে গেলো এক ঊর্ধ্বতন ইমিগ্রেশন অফিসারের রুমে। রুমে ঢুকেই আমি অফিসারের বুকের নেমশিল্ডে নাম দেখলাম আজমির (Azmir) । বুঝলাম সেও মুসলিম । অফিসারটি আমার পাসপোর্ট দেখে খুবই বিনয়ের সঙ্গে আমার নাম স্পষ্ট উচ্চারণ করে বললো, দেখো করিম, তুমি সড়ক পথে মালয়শিয়া ঢুকতে পারবে না। তোমাকে বিমানে মালয়শিয়া প্রবেশ করতে হবে। ওদিকে বাস দাঁড়িয়ে আছে শুধু আমার জন্য। আমি জানতে চাইলাম, কেন? আমার মালয়শিয়ার ভ্যালিড ভিসা আছে। আমি কুয়ালালামপুর থেকে বাসেই এই ইমিগ্রেশন দিয়ে থাইল্যান্ড গিয়েছি। এখন কেন মালয়শিয়া ঢুকতে পারবো না ? পকেটে সাফিশিয়েন্ট ডলার আছে।
সে শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজিতে আমাকে বললো, Please, Try to understand me. I am a Police officer. This is the order from our foreign ministry that no Bangladeshi will be allowed to enter into West Malaysia by Road from Thailand. (প্লিজ, আমাকে বোঝার চেষ্টা করো। আমি একজন পুলিশ অফিসার। সড়ক পথে থাইল্যান্ড থেকে কোনো বাংলাদেশি পশ্চিম মালয়শিয়ায় প্রবেশ করতে পারবে না। এটা আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ।)
আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, বিমানে যেতে পারবো কিন্তু সড়ক পথে নয় কেন? তুমি কি কাইন্ডলি আমাকে কারনটা জানাতে পারো। পুলিশ অফিসারটি আমাকে বললো, তোমার দেশের লাখ লাখ লোক থাইল্যান্ড থেকে অবৈধভাবে মালয়শিয়া প্রবেশ করেছে। তাই সরকারের এই সিদ্ধান্ত । আমি লজ্জা পেয়ে শুধু সরি বলেছি আর কিছু বলিনি।
আমি তার নাম ধরেই বললাম, দেখো আজমির, থাইল্যান্ড আমার পাসপোর্টে এক্সিট (EXIT) সীল মেরে দিয়েছে । অর্থাৎ আমি থাইল্যান্ড থেকে বের হয়ে গেছি । এখন যদি তুমি আমাকে মালয়শিয়া ঢুকতে না দাও তবে আমি থাইল্যান্ডেও ঢুকতে পারবো না । আমি কি এই নো ম্যান্স ল্যান্ডে থাকবো? আজমির আমাকে অভয় দিয়ে বললো, সমস্যা হবে না । আমি তোমাকে আমাদের ইমিগ্রেশনের একটা পেপারে লিখে দিচ্ছি যে তোমাকে যেন থাই ইমিগ্রেশন আবার তাদের দেশে ঢুকতে দেয় কারন তুমি থাইল্যান্ড থেকে বিমানে মালয়শিয়া আসবে। এই অফিসারের নির্দেশে বাস থেকে আমার লাগেজ নামানো হলে বাস চলে গেলো ।
এবার তিনি একটা পুলিশের গাড়িতে করে আমাকে আবার থাই ইমিগ্রেশনে পৌঁছে দিয়ে থাই ইমিগ্রেশন পুলিশকে কি যেন বললো । থাই ইমিগ্রেশন আমার পাসপোর্টে কিছুক্ষণ আগে মারা তাদের এক্সিট ( Exit) সীলের উপর একটা CANCEL সীল মেরে আমাকে থাইল্যান্ডে ঢুকতে বললে আমি পাসপোর্টে এন্টৃ (ENTRY) সীল মারার দাবি করি। থাই ইমিগ্রেশন পুলিশ অফিসার বললো, এন্টৃ সীল লাগবে না । আগের এন্টৃ সীলই চলবে । কারন তোমার এক মাসের থাই ভিসা আছে আর তুমি মাত্র সাত দিন থেকেছো । আরো একুশ দিন তুমি থাকতে পারবে ।
আবার আগের হোটেলে ফিরে এসে খোঁজ নিয়ে জানলাম, হাটজাইতে কোন এয়ারপোর্ট নেই। আমাকে হয় ব্যাংকক না হয় কাছাকাছি ফুকেট যেতে হবে। মেজাজটা কেমন খারাপ হয়? ফুকেট খুব বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত। আন্দামান সাগর পড়েছে ফুকেটে। পরদিন সকাল আটটায় বাসে যাত্রা করে ফুকেট পৌঁছলাম বিকেল চারটায়। সাতদিন ফুকেট থেকে ইচ্ছা মতো পাগলামি করেছি। তারপর এয়ার এশিয়ায় ফুকেট এয়ারপোর্ট থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছাই।
ফুকেট বিচ, আন্দামান সাগরের তীরে অবস্থিত।২০১২ সালে গিয়েছিলাম। আমি একা, তাই হোটেল থেকে এক বয়কে ৩০০ বাথ (থাই মুদ্রার নাম) দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম আমার কয়েকটা ছবি তোলার জন্য । সে ক্যামেরাই চালাতে জানে না । তাই আমার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গিয়েছিল। একটা ভিডিও তাকে দিয়ে করিয়েছিলাম কিন্তু আমার মনের মতো হয় নি।