শাহ্ আব্দুল হান্নানঃ বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে দু’টি বড় সমস্যা হচ্ছে অনৈতিকতার বিস্তার ও বিশাল জনসংখ্যার দারিদ্র্য। অনৈতিকতা বিস্তারের কারণ, স্রষ্টার ওপর বিশ্বাস না থাকা বা বাস্তবে না থাকা। নৈতিকতা প্রকৃতি থেকে আসে না। নৈতিকতা নাস্তিকতা থেকেও আসে না। কারণ, নাস্তিকতায় মৃত্যুর পর জবাবদিহিতার কোনো প্রশ্ন নেই।
অনৈতিকতার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করব। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের মূল কারণ অনৈতিকতা। নৈতিকতা এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের ওপর হামলা সমর্থন করে না। যুদ্ধের মূল কারণ হচ্ছে, আগে এক রাষ্ট্র কর্তৃক অন্য রাষ্ট্রের দখল এবং শোষণ। অনেক যুদ্ধ হয়েছে শোষণ করার জন্য দেশ দখলের লক্ষ্যে। ব্রিটেন, ফ্রান্স,Italy , পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস বহু দেশকে দখল করে শোষণ করেছে।
আজকাল যুদ্ধ হচ্ছে কথিত জাতীয় স্বার্থের (National Interest) নামে। জাতীয় স্বার্থের নামে ভিয়েতনাম, আলজেরিয়া, আফগানিস্তান ও ইরাকে হামলা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে সুবিচারকে গ্রহণ না করে আজ করা হচ্ছে জাতীয় স্বার্থকে। ইসরাইলকে সমর্থন দেয়া হচ্ছে জাতীয় স্বার্থের নামে। কাশ্মিরে ভারত অবস্থান করছে জাতীয় স্বার্থের নামেই।
অনৈতিকতার আরেকটি দিক হচ্ছে দুর্নীতি। বাংলাদেশেও দুর্নীতি ভয়াবহ। বড় রাষ্ট্রগুলোর শোষণও এক প্রকার দুর্নীতি। এই রাষ্ট্রগুলো নানা কৌশলে তাদের পণ্য বেশি দামে বিক্রি এবং কম দামে তৃতীয় বিশ্বের পণ্য ক্রয় করে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে ঘুষও অনেক বেশি। এর মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ গড়া হয়।
অনৈতিকতার আর এক দিক হচ্ছে যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা (Sexual anxiety)। মানবসমাজের ঐতিহ্যবাহী পরিবার ব্যবস্থা উঠে যাচ্ছে। পুরুষ-পুরুষ একত্রে থাকছে। নারী-নারী একত্রে থাকছে, এমনকি পরস্পর বিয়ে করছে। বিভিন্ন দেশ এগুলোকে স্বীকৃতিও দিচ্ছে।
অনৈতিকতার আর এক দিক হচ্ছে মাদকের বিস্তার। এখন মাদক আছে বহু রকমের। যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৯০ ভাগ মানুষই মাদক নেয়। মদ্যপের সংখ্যাও অনেক। মারিজুয়ানা সব দোকানে পাওয়া যায়।
অনৈতিকতার ফলে মানবতা বিপদগ্রস্ত। বর্তমানে মানুষ নিজের স্বার্থ দেখে; অন্যের কথা ভাবে না। অনৈতিকতা দূর করতে পারবে না নাস্তিকতা। ধর্মের দিকেই ফিরে যেতে হবে। ধর্ম হিসেবে ইসলামের সুবিধা হচ্ছে- এর ধর্মগ্রন্থ অবিকৃত রয়েছে এবং এর নবী সা:-এর জীবনের তথ্যাদি অবিকৃত পাওয়া যায়। ফলে এর শিক্ষা সুস্পষ্ট এবং তা সহজেই কার্যকর করা সম্ভব। ইসলামের মাধ্যমেই বিশ্বে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা যায়। অন্য ধর্মও আংশিকভাবে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে পারে।
বিশ্বের দ্বিতীয় বড় সমস্যা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য। অর্থাৎ মানুষের খেতে না পাওয়া, একবেলা খওয়া, আধা পেটে থাকা। এ দরিদ্র গোষ্ঠীর উপস্থিতি গোটা আফ্রিকা, ভারত, বাংলাদেশসহ অনেক অঞ্চলে ব্যাপক। যুক্তরাষ্ট্রেও শতকরা ১০ জন দরিদ্র। তাদের অনেকের খাবার নেই এবং থাকার জায়গা নেই।
না খেয়ে থাকা যে কঠিন তা আমরা কেবল অনুমান করতে পারি। এ রকম দারিদ্র্য নৈতিকতাও ধ্বংস করে দেয়। দরিদ্ররা চোর, ছিনতাইকারী হয়ে যায়। বিশ্ব শত শত বছর ধরে দারিদ্র্য দূর করতে পারেনি। তার কারণ অর্থব্যবস্থা। গত কয়েক শ’ বছর ধরে পুঁজিবাদ বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে। পুঁজিবাদের কোনো মূল্যবোধ নেই। তারা কেবল মুনাফা নিয়ে চিন্তা করে। আর সুবিধামতো দাম বৃদ্ধি করে। পুঁজিবাদের অন্যতম প্রধান দিক হলো, সুদ ব্যবস্থা। এর ফলে শোষণের মাধ্যমে সম্পদ পুঞ্জীভূত হওয়া অনেক বেড়ে যায়।
এ অবস্থা থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে পারে একটি কল্যাণধর্মী (ওয়েলফেয়ার) ব্যবস্থা। সবচেয়ে উত্তম হলো, ইসলামী কল্যাণমূলক ব্যবস্থা। ইসলামে বাজার অনেকটা স্বাধীন; তবে পুরোপুরি নয়। সরকার সুবিচারের স্বার্থে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তদুপরি, ইসলামে আছে জাকাত ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে দরিদ্রদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা সম্ভব। তা ছাড়া, যাদের কোনো ব্যবস্থা নেই ইসলামী রাষ্ট্র বায়তুলমাল থেকে তাদের দেখাশোনা করতে বাধ্য। ইসলামের শুরুতে দারিদ্র্য দূর হয়ে গিয়েছিল। জাকাত নেয়ার মতো লোক তখন ছিল না। তাই জাকাতের অর্থ অন্য কাজে ব্যবহার করা হতো।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার