হিমালয় রিপোর্টঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ছয় আসনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হবে তা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএম ব্যবহার করা আসনগুলো হলো, ঢাকা-৬, ১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২। সোমবার বিকালে নির্বাচন কমিশন লটারির মাধ্যমে এ আসনগুলো বেছে নেয়। এরআগে রোববার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন জানায়, রাতে সারা দেশের সিটি কর্পোরেশন ও জেলা সদর থেকে মোট ৪৮টি আসন নির্বাচিত করা হবে লটারির জন্য। এর মধ্য থেকে দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে ছয়টি আসন নির্ধারণ করা হবে। এতে বলা হয়েছিল, ইসি সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে কম্পিউটার প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্বৈবচয়ন অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) অন্য কমিশনাররা এ সময় উপস্থিত থাকবেন। যে ৪৮টি আসনের মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে রয়েছে- ঠাকুরগাও-১, দিনাজপুর-৩, নীলফামারী-২ লালমনিরহাট-৩, রংপুর-৩, গাইবান্ধা-২, বগুড়া-৬, চাঁপাইনবাবহগঞ্জ-৩, নওগাঁ-৫, রাজশাহী-২, পাবনা-৫, কুষ্টিয়া-৩, খুলনা-২, খুলনা-৩, সাতক্ষীরা-২, ভোলা-১, বরিশাল-৫, টাঙ্গাইল-৫, জামালপুর-৫, শেরপুর-১, ময়মনসিংহ-৪, ঢাকা-৪ থেকে ১৩, ঢাকা-১৫ থেকে ১৮, গাজীপুর-২, নরসিংদী-১ ও ২, নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫, ফরিদপুর-৩, মাদারীপুর-১, সিলেট-১, কুমিল্লা-৬, ফেনী-২ এবং চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এ ৪৮ আসনের মধ্যে যে ছয়টি আসন নির্ধারণ করা হবে ওই আসনের সব কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৪৮টি সংসদীয় আসনের কিছু কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট নেয়ার চিন্তা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সিটি কর্পোরেশন ও শহরকেন্দ্রিক এ আসনগুলোতে এসব মেশিন ব্যবহার করার পরিকল্পনা করা হয়। তবে প্রথম থেকেই কতটি আসন ও কত কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হবে, তা নিয়ে খোদ কমিশনারদের মধ্যেই মতপার্থক্য ছিল। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) চান, কয়েকটি আসনের ৪ থেকে ৫টি করে কেন্দ্রে এ মেশিন ব্যবহার হোক। সেই আলোকে ছয়টি আসনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। প্রসঙ্গত, আগামী ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হয়েছিল।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করব। একেবারে সীমিত আকারে ব্যবহার করতে হবে। সংসদ নিবাচনে ইভিএম ব্যবহারে কোনো আইনগত বাধা নেই। তিনি বলেন, কত আসনে কীভাবে ইভিএম ব্যবহার হবে, সেটা এখনও ঠিক করিনি। শনিবার (আজ) মিটিং হবে, সেদিন এটা পরিষ্কার হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার বিষয়ে সিইসি বলেন, বিভিন্ন দল ইভিএমের বিরোধিতা করে। আমি অনুরোধ করব তাদের প্রতিনিধি আমাদের কাছে পাঠান। তারা এটি এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখুক। ইভিএমের টেকনিক্যাল বিষয় পরীক্ষা করুক। তাহলে তাদের সংশয় কেটে যাবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতৈক্য ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। ইসির পক্ষ থেকেও বারবার বলা হয়েছিল, সব দল না চাইলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। তবে সম্প্রতি জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের এক সভায় জাতীয় নির্বাচনের কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে তা নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভায় ৪৮ আসনে ব্যবহার করতে গেলে কত মেশিন ও লোকবল প্রয়োজন হবে তার পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে। একইভাবে পার্বত্য তিন জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলার সদর আসনের (শহর এলাকা) একটি পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই সভা শেষ হয়। এর আগেই নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে প্রধান করে এ সংক্রান্ত উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে ১১টি সিটি কর্পোরেশন বা সিটি কর্পোরেশনের অংশ রয়েছে এমন আসনের সংখ্যা ৩৫টি। আর ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৮টি (সিটির ৩৫টিসহ) আসন শহর এলাকায় অবস্থিত। এই ৪৮ আসনে কেন্দ্র সংখ্যা কমবেশি ৬ হাজার। এসব আসনের কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত রয়েছে তাদের।