হিমালয় রিপোর্টঃ রান্না ছাড়া একদিনও চলা দায়। কিন্তু ঘরের সৌন্দর্য নিয়ে অত মাথাব্যথার সময় কোথায়? বর্ধিত জিনিস না হয় আমরা ফ্রিজে সংরক্ষণ করি। কিন্তু বিস্কুট, পানীয়, সসের ভিড়ে ভর্তি হয়ে যায় কিচেন কেবিনেট। তখন প্রয়োজনের সময় জিনিস খুজে পেতে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কাজেই এগুলো একটু গুছিয়ে রাখলেই ঝামেলায় পড়ার হাত থেকে বাঁচা যায়। নিচে রান্নাঘরে এটা-ওটা গোছানো আর সংরক্ষণ করে রাখবার কিছু টিপস দেয়া হল:
► অনেক রান্নাতেই চিনাবাদম অথবা কাজু বাদামের ভাজার কথা বলা থাকে। কিন্তু বাদাম ভাজতে গেলে প্রচুর তেল লাগে। এত তেল খাওয়া শরীরের জন্য ভালো নয়। বাদামে সামান্য তেল মাখিয়ে শুকনো তাওয়াতে নাড়াচাড়া করে নিলে তেল লাগবে অনেক কম।
► মরিচ কাটলে বা বাটলে হাত অসম্ভব জ্বালা করে। ঠান্ডা দুধের সর লাগান। জ্বালা জমে যাবে। অথবা ঠান্ডা দুধ দিয়ে ধুয়ে নিন। হাত পুড়ে গেলেও তখনি ঠান্ডা দুধ দেবেন। ফোসকা পড়বে না, জ্বালাও কমে যাবে।
► সালাদে বা অন্য কোনো ভাবে কাঁচা শাকসবজি খেতে হলে সেগুলো ধুয়ে সমপরিমাণ পানি ও ভিনেগার মিশিয়ে তাতে ভিজিয়ে রাখুন। কিছুক্ষণ ভিজার পর তবেই ব্যবহার করবেন। এতে জীবাণু সংক্রমিত হয় না।
► কেক বানাতে গিয়ে যদি দেখেন ডিম নেই, ঘাবড়াবেন না। প্রতিটি ডিমের বদলে এক টেবিল চামচ দুধ ও দুই চা চামচ কর্নফাওয়ার ব্যবহার করুন।
► রান্নাঘর আর খাবার ঘরে মাছির উপদ্রব এড়াতে নিমপাতার গোছা কয়েকটি স্থানে রেখে দিন।
► মাছ বেশি ভাজা হলে কিংবা রসুন বেশি ব্যবহার করলে পুরো বাড়িতেই দুর্গন্ধ ছড়ায়। তাই রান্না শুরুর আগেই একটা বাটিতে ভিনেগার ঢেলে চুলার কাছেই রাখুন। এটি গন্ধ শুকানোর পক্ষে আদর্শ।
► ফ্রিজে প্রায়ই দুর্গন্ধ হয়। এক্ষেত্রে ফ্রিজে একটি পাতিলেবুর টুকরো করে রেখে দিন। তাতে এটি ভেতরের যাবতীয় গন্ধ শুষে নেবে ও ফ্রিজ পরিস্কার রাখবে। এছাড়াও ফ্রিজের খাবার সবসময় ঢেকে রাখুন।
► খেজুর গুড় দিয়ে পায়েস করতে গেলে অনেক সময়ই দুধটা ফেটে যায়। সে ক্ষেত্রে দুধ ঘন হয়ে গেলে নামিয়ে একটু ঠান্ডা করে গুড় মেশাতে হবে। এবার আর একবার ফুটিয়ে নিলেই চমৎকার গন্ধ হবে।
► লুচির ময়দায় ময়ান মিশিয়ে যখন দেখা যাবে মুঠো পাকালে ময়দা ঝুরঝুরে হয়ে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে ময়ানের পরিমাণ ঠিক হয়েছে।
► আচার তৈরি করার আরও একটি ভালো উপায় হলো তেল প্রথমে গরম করে নিয়ে তারপর ঠান্ডা করে ব্যবহার করা, এতে ছাতা পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। কাঁচা তেল ব্যবহার না করাই ভালো।
► আচার তৈরি করার সময় তেলে সব সময় একটু ভিনেগার মিশিয়ে নিন। আচার ভালো থাকবে এবং আম অথবা যে জিনিসেরই আচার হোক না কেন টুকরো গুলো আস্ত থাকে।
► চায়ের কাপে লেগে থাকা বাদামি দাগ তুলতে হলে লবণ দিয়ে মাজুন।
► পোড়া দাগ যদি খুব পুরনো হয়ে যায় তাহলে দুই টেবিল চামচ বেকিং সোডা, আধাকাপ ভিনেগার আর এক কাপ পানি একসঙ্গে মিশিয়ে দশ মিনিট ফোটান, এরপর ভালোভাবে ধুলেই দাগ উঠে যাবে।
► রান্না করা খাবার পরে খাওয়ার সময় গরম করতে গেলে অনেক সময় নিচের অংশ পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে একটি পাত্রে পানি দিয়ে তার ওপর খাবারসহ পাত্র বসিয়ে গরম করলে ঠিকমতো গরমও হবে এবং পুড়বে না।
► নুডলস সেদ্ধ করার সময় একটু তেল পানিতে মিশিয়ে দিলে দেখবেন নুডলসগুলো ঝরঝরে হয়েছে।
► পাকা টমেটো ঘরে রাখলে সেগুলো নরম হয়ে যায়। নরম টমেটোগুলোকে শক্ত করতে চাইলে কিছুক্ষণ লবণ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। দেখবেন টমেটো শক্ত হয়ে উঠেছে।
► ঘি বেশিদিন ঘরে রাখলে একটু গন্ধ হয়ে যায়। এক টুকরো গুড় ঘিয়ের কৌটায় রেখে দিলে দেখবেন অনেক দিন পর্যন্ত ঘিয়ের প্রকৃত গন্ধ রয়ে যাবে।
► পেঁয়াজ ভাজার সময় সামান্য পরিমাণ কাঁচা লবণ তাতে ছিটিয়ে দিলে তাড়াতাড়ি বাদামি বর্ণ ধারণ করবে।
► দই খুব বেশি টক হয়ে গেলে পাতলা কাপড়ে দইটুকু ঢেলে ১০-১৫ মিনিট ঝুলিয়ে রাখুন। পানি ঝরে গেলে দইয়ের অংশে দুধ বা পানি মেশান। টক স্বাদ থাকবে না।
► খাবারে বেকিং পাউডারের পরিবর্তে পাউরুটি টুকরো করে ব্যবহার করতে পারেন।
► রান্নায় ব্যবহৃত উদ্বৃত্ত তেল বা ঘি পরিষ্কার করতে হলে এক টুকরো আলু দিয়ে তাপ দিতে থাকুন।
► পিঁপড়ার আক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে এক টুকরো স্পঞ্জ চিনির পানিতে ভিজিয়ে পিঁপড়ার গর্তের কাছে রেখে দিন। স্পঞ্জের মধ্যে সব পিঁপড়া জড়ো হবে। এবার পিঁপড়াসহ স্পঞ্জটি দূরে ফেলে দিন। সমস্যা মিটে যাবে।
► হাতের কাছে ঝাল মরিচ না পেলে চিলি সস বা গোলমরিচ ব্যবহার করতে পারেন।
► রান্নার পর দেখা যায় চুলার চারধার এবং কখনো চুলার পাশের দেয়ালে তেল চিটচিটে হয়ে যায়। আর সেটা সাধারণ পানি দিয়ে ধুলে কখনোই ভালোভাবে পরিষ্কার হয় না। গরম পানি এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায়। স্টিলের মাজুনিতে সাবান গরম পানি মিশিয়ে দেয়াল এবং চুলার চারপাশ পরিষ্কার করুন।
► নতুন বোতল থেকে সস বের করা সহজ নয়। বোতলের তলা পর্যন্ত একটি স্ট্র ঢুকিয়ে দিন। স্ট্র বের করে নিলে এবার সস বের করা সহজ হবে।
► প্রেসার কুকারের মরিচা দূর করার জন্য লেবুর খোসা দিয়ে ঘষে পরে পানিতে সেদ্ধ করুন। মরিচা থাকবে না।
► মোম রেফ্রিজারেটরে রাখলে বেশি সময় ধরে জ্বলে।
► রান্নাঘরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিশেষ করে চুলা, দা, বঁটি, ছুরি, কেঁচি’র কাজ শেষে পরিষ্কার করে ধুয়ে-মুছে রাখুন। ফলে এগুলোর স্থায়িত্ব বাড়বে।
► রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিল বা কড়াই যদি চকচকে করতে চান তাহলে কিছু পরিমাণ তেঁতুল বা টমেটো সংশ্লিষ্ট পাত্রে রেখে পানি দিয়ে পূর্ণ করে কিছুক্ষণ ফুটাতে থাকুন। ধুয়ে ফেলুন পাত্র চকচকে হয়ে যাবে।
► মাংস তাড়াতাড়ি সিদ্ধ করতে চাইলে সুপারি মধ্যখানে কেটে দিন, কাঁচা পেঁপেও দিতে পারেন, এমনকি যদি আপনি তরকারিতে সামান্য পরিমাণ মেথি ছেড়ে দেন, তাহলে দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি মাংস সিদ্ধ হয়ে যাবে।
► একসঙ্গে বেশি পরিমাণ ছোলা কেনা হয়ে গেলে পোকায় ধরার সম্ভাবনা থাকে। ছাই মিশিয়ে রাখুন, পোকায় ধরবে না। শুধু রান্নার আগে ধুয়ে নেবেন।
► চাল ও ডাল আগে পানিতে ভিজিয়ে রেখে রান্না করলে সময় কম লাগে।
► রান্নার সময় তেল ছিটকে যায়, সে ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ লবণ গরম তেলে দিয়ে দিলে তেল ছিটকাবে না।
► ফুলকপি রান্না করার সময় দুই চা-চামচ পরিমাণ দুধ দিয়ে দিন। রান্না করার পরও ফুলকপি সাদা থাকবে।
► রান্না করতে অনেক সময় তরকারিতে হলুদ বেশি পড়ে যায়। রান্নায় ব্যবহৃত খুন্তিটি চুলায় পুড়িয়ে লাল করে তরকারিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখুন। সমস্যা মিটে যাবে। অথবা কিছু পুঁইশাকের পাতা দিয়ে জ্বাল দিন, হলুদের গন্ধ কমে যাবে।
► রান্নার জন্য ব্যবহৃত হাঁড়িতে চুলার কালি পড়ে। এ ক্ষেত্রে হাঁড়ির তলায় মাটি বা সাবানের পানি লাগিয়ে চুলায় বসালে কালি কম পড়বে।
► শাকসবজি কাটার আগে ধুয়ে নিন, এতে সবজির গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকবে।
► দুধে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে খাবার তৈরি করার সময় ব্যবহার করলে দুধ ফেটে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
► পেঁয়াজ কাটার সময় চোখ জ্বালা করে এবং চোখ থেকে পানি ঝরে। তাই পেঁয়াজ কাটার কয়েক ঘণ্টা আগে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখুন। পেঁয়াজের ঝাঁঝ কমে যাবে অথবা বঁটির মাথায় একটি পেঁয়াজ কেটে আটকিয়ে রাখুন, দেখবেন চোখ জ্বালা করবে না।
► বেশি পরিমাণ আলু সংরক্ষণ করতে চাইলে বালির ওপর রাখুন সহজে পচবে না।
► ফ্লাক্স ব্যবহার করার পর কয়েক দিন ফেলে রাখলে তাতে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হতে পারে। এক চামচ চিনি ফ্লাক্সে দিন, সমস্যা মিটে যাবে।
► ঢেঁড়স ভাজা মচমচে করতে চাইলে আগের দিন রাতে ধুয়ে চাকা চাকা করে কেটে শুকিয়ে রাখুন। পরদিন ভেজে নিন, দেখবেন তেলও কম লাগবে আবার সময়ও বাঁচবে এবং মচমচে হবে।
► চুনের পানিতে ডিম ভিজিয়ে রাখলে দীর্ঘদিন ডিম ভালো থাকে।
► বেগুন ভাজতে তেল বেশি লাগে। যদি বেগুনে হলুদ মাখিয়ে ছেঁকা তেলে চেপে ভাজেন, তাহলে খুব কম তেল লাগবে।
► দুধ পুড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে জ্বাল দেওয়ার আগে গরম পানি দিয়ে পাত্রটিকে ধুয়ে ফেলুন।
► মচমচে ওমলেট বানাতে হলে ডিমের সঙ্গে সামান্য বেসন এবং দুধ মিশিয়ে ভাজুন।
► ডিম ফেটে গেলে তা সিদ্ধ করতে গিয়ে ফাটা দিয়ে ডিমের অংশ বের হয়ে যায়। যদি ডিমের ফাটা অংশে সোলাটেপ লাগিয়ে সিদ্ধ করেন, তাহলে ডিমের অংশ আর বের হবে না।
► বর্ষার দিনে প্রায়ই রান্নাঘরের ড্রেনের ছাঁকনি দিয়ে কেঁচো উঠে আসে। রাতে ছাঁকনির উপর ব্লিচিং পাউডার বা নেপথলিন দিয়ে রাখলে আর কেঁচো উঠবে না।