শাহ্ আব্দুল হান্নান
বিদায় হজে রাসূল সা:-এর ভাষণ; তাঁর ঘোষণা, ‘আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কালোর ওপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা; তা নিয়ে নেয়া যায় না; নারীদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা ইত্যাদি
অল্প বয়সে রাসূল সা:-এর জীবনী পড়েছি। এর ফলে তার অসাধারণ জীবনাদর্শে প্রভাবিত হয়েছি। তখনই আমার জীবনের মোড় পরিবর্তন হয়ে যায়। প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রাসূলুল্লাহ সা:-এর জীবনী পড়া জরুরি। আল্লাহতায়ালা মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য এক দিকে কুরআন পাঠিয়েছেন, অন্য দিকে রাসূল সা:কে পাঠিয়েছেন। এ জন্য তাঁর জীবনী জানা জরুরি।
জানা মতে, রাসূল সা:-এর জীবনীর পূর্ণ বিবরণ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না।
সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও তাঁর জীবনের প্রধান প্রধান ঘটনাকে ভিত্তি করে একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স স্কুল ও কলেজে পড়ানো উচিত। আলোচনা করে দেখেছি, বেশির ভাগ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী রাসূল সা:-এর জীবনী পড়েনি। এ জন্য আমি মনে করি, অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের ও ছোট ভাইবোনদের অল্প বয়সেই সংক্ষিপ্তভাবে রাসূল সা:-এর জীবনী পড়িয়ে দেয়া। এ জন্য ১০ পর্বে একটি সংক্ষিপ্ত কোর্স প্রণয়ন করেছি। তা এখানে উল্লেখ করা হলো।
যিনি এ সংক্ষিপ্ত কোর্স পড়াবেন, তাদের রাসূল সা:-এর একটি বিস্তৃত জীবনীগ্রন্থ পড়ে নিতে হবে। কোর্সের প্রথম পর্বে থাকবে তাঁর পরিবার ও জন্ম, মরুভূমিতে ধাত্রী হালিমার কাছে মানুষ হওয়া, দাদা আবদুল মুত্তালিব ও চাচা আবু তালিবের অবদান।
দ্বিতীয় পর্বে থাকবে তাঁর আল আমিন ও আস সাদিক উপাধি পাওয়া। শিশুদের এ রকম হতে বলা এবং তাঁর ‘হিলফুল ফুজুল’ সংগঠন গড়ে তোলা ও জনসেবা প্রসঙ্গ থাকবে। শিশুদের এ প্রসঙ্গে জনসেবক হওয়ার কথা বলতে হবে। রাসূল সা:-এর ২৫ বছর বয়সে ৪০ বছরের খাদিজা রা:-এর সাথে বিয়ে এবং নিজের ৫২ বছর বয়স পর্যন্ত খাদিজা রা:-এর সাথে থাকা; তখন খাদিজা রা:-এর বয়স ৬৫ বছর যখন তিনি মারা যান। জীবনের বেশির ভাগ সময় এক স্ত্রীর সাথেই তিনি জীবনযাপন করেছেন।
তৃতীয় পর্বে থাকতে পারে রাসূল (সা:)-এর নবুয়ত লাভ, কুরাইশদের বিরোধিতা ও নির্যাতন, তায়েফে দ্বীনের দাওয়াতের জন্য গমন ও সেখানকার ঘটনা। চতুর্থ পর্বে থাকতে পারে রাসূল সা:-এর মিরাজ, হিজরতের আগের ও পরের ঘটনা, মদিনায় প্রথম মসজিদ প্রতিষ্ঠা। পঞ্চম পর্বে থাকতে পারে, ইহুদিদের সাথে চুক্তি এবং মদিনা সনদ ঘোষণা, যাতে সবাইকে সম-অধিকার দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এই ঐতিহাসিক সনদের প্রধান ধারাগুলো জানিয়ে দেয়া যায়। ষষ্ঠ পর্বে থাকতে পারে বদর, ওহুদ ও আহজাবের যুদ্ধের পূর্বাপর বর্ণনা; বনি কুরাইশদের বিশ্বাসঘাতকতা ও তাদের বিরুদ্ধে রাসূল সা:-এর ব্যবস্থা গ্রহণ। সপ্তম পর্বে আলোচনা করা যায় ওমরাহ করার জন্য রাসূল সা: ও সাহাবিদের মক্কার উদ্দেশে রওনা হওয়া; কুরাইশদের বাধা এবং পরে হুদাইবিয়ার সন্ধি ও এ সন্ধির ফলাফল। অষ্টম পর্বে আলোচনা করা যায় মক্কা বিজয়ের আগের ও পরের ঘটনা এবং হুনাইনের যুদ্ধের বিবরণ। নবম পর্বে আলোচনা করা যায় বিদায় হজের বিস্তারিত বিবরণ; বিদায় হজে রাসূল সা:-এর ভাষণ; তাঁর ঘোষণা, ‘আরবের ওপর অনারবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কালোর ওপর সাদার শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা; তা নিয়ে নেয়া যায় না; নারীদের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা ইত্যাদি। দশম পর্বে আলোচনা করা যায় রাসূল সা:-এর অসুস্থতার বিবরণ; আয়েশা রা:-এর ঘরে রাসূলের ইন্তেকাল; তাঁর নামাজে জানাজা, আয়েশা রা:-এর ঘরেই তাঁকে কবর দেয়া; রাসূল সা:-এর মৃত্যুর পর সবার সম্মতিতে আবু বকর রা:-এর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ, রাসূল সা:-এর গুণাবলি; তিনি কোনো সম্পদ রেখে যাননি- এসব বিষয়।
এসব আলোচনা ১০ পর্বেও হতে পারে; কম-বেশিও হতে পারে। আশা করি, যারা এ লেখা পড়বেন তারা সবাই এর পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে উদ্যোগ নেবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার