বিশেষ প্রতিবেদক
ব্যাংকে আমানতের পরিমাণ কমলেও দিন দিন বাড়ছে কোটিপতির সংখ্যা। দেশের ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতের ৪৩.৩৬ শতাংশই এখন কোটিপতির। ব্যাংকে অন্তত এক কোটি টাকা রয়েছে এমন আমানতকারীর সংখ্যা গত জুন শেষে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৩ হাজারের বেশি। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে এ সংখ্যা এমন সময়ে আরো বাড়ল যখন, দেশের অর্থনীতিতে কয়েক বছর ধরেই সংকট চলছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ।
মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক যে তথ্য প্রকাশ করেছে-তাতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ কোটি ৫৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৯২টি। এসব হিসাবে জমা আছে ১৬ লাখ ৮৭ হাজার ২৪ কোটি টাকা।
এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে— এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা রয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫৫৪টি। কোটি টাকার উপরে এসব হিসাবে জমা আছে ৭ লাখ ৩১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। তার আগে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৬টি। জমা ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি। এক বছর আগে ২০২২ সালের জুনে কোটি টাকার হিসাব ছিল ১ লাখ ৮ হাজার ৪৫৭টি।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল অন্তর্ভুক্তিমূলক না হওয়ায় এক শ্রেণির লোক অঢেল অর্থের মালিক হচ্ছেন, যার কারণে ব্যাংকের কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের আবাসিক মিশনের সাবেক লিড ইকোনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি যে হারে বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। আবার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল দেশের সব নাগরিক সমানভাবে পাননি। এক শ্রেণির মানুষের কাছে অর্থনৈতিক সুফল সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও সুবিধাভোগী কিছু লোক রয়েছে। তবে, বর্তমান সময়ে অর্থনীতির আকার যেভাবে বেড়েছে এটা যদি অন্তর্ভুক্তিমূলক হতো, ‘আয় বৈষম্য’ না থাকতো তাহলে দেশের সবাই এ সুফল ভোগ করত। কোটি টাকার হিসাবধারীদের কাছে অর্থ সীমাবদ্ধ থাকতো না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ হাজার ৭৭২ টি। যেখানে জমা ছিল এক লাখ ৮৬ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির ১২ হাজার ২৪৫টি হিসাবে জমার পরিমাণ ৮৬ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা।
তিন মাস আগে চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ১১ লাখ ৩৭ হাজার ২৫৬টি। জমা ছিল ১৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ১৯২টি। এ হিসাবে তিন মাসের ব্যবধানে কোটি টাকার হিসাব বেড়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি আর এক বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৫ হাজার ৯৭টি
এছাড়া ১০ কোটি থেকে ১৫ কোটি টাকার হিসাবের সংখ্যা রয়েছে চার হাজার ৮১টি, ১৫ কোটি থেকে ২০ কোটির মধ্যে এক হাজার ৮৬৫টি, ২০ কোটি থেকে ২৫ কোটির মধ্যে এক হাজার ২৭৬টি, ২৫ কোটি থেকে ৩০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৯০৯টি আমানতকারীর হিসাব।
আর ৩০ কোটি থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৫০৭টি এবং ৩৫ কোটি থেকে ৪০ কোটির মধ্যে রয়েছে ৩৫৩টি, ৪০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকার হিসাব সংখ্যা ৭২২টি। তাছাড়া ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা হিসাবের সংখ্যা এক হাজার ৮২৪টি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতিদের হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি।
২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে এ আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টি। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬ টিতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৯৪৬ টি।