প্রেমময় রাসূল

জান্নাতে গুলশান
“আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি”। -সূরা কাওসার : ১
এই ‘কাওসার’ শব্দটির একটি অর্থ প্রাচুর্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর রাসূলের চরিত্রে সকল রকম মৌল মানবিক গুণের প্রাচুর্য দান করেছিলেন। তাঁর মনটা দয়া মায়া ভালোবাসা দ্বারা ভরপুর ছিল। যখন ছোট্ট ছিলেন দুধের শিশু; দুধমা হালিমার ডান স্তন পান করে বাম স্তনটি দুধ ভাইয়ের জন্য রেখে দিতেন। হালিমার জরাজীর্ণ গৃহে আনন্দ আর প্রাচুর্যের বন্যা নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর উসিলায় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হালিমাকে বারাকা দিয়েছেন। নিজেও যেমন অন্যকে প্রাণ উজাড় করে ভালবাসতেন তেমনি প্রাণঢালা ভালোবাসা পেয়েছেন অন্যদের কাছ থেকেও। চল্লিশ বছরের বেশি বয়সেও হালিমা (রাঃ)-কে দেখলে “মা মা” বলে ডাকতেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও হালিমা এসে উপস্থিত হলে গায়ের চাদর বিছিয়ে বসতে দিতেন। দুধ ভাই এলে উঠে দাঁড়াতেন। দুধ বোন দেখা করতে এলে তাঁকে নানা উপহার উপঢৌকন দিতেন। হালিমার মৃত্যুর সংবাদ শুনে রাসূলের (সাঃ) দু’চোখ পানিতে ভিজে গিয়েছিল।
এতিম শিশু চাচার গৃহে লালিত পালিত হয়েছেন। চাচা আবু তালিবের ছিল বড় সংসার। সংসারে স্বচ্ছলতাও তেমন ছিল না। এরপরও চাচা তাঁকে সর্বাধিক যত্ন আর ভালবাসা দিয়ে লালন পালন করেছেন। চাচা তাঁকে এতটা মর্যাদা দিতেন যে রাসূল সল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবারে হাত না লাগানো পর্যন্ত ওনার কোন সন্তানকে খাবারে হাত লাগাতে দিতেন না। অন্যদিকে রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও চাচার ভার লাঘবে চাচার গৃহের পশু চরানোর দায়িত্ব নিয়েছিলেন। চাচি, ফাতিমা বিনতে আল আসাদ (রাঃ) তাঁকে মাতৃস্নেহে বড় করেছেন। তিনি রাসূলের প্রতি এত বেশি অনুরক্ত ছিলেন যে ইসলামের প্রথম যুগেই রাসূলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঈমান আনেন। চাচির স্নেহ মমতাকে আল্লাহর রাসূলও উত্তমরূপে মুল্যায়ন করেছিলেন। তাঁকে আল্লাহর রাসূল আম্মা বলে সম্বোধন করেছিলেন। এমন কি তাঁর কবরে নেমে গড়াগড়ি দিয়েছিলেন। রাসূল সাল্লাল­াহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কৃতজ্ঞচিত্তের অধিকারী ছিলেন। কারো সামান্য অনুগ্রহকেও ভুলতেন না। চাচার সংসারে অনটন লক্ষ্য করে তিনি চাচা আব্বাসকে (রাঃ) উদ্বুদ্ধ করে আবু তালিবের দুই ছেলে আলী (রাঃ) ও জাফর (রাঃ) এর দায়িত্ব নেন। আবু তালিবের সকল সন্তানদেরকেই তিনি অত্যধিক স্নেহ করতেন। নবুয়্যতের পূর্বে তিনি আবু তালিবের কন্যা উম্মু হানিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু আবু তালিব কন্যাকে অন্যত্র বিয়ে দেন। উম্মু হানি ইসলাম গ্রহণের পর স্বামীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটলে আল্লাহর রাসূল পুনরায় তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। জবাবে উম্মু হানি বলেছিলেন, “আল্লাহর কসম! আমি তো জাহেলি যুগেই আপনাকে ভালবাসতাম। এখন তো সে ভালোবাসা আরো গভীর হয়েছে। আমার ছোট ছোট বাচ্চারা রয়েছে। আমি আপনার জীবনকে ভারাক্রান্ত করতে চাই না”। উম্মু হানির প্রতি রাসূলের স্নেহশীলতার আরো নজীর রয়েছে সিরাত গ্রন্থে।
দাম্পত্য জীবনে রাসূল ছিলেন একজন নিখাদ প্রেমিক পুরুষ। স্ত্রীর সাথে ভালোবাসা কতটা গভীর হলে একজন স্বামী এভাবে দোয়া করতে পারে যে কেয়ামতের মাঠে তিনি যেন তাঁর খাদিজাকে ভুলে না যান। মৃত স্ত্রীর স্মৃতিকে কতটা স্বযত্নে লালন করেছেন যে খাদিজার প্রশংসা না করে ঘর থেকে বের হতেন না। ঘরে ভালো কিছু রান্না হলে খাদিজার বান্ধবীদের বাড়িতে নিয়ে যেতেন। রাসূলের স্ত্রীদের সবার কাছেই তিনি প্রিয়তম ছিলেন, সকলেই রাসূলের সাহচর্যের জন্য উন্মুখ ছিলেন। রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও স্ত্রীদের মনসতত্ত্বকে খুব ভালোভাবে বুঝতেন। যার যার স্বভাব প্রকৃতি অনুযায়ী তাদের সাথে মিশে যেতেন। মা আয়েশার (রা.) ঘরে যেমন শিশুসুলভ রাসূলকে খুঁজে পাই তেমনি আবার উম্মুল মুমিনিন সাওদা (রা) এর ঘরে এক গাম্ভীর্যের অধিকারী স্বত্তার দেখা মেলে। জুয়াইরিয়া (রা) এর পাশে অনুপম বন্ধুর বেশে তিনি ধরা দেন। এই ইহুদি কন্যাকে পরম মমতাভরে স্বপত্নীদের বাঁকা কথার উপর্যুক্ত জবাব শিখিয়ে দেন। আয়েশা (রা.) বয়সের দিক থেকে সর্ব কনিষ্ঠ হওয়ায় রাসূলুল্লাহ তাঁর মনোরঞ্জনের জন্য কী-না করতেন। একদিন সফরে আয়েশার (রা.) এর উটনি দ্রুত চলা শুরু করলে মহানবী (সা) অস্থির হয়ে বললেন, ওয়া আরুসা অর্থাৎ হায় আমার বঁধূ! উম্মুল মুমিনিনদের সকলের প্রতিই তিনি খুব বেশি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
সন্তানবাৎসল্যেও তিনি ছিলেন অতুলনীয়। প্রিয় পুত্রের মৃত্যুতে আমরা এক শোকাহত পিতাকে খুঁজে পাই। ফাতেমা (রা) এর প্রতি আবেগ ভালোবাসার নজীর দেখে যে কেউ স্বীকার করতে বাধ্য হবে যে মহানবী (সঃ) ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পিতা। কন্যা প্রীতির এমন দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া ভার। রোজ ফাতেমার গৃহে যেতেন খোঁজ খবর নেয়ার জন্য। সফরে যাওয়ার প্রাক্কালে ফাতেমার কাছে বিদায় নিয়ে যেতেন এবং সফর থেকে ফিরে প্রথম ফাতেমার সাথে সাক্ষাৎ করতেন। পৃথিবীর নারী জাতির মধ্যে রাসূলের (সাঃ) কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন ফাতিমা (রাঃ)। নাতি হাসান ও হুসেনকে প্রাণাধিক ভালোবাসতেন। একদিন ব্যস্ততার সাথে ফাতিমার বাড়ির পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। এমন সময় হুসায়নের কান্নার আওয়াজ শুনে বাড়িতে ঢুকে মেয়েকে তিরস্কার করেন এবং বলেন, তুমি কি জান না, তার কান্না আমাকে কষ্ট দেয়? হাসান ও হুসেনের সাথে কাটানো নানা সুখকর মুহূর্তগুলো সিরাত গ্রন্থগুলোতে লিপিবদ্ধ হয়ে আছে। ফাতেমা (রাঃ) এর দুজন কন্যা হয়েছিল। রাসূল (সাঃ) নিজের দুই মৃত কন্যার নামে তাঁদের নাম রাখেন ‘যায়নাব’ ও ‘উম্মে কুলসুম’।
দাসদাসীদের সাথেও রাসূল সালল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুপম ব্যবহার করতেন। মা খাদিজা (রাঃ) তাঁর সবচেয়ে প্রিয় কৃতদাস যায়েদ (রাঃ)কে রাসূলের কাছে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। একজন দাসের জীবনে সবচেয়ে কাঙ্খিত বস্তুটি ছিল মুক্তি। যায়েদ (রাঃ) সেই পরম কাঙ্খিত মুক্তি ও হারানো স্বজনদের ফিরে পেয়েও সেসব দূরে ঠেলে দিয়েছেন। রাসূলের সাহচর্যের লোভে স্বেচ্ছায় খেতমতগারের জীবন বেছে নিয়েছেন। আনাস (রাঃ) দশ বছর রাসূল (সাঃ) এর খেদমত করেছিলেন। একটা বারও নবীজি তাঁকে ধমক দেন নাই বা কোন বিরক্তি প্রকাশ করেন নাই। এটা কোন মামুলি ব্যাপার ছিল না। পৈতৃকসূত্রে পাওয়া দাসী উম্মু আয়মন (রাঃ) তাঁকে মাতৃস্নেহে বড় করেছেন। রাসূল (সাঃ) উম্মু আয়মনকে আজাদ করে দিয়ছিলেন এবং তাঁকে যথেষ্ট সমাদর ও সম্মান করতেন। মাঝে মাঝে তাঁকে মা বলেও ডাকতেন। উম্মু আয়মন রাসূলের কষ্ট সহ্য করতে পারতেন না। জাহজাহ নামে এক বিশালদেহী সাহাবী রাসূলের ঘরে মেহমান হয়েছিলেন এবং সব খাবার একাই সাবাড় করে ফেলেছিলেন। রাসূলের (সাঃ) পরিবারের সবাই সেদিন অভুক্ত অবস্থায় ছিলেন। কষ্টে উম্মু আয়মান মন্তব্য করেন, আজ রাতে যে ব্যক্তি রাসূলুল্লাহকে (সাঃ) অভুক্ত রাখলো, আল্লাহ যেন তাকে অভুক্ত রাখেন। রাসূল (সাঃ) বললেন, উম্মু আয়মান, চুপ করুন। সে তার রিজিক খেয়েছে। আর আমাদের রিজিক আল্লাহর দায়িত্বে। বেলালের মতো এক সামান্য হাবশি কৃতদাস রাসূলের ভালবাসা ও সাহচর্যে এতটা যোগ্যতা অর্জন করেন যে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন মেরাজের রাতে আরশে মুয়াল্লামায় নবীজির ভীতি দূর করার জন্য বেলালের পায়ের আওয়াজ শুনিয়েছিলেন।
রাসূল (সাঃ) শুধু যে তার সহচর ও অনুসারীদের প্রতি প্রেমময় ছিলেন তা নয়; তিনি যে রহমাতুল্লিল আলামিন। একদিন এক মুশরিক বেদুঈন উত্তেজিত অবস্থায় মসজিদে নববীতে এসে প্রস্রাব করতে শুরু করেন। সাহাবিদের নিয়ে নবীজি স্বয়ং বসে আছেন। সাহাবিরা তার দিকে তেড়ে যাচ্ছিলেন। নবীজি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, তাকে তার কাজটা শেষ করতে দাও। মলমূত্র ত্যাগের সময় মাঝপথে কাউকে থামিয়ে দিলে ব্যক্তির শরীরে প্রচন্ড চাপ পড়ে, এতে তার কষ্ট হয়। একজন মুশরিক বেদুঈন এর প্রতি আল্লাহর রাসূলের যে সহানুভূতি ছিল, আমরা আমাদের কোলের সন্তানটার প্রতিও সেই সহানুভূতিটুকু দেখাতে পারি না। উত্তেজনার বসে অপকর্মটি করে সেই বেদুঈন ভয়ে কাঁপতে লাগল। পরম স্নেহে রাসূল তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের ইবাদাতগৃহে কেউ এরকম করলে তোমার কেমন লাগত? লোকটি উত্তর দিল খুবই খারাপ লাগত। নবীজি বললেন আমাদের মসজিদ অপবিত্র করলে আমাদেরও অনেক কষ্ট লাগে। লোকটি ভীষণ অনুতপ্ত হল এর চেয়েও বেশি অভিভূত হল রাসূলের ব্যবহারে। সে তার মাথাটা ঘাড়ে নিয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আশা করেনি। মেহমান বেশে আসা আরেক বেদুঈন এর বিছানা নষ্ট করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাটা আমরা সবাই জানি। একটুও বিরক্ত না হয়ে রাসূল বরং মেহমানের রাতের ক্লেশ চিন্তা করে কষ্ট পাচ্ছিলেন। রোজ পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখা বুড়িটার প্রতি একটুও শত্রুতা পোষণ না করে, বরং একদিন কাঁটা না দেখে বুড়ির খোঁজ নিতে বাড়ি অবধি যেয়ে সেবা করার জন্য কতটা প্রীতিপূর্ণ হৃদয়ের প্রয়োজন! আরশের অধিপতি যে তার হৃদয়ে কাওসার ঢেলে দিয়েছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন কী অবলীলায় সবাইকে মাফ করে দিয়েছিলেন। প্রাণপ্রিয় চাচা হামজার কলিজা চিবানো হিন্দাকে মাফ করার জন্য কত বড় কলিজার প্রয়োজন আল্লাহই ভাল জানেন। মক্কা বিজয়ের দিন মুহাম্মদের ভয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে পলায়নরত বুড়িমার বোঝা বহন করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন। পরে বুড়িমা তার পরিচয় জানতে পেরে সানন্দে ঈমান এনেছেন।
রাসূলের আগমনের পূর্বে ইয়াসরিব (মদিনা) একটি দ্বন্দ্বমুখর জনপদ ছিল। আউস ও খাজরাজ গোত্র সর্বদাই নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতে লিপ্ত থাকত। স্বার্থান্বেষী ইহুদি সম্প্রদায় এই সংঘাতে অনবরত ঘি ঢালত। এই অশান্ত ইয়াসরিবকে নবীজি মদিনাতুল মুনাওয়ারায় পরিণত করলেন। আজ অবধি মদিনা পৃথিবীর একটি শান্তিপূর্ণ শহর। আউস, খাজরায ও ইহুদি গোত্রসমূহকে নিয়ে মদিনা সনদের আলোকে একটি শান্তিপূর্ণ কনফেডারেশন গঠন করলেন। পরস্পর স্বার্থবিরোধী এই সম্প্রদায়গুলোকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে দিয়েছিলেন। আবদুল্লাহ বিন উবাইসহ সকল মুনাফিকদের নানা কটুবাক্য ও অমার্জনীয় অপরাধও নবীজি মাফ করেছিলেন মদিনাকে অন্তর্কলহ থেকে মুক্ত রাখার জন্য। এই উবাই সারাজীবন রাসূলকে (সাঃ) কষ্ট দিয়েছিল। অথচ রাসূল (সাঃ) তার মৃত্যুর পর তার ছেলে আবদুল্লাহ ইবন আবদুল্লাহ বিন উবাইয়ের, যিনি একজন একনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন আবার সেই সাথে অনুগত ও পিতার হিতাকাঙ্খী পুত্র ছিলেন, অন্তর শীতল করার জন্য কাফন হিসেবে নিজের গায়ের জামা দান করেন এবং পবিত্র মুখের লালা লাগিয়ে দেন। উমর (রাঃ) মহানবীকে (সাঃ) এ মুনাফিকের জানাজা পড়তে বাঁধা দিয়ে পেছন থেকে জামা টেনে ধরেছিলেন। তখন রাসূল (সা) বলেছিলেন, যদি সত্তর বারের বেশিও মাগফিরাত চাইলে সে ক্ষমা পায় তাহলে আমি তার জন্য প্রস্তুত আছি। এরপর স্বয়ং আল্লাহ রব্বুল আলামিন সূরা তাওবার আশি ও চুরাশিতম আয়াত নাজিল করে কোন মুনাফিকের জানাজা পড়াতে রাসূলুল্লাহকে নিষেধ করে দেন।
শুধু মানবকুল নয় পশুপাখির প্রতিও রাসূলের হৃদয় নিংড়ানো দরদ ছিল। একদিন রাতে রাসূল (সাঃ) চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। একটি বিড়াল সেই চাদরের একটি প্রান্ত জড়িয়ে আরামে ঘুমিয়ে পড়েছিল। ফজরের ওয়াক্ত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম মসজিদে অপেক্ষা করছেন। রাসূল (সা) বুঝতে পারছেন না কী করবেন। ঘুম ভাঙিয়ে বিড়ালকে কষ্ট দিতে তাঁর মন সায় দিচ্ছিল না। ওদিকে ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায় প্রায়। শেষে নিজের একমাত্র চাদরটি কেটে খণ্ডিত অংশটি জড়িয়ে মসজিদে গেলেন। মসজিদ থেকে ফিরে এসে দেখলেন বিড়ালটি ঘুম থেকে উঠে চলে গেছে। তখন তিনি চাদরের খণ্ডিত অংশদুটো সেলাই করে জোড়া লাগিয়ে দিলেন। আবু হুরাইরার নামটাও দিয়েছিলেন তার পোষা বিড়ালের সাথে সখ্যতার নিদর্শনস্বরূপ। সিরাতে রাসূলে এক সাহাবী কর্তৃক পাখির বাচ্চা ধরে আনার ঘটনা আমরা সবাই জানি। মা পাখিটার উদ্বেগ রাসূলকে নাড়া দিয়েছিল।
এমনি হাজারো প্রেমময় অভিব্যক্তি আমরা জানি কিন্তু এই সুন্নতকে কেন যে, আমরা তুলে ধরি না, আত্মস্থ করি না। আমরা ধার্মিকতাকে কেমন জানি রুক্ষতা, কূপমন্ডুকতা আর হৃদয়হীনতার আবরণে ঢেকে দিয়েছি। আমাদের দীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও শিশু নির্যাতন, যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠছে। মুসলিম গৃহ প্রাঙ্গণেও গৃহকর্মীরা অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। বৃদ্ধ পিতামাতাগণ আমাদের পরিবারেও বড় বোঝা হয়ে ঠেকছে। প্রতিবেশীর সুখদুঃখে আমরা মন খুলে এগিয়ে যাই না। তাহলে আমরা কোন সিরাতের চর্চা করছি। চলুন না আমরা ফিরে যাই সেই ঊষর মরুপ্রান্তরে যেখানে আমাদের মহানবী হৃদয়ের সবটুকু প্রেম ঢেলে সবচেয়ে রুক্ষপ্রাণ বর্বর একটা জাতিকে মানবতার পাঠ শিখিয়েছিলেন।
লেখক: পিএই ডি গবেষক




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *