উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

সমাজ কল্যাণে রাসূল (সাঃ) কতৃক গৃহীত কর্মসূচি

দিল আফরোজ রিমা
যিনি সারা জাহানের রব, সর্বশক্তিমান, যার দয়ায় আজ কলম ধরতে পেরেছি। যিনি আমাদের শ্রেষ্ঠ জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন, সকল প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর। তিনি মানব জাতির শ্রেষ্ঠ নেতা হিসাবে যাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূল (সাঃ) এর প্রতি অশেষ ছালাম ও দরুদ। যিনি সারা জগতের রহমত স্বরূপ এসেছেন এই দুনিয়ায়। তিনি হলেন হজরত মুহাম্মদ মুস্তফা (সাঃ)।
রাসূল (সাঃ) এর জন্মের আগে মক্কা নগরী ছিল অন্ধকারে ঢাকা। সারা আরব দেশের মানুষের মধ্যে তখন গোমরাহি বিরাজ করত। সে যুগে সভ্যতা ঈমানদারী একা নিভৃতে কেঁদে বেড়াত। চারিদিকে শিরক, অন্যায় অবিচার হত্যা যুদ্ধ বিগ্রহ ইত্যাদির সমারোহ ছিল।
এই অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে এক মহা আলোকের আবির্ভাবের বড় প্রয়োজন হয়েছিল। তাইতো মহান রাব্বুল আলামিন তার সেরা বিচক্ষণতা দিয়ে এক মহান উদ্দেশ্যে এই পৃথিবীর বুকে তার সৃষ্ঠির শ্রেষ্ঠ মাখলুকাত শ্রেষ্ঠ মানুষ আমাদের নবী (সাঃ) কে প্রেরণ করেন। আবির্ভাব হয় এক পবিত্র সত্তার, যার পবিত্র আলোতে সারা পৃথিবী মাতোয়ারা।
রাসূল (সাঃ) তাঁর জীবন দিয়ে মানুষের কল্যাণে সমাজ সেবা করে গেছেন এটাই আজকের মূল আলোচ্য বিষয়।
সমাজ সেবা মূলক কাজ কি বা কাকে বলে সে সম্পর্কে আমি একটু আলোচনা করার প্রয়োজন বোধ করছি।
সমাজ সেবা হচ্ছে সমাজের মানুষের জন্য এমন কিছু কাজ করা, যাতে সমাজের মানুষ সুখে শান্তিতে সাচ্ছন্দে এবং নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারে। সমাজ দেশ তথা মানুষের উন্নতি করার জন্য মানুষের বিপদে আপদে পাশে থাকার জন্য যে কোনো ভাবে সহযোগিতা করা এবং সমাজ থেকে ক্ষতিকর নিয়ম বা অভ্যাস দূর করে সমাজে আল্লাহর নিয়ম প্রতিষ্ঠা করাই সমাজ সেবা বা সমাজ সংস্কার। যা মানুষের উপকার বা কল্যাণ বয়ে আনে। ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় সমাজ সেবাকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইসলাম এই কাজকে তাকওয়াপূর্ণ কাজের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্ল­াহ বলেন, পূর্ব ও পশ্চিম দিকে মুখ ফেরানোর মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। বরং কল্যাণ রয়েছে আল্লাহ, শেষ বিচারের দিনে, ফেরেস্তাগণ, আসমানী কিতাব ও নবীদের বিশ্বাসে এবং আল্লাহ প্রেমে উদ্ভুদ্ধ হয়ে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতিম, মিসকিন, অভাবগ্রস্ত, গৃহহীন ও সাহায্য পার্থীদের সাহায্যার্থে নিজ সম্পদ বিতরণে, দাসত্ব মোচনের ব্যয়ে। (সূরা বাকারা: ১৭৭)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সমাজ কল্যাণ মূলক কাজের বিবরন দিয়ে কখনো শেষ করতে পারবো না। যার সৃষ্টিই হয়েছিল এই উদ্দেশ্যে। তিনি সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষে তার নিজের সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন। তাঁর জীবনের আর্দশ আজো সমাজের কল্যাণে নিয়োজিত।
আমি প্রথমে মানুষের মনে তাওহীদ বা ঈমান প্রতিষ্ঠার কথা বলছি।
ইসলামী সংবিধানের প্রথম মৌলিক ধারা হচ্ছে ইবাদত বন্দেগী একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। অর্থাৎ আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় , সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তিনি একচ্ছত্র অবিনশ্বর । আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। মানুষ শুধু তাঁরই ইবাদত করবে। তিনি এক ও অদ্বিতীয় হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর প্রেরিত রাসুল। অন্তর দিয়ে এ কথা বিশ্বাস করা সে অনুযায়ী কাজ করার নাম ঈমান। ঈমান বা বিশ্বাসের মূল্য আল্লাহ তায়ালার কাছে অত্যান্ত দামি। তাইতো মুসলমানের কাছে ঈমানের চেয়ে মহামূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। ঈমান প্রতিষ্ঠা করা সমাজের অন্যতম কল্যাণকর কাজ। ঈমানের ওপর ভিত্তি করে মানুষের ইহকাল পরকালের হিসাব-নিকাশ চূড়ান্ত হবে। আল্লাহ বলেন, ওহে যারা ঈমান এনেছো , তোমাদের পিতাদেরকে ও তোমাদের ভাইদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমানের উপর কুফুরিকে প্রাধান্য দেয়। আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে, তারাই জালিম। (সূরা তাওবা )।
মানুষকে হিদায়াত করার জন্য ঈমানের পথে নিয়ে আসাই ছিল তাঁর জীবনের মূলকথা। কতইনা কষ্ট পেয়েছেন কতই না যাতনায় ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন মানুষকে ঈমানের পথে নিয়ে আসার চেষ্টায়।
রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ইসলাম প্রচারের দাওয়াত নিয়ে জিব্রাইল (আঃ) আসার পরই তিনি নিজের ঘরে গিয়ে খাদিজা (রাঃ) কে আল্লাহর নির্দেশের কথা খুলে বলেন। খাদিজা (রাঃ) ঘটনা শুনার পরেই কালিমা (লা ইলাহা ইলাল­াহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ) পাঠ করে ঈমান আনেন। সেদিন সেই মুহুর্ত থেকেই শুরু হয় তাঁর ইসলাম প্রচারের কাজ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের ওপর স্থাপিত । এই সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লার বান্দা ও রাসুল। নামাজ আদায় করা। যাকাত আদায় করা । আর হজ্জ আদায় করা এবং রমযানের রোজা রাখা।
আল্লাহ এবং রাসূলের প্রতি বিশ্বাস আনা এবং ইসলামের যে পাঁচটি স্তম্ভ আছে সেগুলো পালন করাই ঈমান। যা প্রতিষ্ঠা করার জন্যই নবুয়াত পাপ্তির প্রথম দিন থেকেই খুব গুরুত্ব সহকারে শুরু হয়েছিল তার ঐকান্তিক চেষ্টা। এই কাজই নবুয়াত প্রাপ্তির পরে প্রধান সমাজ কল্যাণমুলক কাজ।
রাসূল (সাঃ) কে শান্তি, মুক্তি, প্রগতি ও সামগ্রিক কল্যাণের জন্য বিশ্ববাসীর রহমত হিসাবে আখ্যায়িত করে কুরআনে এরশাদ হয়েছে, -আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমতরূপে প্রেরণ করেছি। (সূরা আল আম্বিয়া)।
সমাজে তাঁর শান্তি প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ ও পদ্ধতি ছিল অনন্য। যুদ্ধ -বিগ্রহ, কলহ- বিবাদ, রক্তপাত, অরাজকতা দূরীভূত করে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান ও সৌহার্দ সম্প্রীতির ভিত্তিতে তিনি একটি কল্যাণমূলক আদর্শ সমাজ গঠন করতে সক্ষম হন।
এক আল্লাহর একত্ব ও বিশ্বভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ব্রতে ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রচারক বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) এর চিন্তাজগতকে তদানীন্তন বিশ্ব সমাজের যে দুটো ব্যপার সর্বাপেক্ষা বেশি আলোড়িত করেছিল এবং যে দুটো ব্যপারে তাঁর দৃষ্টি সবচেয়ে বেশি নিবদ্ধ হয়েছিল, তা হলো সমাজের দরিদ্র মানুষ ও অবহেলিত নারী। বিশ্বনবী ছিলেন দরিদ্র মানুষ ও অভাগী নারী সমাজের দরদী বন্ধু এবং দুর্গত মানবতার চির মহান দূত, শান্তি ও সাম্যের মহাসেনা, সমাজ সংস্কারে সিদ্ধ সাধক, প্রেম ভালবাসায় পরম পুরুষ। তাঁর অন্তরের একান্ত কামনা ও উদ্দেশ্য ছিল সকলের জন্য সর্বজনগ্রাহ্য এক আর্দশ সমাজ গঠন করে আদর্শ জীবন ধারা স্থাপন করা।
কিশোর বয়সে তিনি হিলফুল ফুযুল নামক শান্তি সংঘ গঠন করে সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আর্তমানবতার সেবা , অত্যাচারের প্রতিরোধ, অত্যাচারিতকে সহযোগিতা, শান্তি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা এবং গোত্রে গোত্রে স¤প্রীতি বজায় রাখা ছিল এই সংঘের অঙ্গিকার। মানুষের কল্যাণে তাঁর গড়া সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানটি পৃথিবীর প্রথম সাংগঠনিক রীতিতে প্রতিষ্ঠিত আর্দশ সমাজ সংস্কার মূলক প্রতিষ্ঠান। যার মাধ্যমে তিনি সমাজ জীবনে শান্তি শৃংখলা বিঘ্নকারী সকল কার্যক্রম প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিয়ে মক্কা থেকে যাবতীয় অন্যায় অত্যাচার ও সন্ত্রাসবাদ উচ্ছেদ করে সুশিল সমাজ গঠনে সচেষ্ট হন।
এক সময় তিনি হযরত আবু আইউব আনছারী (রাঃ) এর গৃহে সাত মাস অবস্থান করেন। সে বাড়ির নিকটেই একটি জায়গা ছিল। রাসূল (সাঃ) উহা ক্রয় করে ওখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। সেই মসজিদটির নামই মসজিদে নববী। মসজিদটি তৈরির কাজে তিনি নিজেই শরিক হয়েছিলেন। মসজিদ সংলগ্ন পূর্বপাশে তৈরি করা হয়েছিল একটি বৈঠকখানা। সেখানে থাকতেন ইসলামের জন্য প্রাণ উৎসর্গকারী একদল ঘরবাড়িহীন মুসলমান।
মদিনায় হিজরতের পরে তিনি আদর্শ ইসলামী সমজ প্রতিষ্ঠার জন্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, নাগরিকদের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখাসহ মদিনা সনদ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেন। মানব ইতিহাসের প্রথম প্রশাসনিক ও লিখিত সংবিধান “মদিনা সনদ” যাতে সেখানে বসবাসরত সব ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীনতা ও অধিকারের যথোপযুক্ত স্বীকৃতি ছিল। মদিনায় স্থায়ীভাবে সামাজিক শান্তি শৃংখলা রক্ষা এবং সেখানে বসবাসকারী অন্যান্য ধর্মবলম্বীদের বিশেষত ইহুদিদের সাথে তিনি এক শান্তি চুক্তি সম্পাদন করেন। এভাবে তিনি মদিনার জীবনে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করে শান্তি প্রতিষ্ঠার বলিষ্ঠ উদ্যোগ নেন। হিজরতের পরে মদিনায় মুসলমানদের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল। তারা তাদের সুখ দুঃখ ,অভাব অভিযোগ, বিপদাপদ সকল বিষয়েই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে জানাত এবং তাঁর ওপর নির্ভর করত। আর রাসূল (সাঃ) যথাযথভাবে তাদের অভাব অভিযোগ, ঝগড়া বিবাদ মিটিয়ে দিতেন। কেউ কোনোভাবে বিপদে পড়লে তিনি সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাকে বিপদ থেকে মুক্ত করতেন। রোগে শোকে প্রাণ দিয়ে তাদের সাহায্য করেছেন। তিনি মানুষের মাঝে জ্ঞান বিতরণ করতেন । সে জ্ঞানের ভিত্তি হলো আল্লাহর পবিত্র কুরআন।কঠিন যন্ত্রনা দুঃখ কষ্ট সহ্য করে মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে পাতরের আঘাত সয়েও তিনি মানবতার জয়গান গেয়েছেন। সমাজের মানুষকে বিভ্রান্তির অন্ধকার থেকে সত্য ও ন্যায়ের আলোর পথে চলার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। আজীবন অসহায়, বঞ্চিত, নির্যাতিত, নিপিড়িত মানুষের সামাজিক শান্তি ও মুক্তির জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে গেছেন তিনি। অভিশপ্ত দাসপ্রথা, যৌতুক প্রথাসহ সমাজের নানা ধরনের অনিয়ম এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ক্লান্তিহীন সৈনিক হয়ে লড়াই করেছেন। তিনি শুকনো রুটি খেতেন, তালি দিয়ে জামা পরতেন, ছেড়া চাটায়ের ওপর শয়ন করতেন। ভক্তদের দেওয়া অর্থ তিনি সাথে সাথে গরিবদের বিলিয়ে দিতেন। নিজের জন্য কিছুই রাখতেন না। দুনিয়ার এ দু’দিনের জীবনে তিনি গরিব থেকেই সমাজ আর সমাজের মানুষের কল্যাণ করতে পছন্দ করতেন।
কোরাইশদের হিংসার আগুনে পরিস্থিতি এমনই হয়েছিল যে বিভিন্ন সময়ে রাসুল (সাঃ) কে বাধ্য হয়ে যুদ্ধ করতে হয়েছে। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে এক একটি যুদ্ধে তার কত অবদান কত বিসর্জন রয়েছে। যুদ্ধ করেছেন ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য সমাজ সংস্কার এবং সমাজের কল্যাণের জন্য।
ইসলামের ব্যাপক প্রচার প্রসারের পর তিনি বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানের সাথে অসংখ্য চুক্তি পত্র সাক্ষর করেন। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাঁর অনবদ্য ভূমিকার অন্যতম স্মারক হুদাইবিয়ার সন্ধি। শান্তির জন্য তিনি এই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর করেন ।
তাঁর সুনিপূণ পারর্দশিতা, অপরিসীম বুদ্ধিমত্তা এবং ইসলাম ও মুসলিম সমাজের প্রতি আন্তরিক দায়িত্বশীলতার কারণেই তিনি মক্কা জয় করেন। মক্কা বিজয়ের পরেও আরো যুদ্ধের সম্মুখীন তাঁকে হতে হয়েছে। এর মধ্যেও তাঁর কার্য সম্পাদন এবং ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে মক্কাবাসী দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে।
একবার ছয় দিনের অবিরাম পথ চলার পর রাসূল (সাঃ) কুবাতে পৌঁছলেন। তখন ছিল রবিউল আওয়াল মাসের অষ্টম দিন। তিনি কুবা পল্লিতে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি স্থানীয় মুসলমানদের সহযোগিতায় একটি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। নির্মান কাজে তিনি নিজেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটাই ছিল ইসলাম জগতের প্রথম মসজিদ।
ইসলামের ভিত্তিগুলো মানুষকে বুঝাতে শিখাতে তিনি জীবনভর চেষ্টা করে গেছেন। ইসলামের বিধি বিধানগুলো নিজের জীবনের কাজ, চলাফেরার মধ্য দিয়ে শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর জীবনই ছিল মানুষের জন্য। মানুষকে সঠিক শিক্ষা দানের জন্য তিনি ছিলেন রোল মডেল।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর সবকিছু শূন্য থেকে শুরু করতে হয়েছে। তাকে পূর্ণ বিশৃংখলার মধ্যে শৃংখলা আনতে হয়েছে। দুর্বলতার মধ্যে শক্তির যোগান দিতে হয়েছে। বিভেদের মধ্যে অনৈক্যের মধ্যে ঐক্য আনতে হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, তোমার ওপর এ গুরুদায়িত্ব সম্পর্কে। আমি তোমার দুর্বহ বোঝা লাঘব করেছি, যা ছিল তোমার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক। (সূরা ইনশিরাহ: ২-৩)
রাসূল (সাঃ) তাঁর নিজের জীবন দিয়ে শিখিয়ে দিয়েছেন সমাজে মানুষ কীভাবে চলবে। তিনি সব গণতান্ত্রিক গুণাবলী থেকে কখনো বিচ্যূত হননি।
মনুষ্য সমাজের জন্য ইসলাম ধর্ম একটি ব্যাপক ও উদার ধর্ম। সে ধর্ম দ্বারা রাসূল (সাঃ) মক্কা ও মদীনাবাসীদের সকল ব্যবধান রহিত করেন। সকল গোষ্ঠী ও সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে সকল ব্যবধান রোধ করে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক স্থাপন করেন।
শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী রাসূল (সাঃ) তাঁর অন্তর দৃষ্টিতে বুঝতে পেরেছিলেন, অভ্যন্তরীণ শান্তি সুনিশ্চিত না হলে এবং বহির আক্রমণের আশঙ্কা দূরীভূত না হলে জাতির উন্নতি হবে না। তিনি তাঁর তীক্ষ্ণ দূরদৃষ্টি দিয়ে বুঝতে পেরেছিলেন ইহুদিদের সাথে সন্ধি করার প্রয়োজন । সমাজের মানুষের শান্তির কথা ভেবেই রাসূল (সাঃ) ইহুদিদের সাথে সন্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
সমাজের মানুষদের কুরআন শিক্ষা দেওয়া, দরিদ্র দুস্থকে সাহায্য করা ও মানবসেবার জন্য তিনি বহুবিধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন। দরিদ্রের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে যেভাবে পেরেছেন সাহায্য করেছেন। ক্ষুধার্ত মানুষকে আহার দিয়েছেন। এ কাজকে তিনি ঈমানী দায়িত্ব হিসেবে পালন করেছেন। তিনি বলেন-সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে উদর পূর্তি করে আহার করে অথচ তার প্রতিবেশী তার পাশে অভুক্ত থাকে। ”(মিশকাত)।
তিনি রোগী ও দুর্বলের সেবা করেছেন। জাতিধর্ম নির্বিশেষে সকলকে বিপদে শান্ত¡না দিয়েছেন এবং সাহায্য করেছেন। শত্রুর বিরামহীন জঘন্যতম আক্রমণ থেকে মুসলমান সমাজকে রক্ষা করেছেন। সারা পৃথিবীর বুকে তিনি এমন এক রাজ্য স্থাপন করে গেলেন সে রাজ্যের কোটি কোটি মানুষ প্রতিদিন অন্তত পাঁচবার অপার করুণাময় আল্লাহর কথা স্মরণ করে তাঁর শুকর গুজারি এবং তাঁর বিজয় ঘোষণা করে।
সমাজের সকল পাপ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন, আমরণ একনিষ্ঠ সংগ্রাম যিনি অকুতভয়ে আজীবন নিঃশর্তভাবে পবিত্র মনে পালন করেন, তিনিই একমাত্র মুজাহিদ। এ দিক দিয়ে রাসূল (সাঃ) এর প্রথম জীবনে নবী নন, রাসূল নন, বরং সমাজকল্যাণ এবং সমাজ সংস্কারে তিনি ছিলেন মরুজগতের এক অচিন্তনীয় মুজাহিদ। জিহাদের যে পবিত্র উদ্দেশ্য তা কোনো রাজ্য বা রাজত্ব জয় নয় । বরং পাপ ও অন্যায়কে পরাস্ত করা। আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে আরবের মাটিতে আপসহীন আমরণ সংগ্রাম শুরু করেছিলেন রাসূল (সাঃ)। এ সংগ্রাম কোনো রাজ্য জয় বা কোন রাজকুমারীকে লাভের জন্য ছিল না। ছিল সমাজের কল্যাণের জন্য সমাজ সংস্কারে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে অজ্ঞতার বিরুদ্ধে। জীবন সূচনার প্রতিটি পদক্ষেপ থেকে মৃত্যুর মহা মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন এ সংগ্রামে একেবারে অবিচল। তাই জীবনের প্রথম থেকে শেষ সময় পর্যন্ত আমরা রাসূল (সাঃ) কে নিখিল বিশ্বের এক নজিরবিহীন শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ রূপে দেখতে পাই।
সমগ্র দেশ জুড়ে অসভ্য আরব জাতির অকথ্য অত্যাচার অবলীলায় মাথায় নিয়ে তিনিই ছিলেন পবিত্র কুরআনের প্রথম প্রবক্তা ও প্রধান প্রচারক। তাঁর জীবনই ছিল কুরআন শরীফের প্রতিটি উক্তির প্রথম প্রয়োগ ভূমি।
যে আর্দশবাদের ওপর গড়ে উঠেছিল তাঁর মহান জীবনধারা, যে আদর্শবাদের ওপর তিনি লাভ করেছিলেন নবুয়্যত। এখানে নিরস বা নিছক ধর্মের কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না। ছিল না কোনো স্বর্গে যাওয়ার সস্তা চাবিকাঠির সুযোগ সন্ধান। ছিল সমাজ সংস্কারের বিভিন্ন নির্দেশ ও আন্তরিক চেষ্টা যা সব মানুষকেই সঠিক পথ দেখায় এবং সত্যিকারের মানুষ হতে সাহায্য করে, মনুষ্যত্বের উত্তরণ ঘটায়। তিনি সমাজ সংস্কারের উদ্দেশ্যে কিছু বিধান দিয়েছিলেন।
যেমন-
১। আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার করোনা। তাঁকে স্মরণ কর।
২। পিতা মাতার অবাধ্য হয়োনা, তাদের সম্মান করো।
৩। যার যেটা প্রাপ্য, তাকে তা পরিশোধ করো।
৪। অমিতব্যয়ী হয়ো না, কৃপণও হয়ো না, মধ্যম পন্থা অবলম্বন করো।
৫। কন্যাদের হত্যা করো না। আল্লাহর নিয়ম পালন করো।
৬। ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, সময় মতো বিয়ে করো।
৭। কাউকে হত্যা করো না, ক্ষমা করো, রক্ষা করো।
৮। ইয়াতিমের ধন লুটে খেয়োনা, তার সাথে সুন্দর আচরণ করো।
৯। কখনো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করো না।
১০। জমিনের ওপর গর্ব ভরে চলো না। অহংকার শয়তানের রূপ।
১১। সুদ খেয়োনা।
১২। দুর্বলের প্রতি অত্যাচার করো না।
১৩। গরিবকে দান করো। দাস মুক্ত করো।
১৪। অত্যাচারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও।
১৫। কোনো মানুষকে ঘৃণা করোনা, এমনকি পাপিকেও না। তাকে সংশোধনের চেষ্টা করো।
১৬। নারীকে মর্যাদা দান করো।
১৭। সদা সত্য কথা বলো, মিথ্যা পরিহার করো।
১৮। আপন কর্মের ওপর ভিত্তি করো। নিজ কর্মে দাঁড়াও।
১৯। জাত বংশ বা কুলের গর্ব করো না, কর্মই আসল।
২০। শ্রমের ও শ্রমিকের মর্যাদা দাও।
২১। আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করে দেয় না যতক্ষণ তারা নিজের অবস্থার পরিবর্তনের চেষ্টা না করে।
এসবই তাঁর নবুয়্যত প্রাপ্তির আগের চেষ্টা। নবী হওয়ার আগেই তিনি একজন সমাজ সেবক ও সমাজ সংস্কারক ছিলেন। নবুয়্যত প্রাপ্তির পর তাঁর জীবনে ছিল নিরলস সমাজ সংস্কার এবং বিভিন্ন ভাবে সমাজের মানুষের সেবা করা। মানুষকে সৎ পথে পরিচালিত করার জন্য ছিল অনুরোধ, কাকুতি মিনতি, সেখানে কেউ কোনো বাঁধা দিতে এলে, তখন তিনি ছিলেন আপোসহীন সংগ্রামী মানুষ। এক আল্লাহর স্মরণে ও সভ্য জীবনের আহ্বানে, দুর্গত মানবতার সেবায়, নিপীড়িত মানুষের সেবায়, অবহেলিত নারী সমাজের মর্যাদাদানে তিনি নিয়োজিত ছিলেন সারাটি জীবন।
রাসূল (সাঃ) আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস স্থাপনের জন্য মানুষকে দ্বীনের পথে আনার জন্য জীবন ভর সাধনা করেছেন। দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কায়েম করা শিখিয়েছেন। কিভাবে একমাস সয়াম সাধনা করতে হবে সে ব্যপারে শিক্ষা দিয়েছেন। কাদের পক্ষে হজ্জব্রত পালন করা ফরজ তার শিক্ষা দিয়েছেন। কীভাবে তা পালন করতে হয় তা শিখিয়ে গেছেন সমগ্র মুসলিম জাতিকে। যাকাত দেওয়ার নিয়ম এবং তার গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। এই কাজগুলো মানুষকে খারাপ কাজ হতে বিরত রাখবে। কদর্য অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখবে তাও বুঝিয়ে গেছেন বড় আন্তরিকভাবে। তাঁর উম্মত তথা সমাজের মানুষ যাতে দুনিয়ায় এবং আখিরাতে ভালো থাকে তিনি সে চিন্তায় অস্থির থাকতেন। তাইতো সবসময় সাবধান করেছেন অন্যায়ের পথ থেকে, ভুল পথ থেকে বেঁচে থাকতে। আর তিনিই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছেন।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মনীষীরা একটা কথাই বলে থাকেন, যদি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এ বিশ্বে নবী নাও হতেন, তাহলেও সমাজ কল্যাণের লক্ষ্যে সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সমাজ সংস্কারক রূপেই পরিচিত থাকতেন। কথাটি তাঁর জীবনে অক্ষরে অক্ষরে সত্য। চল্লিশ বছর বয়স থেকে তিপ্পান্ন বছর বয়স পর্যন্ত মক্কার মাটিতে তিনি নবীরূপে থাকলেন। এই তের বছর সময়ে আল্লাহর হুকুম পালন করে তিনি একটানা সমাজ সংস্কারের কাজ করে গেলেন যে সংস্কারগুলো আরব সমাজের এক নতুন যুগের সূচনা করে।
আরবের তখনকার অবস্থা ছিল ভয়ংকর। পৃথিবীর এমন কোন জঘন্যতম পাপ ছিল না যে পাপে তারা ডুবেনি। পাপের পঙ্কিলতায় ডুবন্ত জাতিকে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম গৌরবের আসনে বসিয়ে দিয়ে গেলেন। পঙ্কিল জলরাশি থেকে আপন দেশকে আপন জাতিকে উন্নতির চরম শিখরে তুলে দিয়ে গেছেন একনিষ্ঠ সমাজসেবী রাসূল (সাঃ)। এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ইতিহাসে যা দেখা যায়নি।
সমাজের এমন কোনো দিক নেই যা তিনি স্পর্শ করেনি এবং তিনি যা স্পর্শ করেছেন তার আমূল পরিবর্তন করেছেন। এই সুন্দর সমাজ কল্যানে বা সংস্কারের ভিতর দিয়ে তিনি একদিকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা, অন্যদিকে রাজ্যেরও প্রতিষ্ঠাতা এবং ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এ কৃতকার্যতা সত্যিই কল্পনাতীত। তিপ্পান্ন বছর বয়স থেকে তেষষ্টি বছর পর্যন্ত আরবের বুকে আন্তর্জাতিক বুঝা-পড়ার যে শান্তি বৃক্ষ তিনি রোপণ করে গেলেন, বিশ্বের প্রলয় দিন পর্যন্ত সে বৃক্ষ তার সময়চিত ফল দান করবে।
তিনি ছিলেন মহাপুরুষ তাই এত বিরাট সফলতা তাকে গর্বিত করতে পারেনি। তেমনি যেকোনো বিফলতাও তাকে বিচলিত করতে পারেনি।
বাল্যকালে জীবন সূচনায় মেষপালক হয়েও জীবন সংগ্রামে দেশের মহান ব্যক্তি দুনিয়ার জাগতিক কার্যের নির্দেশক আবার আধ্যাত্মিক জগতেরও পথ প্রদর্শক তিনি।
এক সময় আরববাসিদের পাপ যে কোনো পশুত্বকে অনায়াসে হার মানিয়েছে। আপন ঔরষজাত পাঁচ বছরের নিষ্পাপ শিশু কন্যাকে পিতা সহস্তে হত্যা করে কতইনা গর্ববোধ করত। রাসূল (সাঃ) তার অসাধারণ শক্তি দিয়ে এই অভাগা জাতির সমস্ত গ্লানিকে একের পর এক আপন হাতে ধুয়ে মুছে পরিস্কার করে দেন ।
বিশ্বনবী এই উচ্ছৃংখল আরব্য অসভ্য জাতিকে একটি সুশৃংখল সরকারের অধীনে নিয়ে এলেন। যে সরকার রচনা করল সুসভ্য সমাজের জয়গান, যে সরকার একদিন সারা বিশ্বের অর্ধেকটা জয় করে প্রমাণ করল, রাসূল (সাঃ) তার রাজনৈতি জ্ঞান দিয়েও সমাজের কল্যাণ করেছেন।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর নির্মিত কাবাগৃহকে ৩৬০টি মূর্তির আখড়ায় পরিণত করে রেখেছিল। বিশ্বনবী (সাঃ) কাফিরদের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করে সমস্ত জঞ্জাল দূরীভূত করে সমগ্র আরবের জনগণকে এক আল্লহর ঐশী অনুপ্রেরণায় উদ্ভাসিত করে তোলেন।
তখনকার দিনে আরবের লোকেরা সুদের ব্যবসায় খুব সিদ্ধহস্ত ছিল। এতে গরিব মানুষ খুব অসহায় আর নিঃস্ব হয়ে পড়ছিল। বিশ্বনবীর মহান ব্রতের এক হাতে ছিল আল্লাহর আরাধনা অন্য হাতে ছিল গরিবের সংরক্ষণ।
তাই তিনি আল্লাহর নির্দেশে সুদকে অবৈধ ঘোষণা করলেন, এবং যাকাত, ফেৎরা, সদকা ইত্যাদি নানা দানের প্রচলন করে জাতীয় অর্থনীতির একটি কাঠামো প্রতিষ্ঠা করলেন, যাতে গরিব দুঃখী রক্ষা পায়। আবার ধনীদের ব্যবসায় ও চাষে অনুপ্রাণিত করে প্রভুত মুনাফা অর্জনের পথও দেখিয়ে দিলেন। তিনি (সাঃ) আল্লাহর বাণী শুনিয়ে বুঝিয়েছেন-
আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন। সুদকে হারাম করেছেন। (সূরা বাকারা:২৭৫)।
আমি দিবা ভাগকে জীবিকা অর্জনের উপায় নির্ধারন করেছি। (আল কুরআন-৭৮ঃ১১)।
তোমাদের প্রভুর নিকট ধন সম্পত্তি প্রার্থনা করাতে কোনো পাপ নেই। (আল কুরআন-২ঃ১৯৮)
বিশ্বনবী সমাজ কল্যাণার্থে সমাজ সংস্কারের যে ধারা এ পৃথিবীতে দান করে গেছেন, তার মধ্যে সামাজিক অসমতা দূরীকরণ শ্রেষ্ঠতম। তিনি কঠোর ভাবে ঘোষণা করেছিলেন-মানুষে মানুষে কোনো ব্যবধান নেই, উচ্চ বংশের জন্য গর্ব করার কিছু নেই, কৌলিণ্যের কোনো মূল্য নেই। দেশ পাত্র কালের কোনো ভেদাভেদ নেই। আল্লাহর নিকট সকল মানুষই সমান। রাসূল (সাঃ) এর সুদূর প্রসারী যে চিন্তাধারা ছিল তা হলো-এক আল্লাহ, এক বিশ্ব এক জাতি। মানব জাতি। রাসূল (সাঃ) দুটো দিক চিন্তা করেছিলেন, এক -মানুষ এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর দেওয়া নিয়ম মেনে চলবে। দুই-এক আল্লাহর অধীনে সকল মানুষের মধ্যে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন স্থাপন হবে।
সমাজ সেবার এই অসাধারণ কাজ করতে গিয়ে তার চোখে পড়ল, সমগ্র মানব সমাজের অর্ধেক, মানুষ র্নিযাতিত অর্থাৎ অবহেলিত রমনীকুল, আর নির্যাতিত গরিব মানুষ। নারীদের অমর্যাদা ও বিশৃংখল জীবনযাপন আরব সমাজের অশান্তির কারণ ছিল। নারী জাতিকে নির্যাতন ও দুর্দশার হাত থেকে উদ্ধার করে, তিনি বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেশত। (আহমাদ, নাসাঈ)।
রাসূল (সাঃ) রুখে দাঁড়িয়েছিলেন সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে, তাঁর আন্তরিক চেষ্টায় সমাজে শান্তির বাতাস বয়েছিল।
পশুপক্ষী জীব জন্তুর মতো মানুষও বেচাকেনা হতো। তিনি তখনো বজ্রকণ্ঠে বলেছিলেন, মানুষ তোমার ভাই। রাসূল (সাঃ) প্রথম বিশ্বনেতা যিনি সমাজ থেকে দাসত্ব প্রথার বিলোপ সাধন করেন। তিনি তাঁর উম্মতদের উদ্বুদ্ধ করলেন, দাসমুক্তি অপেক্ষা আল্লাহর নিকট বেশি প্রিয় বেশি গ্রহণীয় কাজ আর কিছু নেই।
রাসূলুল­াহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে দাসত্ব শৃংখল থেকে মুক্ত করবে, তার প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তার প্রতিটি অঙ্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করবে। রাসূলুল­াহ (সাঃ) এর এসব কথা শুনে দাস মুক্তি শুরু হয়। এক সময় এই নিকৃষ্ট প্রথা বন্ধ হয়ে যায়।
রাসূল (সাঃ) দুনিয়ার কোনো বিশ্ব বিদ্যালয়ে আইন অধ্যায়ন করেননি। অসভ্য আরবজাতির মনের আদালতে তিনি প্রথম-আল আমিন, (চির বিশ্বাসী) উপাধি লাভ করেন। সেই বালক আল আমিন একদিন বিশ্বের দরবারে মহান বিচারকের আসন লাভ করেন। শুধু মানবমণ্ডলী নয়, সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য যে অসংখ্য নীতি তিনি ঘোষণা করে গেছেন তা স্থান-কাল-পাত্র, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের বিবেকের বিচারাসনে বিচারের দিক নির্ণয়ে আলো দান করবে।
বিশ্বনবী (সাঃ)-কে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ আইন প্রণেতা বলার কারণ তিনি শুধু পরলোকের সুখ-শান্তির জন্য নীতি নির্ধারণ করে যাননি। তার সাথে দুনিয়ার জীবনেও মানুষ কীভাবে সুখে শান্তিতে বাস করতে পারবে, তার চরম নির্দেশ বা নীতি নির্ধারণ করে গেছেন। তার দেওয়া নীতিগুলো ঠিকমত অনুসরণ করলে পৃথিবীতে বা মানব সমাজে কোনোদিনই অশান্তি আসতে পারবে না। ব্যক্তি জীবন থেকে পারিবারিক জীবন, সমাজ ও জাতীয় জীবন থেকে আন্তর্জাতিক জীবনের নীতি নির্ধারণ করে গেছেন।
দেওয়ানী আইনের ধারায় ইসলাম দান,ওয়াকফ, জীবনস্বত্ব অছিয়ত, উত্তরাধিকার আইন, সম্পত্তি ভাগ, সামাজিক আইন, প্রতিবেশী আইন, নারী রক্ষণ আইন, নৈতিক আইন, দেশ পরিচালনার গণতন্ত্রের আইন, আবার দণ্ডবিধি আইনের সকল ধারাই সমানভাবে স্থান পেয়েছে তাঁর দৃষ্টিতে। তাঁর দেওয়া আইন ও আর্দশের অম্লান জ্যোতিতে জগৎ আজো উদ্ভাসিত হতে পারে।
রাসূল (সাঃ) দেশের জন্য সমাজের জন্য সারা বিশ্বের জন্য কেমন নেতা ছিলেন তার বর্ণনা আর দিতে চাইনা। শুধু তার সাহাবি বা ভক্তবৃন্দের কিছু অবদানের নমুনা বলতে চাই আর বুঝাতে চাই কেমন নেতার কেমন ভক্ত। নেতার নেতৃত্ব কত নিখুঁত ছিল, কত পবিত্র ছিল, কত অন্তরজয়ী ছিল, তা অতি সহজেই বুঝা যায় তাঁর ভক্তবৃন্দের ভক্তি, ত্যাগ ও তিতিক্ষা থেকে। করুণ কিছু ঘটনার কথা বলছি। কাবা প্রাঙ্গনে বেদুইন আরবের হাতে ইসলামের প্রথম শহীদ কারেসের প্রাণদানে আজও কাবার মাটি যেন ক্রন্দনরত। অবিসিনিয়ার কৃতদাস হযরত বেলালের ঘটনা বিশ্ব ইতিহাসে প্রবাদ বাক্যে পরিণত হয়েছে। ইয়াসের ও সোমাইয়ার নির্মম ব্রেত্রাঘাতে প্রাণদান, হযরত খাব্বারের পৃষ্ঠদেশে জলন্ত আগুনের মহা পরীক্ষা ও প্রাণনাশ, হযরত সাফওয়ানের হাতে পায়ে চারিদিকে চারটি বলিষ্ট উট বেঁধে তাদের বিপরীত দিকে ছুটিয়ে দিয়ে দেহটাকে ছিন্নভিন্ন করার ইতিহাস বিশ্বের যেকোনো নির্মম কাহিনীকে ম্লান করে দেয়, নেতার প্রতি কি অচিন্তনীয় আস্থা। অনুরূপ ভাবে হযরত আফলাহার প্রাণ ত্যাগ, জেরিনা নামের সাধ্বী মহিলার চক্ষু দান ও হযরত ওয়ায়েস করনী স্বেচ্ছায় সব দাঁত উঠিয়ে সমগ্র মানব ইতিহাসে নেতার নেতৃত্বের প্রতি এক নজিরবিহীন ঘটনার অবতারণ করেন। এভাবে অসংখ্য ভক্তজন, মালের বিনিময়ে, দেহের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে ও স্ত্রী পুত্র কন্যার বিনিময়ে সম্মান দিয়েছেন তাদের নেতার নেতৃত্বকে। রাসূল (সাঃ) এর চিরশত্রু আবু সুফিয়ান মুক্ত কন্ঠে স্বীকার করেছিল-আল্লাহর কসম, মুহাম্মদ(সাঃ) এর ভক্তবৃন্দ তাঁর প্রতি যে কল্পনাতীত প্রেম ও ভালবাসা পোষণ করে থাকে , জগতের অন্যকোনো জাতির ইতিহাসে তার তুলনা নেই।
সমগ্র জীবনে বিশ্বনবী (সাঃ) নিজের ইচ্ছায় কোনো যুদ্ধে অবতীর্ন হননি। কখনো শত্রুপক্ষ রাসূল (সাঃ) কে সরাসরি যুদ্ধের আহ্বান জানিয়েছে। কখনো দিনের পর দিন অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়েছেন যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে। কখনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবিচারের বিরুদ্ধে, অজ্ঞতার বিরুদ্ধে সিংহ বিক্রমে রুখে দাঁড়িয়েছেন। যখনই তিনি দেখেছেন মানবতার অপমান, মনুষ্যত্ব বিকৃত, সেখানেই তিনি তাঁর চির স্বভাবজাত শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোনো সম্রাট হওয়ার জন্য বা কোনো সম্রাজ্য লাভের জন্য নয়। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দুর্গত মানবতার সেবা, সমাজের কল্যাণ লাভে বিশ্ব স্রষ্টার ইবাদত। এ কাজ করতে তাকে অনেক সময় যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতে বাধ্য করা হয়েছে। যুদ্ধ তাঁর উদ্দেশ্যও ছিল না নেশাও ছিল না। তাঁর নেশা ছিল সমগ্র মানব জাতির কল্যাণে, তার উদ্দেশ্য ছিল- জাতিগত, বর্ণগত, শ্রেণিগত ও অর্থনৈতিক অবস্থার সকল কৃত্রিম ব্যবধানগুলোর মূলোচ্ছেদ করে সকল শ্রেনীর মানুষের জন্য সমাজের পূর্ণ ব্যবস্থাপনায় সমগ্র মানব জাতিকে দান করা এক অবিকৃত চির বিধান, যার নাম আল কুরআন। এ মহান সাধনায় রাসূল (সাঃ) মাঝে মাঝে বাধ্য হয়েছেন, মরুর মাটি কাপিয়ে দিতে। সেকাজকে আপনারা যুদ্ধ কিংবা জিহাদ যাই বলুন। এক মহা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য তিনি ছিলেন আপসহীন আমরণ সংগ্রামী। হ্যা সব কিছুর মুলেই মানুষের মঙ্গল তথা সমাজের কল্যাণ।
তিনি সমাজের জন্য এক হাতে সম্রাটের মতো শাসনকার্য পরিচালনা করেছেন অন্যহাতে মজুরের মতো কায়িক পরিশ্রম করেছেন। একদিকে দাতার নিকট থেকে দান গ্রহন করেছেন, অন্যদিকে তা গরিবের মধ্যে বিতরণ করেছেন। যে হাতে অসহায় দুর্বলকে রক্ষা করেছেন, সে হাতেই অত্যাচারীর বিরুদ্ধে তলোয়ার তুলে নিয়েছেন।
আমরা আজ জানি প্রতিটি মানুষেরই শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরী। কিন্তু ১৪০০ বছর আগেই রাসূল (সাঃ) জ্ঞান অর্জন করাকে অবশ্য পালনীয় বলে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিরক্ষর হলেও তার অন্তর ছিল জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত। তাঁর অমোঘ শিক্ষা আল্লাহর আলো স্বরূপ এবং জ্ঞানই আলো। জ্ঞান অর্জন সম্পর্কে কোরআনে আছে-যাদের জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে বহু মর্যাদায় উন্নত করবেন। ( সূরা মুজাদালা :১১)
রাসূল (সাঃ) তাঁর উম্মতদের জ্ঞান অর্জন করার জন্য বিশেষভাবে চেষ্টা করেছেন। যাতে তাদের জীবন কলুষমুক্ত হয় এবং তারা উন্নত জীবন পায়। সমাজ থেকে যেন অন্যায় কালিমা মূর্খতা দূর হয়ে যায়।
কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, আল­াহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞানীরাই তাকে ভয় করে থাকেন। (সূরা ফাতির:২৮)।
তাই তাঁর ভাবনা ছিল, উম্মতদের মনে যেন আল্লাহর ভয় থাকে, এবং তারা যেন সঠিক পথেচলে, তাহলে তারা সফলকাম হবে। জাহান্নামের আগুন থেকে বেঁচে যাবে। সে কারণেই গুরুত্ব দিয়ে তিনি জ্ঞান অর্জনকে বাধ্যতামূলক করেছেন।
রাসূল (সাঃ) কল্যাণের দিকে সৎ পথের দিকে ডেকেছেন গোটা মানব সমাজকে। তিনি (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সৎ পথের দিকে আহবান জানাবে, সে তাঁর অনুসারীদের সমতুল্য নেকির অধিকারী হবে। (মুসলিম)।
রাসূল (সাঃ) তাঁর উম্মতকে সদকা করতে শিখিয়েছেন। সমাজের জন্য সমাজের মানুষের জন্য উপকার হয় এমন কাজ করতেও শিখিয়ে গেছেন। যেমন সদকায়ে জারিয়ার জন্য গাছ রোপণ করা, পানির জন্য কুপ অথবা টিওবওয়েলের ব্যবস্থা করা, মানুষের উপকার হয় এমন যেকোনো কাজ। রাসূল (সাঃ) বলেছেন- আদম সন্তান যখন মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া অন্য সব আমলের দ্বার বন্ধ হয়ে যায়। তা হলো সদকায় জারিয়া(বহমান দান খয়রাত, মসজিদ নির্মাণ করা, ক‚প খনন করে দেওয়া ইত্যাদি) অথবা ইলম(জ্ঞান সম্পদ) যা দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় অথবা সুসন্তান যে তাঁর জন্য নেক দোয়া করতে থাকে।” (মুসলিম) । রাসূল (সাঃ) উচ্চতর জ্ঞানের জন্যও উৎসাহিত করেছেন।
তাঁর অনুপম জীবন চরিত ও সমাজ সংস্কারকমূলক কর্মধারা সব মানুষের জন্য অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এক চিরন্তন আদর্শ। মানব সমাজে শান্তি ও শৃংখলা রক্ষার জন্য রাসূল (সাঃ) এর আর্দশ সঠিকভাবে অনুসরণ করা একান্ত প্রয়োজন। প্রখ্যাত দার্শনিক জর্জ বার্নডশ সমস্যা জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে সামাজিক শান্তি ও মুক্তির পথ খুঁজতে গিয়ে যথার্থই বলেছেন-মুহাম্মদ (সাঃ) এর মতো কোনো ব্যক্তি যদি আধুনিক জগতের একনায়কত্ব গ্রহণ করতেন, তাহলে কোনো এক উপায়ে তিনি এর সমস্যা সমাধানে সফলকাম হতেন, যা পৃথিবীতে নিয়ে আসতো বহু বাঞ্চিত শান্তি ও সুখ।
দিবা-রাত্রির সাধনার ঘর্মাক্ত শরীরে, কঠিন তপস্যায়, কঠোর সাধনায়, অর্ধাহারে, অনাহারে, জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, মুত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও, আচারে-বিচারে, মানবতার উৎকর্ষ সাধনে, প্রাণের বিনিময়েও রাসূল (সাঃ) ছিলেন, দুস্থ মানুষের দুর্গত মানবতার দরদী বন্ধু। এক কথায় সমগ্র মানব সমাজের এমন কোনো একটি দিকও নেই, যে দিকটির সময় উপযোগী সুদূর সংস্করণ এই মহা মানবের দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। বিদায় হজ্জের দিন তাঁর বিদায় ভাষণে সকল মুসলিম জাতিকে পুনরায় শেষ বারের মতো সাবধান করে দিয়ে গেছেন। এভাবে সমগ্র মানব সমাজে মানব সূর্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সারাজীবন সূর্যের মত আলো বিকিরণ করে ৬৩ বছর বয়সে গ্লানিময় সংসারের শ্রেষ্ঠতম সমাজ সংস্কারক, সমাজ সেবক, চির গৌরব রবি, চিরনিদ্রায় অস্তমিত হন।
আসুন আমরা সকলেই আমাদের সকল কাজে আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) এর আদর্শে আদর্শবান হয়ে উঠি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : কবি ও সাহিত্যিক




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *