উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

উজবেকিস্তানে ইসলাম চর্চার দুয়ার আবার খুলছে

 

উজবেকিস্তানে ইসলাম চর্চার দুয়ার আবার খুলছে
হামিম উল কবির
ইমাম বুখারীর দেশ উজবেকিস্তান। এক সময় ইসলামী ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র। অথচ উজবেকিস্তানে ইসলাম ছিল প্রায় নির্বাসিত। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসেন কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক ফার্স্ট সেক্রেটারি ইসলাম করিমভ এক সাজানো নির্বাচনে। ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ২৬ বছর চলছিল একনায়কতান্ত্রিক শাসন অবশেষে ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুতে অবসান ঘটে একদলীয়, একনায়কতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ক্ষমতার। নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসেন শাভকাত মিরজিওয়ে। তার আগমনে উজবেকিস্তানে বহু বছর ধরে ইসলামের অনেক বন্ধ দরোজা খুলছে ধীরে ধীরে।
ইসলাম করিমভের এক নেতা, এক দল এবং এক দেশ থেকে এখন পর্যন্ত শাভকাত বেরোতে না পারলেও তিনি উজবেকিস্তানের আলোকিত অতীতকে পুনরায় তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। উদ্দেশ্য-ইসলাম প্রসার নয়, পর্যটন প্রসার। দেশটির ভঙ্গুর অর্থনীতি হয়তো চাঙ্গা করতে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণে এই উদ্দেশ্যেই বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বদের কবরগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছেন তিনি। করিমভের শাসনামলে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় ইসলাম বিকশিত হতে পারেনি। গোপনে কিছু সংগঠন দাঁড়াতে চেষ্টা করলেও নিরাপত্তা বাহিনীর চোখে পড়লেই জঙ্গি তকমা দিয়ে সংগঠকদের জেলে ভরে নির্যাতন ছিল নৈমিত্তিক ব্যাপার। কুরআন পড়া অথবা ইসলামী সংস্কৃতি লালনের প্রমাণ পেলেই বছরের পর বছর জেলে পুরে অত্যাচার করা হয়েছে মানুষকে। অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা, রাজনীতি ও ধর্ম পালনে বাধা দেয়ায় ‘ইসলামিক মুভমেন্ট ইন উজবেকিস্তান’ নামক একটি দলের উদ্ভব হলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই দলটিকে আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট অথবা আইএসসংশ্লিষ্ট তকমা দিয়ে এর তৎপরতা সীমাবদ্ধ করে রাখা হয়।
করিমভের যুগে ইসলাম : ইসলাম করিমভ যুগে মুসলমানদের পবিত্র দিনগুলো পালন, মসজিদ নির্মাণ, মুসলমানরা মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়, কুরআনের বিক্রি বাড়া (বলা হচ্ছে কুরআন বেস্ট সেলার), জুমার নামাজ অথবা ঈদের নামাজের আলিমদের ইমামতির সুযোগ এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ইসলাম চর্চা। সোভিয়েত যুগে ইসলামবিরোধী কর্মকাÐ পরিচালিত হতো এমন কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে করিমভের আমলেই। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত উজবেকিস্তানে যেখানে মাত্র ৮০টি মসজিদ ছিল ২০০৪ সালে, তা বেড়ে দাঁড়ায় আড়াই হাজারে। কিছু ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামিক পদ ‘মুফতি’। তিনি সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। ইসলাম করিমভ যতটুকু তার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য প্রয়োজন, ততটুকুই করেছেন। এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে তিনি ইসলামকে ভালোবেসে এসব করেছেন। এসব করার পাশাপাশি নির্যাতনও করেছেন সেই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে। করিমভের নির্যাতন থেকে বাঁচতে ১৯৯৩ সালে মুফতি শেখ মুহাম্মদ সাদেক ইউসুফকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল।
বিদেশিদের তৎপরতা ও মূল্যায়ন : সৌদি আরব, তুরস্ক, পাকিস্তান ও ইরানের অর্থে এখানে কিছু ইসলামিক বই বিতরণ কর্মসূচি নেয়া হয়েছিল। তবে এখানে ইরান ও অবশিষ্টরা নিজ নিজ আদর্শ অনুযায়ী ইসলাম প্রচার করেছে। কিন্তু স্কুলে কোনো ধর্মীয় বই পড়ানো সম্ভব নয়।। তাসখন্দে (তাসখেন্ট) একটি ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে, কিন্তু সেখানে কোনো ইসলাম শিক্ষা দেয়া নিষিদ্ধ (সেক্যুলার শিক্ষা দেয়া হয়)। কোনো ইসলামিক বই প্রকাশ করতে চাইলে সরকারের অনুমতি লাগে।
ধর্মসংক্রান্ত সরকারি কমিটি ঠিক করে দেয় ইমামরা বক্তৃতায় কী বলবেন। করিমভের যুগে প্রায় আড়াই হাজার মসজিদ নির্মাণ হলেও মোয়াজিনের সুললিত আজান শোনা যেত না নিষেধাজ্ঞার কারণে। ইমামদের বক্তৃতায় করিমভের মাহাত্ম্য গাইতে হতো।
২০০০ সালে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের একটি জরিপে উঠে এসেছে যে উজবেকিস্তানের ৭৫ শতাংশ মুসলমান চায় উজবেকিস্তানে ইসলাম বৃহত্তর ভূমিকা পালন করুক, ২৩ শতাংশ চায় দেশটির ধর্মীয় নেতারা রাজনীতিতে আরো তৎপর হোক, ৩৯ শতাংশ মনে করে গণতন্ত্র ও ইসলামী আইন একসঙ্গে চলতে পারে, ২২ শতাংশ মুসলমান মনে করে নারী ও পুরুষের এক সঙ্গে কাজের ক্ষেত্রে কিছু বাধা নিষেধ থাকা উচিত।
নতুন প্রেসিডেন্ট শাভকাতের কর্মকাÐ : করিমভের মৃত্যুর পর উজবেকিস্তানে কিছু পরিবর্তন শুরু হয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিওয়েভ ধর্মীয় স্বাধীনতা দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন। কর্তমান সরকার মনে করে স্থানীয় সংস্কৃতি এবং ধর্মের ওপর তারা নতুন করে জোর দিচ্ছেন। এর উদ্দেশ্য তরুণরা যেন ধর্মীয় উগ্রপন্থার দিকে না ঝোঁকে। করিমভের আমলে ওমরাহ করতে বাধা দেয়া হয়েছে। কোটা নির্ধারণ করে দেয়া হয় ধর্মীয় এই ইবাদতেও। হজ করতে যেতে পারত পাঁচ হাজার ২০০ জন, ১০ হাজারের বেশি কেউ ওমরাহ করতে পারত না। বর্তমান শাভকাত সরকার ওমরার কোটা তুলে দিয়েছে। এখন যে কেউ যখন খুশি ওমরা করতে যেতে পারে। হজের কোটাও হয়তো উঠে যাবে।
করিমভ যা করেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট শাভকাত কিছুটা হলেও পরিবর্তন আনতে চেষ্টা করছেন। তিনি উজবেকিস্তানের ইসলামী ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে মেলে ধরার চেষ্টা করছেন। খুলে দিচ্ছেন ইসলামী মনীষীদের মাজারগুলো বিদেশি পর্যটকের জন্য। এখানে কত মাজার রয়েছে কেউ বলতে পারছেন না, তবে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই হাজারের বেশি মাজার রয়েছে যেখানে বিখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বরা শুয়ে আছেন। কিছুটা মাজারকে কেন্দ্র করে খুলে যাচ্ছে উজবেকিস্তান। এটা অবশ্য মন্দের ভালো। তবে মনে করা হচ্ছে যে, এখান থেকেই ইমাম বুখারী যে ইসলাম চর্চা করেছেন, তা উঠে আসবে। সরকার বিশ্ব মুসলিমদের আকৃষ্ট করতে পুরনো ঐতিহ্যকে ঢেলে সাজাচ্ছে। তারা মক্কার পরেই ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু বানাতে চায় উজবেকিস্তানকে।
মুসলিম মনীষীদের জন্মস্থান উজবেকিস্তান : উজবেকিস্তান বহু মুসলিম মনীষীর স্মৃতিধন্য দেশ। ইমাম বুখারী (রহ.), ইমাম নাসাঈ (রহ.), ইমাম তিরমিযীর (রহ.) বহু স্মৃতি রয়েছে এদেশে। বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা আল বিরুনী এদেশের জন্মেছিলেন। মুসলমানদের পারস্য বিজয়ের পর উজবেকিস্তানে ইসলাম প্রবেশ করে। হিজরী ৩০ সালে খলিফা ওসমান ইবনে আফ্ফানের (রা.) আমলে আহনাফ বিন কায়েস (রা.) এ অঞ্চলে প্রথম অভিযানে বের হন। ৮৮ হিজরীতে উজবেকিস্তানের পুরো এলাকা মুসলমানদের অধীনে আসে উমাইয়া যুগে কুতাইবা মুসলিমের (রহ.) হাতে। আব্বাসি যুগের খলিফা মু’তাসিম বিল্লাহর শাসনামলে উজবেকিস্তানের বহু গোত্র ইসলামের পতাকাতলে আসে। একাদশ থেকে ত্রয়োদশ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অবশ্য সুফি ও দরবেশরা উজবেকিস্তানে ইসলাম প্রচারে শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন করেন। ইসলাম সেখানে এতোটা প্রভাব বিস্তার করেছিল যে, উজবেকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উজবেক হওয়ার পরও মুসলমানরা উজবেক হরফ ব্যবহার না করে আরবী হরফ ব্যবহার করে সাহিত্য ও অন্যান্য কিছু লিখতেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন দখলে যাওয়ার পর ১৯২০ সালে সরকারি ঘোষণায় আরবীর পরিবর্তে ল্যাটিন হরফে উজবেক ভাষা ব্যবহার শুরু হয়।
সোভিয়েত যুগে ইসলাম ধ্বংসের তৎপরতা : ১৯২৪ সালে কমিউনিস্টরা উজবেকিস্তানকে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত করার পরই সেখানে মুসলমানদের ওপর নেমে আসে অত্যাচার, নির্যাতন। ধর্মকে তখন থেকেই নির্বাসনে পাঠানোর আয়োজন হয়। ইসলামী আইন, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতা ধ্বংসে সব চেষ্টা হয়েছে। কমিউনিস্টরা তখন থেকে বন্ধ করতে শুরু করে মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামী কেন্দ্রগুলো। এই প্রতিষ্ঠানগুলোই ইসলামকে জাগিয়ে রাখতে সহায়তা করে থাকে। কমিউনিস্টদের সবচেয়ে বেশি তৎপরতা ছিল মসজিদ ধ্বংসে।
অবশেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে ১৯৯১ সালের ৫ ডিসেম্বর জন্ম হয় উজবেকিস্তান নামে স্বাধীন দেশের। কিন্তু ইসলাম অথবা মুসলমানদের শত্রæ তখনো রয়ে যায়। তৎকালীন উজবেকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির ফার্স্ট সেক্রেটারি ইসলাম করিমভ দেশটির প্রথম প্রেসিডেন্ট হন। তিনি ফার্স্ট সেক্রেটারি হিসেবে ১৯৯০ সাল থেকেই দেশটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টির ফার্স্ট সেক্রেটারি মানসিকতায় ছিলেন পুরোপুরি কমিউনিস্ট। দেশটি যেহেতু উজবেকিস্তান, এটি যেহেতু ছিল ইসলামের স্বর্ণালী ঐতিহ্যের অংশ। সে কারণে ইসলাম করিমভ কমিউনিস্ট নামে দেশটি চালাননি সত্য, কিন্তু তার সব কর্মকাÐ ছিল কমিউনিস্ট ধাঁচের। ছিল না মত প্রকাশের স্বাধীনতা, ছিল না কোনো মানবাধিকার। মিডিয়া ছিল তার নির্দেশের অধীন। ইসলাম যেন সেখানে বেড়ে উঠতে না পারে সেজন্য সব ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন করিমভ। তিনি ছিলেন স্বৈরাচার স্টালিনের ভাব শিষ্য। তার শাসনের ৯ বছরের মাথায় তিনি উজবেকিস্তানে ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ করে দেন। ফলে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। শাসনের শুরু থেকেই তিনি বেছে বেছে ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের ওপর অত্যাচার করেন। তার শাসনে নিপীড়নের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেন তিনি নিজেই। এই লোকটা এতোটা অমানবকি ছিল যে, দুইটা উদাহরণ দিলেই স্পষ্ট হবে। তার প্রতিপক্ষ দুই রাজনীতিককে তিনি ফুটন্ত পানিতে সিদ্ধ করে হত্যা করেন বলে দেশটিতে নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ক্রেইগ মারি সংবাদ মাধ্যমকে জানান। করিমভের নিজের মেয়ে গুলনারা টুইটারে তাকে স্টালিনবাদী ও স্টালিনের সঙ্গে তুলনা করায় মেয়েকে গৃহবন্দী করে রাখেন ২০১৪ সাল থকে। ইসলামী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক আছে সন্দেহে হাজার হাজার মানুষকে তিনি জেলে ভরে নির্যাতন করেন।
বুখারীর জন্মস্থান বুখারা : বুখারা উজবেকিস্তানের অন্যতম প্রাচীন শহর। এক সময় এটি ছিল ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। তখন এই শহরকে বলা হতো একটি জীবন্ত শহর। সমরখন্দের পশ্চিমে অবস্থিত বুখারা নগরী ছিল ইসলামচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। এখানেই ইমাম বুখারী তার বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ বুখারী শরীফ সংকলন করেন। বাহান উদ্দিন নকশবন্দী এখানেই আধ্যাত্মিক সাধনায় মগ্ন ছিলেন। বুখারা নগরীতে ৩৫০টি মসজিদ ও ১০০টি মাদরাসা এখনো আছে। বেশি মসজিদ আছে পুরনো বুখারা নগরীতে। এমনকি ৯৪ হিজরীতে নির্মিত একটি মসজিদ এখনো বিদ্যমান। বিখ্যাত কালান মসজিদ নির্মাণ হয়েছিল ১৫১৪ সালে। সমরখন্দে বুখারার ইমাম বুখারীর সমাধি ছাড়াও সমরখন্দে রয়েছে মুহাম্মদ সা. এর চাচাতো ভাই কুসাম ইবনে আব্বাসের সমাধি। এছাড়া রয়েছে স্থানীয় ঐতিহ্য স¤্রাট তামেরলেন, জ্যোতির্বিদ উলুংবেকের সমাধি। মঙ্গোলিয়া থেকে চেঙ্গিস খান এখানে রাজত্ব করেন এবং তার স্মৃতি রয়েছে।
অর্থনীতি : এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ৪৩ দেশের অর্থনীতিতে উজবেকিস্তানের স্থান ৩৬ নম্বরে। একনায়ক ইসলাম করিমভের শাসনামল এতোটাই খারাপ ছিল যে সার্বিক অর্থনীতির মানদÐে দেশটির স্কোর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক গড়েরও নিচের দিকে। নতুন প্রেসিডেন্ট শাভকাত ক্ষমতায় বসার পর তিনি প্রতিবেশী ও বাইরের দেশগুলোর বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দেশটির দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, সরকারি হস্তক্ষেপ ও সরকারি সুরক্ষা প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলাম করিমভের সোভিয়েত স্টাইলের অথনৈতিক ধারণায় দেশ চালানোর কারণে না এসেছে কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ, না বেড়েছে প্রবৃদ্ধি। শুষ্ক মরুময় এবং স্থলবেষ্টিত উজবেকিস্তানের মাত্র ৯ শতাংশ ভ‚মি সেচের মাধ্যমে চাষাবাদযোগ্য। দেশটির ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ ঘনবসতিপূর্ণ গ্রামীণ এলাকায় বাস করেন। প্রাকৃতিক তেল, গ্যাস ও স্বর্ণ রফতানির টাকায় চলে দেশটির অর্থনীতি। তা সত্তে¡ও বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম তুলা রফতানির দেশ উজবেকিস্তান।
চার লাখ ৪৮ হাজার ৯০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটির রাজধানী তাসখন্দ (তাসখেন্ট)। তিন কোটি ১৫ লাখ জসংখ্যার দেশে ৯০ শতাংশের বেশি সুন্নি মুসলিম।
লেখক : সাংবাদিক




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *