উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

আমাদের ঐতিহ্যসহ পর্যটন স্পটগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি

এমএম রহমাতুল্লাহ: শেষ হয়ে গেল দেশের সর্ববৃহৎ পর্যটন মেলা বাংলাদেশ ট্রাভেল এন্ড ট্যুরিজম ফেয়ার। গত ১৮ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ৯ম বাংলাদেশ ট্রাভেল ও ট্যুরিজম ফেয়ার (বিটিটিএফ)-২০১৯ উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ। উদ্বোধনকালে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ দেশের ঐতিহ্যবাহী পর্যটন কেন্দ্রগুলো বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, আমাদের ঐতিহ্যসহ পর্যটনের আকর্ষণীয় স্থানগুলো চমৎকারভাবে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের প্রত্মতাত্ত্বিক নিদর্শন ও আকর্ষণীয় পর্যটন স্থানগুলো বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং গণমাধ্যমের প্রতি আহবান জানান। বিদেশি পর্যটকরা আমাদের অতিথি উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, তারা যাতে নিৰ্বিঘ্নে এবং আনন্দঘন পরিবেশে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে পারেন এবং বাঙ্গালি আতিথেয়তায় মুগ্ধ হন, তাও নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, পর্যটনের অপার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পরপরই রাষ্ট্রীয়ভাবে পর্যটন শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, যা আজ বাংলাদেশের পর্যটন উন্নয়নের অগ্রপথিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতোই পর্যটন বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট মো. আব্দুল হামিদ বলেন, বিদেশী পর্যটক আগমন বৃদ্ধির লক্ষ্যে অন এরাইভল ভিসা প্রাপ্য দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করাসহ মিশনগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই-ভিসা প্রদান করছে। ঢাকা শহরকে ২০১৯ সালের জন্য ‘ঢাকা দি ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম’ ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদেশী পর্যটকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে আগ্রহী করে তুলতে এ ধরণের মেলা ইতিবাচক অবদান রাখবে। এছাড়া উন্নত হবে বন্ধুরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক, বিকশিত হবে পর্যটন শিল্প এবং সমৃদ্ধ হবে জাতীয় অর্থনীতি। বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড, এফবিসিসিআই, পর্যটন পুলিশ, পিএটিএ বাংলাদেশ চেপ্টার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সহযোগিতায় ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) ৩-দিন ব্যাপী এই মেলার আয়োজন করে। মেলায় বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ অংশ নিয়েছে। অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে- নেপাল, ভুটান, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, শ্রীলংকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিপাইন ও মালদ্বীপ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টোয়াবের সভাপতি তৌফিক উদ্দীন আহমেদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পর্যটন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে ‘মোটর ভেহিকেল চুক্তি’ সম্পাদিত হয়েছে। সকল পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলে জানান তিনি। পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বলেন, পর্যটকরা যাতে বাংলাদেশে নিরাপদে ভ্রমণ এবং নিশ্চিন্তে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন সেজন্য সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের পর্যটনের প্রসারের লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে পর্যটন সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্প্রতি বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে ‘মোটর ভেহিকেল চুক্তি’ সম্পাদিত হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারের সাবরাংয়ে ১২০০ একর জমির উপর নিবিড় পর্যটন অঞ্চল তৈরির কাজ চলছে। এই পর্যটন অঞ্চলে দেশি-বিদেশি সকল বিনিয়োগকারীকে স্বাগত জানানো হবে। তিনি বলেন, পরিচিতিমূলক ভ্রমণের ফলে বিদেশি সাংবাদিক ও ট্যুর অপারেটরদের সাথে আমাদের দেশীয় সাংবাদিক ও ট্যুর অপারেটরদের পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা আমাদের পর্যটন খাতের উন্নয়ন ও প্রসারে সহায়ক হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মেলার শেষদিনে প্রধান অতিথির বক্তব্যসহ বিভিন্ন আলোচনায় পর্যটন বিকাশে তরুণ উদ্যোক্তাদের সহায়তা করার জন্য ব্যাংকিংখাতকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। তিনি বলেন, পর্যটন সম্পর্কিত বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য তরুণ ও নবীন উদ্যোক্তাদের ব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করলে তারা উপকৃত হবে। পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক বোনাসকালে রয়েছে। ইউএনডিপি’র এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানব উন্নয়নের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের মোট জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ অর্থাৎ ১০ কোটি ৫৬ লাখ লোক এখন কর্মক্ষম। আরো আনন্দের বিষয় যে, আমাদের ২ কোটি ৮ লাখ কর্মক্ষম তরুণ রয়েছে যাদের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। জনসংখ্যা তাত্ত্বিক এ পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনেক বড় সুযোগ উল্লেখ করে মাহবুব আলী বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে তরুণদের এই শক্তি কাজে লাগাতে হবে, তাদের সুযোগ দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, পর্যটন একটি শ্রমঘন শিল্প হাওয়ায় এখানে তরুণদের ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ রয়েছে। এখাতে কর্মসৃজনের পাশাপাশি উদ্যোক্তাদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। পর্যটনের বিকাশে প্রতিষ্ঠিত উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিতে হবে, উৎসাহিত করতে হবে। ট্যুরিজম অ্যান্ড ট্রাভেল কাউন্সেলরের তথ্য তুলে ধরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন ও ভ্রমণখাতের অবদান ছিল ৮৫০.৭ বিলিয়ন টাকা। যা মোট জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। ২০২৮ সাল নাগাদ এটি বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৬.৮ শতাংশে উন্নীত হবে। ২০১৭ সালে ২৪ লাখ ৩২ হাজার কর্ম তৈরিতে সহায়তা করেছে পর্যটন ও ভ্রমণ শিল্প। যা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩.৮ শতাংশ। ২০২৮ সালের মধ্যে তা ৪.২ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। একই বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ এসেছে ৮৩ বিলিয়ন টাকা যা ২০২৮ সালে ১৬১.৮ বিলিয়ন টাকায় পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। মাহবুব আলী বলেন, আমাদের ব্যাংকিংখাত আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। এখন সময় এসেছে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নখাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ করার। বিভিন্ন পর্যটন স্পটের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে পারে। দেশীয় পর্যটকদের জন্য সহজ শর্তে পর্যটন ঋণের ব্যবস্থা করতে পারে যাতে তারা ঘুরে এসে ইনস্টলমেন্টের মাধ্যমে সেই ঋণ পরিশোধ করতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ২০১০ সালে এ ঋণ চালু করে বর্তমানে এর সুফল ভোগ করছে। দেশে বিদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের জন্য ট্রাভেলার্স চেক/ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার আরো সহজ করলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকরা ভ্রমণ করতে আরো বেশি উৎসাহিত হবেন। তিনি বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের পর্যটনে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজও ঘোষণা করতে পারে। আমাদের বীমা কোম্পানিগুলো পর্যটকদের সুবিধার জন্য পর্যটক বীমা চালু করতে পারে।

 

টোয়াবের সভাপতি তৌফিক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিমান বাংলাদেশ ট্রাভেল ও ট্যুরিজম ফেয়ারে এবার বিভিন্ন দেশের জাতীয় পর্যটন সংস্থা, এয়ারলাইনস, ট্যুর অপারেটরস, হোটেল ও রিসোর্ট, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ট্রাভেল ও ট্যুর–সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা ১৬০টি স্টল এবং ১৫টি প্যাভিলিয়নে তাদের পণ্য ও সেবা তুলে ধরবে। পর্যটন ফেয়ারের উদ্বোধনী আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আতিকুল হক, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির, বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস ও টোয়াব পরিচালক (ট্রেড এন্ড ফেয়ার) মো. তাসলিম আমিন শোভন প্রমুখ। উদ্বোধন শেষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ মেলায় বিভিন্ন স্টল ও প্যাভেলিয়ন পরিদর্শন করেন।

এবারের পর্যটন মেলায় দেশের অধিকাংশ শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটররা অংশগ্রহণ করে। মেলার ৩ দিনের মধ্যে ২ দিন সরকারি ছুটি থাকায় নানা শ্রেণী, পেশা ও বয়সী মানুষ আসেন মেলা পর্যবেক্ষণে। তবে পর্যবেক্ষণকারীদের বেশীরভাগই  ছিল বর্তমান প্রজন্মের। সাধ্য কম থাকলেও দেশবিদেশ ভ্রমণের আগ্রহে তাদের একটুও কমতি নেই। মেলায় অংশগ্রহণকারী ট্যুর অপারেটরদের বিভিন্ন প্যাকেজ ও সুযোগসুবিধা সম্পর্কে জানতে ঢাকাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণ পিয়াসুরা। ট্যুর অপারেটররাও মেলা উপলক্ষে প্যাকেজ ভ্রমণের উপর বিশাল ছাড় দেন। এককালীন মূল্য পরিশোধ ও নানা সংকটে ভ্রমনের ইচ্ছে আর আলোর মুখ দেখে না। আপনার ইচ্ছা এবং প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সি ফ্লাইট এক্সপার্ট। কিস্তিতে (ইএমই) বিদেশ ভ্রমণের এই সুযোগ দিচ্ছেফ্লাইট এক্সপার্ট।প্রতিষ্ঠানটির এক্সিকিউটিভ রিফাত মাহমুদ জানান, বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি ফ্লাইট এক্সপার্ট কিস্তিতে বিদেশ ভ্রমণসহ বিশ্বকাপ দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে। থাকছে ৩৬ মাসের সিস্তি পরিশোধের সুবিধা। এছাড়া টোয়াব আয়োজিত বাংলাদেশ ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ারে এয়ার টিকেট ক্রয়ের ওপর ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইন্সট্যান্ট ক্যাশব্যাক সুবিধা দিচ্ছে। তিনি জানান, আভ্যন্তরীণ এয়ার টিকিটে তারা সবচেয়ে কমমূল্যে টিকেট দিচ্ছেন ভ্রমণেচ্ছুদের। তাদের কাছ থেকে টিকেট ক্রয়ে থাকছে ‘বুক নাও পে লেটার’ সুবিধা। রিফাত জানান, মোবাইল অ্যাপসহ তাদের বছরের ৩৬৫ দিন আনলিমিটেড গ্রাহক সেবা। অ্যাপের মাধ্যমে বিশ্বের ৬৫০টিরও বেশি বিমান কোম্পানির টিকেট ক্রয়ের সুবিধা থাকছে তাদের কাছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মেলার স্টল ঘুরে দেখা যায়, এ ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের স্টলে বেশ সাড়া মিলেছে লোকজনের। জনপ্রিয় ভ্রমণ স্পটগুলোতে যেতে বুকিং দিচ্ছেন এসব লোকজন। মেলা চলাকালে অংশগ্রহণকারী সব সংস্থা দর্শনার্থীদের জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় ট্যুর প্যাকেজ এবং হ্রাসকৃত মূল্যে টিকিট কেনার সুযোগ দেবে। পর্যটক আকর্ষণের প্রতিযোগিতায় পর্যটন ব্যবসায়ীদের অনেকেই স্মার্ট স্টাফদের পাশাপাশি নিজেরাও সার্বক্ষণিক উপস্থিত থেকে প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। দেশের মানুষ যে এখন পর্যটনে কতটা আগ্রহী, তা না দেখলে বোঝা যাবেনা।

কথা হয় ট্যুর অপারেটরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও গাইডদের সাথে। শত ব্যস্ততার মাঝেও হিমালয়ের পাঠকদের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই দীর্ঘ সময় ব্যয় করে নানা প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যাদের মধ্যে রয়েছেন ট্রিপজিপ ডট ট্যুরস-এর সিইও কানিজ ফাতিমা, ক্রিয়েটিভ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এর সিইও ইমরুল হোসাইন ইমন, গ্রীন হলিডেজ-এর সিইও মোঃ বোরহান উদ্দিন, গ্রীন বাংলা ট্যুরস-এর স্বত্বাধিকারী এমএ হালীম খান, ট্যুরিজম উইনডোর সিইও মনিরুজ্জামান মাসুম, নিউ ডিসকভারি ট্যুরস এন্ড লজিস্টিক এর সিইও ইফতেখার আলম ভুইঞাঁ রাসেল, বাংলাদেশ ভ্যাকেশন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল কাফি, ঢাকা রিসোর্ট-এর কো চেয়ারম্যান শারোথী অন লাইন ডট কম-এর ফাউন্ডার ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল বাসেত বাবু, আরএমকে-এর জহির আহমেদ হেলাল, শাজিবুল আল রাজীব, আশথা মেডিকেল ট্যুরিজম-এর রাশেদ আনোয়ার ম্যাকাজু ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত হোসেন, ডিসকভারি হলিডেজ লিমিটেড-এর মোঃ আজহারুল ইসলাম টিপু রয়াল ভিশন ট্যুরিজম-এর মালিক শাহীদ মোঃ ইমরান গ্লোরী হলিডেজ এর মালিক মোঃ আনোয়ার হোসেন একটিভেশন ট্যুরিজম-এর আবু রায়হান, সার্ভ ট্যুর ইন্টারন্যাশনাল-এর সিরাজুল ইসলাম রাজু আরএফ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এর মীর ফাতেমা আক্তার, ঢাকা ডিনার ক্রুজয়-এর পরিচালক শাহ মোহাম্মদ মুরসালিন, কৃষিবিদ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিঃ-এর হেড অব ব্র্যান্ডিং এন্ড মার্কেটিং শহীদুল ইসলাম, আরভিং এভিয়েশন লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপক পিন্টু ভট্টাচার্য, ক্লাব সুমন হলিডেজ প্রাইভেট লিঃ ডিরেক্টর কার্তিক রাক্ষিত, লেক্সাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত কুমার সাহা, ভিশন হলিডেজ-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো শরীফুল ইসলাম শরীফসহ দেশবিদেশের শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটর এবং পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মকর্তাবৃন্দ।

পর্যটন শিল্পের নানাদিক নিয়ে খোলাখুলি কথা হয় দেশের  অন্যতম সেরা ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ভিশন হলিডেজ-এর ব্যবস্থাপনা অংশীদার মো শরীফুল ইসলাম শরীফ এবং দেশের শীর্র্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটর কোম্পানি লেক্সাস-এর স্বত্বাধিকারী অজিত কুমার সাহার সাথে। দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে  ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফ পর্যটন ব্যবসার বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ নানা বিষয় নিয়ে সময়োপযোগী ও খোলাখুলি কথা হয় মাসিক হিমালয়ের নির্বাহী সম্পাদক এমএম রহমাতুল্লাহর সাথে।সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশটুকু মাসিক হিমালয়ের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

 

হিমালয়: ভিশন হলিডেজ কবে থেকে তার যাত্রা শুরু করে?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ ভিশন হলিডেজ-এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালে। কিন্তু ব্র্যান্ডিং এর পর এর নাম করা হয় ভিশন হলিডেজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিমিটেড। ৪ বছর আগে আমি এর ব্র্যান্ডিং নাম চেইঞ্জ করেছি।

হিমালয়: প্রত্যাশানুযায়ী বাংলাদেশে ইনবাউন্ট ট্যুর হচ্ছেনা। ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট থেকে উচ্চ ডিগ্রিধারী এবং একজন অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটর হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ এক্ষেত্রে অনেকগুলো কারণকেই আমি আইডেন্টিফাই করব। প্রথমেই মনে করি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়া। দ্বিতীয়তঃ পর্যাপ্ত সিকিউরিটির ব্যবস্থা না থাকা। যথাযথ নিরাপত্তা এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ডেভেলপমেন্ট এনসিউর না করলে ইনবাউন্ট ট্যুর আশানুরূপ হবেনা বলে আমি মনে করি। একবার জাপানের একটি ফেয়ারে এটেন্ট করতে গিয়ে জাপানীদের সাথে দীর্ঘ আলাপের মাধ্যমে জানলাম যে তারা বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে আগ্রহী নন। কারণ তাদের কাছে বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তান সেইফ মনে হয়েছে। এমনকি, তাদের একজন পাকিস্তান ট্যুর করে গেলেও বাংলাদেশে আসেননি। ইন্ডিয়া গিয়ে কলকাতা থেকে খুলনা সুন্দরবন হয়ে যশোর দিয়ে বের হয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে আসেননি। কারণ তার মতে, বাংলাদেশ একটি সন্ত্রাস প্রবণ এলাকা। এর মানে হল, বাংলাদেশকে তারা সেইফটি এরিয়া মনে করেননা।

হিমালয়: বাংলাদেশ একটি অতিথি পরায়ণ দেশ, এদেশের বেশীরভাগ মানুষও শান্তিপ্রিয়। ফরেনারদের সাথে এমন আচরণের কোন যৌক্তিকতাও নেই। তাহলে কেন তারা সেইফটি ফীল করবেন না?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ সবই ঠিক আছে। কিন্তু একজন ফরেনার কোথাও ট্যুরে যেতে চাইলে এট ফার্স্ট তিনি তার নিরাপত্তার চিন্তা করবেন এবং অবকাঠামোগত দিকটাও ভাববেন। কারণ ট্যুরটা তো এন্টারটেইনমেন্টেরই একটি অংশ।

হিমালয়: ট্যুরিজমকে কি শুধুই প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন, নাকি এটা আপনার হবি বা প্যাশন?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরে ফার্স্ট সেমিস্টার শেষে আমরা প্রায় ২৫ জন স্টুডেন্ট মিলে একটি নতুন ধারণার মাধ্যমে পর্যটনের কাজ শুরু করি। যদিও তাদের কেউ আর এখন এ পেশার সাথে জড়িত নেই।

হিমালয়: দেশের সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান থেকে ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট-এর উপর উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও নিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তা বাদ দিয়ে কেন ট্যুরিজমের মত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায় এলেন?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ আমার কাছে মনে হয়েছে এটা বেটার। স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই শুরু করেছি, তাই এটার প্রতি অন্যরকম একটা ভাললাগা ভালবাসাও রয়ে গেছে। জবের চিন্তা আমার কখনই ছিলনা, তাছাড়া কিছুটা আরলি এজ থেকেই আমি ছোটখাটো বিজনেসের সাথে জড়িত ছিলাম। ফাইনালি যখন এ পেশায় যখন আসি তখন মনে হয়েছে, এটা একটা নতুন আইডিয়া এবং এখানে আমরা ভাল করতে পারব।

হিমালয়: দেশী বিদেশী পর্যটকরা কেন আপনাদের বেছে নেবে?

আমরা কাস্টমারদের কাছে যতটুকু কমিটমেন্ট করি, ততটুকু এনসিউর করার চেষ্টা করি। আমাদের কাস্টমারদের প্রায় ৯০% রিপিট কাস্টমার। তাছাড়া আউটবাউন্ট ট্যুরের ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা ব্যতিক্রম সার্ভিস দিয়ে থাকি।

হিমালয়: ভিশন হলিডেজ-এর মালিক এবং এর সাথে জড়িত স্টাফরা তাদের পেশাগত ক্ষেত্রে কতটুকু দক্ষ এবং কমিটেড?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ এখন যারা জড়িত আছে তাদের সবাই কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট আন্তরিক এবং যোগ্যতার সাথেই কাজ করছে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার জন্য এবং ট্যুরিস্টদের ভাল সার্ভিস দেয়ার জন্য।

হিমালয়: বর্তমানে ট্যুরিজম সেক্টর দক্ষ জনশক্তির অভাব কেন?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ এদেশে ট্যুরিজম সেক্টরের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত। তাই দক্ষ এবং উচ্চ শিক্ষিত জনশক্তি এ পেশায় নিজেদের ভবিষ্যৎকে জড়াতে ততটা সিকিউরড ফীল করছেনা।

হিমালয়: বর্তমানে বাংলাদেশে ট্যুরিজম শিল্পের সম্ভাবনা ও সমস্যা কি?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ সম্ভাবনা অনেক কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারছিনা। সম্ভাবনার কথা বলতে গেলে আমাদের প্রায় সবই আছে। অন্যদিকে আপনি যদি ইনবাউন্ট ট্যুরের কথা চিন্তা করেন, তবে প্রথমেই সিকিউরিটি সমস্যা। দ্বিতীয়তঃ অবকাঠামোগত সমস্যা।

হিমালয়: ফরেন ট্যুরিস্টদের জন্য বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আপনি কতটুকু সন্তুষ্ট?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ আমি কতটুকু সন্তুষ্ট তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমরা যখন বাহিরে যাই তখন তাদের সন্তুষ্ট করার মত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিগত ২ বছর ধরে আমরা অনেকগুলো ইন্টারন্যাশনাল ট্যুরিজম ফেয়ারে অংশগ্রহণ করেছি। যার মধ্যে রয়েছে বার্লিন, ডাব্লিউটিএফ, জাপান, সিঙ্গাপুর, ইন্ডিয়াসহ সবগুলো ফেয়ারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি। ঐখানে যদি আমরা বাংলাদেশকে ঠিকভাবে তুলে ধরতে পারি, তাহলেই আশানুরূপ ইনবাউন্ট ট্যুর হতে পারে। আদারওয়াইজ নট পজিবল।

হিমালয়: এজ এ মেম্বার টোয়াব থেকে আপনারা কী কী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ টোয়াবের কারণেই আমরা দেশিবিদেশি অনেক ফেয়ারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছি, টোয়াবের ব্যানারেই আমরা বাহিরের ফেয়ারে যাচ্ছি। এটাও টোয়াবের একটি সফলতা। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডও আমাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছে। কিন্তু সংগঠন হিসেবে টোয়াবের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ইচ্ছা থাকলেও তারা অনেক কিছু করতে পারেনা। সরকার থেকে তারা ঐ পরিমাণ শক্তি পায়নি, যেহেতু ট্যুর অপারেটরদের জন্য কোন রুলস এন্ড রেজুলেশন নেই।

হিমালয়: এ ফেয়ার থেকে আপনারা কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?

মোঃ শরীফুল ইসলাম শরীফঃ মেলাতে আমরা মোটামুটি ভাল রেসপন্স পেয়েছি। তবে সেটা আমাদের জন্য কতটুকু ব্যবসাসফল হবে, তা পরবর্তিতে বোঝা যাবে। আমি ২০১০ সাল থেকেই ফেয়ারে এটেন্ড করি। তাই রেসপন্স-এর চেয়ে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পুরাতন ক্লায়েন্টদের রিভিউ করা।

১৯৭১ সালে কুমিল্লা জেলায় জন্ম গ্রহণকারী অজিত কুমার সাহার শৈশব কাটে কুমিল্লাতেই। তবে পযটন শিল্পে সফল এই ব্যক্তিটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রী নেন ঢাকা থেকে। পর্যটনের উপরে কোর্স করা, বাস্তব জীবনে দারুন অমায়িক অজিত কুমার সাহা ১৯৯৪ সাল থেকে এ ট্রেডে আছেন। মাসিক হিমালয়ের সাথে শীর্র্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটর কোম্পানি লেক্সাস-এর স্বত্বাধিকারী অজিত কুমার সাহার সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশটুকু পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

হিমালয়: আপনারা বর্তমানে এ শিল্পের শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত আসতে আপনাদের কী কী চড়াই-উতরাই মোকাবিলা করতে হয়েছে?

অজিত কুমার সাহা: চড়াই উতরাই কিছু না, শুধু কষ্ট করতে হয়েছে। অনেকদিন ধরেই এ পেশায় আছি আমরা। ১৯৯৬ সালের ডিসেম্বর থেকেই এ পেশায় আছি।

হিমালয়: লেক্সাসের শুরু কখন এবং কিভাবে?

অজিত কুমার সাহা: ২০০৪ সাল থেকে লেক্সাসের পথচলা শুরু। ১৫ বছর ধরে চলছে লেক্সাস।

হিমালয়: এ শিল্পে কাজ করতে গিয়ে কোন প্রতিকূল অবস্থার সম্মুখীন হচ্ছেন কি?

অজিত কুমার সাহা: প্রতিকূলতা বলতে কিছু নেই। কিন্তু কিছু প্রতিষ্ঠানের অনভিজ্ঞতা ও সততার কারণে কাস্টমাররা প্রতারিত হচ্ছেন। এর ফলে অনেকের মধ্যে ট্যুরিজম নিয়ে একটা খারাপ ধারণা তৈরি হয়েছে। কাস্টমারদের বলব, শুধু চাকচিক্য দেখে বিচার না করে প্রতিষ্ঠানের সততা, অভিজ্ঞতা এবং অবস্থান যাচাই করে দেখুন। সস্তা দেখে বুকিং করবেননা।

হিমালয়: গড়ে প্রতিবছর আপনাদের পর্যটক কত?

অজিত কুমার সাহা: প্রতিবছর গড়ে ৯ থেকে ১০ হাজার পর্যটক আমাদের মাধ্যমে ভ্রমণ করছে।

 হিমালয়: বাংলাদেশের কতটি স্পটে আপনাদের কার্যক্রম চালু আছে?

অজিত কুমার সাহা: বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সবগুলো স্পটেই আমাদের মাধ্যমে পর্যটকরা যাচ্ছেন। ভ্রমণের ক্ষেত্রে এখন মানুষ আগের চেয়ে অনেক বেশী আগ্রহী।

হিমালয়: গত ২ বছরে আপনারা পর্যটকদের কেমন রেসপন্স পাচ্ছেন?

অজিত কুমার সাহা: ভাল রেসপন্স পাচ্ছি। প্রতি বছরই পর্যটকদের সংখ্যা কমবেশি বাড়ছে। মানুষ ধীরে ধীরে পর্যটন মুখী হচ্ছে।

হিমালয়: আপনারা কবে থেকে থেকে টোয়াবের মেম্বার হয়েছেন? মেম্বার হিসেবে টোয়াব থেকে কী কী সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন?

অজিত কুমার সাহা: আমরা ২০০৪ সাল থেকে টোয়াবের মেম্বার আছি। এসোসিয়েশন হিসেবে টোয়াব সফল হলেও সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মাঝে তারা আর আমাদের কী সুযোগসুবিধা দিবে!

হিমালয়: বাংলাদেশে পর্যটক বৃদ্ধির জন্য কী করা উচিত?

অজিত কুমার সাহা: বাংলাদেশে পর্যটকদের সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলে এবং ট্যুরিজমের উপর ভ্যাট-ট্যাক্স শিথিল করলে পর্যটকের সংখ্যা আরো বাড়বে।

হিমালয়: ফরেন পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আপনি কি সন্তুষ্ট?

অজিত কুমার সাহা: পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় ফরেনারদের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট ভাল। তাদের ১০০% সিকিউরিটি আছে বলে আমি মনে করি। কারণ কোন ট্যুরস্ট বলতে পারবেনা, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোন ফরেনারদের পকেটমার হয়েছে। দুর্ঘটনা তো পরের কথা, কোন ফরেনার ছিনতাইকারীর কবলেও পড়েনি। বাংলাদেশীরা বিদেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হলেও কোন বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে প্রতারিত হওয়ার নজির নেই।

হিমালয়: বর্তমানে যে হারে আউটবাইন্ড এবং ইনবাউন্ড ট্যুর হওয়ার কথা, সেটা হচ্ছেনা কেন?

অজিত কুমার সাহা: কিছুটা কমলেও আশা করি, ঠিক হয়ে যাবে। তাছাড়া সারা পৃথিবীর অর্থনৈতিক অবস্থাই এখন কিছুটা খারাপ। আর পর্যটন হলো এমন একটি বিষয়, মানুষের সব চাহিদা পূরণ হলেই কেবল মানুষ বিনোদনের চিন্তা করে। কিন্তু আমরা এসব নিয়ে ভাবছি না। কারণ লেক্সাস থেকে প্রতিবছরই ১০%-১৫% গ্রোথ হচ্ছে। অন্যদের অবস্থা যাই হোক, প্রতিবছরই আমাদের স্টাফ বাড়ছে, বাড়ছে বিজনেসের পরিধি।

হিমালয়: বাংলাদেশে অনেক ট্যুর অপারেটর থাকলেও লেক্সাস এমন কি এক্সট্রা সুযোগসুবিধা দিচ্ছে, যার ফলে পর্যটকরা আপনাদের বেছে নিবে?

অজিত কুমার সাহা: আমাদের এখানে পর্যটকরা ওয়ান স্টপ সার্ভিসসহ সব ধরনের সুবিধা পাচ্ছে। আমাদের নিজেদের গাইডেন্সের মাধ্যেমেই সবকিছু করি। প্রাইসটাও রিজনেবল থাকে। এ কারণে আমাদেরকে পছন্দ করে। অন্যদিকে যারা ইনস্টলমেন্টের মাধ্যমে কিস্তিতে বাহিরে যেতে চায়, তাদের আমরা ব্যবস্থা করে দেই। আর সবচেয়ে বিষয় হলো, কথা ও কাজে মিল রেখে আমরা কাজ করি।

হিমালয়: এ ফেয়ার থেকে আপনারা ব্যবসায়িকভাবে কতটুকু লাভবান হবেন বলে আশা করেন?

অজিত কুমার সাহা: আমাদের রেসপন্স খুব ভাল। আশা করি এ ফেয়ার থেকে আমরা যথেষ্ট লাভবান হব।

হিমালয়: মাসিক হিমালয়ের পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

অজিত কুমার সাহা: হিমালয় তো আমরা পড়ি। পর্যটনশিল্পে হিমালয়ের অবদান অনেক। কারণ এ শিল্পে ভাল কোন ম্যাগাজিন নেই। হিমালয় অনেক বছর ধরে পর্যটনের উন্নয়নে কাজ করছে এবং আমরাও হিমালয়ের পাঠক। হিমালয়ের পাঠকদের বলব- আপনারা যখন কোন প্যাকেজ ও টিকেট বুকড করবেন, তখন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, কতদিনের পুরনো ও অভিজ্ঞতাসহ সবকিছু দেখে নিবেন। তাহলে আপনারাও প্রতারিত হবেন না এবং এ ইন্ডাস্ট্রিটাও বেঁচে থাকবে।

হিমালয়: ব্যস্ততার মাঝেও সময় বের করে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

অজিত কুমার সাহা: আপনাকেও ধন্যবাদ।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *