নিস্তব্ধ নিঝুম দ্বীপ

হিমালয় রিপোর্টঃ বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। প্রতি বর্গকিলোমিটারে এখানে গড়ে প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ বসবাস করে। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এরপরও আমাদের দেশে এমন কিছু স্থান রয়েছে যেখানে মানুষের বসতি খুবই কম, প্রকৃতির সেখানে অবাধ বিস্তার। আর কারো যদি লোকালয়ের সংসর্গ ছেড়ে প্রকৃতির একেবারে গহিনে ডুব দেওয়ার ইচ্ছে থাকে, তাহলে এসব স্থানের থেকে উত্তম আর কিছুই হতে পারে না। এমনই একটা জায়গার নাম হলো নিঝুম দ্বীপ। শীতকালে অতিথি পাখির কলতানে মুখর এ অঞ্চল ঘুরে আসতে পারেন।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণে ১৯৫০-এর দশকে এই দ্বীপটি জেগে ওঠে, এরপর ক্রমে পলি জমে দ্বীপটি আজকের আকার ধারণ করে। ১৯৭৪ সালের দিকে বন বিভাগ এই দ্বীপের উত্তর অংশে ব্যাপকভাবে বনায়ন করে, যার ফলে আজ ১৫ বর্গমাইল দ্বীপটির বেশির ভাগই পরিণত হয়েছে অভয়ারণ্যে। শুরুতে ‘চর ওসমান’ নামে পরিচিত হলেও ১৯৭৯ সালে সাবেক মন্ত্রী আমিরুল ইসলাম খান এই দ্বীপের নাম দেন ‘নিঝুম দ্বীপ’। দ্বীপটি মূলত বেশ কিছু চরের সমষ্টি। এর মাঝে বয়ে চলেছে নদী আর খাল, যেন অবিকল সুন্দরবন। উপকূলীয় অঞ্চল হওয়ায় শীতকালে শীতের তীব্রতাও তুলনামূলকভাবে এখানে কম। ফুরফুরে সামুদ্রিক বাতাস আর মনোলোভা প্রকৃতি মনে এনে দেবে দারুণ সুখের অনুভূতি। সম্প্রতি দ্বীপের বেশ দক্ষিণে জেগে উঠেছে নতুন এক চর, ভ্রমণপিয়াসীরা যার নাম দিয়েছেন ‘ভার্জিন আইল্যান্ড’।

আপনি যদি প্রকৃতিপ্রেমী হন, তাহলে তো কথাই নেই। মূল দ্বীপসহ আশপাশের দ্বীপগুলোতে শীতকালে আসে হাজার হাজার অতিথি পাখি। এদের মধ্যে আছে সরালি, লেনজা, জিরিয়া, পিয়ং, চখাচখি, রাঙ্গামুড়ি, ভূতিহাঁসসহ নানারকম হাঁস, রাজহাঁস, কাদাখোঁচা, জিরিয়া, বাটান, গুলিন্দাসহ জলচর নানা পাখি, হরেক রকমের গাংচিল, কাস্তেচরা ইত্যাদি। কদাচিৎ আসে পেলিক্যান। আর বছরজুড়ে সামুদ্রিক ঈগল, শঙ্খচিল, বকসহ নানা স্থানীয় পাখি তো আছেই। দ্বীপের আশপাশের জঙ্গলেই আছে হরিণ, শেয়াল, বন্য শূকর, নানা রকম সাপ ও বানর। বাংলাদেশের প্রকৃতি মানুষের কলুষতার হাত থেকে সামান্য মুক্ত হলেই যে কি অবিশ্বাস্য প্রাণিসম্পদের সম্ভার ধারণ করতে পারে, তা নিঝুম দ্বীপে না গেলে বোঝা অসম্ভব। তবে দ্বীপে নামলেই যে এসব আরামসে দেখবেন এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। পাখি বা হরিণ দেখতে হলে খুব ভোরে উঠতে হবে। হরিণ মূল দ্বীপেই স্থানীয় গাইডদের সাথে গিয়ে দেখে আসতে পারবেন। পাখি দেখতে হলে ট্রলারে করে পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোতে যেতে হবে, পেরোতে হবে অনেকটা কাদা। কবিরাজের চর ও দমার চর পাখি দেখার জন্য বেশ উত্তম জায়গা। আর অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসী হলেও নিঝুম দ্বীপ আপনাকে নিরাশ করবে না। জঙ্গলে হাঁটাহাঁটি তো আছেই, সাথে ধরুন সমুদ্রের বালুকাবেলায় ক্যাম্পিং করে থাকা অথবা বার-বি-কিউয়ের আয়োজন, ধু ধু চরে হেঁটে বেড়ানো মহিষের বিশাল পাল, কিংবা নৌকায় করে সাগর ভ্রমণ করার মতো এখানে আছে অনেক কিছুই।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *