হানিফ ওয়াহিদ: ‘শালার পুত’ আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে। কোন আইডির নাম এমন অদ্ভুত হতে পারে আমার জানা ছিল না। আমি তাকে একসেপ্ট করলাম না। ঝুলিয়েই রাখলাম। কয়েকদিন পর মেসেজ দিল, ভাইজান, আমি আপনার গল্প খুব পছন্দ করি। আমাকে একসেপ্ট করেন।
আমি একসেপ্ট করে লিখলাম, ঐ ব্যাটা, তুই যদি শালার পুত হস, আমি তোর ভাই হই কেমনে? তোর বাপ আমার শালা হয়,আমি তোর বাপের দুলাভাই। তোর বাপের দুলাভাই কি তোর ভাই হয়? দিব কানের নীচে একটা!
বলেই তাকে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিলাম।
এক মেয়ে আমাকে মেসেজ দিয়েছে, ভাইয়া, অনেক দিন আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছি,একসেপ্ট করেন।
আমি লিখলাম, চৌদ্দ দিন হউক, তারপর একসেপ্ট করবো।
কেন ভাইয়া? চৌদ্দ দিন কেন?
আরে বোন, যে দিনকাল পড়েছে, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টের সাথে যদি করোনা ভাইরাস চলে আসে! তাই চৌদ্দ দিন আপনার রিকোয়েস্ট হোম কোয়ারেনটাইনে থাকুক,তারপর বিবেচনা করবো!
আমার ফ্রেন্ডলিস্ট পাঁচ হাজার পূর্ণ হয়েছে অনেক আগেই। চাইলেও কাউকে নিতে পারি না। অনেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে এমন সুন্দর করে মেসেজ দেয়,যেন প্রেম নিবেদন করছে, আমি যদি তাকে গ্রহন না করি তাহলে আত্মহত্যা করবে! একসেপ্ট করার পর তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। নো লাইক কমেন্ট। এ যেন জোর করে বিয়ে করে বাসর ঘরে তালাক দেওয়া!!
ফ্রেন্ডলিস্টে পরিচিত এক মেয়ে একদিন মেসেজ দিল, কেমন আছেন ভাইয়া?
আমি সেদিন অসুস্থ ছিলাম। শরীর ছিল খুব দূর্বল। বিছানা থেকে উঠতে পারছিলাম না। চোখে ঝাপসা দেখছিলাম। মাথাও ঠিক কাজ করছিল না। আমি লিখলাম, ভালো না। শরীর দূর্বল।
সে লিখলো, শরীর ঠিক হয়ে যাবে, হারবাল খান।
কীসের বাল?
হার বাল।
কার বাল?
আরে ভাই, হারবাল, হারবাল!
বলেই সে আমাকে ব্লক লিস্টে পাঠিয়ে দিল।বুঝলাম না আমার অপরাধ কী!!
ফেসবুক জীবনে আপন বলতে কেউ নাই। রিয়েল লাইফেও একই অবস্থা। কলেজ জীবনে একজনকে খুব আপন ভাবতাম। সে এখন তিন বাচ্চার মা!!
আমার ফ্রেন্ডলিস্টের এক মেয়ে লিখেছে,
করোনা
কাউরে ছাড়ে না।
মূহুর্তে লাইক কমেন্টের বন্যা বয়ে গেলো। লোকজন এমন ভাবে লাইক কমেন্ট দিতে শুরু করলো, যেন এতো ভালো কথা তারা জীবনে শোনেনি!
আমি মন্তব্য লিখলাম, চমৎকার লিখেছেন ম্যাডাম।যেভাবে লাইক কমেন্ট পড়ছে, মনে হচ্ছে লোকজন আপনার লেখা প্রচুর খাচ্ছে।
আপনার উচিত এই লাইনগুলো নিয়ে একটা বই বের করা!!
আমার লিস্টের এক লেখিকা লিখেছে, বন্ধুরা আজ রাতে আমি একটা ভূতের গল্প লিখতে চাই, কে কে ভূতের গল্প পড়তে চাও কমেন্ট করে জানাও।
এক ঘন্টায় তিন,শ লাইক, একশর উপর কমেন্ট। অনেকে লিখলো,ম্যাডাম, আপনার গল্পের অপেক্ষায় আছি। একজন লিখলো,আজ রাতে আপনার গল্প পড়ে তবে ভাত খাবো। আরেকজন লিখলো, আপনি এতো কম লেখা দেন কেন? দিনে কমপক্ষে চার-পাঁচটা লেখা দিবেন!!
আমি সেই লেখিকার লেখার নীচে মন্তব্য করলাম, ম্যাডাম,খুবই শিক্ষনীয় পোস্ট!
বুঝলাম না, সেই লেখিকা কেন আমাকে ব্লক লিস্টে রাখলো!!
অথচ সেদিনই আমি একটা মজার গল্প লিখেছি,এক ঘন্টায় লাইক এসেছে চল্লিশটা,কমেন্ট পাঁচটা! সবাই যে পড়ে লাইক কমেন্ট করেছে তা নয়, কোন কোন পরিচিত মুখ হয়তো দয়া করে লাইক দিয়েছে। এতো কষ্ট করে একটা লেখা লিখি, কেউ পড়ে না।মাঝে মাঝে আফসোস হয়,কেন যে মহিলা লেখক হলাম না! তাহলে তো বেশি বেশি লাইক কমেন্ট পেতাম!
তবে একথা সত্যি, কিছু লেখিকা আসলেই চমৎকার লিখছেন।
ফেসবুকে এসে অনেক আজগুবি এবং মজার লোকজনের দেখা পাই। সেদিন একজন মেসেজ দিয়ে জানতে চাইলেন, আচ্ছা ভাই, আমি যদি ইংরেজিতে বই লিখি,সমস্যা হবে?
ফ্রেন্ডলিস্টের বেশির ভাগ গ্রুপ খুলেছেন। মোটামুটি সবাই গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক। একমাত্র আমিই ফকির!!
আরেকজন মেয়ে আছেন, আমার লেখায় কোন না কোন ভুল খুঁজে বের করবেন। অবশ্য ভালোই হয়,ভুল সংশোধন করা যায়।
আমি অনেক জনপ্রিয় লেখককে দেখি,তারা নিজের লেখায় নিজেই লাইক দেন। আমি আজও জানি না, এতে আসলে কী হয়!
আমরা বাঙালিরা বড়ো অদ্ভুত!!