রাফি রহমাতুল্লাহ: যখন মরুভূমির প্রাণীর কথা জিজ্ঞেস করা হয় তখন অধিকাংশ মানুষ উটের কথা বলবেন। যুগে যুগে সাধারণ মানুষ নবীদের কাছে তাদের সত্যবাদিতার প্রমাণ হিসেবে অলৌকিক জিনিস দাবি করেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা তার জবাবে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিদর্শনাবলি মানুষকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে বলেছেন। যেমন মেঘ থেকে বৃষ্টি হওয়া, পাহাড় সৃষ্টি, গাছ থেকে ফল হওয়া, মায়ের পেটে মানবশিশুর বিকাশ। তেমনি একটি নিদর্শনের কথা তিনি বলেছেন মরুভূমির উট (সূরা গাসিয়া, আয়াত-১৭) এর শারীরিক গঠন ও চালচলন মরুভূমির জন্য খুবই উপযোগী এবং মহান সৃষ্টিকর্তার এক অপূর্ব নিদর্শন। বিস্ময়কর সৃষ্টি উট অত্যন্ত কর্কশ পরিবেশেও বেঁচে থাকতে পারে। এই রহস্যজনক প্রাণী সম্পর্কে রয়েছে জানা অজানা নানা তথ্য। নিরীহ প্রাণী হলেও উট খেয়ে ফেলতে পারে বিষাক্ত সাপ। উট সাপ কেন খায়, জানলে অবাক হবেন আপনিও। মূলত এটি পবিত্র কুরআনের একটি বিস্ময়কর রহস্য। উট এমন এক প্রাণী যেটির বৈশিষ্ট অন্যান্য প্রাণী থেকে একটু ভিন্ন ও উদ্ভুত। উট সাপ কেন খায় এ বিষয়ে কুরান ও বিজ্ঞানের আলোকে অত্যন্ত চমৎকার কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। হুযুর (দঃ) শুধু মানবজাতির হকসমুহ বয়ান করেননি বরং পশু পাখির হক সমুহও বয়ান করেছেন এবং পশু পাখি প্রাণী জগতের সাথেও দয়া করার গুরুত্বারোপ করেছেন। জানোয়ারসমুহের বৈশিষ্ট্য সৌন্দর্য্য বর্ণনা করার জন্য একটি কথাই যথেষ্ট যে কোরানে পাকে বিভিন্ন জায়গায় প্রাণী জগতের বর্ণনা এসেছে। শুধু তাই নয় কোরানে পাকের কয়েকটি সুরার নামও রাখা হয়েছে পশু পাখির নামে। যেমন সুরা বাকারা অথ্যাৎ গাভি গরু। এরপর সুরা আনআম অথ্যাৎ চতুষ্পদ জন্তু। সুরা নহল মধুমক্ষি। সুরা নমল পিপড়া। সুরা আনকাবুত মাকড়সা। সুরা ফিল হাতির নামে সুরা কুরানে পাকে রয়েছে। তেমনি ভাবে সুরা ইউসুফে উটের আলোচনা আছে। উট এমন এক প্রাণী যেটির বৈশিষ্ট অন্যান্য প্রাণী থেকে ভিন্ন ও উদ্ভুত।
পবিত্র কোরানে উটের একটি রোগের আলোচনা আছে, যে রোগ হলে উট একদম খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উট শুধু সুর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞগন উটের এ রোগের ব্যপারে গবেষনা করে কোন উৎস বা কারন ব্যাখ্যা করতে পারে নি। এ রোগের নাম হল হায়াম। বিজ্ঞগন বলেন হায়াম মানে হল সাপকে জিবীত গিলে ফেলা। অনেকে আবার এ বিষয়ে নাজেনেই উটের উপর নানা ধরনের জুলুম করা শুরু করে দেয়। আল্লাহ তায়ালা উটের হায়াম নামক এ রোগের শেফা রেখেছে জীবিত সাপকে গিলে ফেলার মাধ্যমে। এ চিকিৎসা দেয়ার সময় উটের চোখ থেকে যে পানি বের হয় তাও চিকিৎসার জন্য খুবই উপকারী পানি। কেননা সাপ গিলে ফেলার পর উটের তৃষ্ণা বাড়তে থাকে এবং ৮ ঘন্টা এ অবস্থায় থাকার পর সাপের যে বিষ তার কারনে উটের চোখ থেকে পানি অঝোর ধারা প্রবাহিত হতে থাকে। অনেক সময় উট নিজ থেকেই সাপ খেয়ে ফেলে যার কারনে উটের প্রচন্ড তৃষ্ণা হয়। এবং উটের চোখ থেকে পানি বের হতে থাকে আর এর পানির ব্যপারে গবেষকগন বলেন যে উটের এ চোখের পানি খুবই মূল্যবান পানি। সে জন্য এ চোখের পানিকে বিজ্ঞ লোকেরা ছোট চামড়ার থলেতে সংরক্ষন করে রাখে। কেননা এ পানি অন্য পানি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ চোখের পানিকে তিরয়াক বলা হয়। আর তিরয়াক এমন এক ঔষধ যা যে কোন প্রাণীর বিষকে নষ্ট করার জন্য তৈরী করা হয়। আর যে মূল্যবান তিরয়াক অনেক কষ্টে তৈরী করা সম্ভব সে তিরয়াকই হয় সে উটের চোখের পানি। যা বিষক্রিয়া নষ্ট করার চিকিৎসায় কার্যকরী।
উট সাপের বিষে পানি পান করতে থাকে আর জাহান্নামীরা টগবগ করে সিদ্ধ হতে থাকা পানি পান করতে থাকবে সে পানি এতই গরম যা তাদের মুখের সামনে আনার সাথে সাথে তাদের চেহেরার গোস্ত গলে পড়বে। তবুও তারা এক শ্বাসে সে পানি পান করবে আর তা তাদের পেটের সব আতুরি কেটে পিছনের রাস্তায় বের হয়ে যাবে। এ জন্যই আমাদের প্রিয় নবীজি এক শ্বাসে পানি পান করতে নিষেধ করেছেন। এরশাদ করেন উটের মত এক শ্বাসে পানি পান করিও না বরং ৩ শ্বাসে পান পান কর। সে তিরয়াকই হচ্ছে উটের সেই চোখের পানি। যা বিষক্রিয়া নষ্ট করার চিকিৎসায় কার্যকরী। এ চোখের পানিকে ছোট চামড়ার থলেতে সংরক্ষন করে রাখা যায়।
উট কুঁজে পানি পুরে রাখে কিভাবে: আসলে কুঁজে চর্বি পুরে রাখে উট। এর ওজন ৮০ পাউন্ড পর্যন্ত হওয়ার খবর মিলেছে। এ কারণে উট এক-দুই সপ্তাহ পর্যন্ত না খেয়ে টিকে থাকতে পারে। এখন কেউ কেউ বলতে পারেন এক গ্রাম চর্বি গলে তো এক গ্রামের বেশি পানি তৈরি হয়। কথা মিথ্যা নয়। কিন্তু আরো সত্য হলো, এটি উটের পানি তৈরির কাজে আসে না। কিন্তু কুঁজে চর্বি জমাতে বরং তার বেশি পানি খরচ হয়। তাহলে উট পানি কোথায় জমা রাখে? উত্তর হলো—রক্তকোষে এবং শরীরের আরো কিছু অংশে। তবে এর চেয়েও বড় কথা হলো উট খুব মিতব্যয়ী, হিসেব করে পানি খরচ করে। যেমন সে খুব অল্প পরিমাণ মূত্র ত্যাগ করে। অনেক প্রাণী বিশেষত শুষ্ক অঞ্চলে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস কাজে পানি বেশি ব্যয় করে, উট সে তুলনায় অনেক কম করে। তারপর ঘামানোর ব্যাপারে বলতে হয় উট খুবই কম ঘামে। শরীরের ভেতরেও উটের পানি ব্যবস্থাপনার কারসাজি আছে। তার রক্তকোষগুলো যখন তুলনামূলকভাবে শুকিয়ে আসে তখন পানি সরবরাহ করে শরীরের অন্য তরল অংশ। আরো ব্যাপার হলো, শরীরের মোট ওজনের ২৫ শতাংশ কমে না যাওয়া পর্যন্ত উট পানির অভাব সহ্য করে নিতে পারে। অথচ যেখানে অন্য স্তন্যপায়ীরা ১২-১৫ শতাংশ ওজন কমে গেলেই হৃদপিণ্ড বিকল হয়ে যাবার মতো জটিলতায় পড়ে। তাই মরুভূমির জাহাজখ্যাত উট এক-দুই সপ্তাহ পানি ছাড়াই মরুভূমিতে টিকে থাকতে পারে। তবে পিঠে ওজন চাপানো হলে দিনের সংখ্যা কমে তিন বা চার দিনে আসে।
উটের প্রাথমিক কিছু তথ্য
১। উটের প্রজাতি দুই ধরনের, এক কুঁজ বিশিষ্ট উট যা মধ্যপ্রাচ্যে এবং আফ্রিকায় বাস করে এবং দুই কুঁজ বিশিষ্ট উট, যা এশিয়ার কেন্দ্রে বাস করে।
২। camel (উট) শব্দটি এসেছে লেটিন শব্দ camelus থেকে।
৩। উট সাধারণত ৪০-৫০ বছর বেঁচে থাকে।
৪। পূর্ণবয়স্ক উট সাধারণত ৭ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।
৫। উট প্রতি ঘণ্টায় ৪০ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে।
৬। উট দীর্ঘ সময় ধরে ২৫ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে। এর জন্য এগুলো মরূভূমির জন্য চমৎকার পরিবহন হিসেবে কাজ করে।
উট যেভাবে মরুভূমির সজ্জা
১। উট প্রায় দুই মাস পানি পান না করেও বেঁচে থাকতে পারে।
২। উটের ঘন জামাটি আলো বিকিরণ করে এর ত্বককে সূর্য থেকে বাঁচিয়ে রাখে। এই জামাটি গ্রীষ্মে আরো বেশি আলো বিকিরণ করে।
৩। উটের লম্বা চিকন পাগুলো ডিজাইন করা হয়েছে এমনভাবে যাতে তারা গরম বালু থেকে অনেক উপরে থাকে। যদিও তাদের পা চিকন কিন্তু তা অনেক শক্তিশালী, এবং তা ১ হাজার পাউন্ড (৪৫৩ কেজি) ওজন বয়ে নিতে পারে।
৪। উটের চ্যাপ্টা পায়ের তালু তাকে বালুতে তলিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
৫। উটের শরীরে অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তাকে বালুর প্রবাহ থেকে রক্ষা করে। এর মধ্যে রয়েছে নাসারন্ধ্র যা খুব নিকটে, লম্বা চোখের পাতের লোম, এবং কানের চুল।
উটের মজাদার তথ্য
১। পৃথিবীর অধিকাংশ উট গৃহপালিত করে ফেলা হয়েছে শুধু মাত্র কিছু বাদে (প্রায় ১০০০) যারা বন্যভাবে বাস করে চীনের গোবি মরুভূমিতে ও মঙ্গোলিয়ায়।
২। এটা বিশ্বাস করা হয় যে উটকে প্রথম গৃহপালিত করা হয় দক্ষিণ আরবে খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে।
৩। প্রাচীন উট (Protylopus) ইওসিন পিরিয়ডে (৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর আগে) বাস করত। তখন এর আকার ছিলো প্রায় আধুনিক কালের খরগোসের মত।
৪। উটকে প্রথম ব্যবহার করা হয় কারকারের যুদ্ধে ৮৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে।
উট বিষাক্ত সাপ কেন খায় তা অনেকেই জানে না। এতে নতুন অনেক প্রানীদের সম্পর্কে বিভিন্ন রকম তথ্য জানতে চাই। এমন তথ্য শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।