জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। তিনি পরিচিত আছেন জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ বালখী, মাওলানা রুমি, মৌলভি রুমি নামে। তবে শুধু রুমি নামে বেশি জনপ্রিয়। তিনি ছিলেন ১৩ শতকের একজন ফার্সি মুসলিম কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্ত্বিক, অতীন্দ্রিবাদী এবং সুফি।
সাহসী আর প্রেমময় উচ্চারণের কণ্ঠস্বর এই মানুষটি আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে চলে গেছেন এ নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু তার ভালোবাসার রাজত্ব আজও শেষ হয়নি।
রুমির নির্ভরযোগ্য জীবনীলেখক ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো এর ফ্রাঙ্কলিন লুইসের মতে, আনাতোলিয়া উপদ্বীপ ছিল বাইজেন্টাইন বা রুম সম্রাজ্যের অন্তর্গত। যেটি পরবর্তীকালে তুর্কির মুসলিমদের দখলে আসে, যেটি এখন পর্যন্ত আরব, পারস্য এবং তুর্ক নামে পরিচিত, যেটি ছিল রুমর ভৌগলিক এলাকা। যেখানে অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেছেন রুমি ছিলেন তাদেরই একজন।
রুমির প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমণ্ডল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়ে। ফার্সি, তাজাকিস্তানী, তুর্কি, গ্রিক, পাস্তুন, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার মুসলামানরা গত সাত দশক ধরে বেশ ভালভাবেই তার আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে যথাযথভাবে সমাদৃত করে আসছেন।
তার কবিতা সারাবিশ্বে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে এবং বিভিন্ন শ্রেণীতে রূপান্তরিত করা হয়েছে। রুমিকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি’ এবং ‘বেস্ট সেলিং পয়েট’ বলা হয়।
রুমির সাহিত্যকর্ম বেশিরভাগই ফার্সি ভাষায় রচিত হলেও তিনি অনেক স্তবক তুর্কি, আরবি এবং গ্রিক ভাষায়ও রচনা করেন। তার লেখা মসনবীকে ফার্সি ভাষায় লেখা সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে তুলনা করা হয়।
ইরান সাম্রাজ্য এবং বিশ্বের ফার্সি ভাষার লোকেরা এখনও তার লেখাগুলো মূল ভাষায় ব্যাপকভাবে পড়ে থাকে। অনুবাদসমূহও খুব জনপ্রিয়, বিশেষ করে তুরস্ক, আজারবাইজান, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায়। তার কবিতা ফার্সি সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে, শুধু তাই নয় তুর্কি সাহিত্য, উসমানীয় তুর্কি সাহিত্য, আজারবাইজান সাহিত্য, পাঞ্জাবের কবিতা, হিন্দি সাহিত্য, উর্দু সাহিত্যকেও অনেক প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও অন্যান্য ভাষার সাহিত্য যেমন তুর্কীয়, ইরানি, ইন্দো-আর্য, চাগাতাই, পাশতো এবং বাংলা সাহিত্য ও বাংলাকে প্রভাবিত করেছে।
রুমি ১২০৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তাদের পরিবার ছিল বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ও ধর্মতত্ত্ববিদ পরিবার। তার পিতা শেখ বাহাউদ্দিন ছিলেন সে যুগের একজন বিখ্যাত বুজুর্গ আলেম। পিতার সঙ্গে পবিত্র হজ পালনের পর সিরিয়া গমন করেন। শেষ পর্যন্ত পূর্ব রোমে সালজুকি বংশের দ্বাদশতম শাসক, সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদের (৬১৬-৬৩৪ হিজরি) আমন্ত্রণে তার রাজধানী বর্তমান তুরস্কের কুনিয়ায় গমন করেন এবং জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ এই সাধক ১২৭৩ খ্রিস্টাব্দে ৬৮ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।