প্রত্যেক মানুষেরই সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূরে ভ্রমণের মাধ্যমে স্রষ্টার বৈচিত্র্যময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে বিকশিত করা উচিত। মহান আল্লাহর বিশাল সৃষ্টি দর্শন, উপার্জন, জ্ঞান আহরণ, রোগ নিরাময় এবং আÍশুদ্ধির জন্য ভ্রমণ করার নির্দেশ রয়েছে ইসলামে। কেউ যদি সওয়াবের নিয়তে ভ্রমণ করে, পুরো ভ্রমণই তার সওয়াব অর্জন হবে। জ্ঞানার্জনের জন্য স্বামী-স্ত্রী সপরিবারে বা দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে বা পর্যটনে যাওয়ায় কল্যাণ ও পুণ্য নিহিত রয়েছে। পৃথিবীজুড়ে রয়েছে আল্লাহর কুদরতের নানা কীর্তি। এসব দেখে মানুষ চিন্তা ও গবেষণা করবে। দৃঢ় করবে ইমান ও আমল, তবেই সার্থক হবে তার পর্যটন। জ্ঞান অর্জনকে ইসলামে ফরজ করা হয়েছে। হাদিস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছে, জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ। আরও বলা হয়েছে, তোমরা দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর। বস্তুত জ্ঞান দুইভাবে অর্জন করা যায়_ বই-পুস্তক পড়া ও ভ্রমণের মাধ্যমে। বই পাঠের মাধ্যমে তাত্তি্বক জ্ঞান অর্জন করা যায় বটে, বাস্তব ও জীবনঘনিষ্ঠ জ্ঞান এভাবে অর্জন করা যায় না। এ জন্য ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তে হয়। মিশতে হয় মানুষের সঙ্গে। সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির লীলা ও বৈচিত্র্য দেখতে হলে ভ্রমণের বিকল্প নেই। বই পাঠের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে জ্ঞানের বীজ অঙ্কুরিত হয় ও ভ্রমণের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। বাস্তব জীবনেও আমরা দেখতে পাই, ভ্রমণের অভিজ্ঞতা যার যত বেশি তার জ্ঞানের ভাণ্ডার তত সমৃদ্ধ।
জ্ঞানীগুণীরা বলেন, পর্যটন হলো জ্ঞানসমুদ্রের সন্ধান। প্রফুল্ল মন ও শারীরিক সুস্থতার জন্য মাঝে মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করা খুব উপকারী। ভ্রমণ মানুষের মনের পরিধিকে বিস্তৃত করে।
অন্যদিকে আল্লাহতায়ালাও তার প্রিয় বান্দাদের ভ্রমণ করতে বলেছেন। যেন তারা স্বচক্ষে দেখতে পারে সৃষ্টির বিশালতা ও দুনিয়ার রূপ।পবিত্র কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, হে রাসূল, আপনি বলে দিন, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ, কীভাবে তিনি সৃষ্টিকর্ম শুরু করেছেন। অতঃপর আল্লাহ পুনরায় সৃষ্টি করবেন। নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা সবকিছু করতে সক্ষম। -সূরা আনকাবুত :২০
কুরআনের আরেক আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যাবাদীদের পরিণতি কী হয়েছে। -সূরা আল ইমরান :১৩৭
উলি্লখিত প্রথম আয়াতে ভ্রমণ ‘আল্লাহ কীভাবে সৃষ্টিকর্ম শুরু করলেন’ এবং দ্বিতীয় আয়াতে ‘মিথ্যাবাদীদের পরিণতি কী হয়েছে’ তা দেখার জন্য ভ্রমণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহর বিচিত্র সৃষ্টি দেখলে তার প্রতি মানুষের বিশ্বাস যেমন গভীর হয়, একইভাবে মিথ্যাবাদীদের পরিণতি দেখলেও মজবুত হয় মানুষের ঈমান।
বর্ণিত দুই আয়াতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, দুটি আয়াতই শুরু হয়েছে নির্দেশনার মধ্য দিয়ে। এ থেকে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়। অন্যান্য হুকুমের মতোই পৃথিবীতে ভ্রমণ করাও ফরজ। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হলো হজ। পরোক্ষভাবে বিবেচনা করলে এটাও কিন্তু এক ধরনের ভ্রমণ। সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য জীবনে অন্তত একবার হজ ফরজ করা হয়েছে এ জন্য যে, আল্লাহতায়ালার ঘর ও ইসলামের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্থানগুলো পরিদর্শনের মাধ্যমে মানুষের মন যেন আল্লাহতায়ালার অনুগামী হয়।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, জ্ঞান অর্জনের জন্য ধর্মীয় পুস্তক পাঠের প্রতি যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়, ভ্রমণের প্রতি ততটা দেওয়া হয় না। এতে শিক্ষার্থীর মনে জ্ঞানের বীজ অঙ্কুরিত হলেও তারা পেঁৗছতে পারছে না জ্ঞানের গভীরে। এ ক্ষেত্রে আল্লামা শেখ সাদি রহমাতুল্লাহি আলাইহির একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, দুই ব্যক্তি জ্ঞানের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ। চিন্তাশীল ব্যক্তি ও ভ্রমণকারী। পবিত্র কোরআনে কারিমের অন্যান্য আয়াতের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়, ভ্রমণকারী ব্যক্তির জন্য নামাজ ও রোজার বিধান কিছুটা সহজ করা হয়েছে। ভ্রমণে থাকাকালে নামাজ সংক্ষিপ্ত করা এবং রোজা অন্য সময়ে পালন করার বিধান রয়েছে। এসবের মাধ্যমেও কিন্তু ভ্রমণের আবশ্যকীয়তা স্পষ্ট হয়। ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো মনে রাখা আবশ্যক। সেটি পবিত্র কোরআনে কারিমের নির্দেশনাও। বিশ্বময় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আল্লাহর সৃষ্টির লীলা রহস্য। এই সৃষ্টি রহস্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শনাদি মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে প্রতি মুহূর্ত। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা বলেছেন, “ভ্রমণ স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য জানায়, ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়”।
বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তাকে জানতে হলে, বুঝতে হলে ভ্রমণ করতে হবে। তবে কোনো খারাপ উদ্দেশ্যে সফর করার অনুমতি ইসলাম প্রদান করেনি।