শাহ আব্দুল হান্নান:নৈতিকতা অবনতি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় আলোচিত বিষয়। আমরা দেখছি কিভাবে একদল ছাত্র অন্যদলের ছাত্র সন্দেহে একজনকে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হত্যা করেছে। দেশ জুয়াতে ভরে গেছে। ত্রিশ চল্লিশটি ক্লাবে ক্যাসিনো বা জুয়া বসতো,লেনদেন হতো হাজার কোটি টাকা। এতে বড় বড় ব্যবসায়ীরা,ওয়ার্ড কাউন্সিলেরা এবং অন্যান্য ব্যক্তিরা জড়িত ছিল । এটা কিভাবে হলো বুঝা যায় না,যেহেতু জুয়া আইনে নিষিদ্ধ। প্রশাসন কি করল,পুলিশ কতৃপক্ষ কি করলা এটা বড় প্রশ্ন। এতলোক ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত তা আমরা জানতাম-ই না। এর সঙ্গে রয়েছে বিদেশে অর্থ পাচার যা জোয়াড়ীরা এবং অন্যরা করেছে। এছাড়া রয়েছে খুন,গুম,ধর্ষণ।
এই চিত্র কেবল বাংলাদেশে নয়! নৈতিকতার পতন বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় ঘটেছে। পাশ্চাত্যে ও নৈতিকতার পতন ঘটেছে। সেখানে পতনের ধরন একটু ভিন্ন। সেখানে পরিবার ভেঙ্গে গেছে,বিবাহ উঠে গেছে। বৃদ্ধরা ও শিশুরা অবহেলিত। মাদকতা নব্বইভাগ লোকের মধ্যে আছে। কোকেন এখন কফি শপেও পাওয়া যায়। এমনকি পাশ্চাত্যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি বেশির ক্ষেত্রে নৈতিকতাহীন। যেমন কাশ্মীর সমস্যা। এ ব্যাপারে জাতিসংঘের প্রস্তাব আছে সেখানে গণভোট হবে । কিন্তু অদ্যাবধি সেখানে গণভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। আর একটি সমস্যা হচ্ছে ফিলিস্তিন। সেখানেও ৭০-৮০ বছর ধরে সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। সেখানে দুই রাষ্ট্র হওয়ার কথা ছিল। একটি ফিলিস্তিদের জন্য একটি ইহুদিদের জন্য। কিন্তু বড় রাষ্ট্রগুলোর জন্য বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি কার্যকর হচ্ছে না। আমেরিকার আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারণ করে মুলত বড় পুঁজিপুতিরা এবং আমেরিকার ইহুদি সম্প্রদায়। এসব পুঁজিপুতিদের মাথায় থাকে অস্ত্র কিভাবে বিক্রি করতে হবে। সেজন্য তারা বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে ফায়দা লুটতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক নীতি সম্পূর্ণ নৈতিকতাহীন।
এগুলো বাংলাদেশে এবং পাশ্চ্যাতে হচ্ছে কেন? এর কারণ পাশ্চ্যাতে খৃস্টীয় বিশ্বাস দুর্বল হয়ে গেছে। তার কারণ স্কুল কলেজে খ্রিস্টান ধর্ম পড়ানো হয় না। আমাদের দেশেও ধর্মীয় শিক্ষায় গুরুত্ব পাচ্ছে না এবং স্কুল-কলেজে পর্যাপ্ত ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে নৈতিকতার পতন হচ্ছে। এ ছাড়া আর একটি কারণ হচ্ছে বিজ্ঞাপন,ইন্টারনেট এবং মোবাইলে অশ্লীলতা। এসব দেখে নারীর উপর নির্যাতন বেড়েছে,ধর্ষণ বেড়েছে।
যত তর্কই করা হোক সত্যি কথা হচ্ছে নৈতিকতার ভিত্তি সষ্ট্রাতে বিশ্বাস মানে আখেরাতে জবাবদিহিতা। যে কেউ যদি ভাবে যে পরকালে আমাকে হিসেব দিতে হবে সে অন্যায় করতে পারে না। ড.জামাল বাদাবি তার ইসলামি শিক্ষা সিরিজে বলেছেন,নৈতিকতা নাস্তিকতায় দিয়ে আসে না। নৈতিকতার ভিত্তি হচ্ছে,যেমন বলেছি,সষ্ট্রায় বিশ্বাস এবং আখেরাতে বিশ্বাস।
বাংলাদেশে এখন সবাই বলছেন বর্তমান সমাজের নৈতিকতার অধঃপতনের রাশ টেনে ধরা এবং নৈতিকতা ফিরিয়ে আনা। এখন সবাই নৈতিকতা নৈতিকতা করছে। কিন্তু বেশির ভাগই নৈতিকতা কিভাবে ফিরে আসবে তা বলছেন না। বামপন্থী এবং সেকুলার নৈতিকতা নৈতিকতা করছেন কিন্তু নৈতিকতার পথ দেখাতে পারছেন না।
নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে হলে ধর্ম শিক্ষাকে স্কুল এবং কলেজে আবশ্যকীয় করতে হবে। কুরআন থেকে অন্তত সূরা বাকারা এবং আম্মাপারা (ত্রিশ নং পারা) পড়াতে হবে। রাসূলের বিস্তারিত জীবনী পড়াতে হবে। আবু বক্কর,উমর,আলী,উসমান (রাঃ) দের জীবনী পড়াতে হবে। খাদিজা,আয়েশার এবং ফাতেমার (রাঃ) জীবনী পড়াতে হবে। ইসলামের ইতিহাস পড়াতে হবে।
অন্য ধর্মের লোকের জন্য একই ভাবে ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের ধর্মীয় নেতাদের জীবনী পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
ধর্মীয় শিক্ষা ছাড়া ও যেসব কারণে মানুষ নৈতিকতা হারায় সেগুলি বন্ধ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে,মদ,জুয়া,বিজ্ঞাপনে অশ্লীলতা,ইন্টারনেটের অশ্লীলতা এ সবই আইন করে বন্ধ করতে হবে। যদি আইন থাকে তাহলে তার প্রয়োগ সঠিকভাবে করতে হবে। সারাবিশ্বের চিন্তাশীল লোকদের এবং সরকার প্রধানদের এই বিষয়ে ভাবতে হবে এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, এনবিআর এবং সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
Previous Postরিচার্ড নিক্সনের চেয়েও খারাপ ট্রাম্পের কর্মকাণ্ড
Next Postযুবলীগের চেয়ারম্যান ফজলে শামস, সা. সম্পাদক মাঈনুল
Related articles
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।
HimalaySep 20, 2023