তুরস্ক, পৃথিবীর এমন একটি দেশ যার এক প্রান্ত এশিয়া এবং অপর প্রান্ত ইউরোপের ভিতরে পড়েছে। এজন্য দেশটি ইউরেশিয়া নামেই পরিচিত। তুরস্ক পৃথিবীর একমাত্র মুসলিম রাষ্ট্র যেটি ধর্মনিরপেক্ষ। তুরস্কের এশিয়া অংশকে আনাতোলিয়া এবং ইউরোপের অংশকে থ্রাস বলে অভিহিত করা হয়। তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা এশিয়া অংশে হলেও বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল পড়েছে ইউরোপের অংশে। তুরস্কের সীমান্ত ৮টি দেশের সাথে মিলিত। পর্যটন শিল্পের দিক দিয়ে তুরস্ক পৃথিবীবিখ্যাত এবং অন্যতম। আসুন জেনে নিই তুরস্ক সম্পর্কে এমন সব রহস্যময় কিছু তথ্য যা আপনাকে তুরস্ক ভ্রমণে ব্যাকুল করে তুলবে।
১) তুরস্ককে ইউরোপের এশিয়ার সংযোগ সেতু হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দেশটির কিছু অংশ অর্থাৎ মাত্র তিন ভাগ ইউরোপে এবং ৯৭ ভাগ পড়েছে এশিয়ার মধ্যে। তুরস্কের আয়তন সর্বমোট ৭ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫৬ বর্গকিলোমিটার। এটি পৃথিবীর ৩৭ তম বৃহত্তম রাষ্ট্র। ২০১৬ এর আদমশুমারি অনুযায়ী তুরস্কের জনসংখ্যা হল ৭ কোটি ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার ৬৬৩। পরিসংখ্যান অনুযায়ী তুরস্কের ৯৬.৫ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মাবলম্বী, ০.৩ শতাংশ লোক খৃষ্টান এবং ৩.২ শতাংশ লোক অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
২) তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা, তবে তুরস্কের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ শহর হল ইস্তাম্বুল। ১৯২৩ সালে আঙ্কারাকে তুরস্কের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তুরস্কের মুদ্রার নাম হল তুর্কি লিরা। এক তুর্কি লিরা সমান বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৭ টাকা ২৬ পয়সা। গাজী মোস্তফা কামালকে আধুনিক তুরস্কের জনক বলা হয়। তিনি ১৮৮১ সনে গ্রিসে জন্মগ্রহণ করেন। জানা যায় তার পিতা-মাতা তুরস্কের আনাতোলিয়া অংশের বাসিন্দা ছিলেন।
৩) আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের পর তুরস্কে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহারকারী রয়েছে।
৪) ইস্তাম্বুলে ক্যাপলিক্যারসি নামে একটি বাজার রয়েছে। যাকে গ্রান্ড বাজারও বলা হয়। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় আউটডোর মার্কেট। মার্কেটটির মধ্যে ৬৪টি গলি ৪ হাজার দোকান ও ২৫ হাজারেরও বেশি কর্মচারী রয়েছে। এছাড়াও এটি বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন মার্কেটগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১৫ শতাব্দীতে আক্রমনকারী সুলতান মোহাম্মদের আদেশক্রমে তৈরি করা হয়েছিল।
৫) সান্তাক্লজ, যিনি সেন্ট নিকোলাস হিসেবে পরিচিত। তার জন্ম তুরস্কের পাঠারা শহরের লাইসিয়াতে হয়েছিল।
৬) তুরস্কের প্রায় ৯৭ ভাগ জনগণ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও তুরস্ককে কখনো সরকারিভাবে মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তুরস্ক ১৯২৭ সাল থেকে সরকারিভাবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।
৭) তুরস্কের সবচেয়ে প্রাচীন মানব নির্মিত শহরটি হচ্ছে, ক্যাটালহুয়ুক, যেটির অস্তিত্ব আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০০ থেকে ৫৭০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। ২০১২ সালের জুলাইতে এটিকে বিশ্বের ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে ঘোষণা দেয় ইউনেস্কো। তুরস্ক বিশ্বের ৬ষ্ঠ জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। ২০১৩ সালে দেশটিতে সাড়ে তিন কোটিরও বেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ এসেছিলেন। তুরস্কের গোবেকলি টেপেতে ১৯৯৪ সালে খনন কাজ চলাকালে ৩৫টিরও বেশি প্রাচীন কিছু পাথর পাওয়া যায়। যেগুলোকে ভূতাত্বিকরা পৃথিবীর সর্বপ্রথম মন্দিরের অংশবিশেষ হিসেবে উল্লেখ করেন। এই পাথরগুলো ১৩ হাজার বছরের পুরনো বলে উল্লেখ করেন। এই গোবেকলি টেপেকে ২০১৮ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করে।
৮) তুর্কিরা প্রচুর চা পান করেন। অধিকাংশ তুর্কি প্রতিদিন দশ কিংবা তারও বেশি কাপ চা পান করেন। চা উৎপাদনে তুরস্ক বিশ্বে পঞ্চম স্থানে রয়েছে।
৯) পৃথিবীর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্য এফেসাস এবং হেলিকারনেসাসও এই তুরস্কে অবস্থিত। ইতিহাসের জনক হেরোডোটাস এর জন্ম এই হেলিকারনেসাস শহরের হয়েছিল। মনে করা হয়, এফেসাসের দক্ষিণ অবস্থিত একটি ঘরে স্বয়ং কুমারী মেরি (মুসলিমরা যাকে মরিয়ম আলাইহিসসাল্লাম হিসেবে জানেন) বসবাস করতেন।
১০) তুর্কি নারীরা দেখতে অনেক সুন্দর হয়। এজন্য তুর্কি মেয়েদেরকে ফটোজেনিক হিসেবে মনে করা হয়।
১১) সমুদ্র সৈকতের দিক দিয়ে তুরস্ক পৃথিবীর তৃতীয় তম। তুরস্কে ৩৮৩টি এমন সমুদ্র সৈকত রয়েছে যেগুলো পেয়েছে ‘ব্লু প্লাক’ অ্যাওয়ার্ড। পরিষ্কার-পরিছন্নতা, পানির স্বচ্ছতা এবং উন্নত আবহাওয়া বিবেচনা করে আন্তর্জাতিকভাবে এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
১২) তুর্কিরা খুবই দেশ প্রেমিক হয়। তুরস্কের অলিতে-গলিতে অসংখ্য তুর্কি পতাকা তার প্রমাণ।
তুরস্কের সবচেয়ে বড় এবং জনপ্রিয় শহর ইস্তাম্বুল। যেটি এশিয়া এবং ইউরোপ দুই মহাদেশের উপরে অবস্থিত। ইস্তাম্বুলের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি ১৪ লাখ। এ জন্য ইস্তাম্বুল ইউরোপের সবচেয়ে বড় শহর এবং পৃথিবীর সপ্তম বৃহত্তম শহর। ইস্তাম্বুলের পূর্ব নাম কনস্টান্টিনোপল, এছাড়া এটি বাইজান্টিয়াম নামেও পরিচিত ছিল।
১৩) ইউরোপের অধিকাংশ দেশের পূর্বে তুরস্কের মহিলাদের ভোটাধিকার প্রদান করা হয়। দেশটির রাজনীতিতে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান।
১৪) তুরস্ক পৃথিবীর শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। বর্তমানে তুরস্ক পৃথিবীর অষ্টম শক্তিধর রাষ্ট্র। ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে তুরস্কের প্রতিরক্ষা বাহিনী হচ্ছে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
১৫) জীববৈচিত্রের দিক দিয়ে তুরস্কে পৃথিবীর অন্যতম। দেশটিতে প্রায় ৯ হাজার প্রজাতির ফুল পাওয়া যায়। পাখিদের প্রজাতিও তুরস্কে অনেক বেশি, তুরস্কে প্রায় ৮০ হাজার প্রজাতির জীবজন্তু রয়েছে। তুরস্ক ট্যুরিজমের জন্য অনেক বিখ্যাত একটি দেশ। প্রতিবছরই পৃথিবীর টপ টেন টুরিস্ট ডেস্টিনেশনে থাকে তুরস্কের নাম।