হিমালয় রিপোর্টঃ মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে বিশ্বের বৃহৎ যে কারাগার তৈরি করেছে চীন, সেখানে বন্দী শুধুমাত্র মুসলিমরাই। উইঘুর মুসলিমদের জন্য পৃথিবীর বৃহৎ এই বন্দীশিবির বানিয়েছে দেশটি। শিনজিয়াং প্রদেশের আঞ্চলিক রাজধানী উরুমচির কাছেই দাবাংচেং-এ এরকম একটি শিবিরে সম্প্রতি ব্যাপক সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এই শিবিরটিতে কমপক্ষে এগারো হাজার বন্দীকে রাখা যাবে। খবর বিবিসি’র।
২০১৫ সালেও যা ছিল একটা ফাঁকা জায়গা, দাবাংচেং-নামক সে জায়গাটি এখন আর আগের মত নেই। তিন বছর পরে একই জায়গার উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে সেখানে এক বিশাল দেয়াল-ঘেরা স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।এর চারদিকে দু কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল, রক্ষীদের জন্য তৈরি হয়েছে ১৬টি চৌকি। ভেতরে গড়ে উঠছে অনেকগুলো বিশাল বিশাল চারতলা ভবন।
বিবিসির জন সাডওয়ার্থ একটি হোটেলের মালিককে প্রশ্ন করেছিলেন, ১৬টি প্রহরী-চৌকি ওয়ালা ওই স্থাপনাটা কি? তিনি জবাব দিয়েছেন, ‘এটা একটা সংশোধনমুলক স্কুল। সেখানে হাজার হাজার লোক আছে। তাদের চিন্তা-ভাবনায় কিছু সমস্যা আছে।’
শিনজিয়াংএ উইগুরদের সংখ্যা ১ কোটিরও বেশি। তাদের সাথে মধ্য এশিয়ার জনগোষ্ঠীরই মিল বেশি, চীনের সংখ্যাগরিষ্ঠ হান জনগোষ্ঠীর সাথে তাদের সংস্কৃতির অনেক তফাৎ। এসব সংশোধনী স্কুলের নিজস্ব পোশাক আছে। ছাত্রীদের কারো মাথায় হিজাব নেই।
গত এক দশকে শিনজিয়াং-এ দাঙ্গা, আন্ত-সম্প্রদায় সহিংসতা, আক্রমণ এবং পুলিশী ব্যবস্থার কারণে এখানে শত শত লোক নিহত হয়েছে। বেজিংএর তিয়ানআনমেন স্কোয়ারে একটি আক্রমণের ঘটনায় দুজন এবং কুনমিংএর উইগুরদের ছুরিকাঘাতে ৩১ জন নিহত হবার দুটি ঘটনা চীনের শাসকশ্রেণীকে উদ্বিগ্ন করে তোলে।
এর পর শিনজিয়াংএর নানা রকম বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। ইসলামী রীতিনীতি পালন – যেমন পুরুষদের দাড়ি রাখা, মহিলাদের হিজাব পরা, শিশুদের ধর্মশিক্ষা, বা ইসলামী শোনায় এমন নাম রাখা – এগুলো সীমিত করতে নানা আইনী পদক্ষেপ বলবৎ হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের রোজা রাখা বা মসজিদে যাওয়া নিষিদ্ধ।
এদিকে, মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ক্যাম্পের মূল উদ্দেশ্য হলো মুসলিমদের প্রেসিডেন্ট শি চিন পিংয়ের অনুগত করা এবং তাদের বিশ্বাস ত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ করা।
সম্প্রতি চীনে সংখ্যালঘু উইগর মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে চীনা সরকারের তীব্র সমালোচনা হচ্ছে। গত অগাস্ট মাসে জাতিসংঘের একটি কমিটি জানতে পেরেছে যে ১০ লাখের মতো উইগর মুসলিমকে কয়েকটি শিবিরে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এসব ক্যাম্পে তাদেরকে ‘নতুন করে শিক্ষা’ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বেইজিং সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
কিন্তু একইসাথে শিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসকারী লোকজনের ওপর চীন সরকারের নিপীড়নমূলক নজরদারির তথ্যপ্রমাণ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
চীন থেকে পালিয়ে আসা উইঘুর মুসলিমরা বলছেন, উইঘুর বন্দিদের জোর পূর্বক ইসলামী অনুশীলন ছাড়তে এবং অন্য যেকোন ধর্মীয় সংস্কৃতি বিশেষ করে হানদের সংস্কৃতি মেনে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
উইঘুরদের ওপর নির্যাতনের তদন্ত করতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ১০০ জনের বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে যাদের আত্নীয় স্বজন জিনজিয়ান থেকে গুম হয়েছে।
সাক্ষাৎকার প্রদানকারী ব্যক্তিরা মনে করছেন, নিখোঁজ ব্যক্তিদের কথিত শিক্ষাকেন্দ্রে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
চীন প্রশাসনের কর্তা ব্যাক্তিদের অনেকেই উইঘুর প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন এবং কেউ কেউ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, বন্দী শিবিরে যারা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলছেন না তাদের ওপর কঠোর নির্যাতন করা হচ্ছে।