মার্কিন পরিচালক জেমস ক্যামেরনের ‘অ্যাভাটার’ সর্বকালের সবচেয়ে সফল ছবি হিসেবে নিজের জায়গা করে নিয়েছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে মুক্তি পাওয়া হলিউডের এই ছবিটির সিক্যুয়েলের অপেক্ষায় এখনও দিন গুনছেন সিনেমাপ্রেমীরা।
বক্স অফিসের বিচারে হলিউডের সবচেয়ে সফলতম এই ছবিটিতে দেখানো হয়েছে দারুণ দরুণ সব অ্যানিমেশন। ছবির বেশ কয়েকটি দৃশ্যে স্তম্ভের মতো লম্বা লম্বা অদ্ভুত ধরনের দৃষ্টিনন্দন পাহাড় নিশ্চয়ই দেখেছেন? ছবিতে এগুলোকে ‘প্যান্ডোরার পাহাড়’ বলা হয়েছে। বিচিত্র এই অঞ্চলটি দেখে প্রথমে ভিন গ্রহের কথাই মনে আসবে।
কিন্তু জেনে অবাক হবেন যে, ভিন গ্রহে তো নয়ই, এমন পাহাড়ে ঘেরা বিচিত্র অঞ্চল, এমন স্তম্ভের মতো লম্বা লম্বা অদ্ভুত দর্শন পাহাড় রয়েছে পৃথিবীর বুকেই। এবং তা এশিয়া মহাদেশেই। বাস্তবের এই প্যান্ডোরার পাহাড় রয়েছে চীনের হুনান প্রদেশের ঝাংজিয়াজিতে।
চীনের ঝাংজিয়াজিতে রয়েছে তিয়ানজি পর্বতমালা। বিখ্যাত হলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক জেমস ক্যামেরন এই তিয়ানজি পর্বতমালাকে দেখেই প্যান্ডোরার পাহাড়গুলোর নকশা তৈরি করেছিলেন তার ‘অ্যাভাটার’ ছবির জন্য। তিয়ানজি—এই চীনা শব্দটির অর্থ হলো স্বর্গের পুত্র। চতুর্দশ শতকের চীনা তুজিয়া আদিবাসীর নেতা শিয়াং ডাকুনুর নামানুসারে এই পর্বতমালার নাম তিয়ানজি হয়েছে। শোনা যায়, শিয়াং ডাকুনুর ডাক নাম ছিল ‘তিয়ানজি’।
স্তম্ভের মতো দেখতে এই পাহাড়গুলোর সর্বোচ্চ স্তম্ভটির উচ্চতা ১২১২ মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওই স্তম্ভটির উচ্চতা ৪১৪০ মিটার। অদ্ভুত গঠনের জন্য এগুলোকে পাহাড়ের পরিবর্তে ‘স্তম্ভ’ হিসেবে উল্লেখ করেন ভূতত্ত্ববিদরা। স্তম্ভের মতো দেখতে এই পাহাড়গুলো কোয়ার্টজ স্যান্ডস্টোন দিয়ে তৈরি। বছরের পর বছর ধরে পাথরের ওপর পলি জমে এখানে পাইন গাছ জন্মানোর উপযু্ক্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পাহাড়ের গায়ে পাইন গাছের জঙ্গল দেখা যায় এই অঞ্চলে।
শীতকালে এই অঞ্চলটি পুরু বরফের চাদরে ঢেকে যায়। পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এই অঞ্চলে ২০৮৪ মিটারজুড়ে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে। ‘অ্যাভাটার’ ছবি মুক্তির পর এই অঞ্চলটি দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে ওঠে।
প্রতি বছর প্রায় তিন কোটি পর্যটক এই অঞ্চলে আসেন প্যান্ডোরার পাহাড়গুলোর টানে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে, প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে এই জায়গাটিতে ছিল সমুদ্র।