আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ:
দরজা খুলে দেওয়া হলো। দুটি মুরগি বের হয়ে এল। একটির গায়ের রং বাদামি। তার পেছন পেছন দৌড়ে গেল একটি ছানা। আরেকটির রং কালো। তার পেছন পেছন দৌড় দিল তিনটি ছানা। মোট চারটি ছানা দুটি মুরগির সঙ্গে ভাগ হয়ে গেল। গলার ভেতরে একধরনের শব্দ করে কালো মুরগিটি নরম ঘাসের ডগায় ঠোকর দিল। ছানা তিনটিও তা-ই করল। অন্য মুরগিটি যা করল, তার সঙ্গের ছানাটিও তা-ই করল। দুটি মুরগিই তাদের ছানাদের কাছে কাউকে ঘেঁষতে দিচ্ছে না। কাছে গেলে তেড়ে আসছে ঠোকর দিতে। মুরগি দুটি বুঝতে পারছে না একটু বড় হলেই ছানাগুলো পর হয়ে যাবে। চেহারাও বদলে যাবে। তখন হয়তো মুরগি বুঝবে এরা আসলে ময়ূরছানা। তারপর মুরগি একদিকে যাবে, ছানারা আরেক দিকে। তবে ১৭ ও ১৫ দিন বয়সী এই ছানারা এখনো মুরগি মায়ের ভীষণ ভক্ত।
ময়ূরের এই চারটি ছানা ফুটেছে রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এ কে এম হাফিজ আক্তারের বাংলোয়। একটি ছানার বয়স ১৭ দিন, আর তিনটির ১৫ দিন।
রাজশাহীর ডিআইজির বাংলোয় গৃহপালিত এক জোড়া ময়ূর রয়েছে। প্রথমবার ময়ূরী ডিম দিয়েছে ১৬টি, দ্বিতীয়বার ১৪টি আর শেষবার ১৬টি। প্রথমবার ময়ূর নিজেই ঠোকর দিয়ে ডিম নষ্ট করে ফেলেছে। ডিআইজির কর্মচারীরা পরেরবার ময়ূরের ডিমের দিকে নজর রাখেন। ডিম দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ডিম সরিয়ে নিয়েছেন। মুরগির পেটের নিচে দিয়ে বাচ্চা ফোটানো হয়। তিনটি ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। কয়েক দিন পরই বাচ্চাগুলো মারা যায়। এবার একটি মুরগির পেটের নিচে একটি এবং আরেকটি মুরগির পেটের নিচে তিনটি ছানা ফুটেছে। ছানাগুলো এখনো ভালো আছে।
ডিআইজির বাংলোয় একটি ঘরে দুটি মুরগির সঙ্গে রয়েছে ছানাগুলো। আর অপর পাশে একটি ঘরে ময়ূর-ময়ূরী। গৃহপালিত ময়ূর দুটি গাজীপুরের এক ব্যক্তি তাঁকে উপহার দিয়েছিলেন। ডিআইজি জানান, ভারতে প্রকৃতিতে ময়ূর আছে কিন্তু বাংলাদেশে নেই। তাঁর ইচ্ছা, ময়ূরছানাগুলো বড় হলে তিনি পর্যায়ক্রমে বাচ্চা ফোটাবেন। তারপর দেখবেন, এদের প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া যায় কি না।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যত ময়ূর আছে, সবই গৃহপালিত। প্রায় এক হাজার বছর আগেই ময়ূর ঘরে পালা শুরু হয়েছে। গৃহপালিত ময়ূর প্রকৃতিতে টিকতে পারবে না। সে তার শত্রু চিনবে না, খাবার খুঁজে পাবে না। ফলে এক দিনও বাঁচতে পারবে না। এ জন্য বন্য পাখি যেমন খাঁচায় বন্দী করে রাখা অন্যায়, তেমনি গৃহপালিত পাখিও প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়া অন্যায়।’