উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

কতকাল আর পরাধীন থাকবে কাশ্মীরের জনগণ?

জম্মু ও কাশ্মীরকে স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ মর্যাদা দেওয়া ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারাটি বাতিল করেছে দেশটির সরকার। গত ৫ আগস্ট ভারতের প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ এক প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডারের মাধ্যমে মুসলিম-অধ্যুষিত রাজ্যটির বিশেষ সুবিধা দেওয়া সাংবিধানিক আইনটি বাতিল করেন। এ ছাড়াও জম্মু কাশ্মীর রাজ্যকে ভেঙে দুই টুকরো করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জম্বু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে আলাদা করা হয়েছে। নতুন দুটি অঞ্চলেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের মাধ্যেমে কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থাকবে। তবে জম্বু কাশ্মীরের জন্য আলাদা বিধানসভা রাখার কথা বলা হলেও লাদাখের বিধানসভা থাকবে না বলে জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতির এই ঘোষণার আগেই, রবিবার রাত থেকেই রাজ্যের ফারুক-ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুখতি, সাজ্জাদ লোনসহ অন্যান্য গুরত্বপূর্ণ নেতাকে গৃহবন্দী করা হয়। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা, জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা ও কারফিউ।

মুসলিম-প্রধান কাশ্মীরের চরিত্র বদলানোই মূল লক্ষ্য: মুসলিম-গরিষ্ঠ কাশ্মীরের ‘ডেমোগ্রাফি’ বা জনসংখ্যাগত চরিত্র বদলে দেওয়াই সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি না, তা নিয়ে এখন তীব্র বিতর্ক দানা বাঁধছে। ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বা তাদের পুরনো অবতার জনসঙ্ঘ অবশ্য বহু বছর ধরেই ভারতীয় সংবিধানের এই বিতর্কিত ধারাটি বিলোপ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। বিজেপির বক্তব্য ছিল, কাশ্মীর যাতে সম্পূর্ণভাবে ভারতের সাথে সংযুক্ত বা ‘আত্মীকৃত’ হতে পারে সে জন্যই এই ধারাটি বিলোপ করা দরকার। স্বাধীনতার সাত দশক পর ভারতে একটি বিজেপি সরকার অবশেষে তাদের এই বহু পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাটি বাস্তবায়ন করল। উপত্যকা এই মুহূর্তে থমথমে। বিশ্ববাসীর চোখ এখন কাশ্মীরে, কী হবে ভারতের সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের পরিণাম? এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কাশ্মীর নিয়ে কেন এতো সংঘাত, কী তার ইতিহাস?

কাশ্মীরের ইতিহাস: পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত কাশ্মীরে হিন্দুধর্ম ও পরবর্তীতে বৌদ্ধধর্ম প্রভাব বিস্তার করে। নবম শতাব্দীতে গিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় শৈব ধর্মের উত্থান ঘটে। ১৩৩৯ সালে প্রথম মুসলিম শাসক শাহ মীরের হাত ধরে কাশ্মীরে ইসলামে বিস্তার হতে থাকে। এ সময় অন্যান্য ধর্মের প্রভাব হ্রাস পেলেও তাদের অর্জনসমূহ হারিয়ে না গিয়ে বরং মুসলিম অনুশাসনের সঙ্গে মিশে কাশ্মীরি সুফিবাদের জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে ১৮১৯ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ৫০০ বছর মুসলিমরা কাশ্মীর শাসন করে। ১৮১৯ সালের শেষাংশে রঞ্জিত সিংহের নেতৃত্বে শিখরা কাশ্মীর দখল করে। ১৮৪৬ সালে কাম্মীরের তৎকালীন রাজা ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে গেলে রাজ্যটি ইংরেজদের হস্তগত হয়। তবে একটি চুক্তির মাধ্যমে গোলাব সিংহ ব্রিটিশদের কাছ থেকে ৭৫ লাখ রুপি এবং সামান্য বার্ষিক চাঁদার বিনিময়ে কাশ্মীর ক্রয় করেন এবং নতুন শাসক হন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত গোলাপ সিংহের বংশধরেরাই কাশ্মীর শাসন করেছেন।

রাজনৈতিক দ্বদ্বের সূচনা: ১৯২৫ সালে কাশ্মীরের রাজা হন হরি সিংহ এবং ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়া পূর্ব পর্যন্ত তিনিই ছিলেন কাশ্মীরের শাসক। ভারত বিভাগের অন্যতম শর্ত ছিল, ভারতের দেশীয় রাজ্যের রাজারা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দিতে পারবেন। আবার তারা যদি চান স্বাধীন থেকেও নিজেদের শাসনকাজ পরিচালনা করতে পারবেন। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে, হরি সিংহ ছিলেন হিন্দু রাজা, তিনি চাইছিলেন ভারতের সঙ্গে থাকতে। কিন্তু কাশ্মীরের জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশই ছিল মুসলিম। জনগণের বিরাট একটি চাইছিল পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিতে। এমনই এক দোলাচলে ১৯৪৭ সালের ২২ অক্টোবর পাকিস্তান সমর্থিত পাকিস্তানের পশতুন উপজাতিরা কাশ্মীর আক্রমণ করে। ঘটনায় হরি সিংহের সঙ্গে পশতুনদের যুদ্ধ শুরু হলে কাশ্মীরের রাজা ভারতের তৎকালীন গভর্নর-জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সহায়তা চান। বিনিময়ে হরি সিংহ ২৬ অক্টোবর এমন একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে যে তাতে উল্লেখ ছিল, হরি সিংহ ভারতের সঙ্গে যোগ দেবেন। চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরই ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরে প্রবেশ করে। অপরদিকে কাশ্মীরের পাকিস্তান প্রান্ত দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য প্রবেশ করে। প্রায় চার বছর যুদ্ধ চলার পর ১৯৫২ সালে জাতিসংঘ যুদ্ধ বিরতি হয়। যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব অনুসারে কাশ্মীর থেকে উভয় দেশের সৈন্য প্রত্যাহার ও গণভোটের আয়োজনের কথা বলা হয়। ভারত প্রথমে সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হলেও গণভোট আয়োজনে অসম্মত হয়। ভারতের ধারণা ছিল, মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মীরে গণভোট দিলে তারা পাকিস্তানের পক্ষেই যোগ দেবে। অন্যদিকে পাকিস্তানও কাশ্মীর থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে রাজি হয় না। ফলে উভয় দেশেই তথন থেকে কাশ্মীরে সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। পরবর্তী সময়ে কাশ্মীর নিয়েই ১৯৬৫ সালে এবং ১৯৯৯ সালে দুই দেশের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয়।
জনসংখ্যা: ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের জনসংখ্যা হল ১,২৫,৪১,৩০২ জন। রাজ্যের অধিকাংশ জনসংখ্যাই মুসলিম সম্প্রদায় নিয়ে গঠিত। ইসলাম ধর্মের প্রাধান্য থাকলেও, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং শিখ সম্প্রদায়ের মানুষও এই রাজ্যে রয়েছে। হিন্দুরা আবার বিভিন্ন দলে বিভক্ত- যেমন রাজপুত, ব্রাহ্মণ, জাট্ এবং ক্ষত্রিয়। কাশ্মীর উপত্যকায় আর এক সম্প্রদায় রয়েছে, যারা কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ বা কাশ্মীরি পন্ডিত নামে পরিচিত। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অনুমান অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরি পন্ডিতেরা রাজনৈতিক উত্তেজনা, দাঙ্গা ও অর্থনৈতিক কারণে ব্যক্তিগতভাবে বাস্তুচ্যূত হয়েছেন।
ভৌগোলিক অবস্থান: রাজ্যটি ৩৯৫ মিটার থেকে ৬৯১০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার জলবায়ু বৈচিত্র্যময়, যার প্রধান কারণ হল এখানকার রূঢ় অসমতল ভূসংস্থান। বাইরের পার্বত্যময় ও সমতল এলাকায় বৃষ্টিপাতের জন্য গ্রীষ্মকালে এখনে জলবায়ু হালকা থাকে। আর্দ্রতা বোঝাই বাতাস উচ্চ শিখরে আছড়ে পড়ায় এখানকার তাপমাত্রা নীচের দিকে নেমে আসে। বাইরের সমতলের চেয়ে উচ্চতর উচ্চতায় অবস্থিত হওয়ায় উপত্যকার জলবায়ু বেশ শীতল হয়। শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় বাতাস এই উপত্যকায় তুষারপাতের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গ্রীষ্মকাল এখানে হালকা এবং স্বল্পমেয়াদী তথা শীতকাল শীতল এবং শুষ্ক। ক্রমবর্ধমান উচ্চতার সঙ্গে এখানে ঠান্ডার মাত্রাও বাড়তে থাকে এবং স্বাভাবিকভাবেই উচ্চতর পর্বতশৃঙ্গ গুলিতে তুষারপাতও হতে থাকে।
ভাষা: জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের প্রধান কথ্য ভাষাগুলি হল কাশ্মীরি, উর্দূ, পাহাড়ী, ডোগ্রি, বালতি, গোজরি, লাদাখি, শিনা এবং পাশতো। যাইহোক, ফারসীতে লেখা উর্দূ হল জম্মু ও কাশ্মীরের সরকারি ভাষা।
শিক্ষা: ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী, জম্মু ও কাশ্মীরের সাক্ষরতার হার হল ৬৮.৭৪ শতাংশ। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থা বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত রয়েছে- প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়। রাজ্যের পাবলিক ও বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি হয় জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ (জে.কে.বি.ও.এস.ই) অথবা কেন্দ্রীয় মধ্য শিক্ষা পর্ষদ (সি.বি.এস.ই) দ্বারা অনুমোদিত। এখানে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেমন- শ্রীমাতা বৈষ্ণোদেবী বিশ্ববিদ্যালয়, গভর্নমেন্ট কলেজ অফ ইঞ্জিনীয়ারিং আ্যন্ড টেকনোলোজি এবং ইসলামিক ইউনিভারসিটি অফ সায়্যন্স আ্যন্ড টেকনোলোজি ইত্যাদি।
জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন: কাশ্মীর উপত্যকা ভূস্বর্গ হিসাবে বর্ণিত। রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলি হল- শ্রীনগরে অবস্থিত চশমা শাহী প্রস্রবণ, শালিমার বাগ, ডাল লেক ইত্যাদি; উপত্যকায় অবস্থিত গুলমার্গ, পাহেলগাম, সোনমার্গ ইত্যাদি; জম্মুর কাছে বৈষ্ণোদেবী মন্দির এবং পাটনীটপ ইত্যাদি। ১৯৮৯ সালের বিদ্রোহের আগে কাশ্মীরি অর্থনীতিতে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এই সময়ের পরে পর্যটন ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। বর্তমানে, রাজ্যে হিংসা কম হওয়ার জন্য পর্যটনের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। ২০১১ সালে, লাখেরও বেশি পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীর পরিদর্শন করতে এসেছিলেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের হোটেল: রাজ্যে পর্যটকদের চাহিদা অনুযায়ী তারকা ও তারকাহীন হোটেল রয়েছে। এখানে অনেক রিসর্ট, রেস্টুরেন্ট এবং ক্যাফে রয়েছে যেগুলি ভ্রমণার্থীদের সমস্ত প্রকারের চাহিদা পূরণ করে। জম্মু ও কাশ্মীরের হোটেলগুলি অতিথিদের উচ্চ মানের সুবিধা প্রদান করে এবং তাদের সর্ব্বোচ্চ সন্তুষ্টির জন্য সহায়তা করে। জম্মু-কাশ্মীরে পর্যটকেরা বিভিন্ন বাজেটের হোটেলে একটি ঘর অতি সহজেই পেতে পারেন।
পরিবহন: জম্মু ও কাশ্মীর ভ্রমণ খুব একটা কঠিন নয়, বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে এখানে পৌঁছানো যায়। আকাশ পথে, বিমান মাধ্যমে অন্যান্য শহর থেকে এই রাজ্যে পৌঁছানো যায় শ্রীনগর এবং লেহ বিমানবন্দর দ্বারা। রাজ্যের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত রেলপথ, উধমপুরে গিয়ে শেষ হয়েছে এবং সেখান থেকে যে কেউ বাস বা অন্যান্য যানবাহন নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছতে পারেন। সড়কপথে দুটি ভিন্ন রাস্তার মাধ্যমে, এই রাজ্যে পৌঁছানো যেতে পারে-একটি মানালি হয়ে লেহ পর্যন্ত অথবা জম্মু হয়ে শ্রীনগর পর্যন্ত।
কী চায় ভারত: ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর ভারতের সংবিধানে ৩৭০ ধারা সংযোজিত হয়। ওই ধারা অনুসারে প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক ও যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনো বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। একই সঙ্গে কাশ্মীরে নতুন আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের কোনো ভূমিকা থাকবে না। এ ছাড়া রাজ্যের স্থায়ী অধিবাসী ছাড়া সেখানে জমি ক্রয়, রাজ্যের চাকরিতে আবেদন ইত্যাদিও নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি জম্মু-কাশ্মীরের কোনো নারী রাজ্যের বাইরে কাউকে বিয়ে করলে তিনি সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন। কাশ্মীরবাসীর প্রতি ভারতের সংবিধান যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল নানা অজুহাতে ধীরে ধীরে সেসব রহিত হতে থাকে। ১৯৯০ সাল থেকে ভারতের সেনাসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরিদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের বা ড়াবাড়ি ফলে ১৯৯৮ সালে সেখানে সশস্ত্র বিদ্রোহের জন্ম হয়। এ বিদ্রোহ দমন করতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরো কঠোর অবস্থানে যায়। ফলশ্রুতিতে আরো অশান্ত হয়ে ওঠে কাশ্মীর উপত্যকা। যদিও বলা হয়ে থাকে, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস বরাবরই ৩৭০ ধারা মেনে চলার ক্ষেত্রে তুলনামূলক নমনীয়তা দেখিয়েছে। তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি বিগত নির্বাচনের সময়ই ঘোষণা করেছিল, তারা ক্ষমতায় গেলে ৩৭০ ধারা বাতিল করা হবে। মূলত সোমবার দেশটির রাষ্ট্রপতি বিশেষ আদেশের মাধ্যমে বিজেপির সেই পরিকল্পনাই বাস্তবে রূপ দিলেন। এ বিষয়ে কাশ্মীরের কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ সাংবাদিকদের বলেছেন, “বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ৩৫ (ক) ধারারাও বিলোপ করে দেওয়া হলো। এর মধ্য দিয়ে সরকার জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল। এর পরিণাম ভালো হতে পারে না।”
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের অবস্থান: ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তান মনে করে কাশ্মীর তাদের অংশ হওয়া উচিত এবং এ কারণেই ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের পশতুনরা কাশ্মীর দখলের চেষ্টা চালায়। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের নীতি বুঝতে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টোর জাতিসংঘে দেওয়া এক ভাষণই যথেষ্ঠ। প্রায় ৪২ বছর আগে জুলফিকার আলী ভুট্টো জাতিসংঘে বলেছিলেন, “কাশ্মীর কখনোই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ নয়, বরং এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এক বিতর্কিত ভূখন্ড। আর কাশ্মীরের ওপর পাকিস্তানের দাবি সব সময়ই অনেক বেশি। কারণ রক্তে, মাংসে, জীবনযাপনে, সংস্কৃতিতে কিংবা ভূগোল আর ইতিহাসে তারা পাকিস্তানের মানুষের অনেক কাছের।” ভুট্টোর এই ঘোষণার পর বহু বছর চলে গেছে, দেশটিতে এসেছে বহু শাসক, কিন্তু পাকিস্তানের ওই নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি।
কী চান কাশ্মীরের মানুষ: ৩৭০ ধারা বাতিলের এই সিদ্ধান্তের পরিণাম কী হবে, এখনই তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ, গোটা উপত্যকায় জারি করা হয়েছে কারফিউ, এই মুহূর্তে থমথমে সব কিছু। এর আগে ৩৭০ ধারা বাতিল হতে পারে এমন জল্পনায় রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি কেন্দ্রীয় সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা নষ্ট করে দেওয়া হলে তা দেশের পক্ষে অমঙ্গলজনক হবে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *