মোঃ আরিফুল ইসলাম, বাকৃবি: বর্তমানের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এডিস মশা ও ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা এবং দীর্ঘ হচ্ছে এ রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা। এখন অনেকেই চিন্তা করছেন এ রোগ কি শুধু মানুষেরই হয় নাকি গবাদি পশুও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়। এদিকে সামনে কুরবানির ঈদ। এ নিয়ে তাই চিন্তায় রয়েছেন অনেকে। তবে আশার কথা হচ্ছে গরু বা অন্য কোনো গবাদি পশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় না।
এডিস মশার কামড়ে গবাদি পশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয় না বলে গবাদি পশু কুরবানি করতে ও গোশত খেতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. তাহসিন ফারজানা। তিনি এডিস মশার ওপর পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন। এডিস মশার বংশবৃদ্ধি এবং এর বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবের ওপর ড. ফারজানা ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সময়ে গবেষণা করে জাপানের কানাজাওয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ড. তাহসিন ফারজানা বলেন, ‘ডেঙ্গু রোগ সাধারণত মানুষেরই হয়। এছাড়া বানর প্রজাতি এবং চীনে কুকুরের মাঝেও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু পাওয়া গেছে। তবে গরু, মহিষ, ছাগলসহ অন্য কোনও প্রজাতির পশুর মাঝে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তাই কোন বিভ্রান্তি নয়, কোরবানি করা পশুর গোশত খেতে কোনো বাধা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগ এবং এর বাহক এডিস মশা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান প্রয়োগের মাধ্যমে এডিস মশা ও ডেঙ্গু দুই-ই নির্মূল করা সম্ভব। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য এডিস মশার বংশবৃদ্ধি ও বিস্তার রোধ করতে হবে এবং মশা যেন কামড়াতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এডিস মশা নিধনের জন্য সমন্বিত মশা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
তিনি বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে দুটি দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে- মশার প্রজনন স্থান সমূহকে ধ্বংস করতে হবে এবং বয়স্ক মশা নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মশার প্রজনন স্থান সমূহকে ধ্বংস করতে হলে বাড়িতে এবং আশেপাশে বদ্ধ বা জমানো পানির পাত্র দুই-একদিন পরপর পরিষ্কার করতে হবে। ফুলদানী, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোল, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। অন্যদিকে বয়স্ক মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এবং সরকারি পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
ড. তাহসিন ফারজানা বলেন, এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পেতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। রাত এবং দিনের বেলায়ও ঘুমাতে গেলে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাসাবাড়িসহ আশপাশের এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। জ্বর অনুভব হলেই স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন ড. ফারজানা।