উল্লেখযোগ্য খবর
সম্পাদক পরিষদের বিবৃতি খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত পরিবর্তন নেই স্টাফ রিপোর্টার (১০ মিনিট আগে) ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, বুধবার, ৬:১৪ অপরাহ্ন mzamin facebook sharing button twitter sharing button skype sharing button telegram sharing button messenger sharing button viber sharing button whatsapp sharing button প্রবল আপত্তির মধ্যেই সম্প্রতি আলোচিত ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩’ জাতীয় সংসদে পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। এর মাধ্যমে এই আইনটি সম্পর্কে সম্পাদক পরিষদসহ সংবাদমাধ্যমের অংশীজন এত দিন যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আসছিলেন, সেটা যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রহিত করে নতুন আইনে শাস্তি কিছুটা কমানো এবং কিছু ধারার সংস্কার করা হয়েছে। তাই শুধু খোলস পরিবর্তন ছাড়া সাইবার নিরাপত্তা আইনে গুণগত বা উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এই বিষয়গুলো খর্ব করার মতো অনেক উপাদান এ আইনে রয়েই গেছে। বুধবার পরিষদ সভাপতি মাহফুজ আনাম ও সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৯টি ধারা (৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪৩ ও ৫৩) স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ভীষণভাবে ক্ষতি করবে বলে সংশোধনের দাবি জানিয়েছিল সম্পাদক পরিষদ। এখন সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাতটি ধারায় সাজা ও জামিনের বিষয়ে সংশোধনী আনা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি, বরং তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২১ ও ২৮ ধারা দুটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিপন্থী, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ার ও বিভ্রান্তিকর হিসেবে বিবেচিত হওয়ায় জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর থেকে ধারা দুটি বাতিলের আহ্বান করা হয়েছিল। শাস্তি কমিয়ে এই দুটি বিধান রেখে দেয়ায় এর অপপ্রয়োগ ও খেয়ালখুশিমতো ব্যবহারের সুযোগ থেকেই যাবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আইনটি কার্যকর হলে আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে তল্লাশি, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভারসহ সবকিছু জব্দ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবে পুলিশ। এর মাধ্যমে পুলিশকে কার্যত এক ধরনের ‘বিচারিক ক্ষমতা’ দেয়া হয়েছে, যা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়। বিজ্ঞাপন আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রাখা হয়েছে। সাইবার-সংক্রান্ত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছরের জেল ও কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ চায়, ডিজিটাল বা সাইবার মাধ্যমে সংঘটিত অপরাধের শাস্তি হোক। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তা আইনের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশির ভাগ ধারা সন্নিবেশিত থাকায় এই আইন কার্যকর হলে পূর্বের ন্যায় তা আবারও সাংবাদিক নির্যাতন এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হবে। তাই সাইবার নিরাপত্তা আইনকে নিবর্তনমূলক আইন বলা ছাড়া নতুন কিছু হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না বলে মনে করে সম্পাদক পরিষদ।

সাগরে এলএনজিবাহী জাহাজের ভিড়, সরবরাহ নিয়ে বড় সংকটে সরকার

মুজিব মাসুদঃ সাগরে এলএনজিবাহী (তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) জাহাজের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। সেসব জাহাজে বিশাল গ্যাসের ভাণ্ডার অলস পড়ে আছে। কিন্তু পর্যাপ্ত পাইপলাইন আর সার্ভিসলাইন না থাকায় গ্রাহকদের এই গ্যাস দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রহস্যজনক কারণে দ্রুত পাইপলাইনও নির্মাণ করা হচ্ছে না।

এমনকি শিল্পমালিকরা নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন তৈরির জন্য আবেদন করলেও সে আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না পেট্রোবাংলা। বর্তমানে পেট্রোবাংলার কাছে এ রকম সহস্রাধিক আবেদন পড়ে আছে।

এলএনজিবাহী প্রথম জাহাজ দেশে পৌঁছানোর পর ১৪ জুন সরকারের বিশেষ কমিটির এক সভায় গ্রাহক অর্থায়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ তথা সার্ভিসলাইন নির্মাণের মাধ্যমে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী পেট্রোবাংলাকে দ্রুত একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু গত ৩ মাসেও পেট্রোবাংলার ওই সিন্ডিকেট এই প্রস্তাবনা পাঠাতে পারেননি।

ভুক্তভোগী ও বিশ্লেষকদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, এ রকম পরিস্থিতির সৃষ্টির মাধ্যমে নির্বাচনের বছরে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের রীতিমতো সরকারের বিরুদ্ধে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এটা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ।

তারা মনে করেন, মূলত সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা এ চক্রের ষড়যন্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট মহলের অদক্ষতার কারণে এলএনজির সুফল পেতে এহেন বিলম্ব হচ্ছে। তাদের মতে, আরও আগে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের বিষয়টি অনুধাবন করা উচিত ছিল।

অনেক দেরি হয়ে গেছে। এজন্য দেশের শিল্প সেক্টরসহ সামগ্রিক অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে এখনও সরকারের হাতে যে সময় আছে সেটিকে দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগিয়ে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, তাদের হাতে এখন উচ্চ মূল্যের এলএনজি আছে। শিল্প সেক্টর ছাড়া এই এলএনজি বিক্রি করে লাভবান হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পাইপলাইন বা সার্ভিসলাইন না থাকায় অনুমোদন পাওয়া অসংখ্য শিল্প-কারখানায় গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে দ্রুত এই সার্ভিসলাইন তৈরি করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। একই সঙ্গে যেসব শিল্প গ্রাহক নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণ করতে চাচ্ছে, তাদের অনুমোদনের বিষয়টি সরকারের বিবেচনাধীন আছে। দ্রুত এর সমাধান করতে হবে। কারণ কোনো কোম্পানিকে এখন নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণের অনুমতি দিলেও তাদের কাজ শেষ করতে ৪-৫ মাস সময় লাগবে।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সরকারের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি চক্রের অদূরদর্শিতা, গ্যাস নিয়ে ষড়যন্ত্র আর অদক্ষতার কারণে এলএনজির সুফল ঘরে তোলা যাচ্ছে না। মূল কারণ হচ্ছে, পর্যাপ্ত পাইপলাইন ও সার্ভিসলাইন না থাকা। এতে একদিকে জাহাজ থেকে শত শত কোটি টাকার গ্যাস উড়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে এলএনজি প্রাপ্তির পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে ওঠা সহস্রাধিক শিল্প-কারখানা উৎপাদনে যেতে পারছে না। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ রকম পরিস্থিতিতে নির্বাচনের বছরে এলএনজি নিয়ে সরকারের বিশাল এই সাফল্য হীতে বিপরীত হতে চলছে।

ইতিমধ্যে মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনালে প্রতিটি ৩ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের দুটি বিশাল জাহাজ নোঙর করে বসে আছে। চলতি মাসে এ রকম আরও ৩টি জাহাজ ভিড়ার কথা রয়েছে টার্মিনালে। কিন্তু জানা গেছে, সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পাইপলাইন বা সরবরাহ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে পূর্ণমাত্রায় এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে গ্যাসের ঘাটতিও কমছে না।

অনুমোদন পাওয়া ৪ হাজারের বেশি শিল্পমালিক সব ধরনের অবকাঠামো তৈরি করে গ্যাস সংযোগের প্রতীক্ষায় আছেন। তাদের অপেক্ষার প্রহর দীর্ঘ হচ্ছে। চুক্তি অনুসারে এখন থেকে প্রতি মাসে সর্বোচ্চ তিনটি এলএনজিবাহী জাহাজ বাংলাদেশে আসবে। কাতারের কোম্পানি রাস গ্যাস এটা সরবরাহ করবে।

এ জন্য এলএনজি ব্যবহার দ্রুত বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যন্ত সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগকে এলএনজি ব্যবহার দ্রুত বাড়িয়ে শিল্প সেক্টরের গ্যাস সংকট দূর করার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা!

কথা ছিল গত মার্চ মাস থকে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে এটি ১০০ কোটিতে উন্নীত করা হবে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গত ৭ মাস পরও সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ১০ কোটি ঘনফুট। পাইপলাইন না থাকায় বাকি ৪০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।

বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির অধীনে থাকা হাজার হাজার অবৈধ সংযোগে উচ্চ মূল্যের এলএনজি দিতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। আর এর নেপথ্যের নাটের গুরু খোদ পেট্রোবাংলারই একজন প্রভাবশালী পরিচালক। যিনি এক সময় এই কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।

অভিযোগ আছে, তার আমলেই কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির অধীনে হাজার হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ শিল্প-কারখানাই জামায়াত শিবিরের প্রভাবশালী নেতাকর্মীদের মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।

এমনকি এই প্রভাবশালী পরিচালক অফিসে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পেট্রোবাংলার সিকিউরিটি গার্ডদের নির্দেশ দিয়ে দেন যাতে কোনো সাংবাদিক তার রুমে প্রবেশ না করেন। বৃহস্পতিবার ও রোববারও একইভাবে তার রুমে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা ছিল বলে ওই সিকিউরিটি গার্ড যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, এই প্রভাবশালী পরিচালকের কারণে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহীর (বীরবিক্রম) নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ কমিটির অনুমোদন পেয়েও ৪ হাজারের বেশি শিল্প-কারখানা সার্ভিসলাইন না থাকায় গ্যাস পাচ্ছে না।

শিল্পমালিকরা নিজ উদ্যোগে তাদের কারখানা পর্যন্ত পাইপলাইন বা সার্ভিসলাইন নির্মাণ করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য সরকারের কাছে চিঠি দিলেও পেট্রোবাংলার এই সিন্ডিকেট তাতে কর্ণপাত করছে না।

সূত্র জানায়, ১৪ জুন বিশেষ কমিটির এক সভায় গ্রাহক অর্থায়নে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ তথা সার্ভিসলাইন নির্মাণের মাধ্যমে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানে গ্যাস সংযোগ প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। ওই সভায় জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী পেট্রোবাংলাকে একটি প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।

কিন্তু গত ৩ মাসেও পেট্রোবাংলার ওই সিন্ডিকেট এ প্রস্তাবনা পাঠাতে পারেননি। অভিযোগ আছে, একতরফাভাবে কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানিকে এলএনজি প্রদানের জন্য এ রকম গড়িমসি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার একজন পরিচালক যুগান্তরকে জানান, উপদেষ্টার চাপে ৩ জুলাই পেট্রোবাংলা একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। কিন্তু সেখানে নিজস্ব অর্থায়নে মাত্র ২ কিলোমিটার সার্ভিসলাইন নির্মাণ বিবেচনা করা যেতে পারে বলে জানানো হয়।

অথচ বর্তমানে নিজস্ব অর্থায়নে সার্ভিসলাইন নির্মাণকারী শিল্প গ্রাহকদের আবেদন জমা আছে প্রায় ২ হাজার। যাদের অধিকাংশেরই গ্যাস পেতে হলে ৭ থেকে ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ করা লাগবে। এ অবস্থায় পেট্রোবাংলা থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত পাইপলাইন বা সার্ভিসলাইন তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে প্রস্তুত করা প্রস্তাবনা রহস্যজনক, হাস্যকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ মূল্যের এলএনজি যাতে শিল্প গ্রাহকরা না পায় সেজন্য এই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে এবং নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ীদের সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দিতে এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র শুধু দেশীয় নয়, এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটও জড়িত। এজন্য ওই সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকা খরচ করে জ্বালানি সেক্টরে বড় বড় লবিস্ট নিয়োগ করে রেখেছে বলেও জনশ্রুতি আছে।

মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি সূত্রে জানা গেছে, তারা এখন বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত ভাসমান রিগ্যাসিফিকেশন টার্মিনাল (এফএসআরইউ) থেকে প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু পাইপলাইনের সীমাবদ্ধতায় এখন দৈনিক ১০ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে।

জাতীয় গ্রিডের পাইপলাইন ও বিভিন্ন কোম্পানির অধীনে থাকা ৪ হাজারের বেশি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের আঙিনা পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন বা সার্ভিস লাইন না থাকায় ৪০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দেশে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪১০ কোটি ঘনফুট। পেট্রোবাংলা প্রতিদিন সরবরাহ করতে পারে ২৮০ কোটি ঘনফুট। ফলে দৈনিক ঘাটতি ১৩০ কোটি ঘনফুট।

বিতরণ কোম্পানিগুলো সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম অঞ্চলে বর্তমানে সর্বোচ্চ ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে, যা এলএনজি দিয়ে পূরণ করা সম্ভব। তবে বিতরণ লাইনের সীমাবদ্ধতার কারণে ১০ কোটি ঘনফুটের বেশি নিতে পারছে না। বাকি এলএনজি চট্টগ্রামের বাইরে পাঠাতে হবে।

ঢাকাসহ দেশের অন্য অঞ্চলে এলএনজি নিতে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ চলতি বছরের জুনে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনও তা শেষ হয়নি। ফলে সক্ষমতা সত্ত্বেও পূর্ণমাত্রায় এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। দেশের জ্বালানি ঘাটতিও কমছে না। শিল্পে ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস মিলছে না। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, তারা প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট করেই এলএনজি গ্রিডে দিতে সক্ষম। কিন্তু যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পাইপলাইনের নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় তা আপাতত সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি জানান, চুক্তি অনুসারে চলতি বছর কাতার থেকে ১৫টি জাহাজ এলএনজি নিয়ে বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। রোববার ১ লাখ ৪০ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে দ্বিতীয় জাহাজটি দেশে পৌঁছছে। আগামী সপ্তাহ থেকে এলএনজি সরবরাহ বাড়তে পারে। এ মাসের মধ্যে এলএনজি ৩০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হতে পারে।

দেশের পাইপলাইনে সরবরাহ করা দেশীয় প্রাকৃতিক গ্যাস ও এলএনজি দুটোই একই পদার্থ। সরবরাহের সুবিধার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করা হয়, এটি এলএনজি নামে পরিচিত। মাইনাস ১৬২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রাকৃতিক গ্যাসকে তরল করে এলএনজিতে রূপান্তর করা হয়।

এ তরল গ্যাস বিশেষভাবে নির্মিত জাহাজে আমদানি করা হয়। পরে উচ্চতাপে আবার তা প্রাকৃতিক গ্যাসে পরিণত করে পাইপলাইনে সরবরাহ করা হয়। তখন এটিকে ‘রিগ্যাসিফাইড এলএনজি’ বা ‘আরএলএনজি’ বলে। এলএনজিকে আবার গ্যাসে রূপান্তর করতে দু’ধরনের টার্মিনাল রয়েছে। একটি সমুদ্রে ভাসমান (এফএসআরইউ) এবং অন্যটি স্থলভিত্তিক টার্মিনাল।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) একজন কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের রিং-মেইন পাইপলাইনের দৈনিক সরবরাহ ক্ষমতা ৩৫ কোটি ঘনফুট। তাই চাইলেও পুরো এলএনজি এ অঞ্চলে দেয়া সম্ভব নয়। চট্টগ্রামের বাইরে এ গ্যাস নিতে আনোয়ারা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত পাইপলাইন নির্মাণ শেষ করতে হবে।

৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইনটিকে কর্ণফুলী নদী অতিক্রম (রিভার ক্রসিং) করতে হবে। দু’পাশের পাইপ বসানো শেষ হলেও নদীতে পাইপ বসানোর ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিয়েছে। কয়েকবার রিভার ক্রসিংয়ের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে।

এ লাইন চালু না হওয়া পর্যন্ত এলএনজি সরবরাহ আপাতত চট্টগ্রামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ পাইপলাইনে প্রতিদিন ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করতে পারবে।

জানতে চাইলে জিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন বলেন, তারা আশা করছেন, আগামী মাসেই রিভার ক্রসিংয়ের কাজ শেষ হবে। তখন পূর্ণমাত্রায় এলএনজি সরবরাহ সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, এলএনজি দেয়ায় জাতীয় গ্রিড থেকে চট্টগ্রামকে এখন কম গ্যাস দেয়া হচ্ছে।

আনোয়ারা থেকে শিকলবাহা বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং সিইউএফএল ও কাফকো সার কারখানায় সরাসরি এলএনজি সরবরাহের জন্যও পাইপলাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি হলে এসব প্রতিষ্ঠানে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস দেয়া লাগবে না। এ তিনটি প্রতিষ্ঠানে গ্যাসের চাহিদা একত্রে দৈনিক ১৫ কোটি ঘনফুট।

আগে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে দৈনিক ২০ থেকে ২২ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হতো। বর্তমানে ১০ কোটি ঘনফুট এলএনজিসহ দৈনিক ২৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। অর্থাৎ এলএনজি আসার পর জাতীয় গ্রিড থেকে প্রায় পাঁচ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে চট্টগ্রামে।

এলএনজি থেকে পাওয়া গ্যাস জাতীয় গ্রিডে নিতে মহেশখালী থেকে চট্টগ্রামের আনোয়ারা পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সাগরে সামিট গ্র“প আরেকটি ভাসমান টার্মিনাল বসাচ্ছে। এপ্রিলের মধ্যে এটি সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তখন দৈনিক আরও ৫০ কোটি ঘনফুট গাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

বাড়তি গ্যাস সরবরাহের জন্য বর্তমান পাইপলাইনের সমান্তরাল ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের আরেকটি পাইপলাইন (মহেশখালী থেকে আনোয়ারা) স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে গত বছর। ৭৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ পাইপলাইন স্থাপনে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৫ শতাংশ।

এদিকে এলএনজি আমদানি শুরুর পর সরকার সংকুচিত শিল্পকারখানার গ্যাস সংযোগ আবার উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একই সঙ্গে যেসব শিল্পকারখানার আঙিনা পর্যন্ত সার্ভিস লাইন নেই সেখানেও সার্ভিস লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে দেয়া হবে। কাজেই তখন উচ্চমূল্যের এলএনজি ক্রয় করার মতো শিল্প গ্রাহক পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। তাই এখন থেকে যেসব শিল্প মালিক নিজ উদ্যোগে সার্ভিস লাইন নির্মাণ করতে আগ্রহী তাদের দ্রুত অনুমতি দেয়া উচিত। কেননা এ ধরনের একটি সার্ভিস লাইন নির্মাণ করতেও বেশ সময় লাগে।




Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *