মো: পিয়া সরকার : মধু মাসে আমরা কি খাচ্ছি- ফল খাচ্ছি, না বিষ খাচ্ছি? প্রবাদ আছে, ফলের রাজা আম। আর জাতীয় ফল কাঁঠাল । জাতীয় ফল আর ফলের রাজার মাসকে মধু মাস বলা হয়। মধু মাস বলতে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয় ফল পাকা, বাজারে আসে রকমারি ফল হরেক রকমের মৌসুমি ফলে চেয়ে যায় দোকান গুলো এ জন্যই চৈত্র ও জৈষ্ট মাসকে বলা হয় মধু মাস। শুধু আম-কাঁঠালই নয়, মধু মাসে লিচু, আনারস, কলা, পেঁপেসহ বিভিন্ন জাতের ফলফলাদির বাজারগুলো সয়লাব হয়ে যায় বাহারী মৌসুমি ফলে।
বিভিন্ন ভিটামিনযুক্ত এ ফল খেয়ে আমরা যেমন ভিটামিনের অভাব পূরণ করি, তেমনি সুস্বাদু হিসেবেও ফল খেয়ে থাকি। কিন্তু বিজ্ঞানের যুগে এসে মধু মাসে আমরা কি খাচ্ছি- ফল খাচ্ছি, না বিষ খাচ্ছি? মৌসুমি এ ফলের প্রতি মানুষ যেন আস্থা হারিয়ে ফেলছে। বাজারে গিয়ে আম, জাম, লিচু কিনতে গিয়ে ভয় পায় মানুষ। সুস্বাদু ফল যদি হয় বিষ, তাহলে আমরা যাব-ই বা কোথায়? পূর্বপুরুষদের মুখে শুনেছি, এ মধু মাসের নাম। তাহলে কি আধুনিকতার ছোয়া এ যুগে এসে মধু ফলের নাম মুছে যাচ্ছে!
চিকিৎসকদের মুখে শুনেছি, মানুষের মৃতদেহ সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়। সেই ফরমালিন এখন ব্যবহার করা হয় খাদ্যদ্রব্যে; যা আমাদের জন্য মৃত্যুর ঝুঁকিতুল্য। মাছে ফরমালিন দিয়ে বিক্রি করা হয়, যাতে মাছে পচন না ধরে। মাছ পচনবিহীন দীর্ঘদিন রাখা যায় বলে ফরমালিনযুক্ত মাছ বিক্রি করা হয়। দেশে কয়েক বছর ধরে ফরমালিনযুক্ত মাছ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে। দেশে ফরমালিনযুক্ত মাছের প্রতি যখন নজরদারি বৃদ্ধি পায়, তখন অসৎ ব্যবসায়ীরা বিকল্প পদ্ধতি বের করে। অর্থাৎ বরফের সঙ্গে ফরমালিন যুক্ত করে মাছ বিক্রি করছে। বরফ তৈরির কারখানগুলোয় পানিতে ফরমালিন মেশানো হয়। প্রশাসনিক নজরদারির কারণে বিকল্পভাবে ফরমালিনযুক্ত করছে মাছে। প্রতিদিন ফরমালিনযুক্ত মাছ খেয়ে দেশের হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হয়ে আস্থা হারিয়েছে মাছের প্রতি।
প্রায় সব ফলমূলই বিষে ভরা। আম কেনার জন্য বাসা থেকে বের হলাম। ঘুরলাম কয়েকটি দোকান । বাজার যে রোডেই ২০ টা দোকানে দেখা গেল আম আর আম, লিচু আর লিচু। কোনটা ফরমালিযুক্ত আর কোনটা ফরমালিনমুক্ত, ধরার সাধ্য নেই। কিন্তু মৌসুমি ফল বলে কথা বাসায় সবাই খেতে চায়, তাই সবাই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কিনছে জেনে শুনে, আবার কেউ অজান্তে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, প্রভিট, ইডেন, ইফরেল নামের হলুদ রঙের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে আম হলুদ করা হয়। লিচুও এভাবে রঙ করা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, ফল বিশেষ করে আম খেয়ে হাজার হাজার লোক অসুস্থ হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু। রাসায়নিক মিশ্রিত আম খেয়ে শিশুরা অসুস্থ হয়। ডাক্তাররা বলেছেন, শিশুরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে উঠলেও, তাদের মস্তিষ্ক ও লিভার নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। শিশুরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে, পরে বিকলাঙ্গ হয়।
একশ্রেণীর লোক আছে, যারা এখনও অসচেতন। ফরমালিন শব্দটি জানে না, চেনে না। ফলে এটা মিশ্রিত কিনা, তাও জানে না তারা। দেদার মৌসুমি ফল কিনছে, খাচ্ছে এবং নানা জটিল রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। তারা জানেও না, মৌসুমি ফল খাওয়ার কারণেই তারা অসুস্থ হচ্ছে। ফলের পরিবর্তে আমরা বিষ খাচ্ছি।